#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
#Part: 70+71 last
.
.
আন্টি-আঙ্কেল আমাকে ফ্লাট থেকে সরাসরি বাড়িতে নিয়ে গেলেন।মলি আপুকে উনি বাসায় পৌছে দিতে গেলেন।বাড়িতে পা দিতেই আন্টি চিৎকার করে মনিকে ডেকে বিভিন্ন আইটেমের খাবার রাঁধতে বললেন।আমাকে নিচের একটা রুমে শিফট্ করে বেডে বসিয়ে আন্টি কিচেনের দিকে পা বাড়ালেন।ইয়াশ আমার পাশে বসে বললো,
– ভাবি?
– হুম!
– তোমার বাবু হবে?
ইয়াশের কথা শুনে হেসে বললাম,
– হুম!মাহিনের মতো নতুন বাবু আসবে।
– তুমি যে বলেছিলে তোমার পেটে বল ঢুকে গিয়ে পেট ফুলেছে?
– হুম,ঠিকই তো বলেছি।কিছুদিন পর ওই বল ফেটে বাবু বের হবে।সেই বাবু তোমাকে চাচ্চু বলে ডাকবে।তার সাথে সারাদিন খেলবে তুমি,অনেক মজা করবে।
– চাচ্চু তো বড় আঙ্কেলদের বলে।আমাকে কেনো চাচ্চু বলবে?
আন্টি রুমে ঢুকে আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললেন,
– ভাইয়ের বাবুরা অলওয়েজ ভাইয়ের ভাইকে চাচ্চু ডাকে।বুঝলে?
ইয়াশ মাথা নেড়ে বললো “না।”
আন্টি আমার হাতে স্যুপ দিয়ে ইয়াশের চুল ঝাঁকিয়ে বললেন “আর বুঝতে হবে না।”
আঙ্কেল রুমে ঢুকে আমার পাশে বসে বললেন,
– এতো কেনো খুশি খুশি লাগছে আমার?দেখি দাও।আমি একটু খাঁইয়ে দেই আমার মা’কে।
আমার চোখ ছলছল করে উঠলো!আব্বুর কথা মনে পড়ছে খুব!আঙ্কেল আমার হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে খাওয়ানো শুরু করলেন।এরমধ্যেই ইফাজ রুমে ঢুকে এরকম একটা দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন।চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন,
– আগে যদি জানতাম যে তোমরা এতো আদর-যত্ন করবে তাহলে তো সেই কবেই তোমাদের জানিয়ে দিতাম।
আঙ্কেল হেসে বললেন,
– তোর মাকে না জানাতি।আমাকে তো একবার জানাতে পারতি?
– হুহ্!এখন আসছে!
– আয়,তোকেও খাঁইয়ে দেই।
– ফাযলামি রাখো।
আন্টি ধঁমক দিলেন।ইফাজের কাছে যেয়ে বললেন,
– তোর আপুকে জানিয়েছিস?
– দরকার নেই।আপু তুলকালাম বাধিঁয়ে দিবে।
– এই সাবধানে কথা বলিস!আমার মেয়ে কিন্তু!
– এ্যাহ্ আসছে!
– ফোন দে!এক্ষুণি জানাবি।
উনি ফোন বের করে আপুকে কল দিলেন।আপু রিসিভ করতেই উনি বলবেন,
– কি অবস্থা, আপু?কেমন আছো?
– …..
– আলহামদুলিল্লাহ্, আমরাও ভালো আছি।
আন্টি ইফাজকে খোঁচাচ্ছে “তাড়াতাড়ি বল।বলছিস না কেনো?” কিন্তু উনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মনের সুখে এলোমেলো কথা বলে সময় নষ্ট করছেন।উনি হাসতে হাসতে আপুকে বললেন,
– হুম।হিয়াও ভালো আছে।তুমি আসবে কবে?
– ….
– ওহ্।মাহিনকে একদিন ভাইয়ার সাথে পাঠিয়ে দাও।এই রাস্তা ক্রস করেই তো ভাইয়া অফিসে যায়।
– …..
– মাহিন কি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে?
– …
– আপু,সামনের ২৮তারিখে একটা সারপ্রাইজ আছে তুমি কি ওইদিন বা তার আগের যেকোনো দিন আসতে পারবে?
– …..
– না..না!এই ২৮ তারিখ না।সামনের মাসের ২৮ তারিখ।
– ….
– এতো কিসের ব্যস্ততা তোমার?আর যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেনো ওইদিন তোমাকে আসতেই হবে।
– …
– নাহ্!
আন্টি রাগে ফুলে ফেঁপে উঠছেন।আন্টি উনার হাত থেকে ফোনটা নেওয়ার অনেক চেষ্টা করেও পারছেন না।লম্বা মানুষ,আন্টি একটু উঁচু হয়ে নিতে নিলে উনি আর একটু উঁচু হয়ে আন্টিকে ব্যর্থ বানিয়ে দিচ্ছেন।উনাদের কান্ড দেখে আঙ্কেল,আমি আর ইয়াশ বসে বসে হাসছি।
উনি বললেন,
– আপু,আম্মু তোর সাথে কথা বলার জন্য খাঁমচাখাঁমচি শুরু করে দিয়েছে।নে তো একটু কথা বল খাঁমচিওয়ালার সাথে।
উনি আন্টির হাতে ফোনটা দিতেই আন্টি ফোনটা নিয়ে সোফায় ধঁপাস করে বসে পড়লেন।হাঁপিয়ে উঠেছেন একেবারে।আপুকে বললেন,
– কেমন আছিস?
– …
– ভালো।ইফাজটা যে দিনদিন এতো অসভ্য হচ্ছে।উফ্!হাপিয়ে উঠেছি।
– ….
– আচ্ছা,বাদ দে ওর কথা।একটা জরুরি কথা বলি,শোন।
– …
– তোর ভাই মানে আমার বড় ছেলে যার নাম ইফাজ সে বাবা হতে চলেছে!
– …..
– চুপ হয়ে গেলি কেনো।
– ….
– ইয়েস!তোমার সেই পিচ্চি ভাই ইফাজ।
– ….
আন্টি ফ্লাটে যাওয়ার পর যা যা ঘটেছে,একে একে সব আপুকে বলে দিলেন।
– ওয়েট,দিচ্ছি।
আন্টি আমার কাছে এসে ফোন আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– নাও।কথা বলো।
আমি ফোনটা নিয়ে আপুকে সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছো,আপু?
– এটা আমি কি শুনলাম?
আমি চুপ হয়ে গেলাম।কিছু বললাম না।আপু বললো,
– কি হলো?চুপ হয়ে গেলে কেনো?
– সরি আপু!
– সরি বলে এখন কি লাভ?এতোদিন জানাও নি কেনো?
– ভয় পাচ্ছিলাম!
– তাহলে এখন কেনো জানালে?
– আমরা তো জানাই নি। মা হুট্ করে আজ ফ্লাটে যেয়ে দেখে ফেলেছেন।
– যদি না যেতো তাহলে কি বেবি না হওয়ার আগপর্যন্ত এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে?
– ওরকমই!
আপু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
– তোমার যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তখন আমরা তোমার ফ্যামিলিকে কি জবাব দিতাম?
– সেই ভয়েই আমরা অলওয়েজ ডক্টর আঙ্কেলের সাথে কানেক্ট থাকতাম।
– হিয়া,এটা শুধু ডক্টরের ব্যাপার না।এখানে ফ্যামিলিও অনেক কিছু।প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে ডক্টরের থেকে ফ্যামিলির ইম্পরট্যান্স সবথেকে বেশি।
– সরি আপু!
– সরি বলে কোনো লাভ নেই।আন্টি-আঙ্কেল জানেন কিছু?
– উহুম।
– ওয়াও!গ্রেট!
আপু কিছুক্ষণ চুঁপ থেকে আবার বললেন,
– এটলিষ্ট ওয়ান ইয়ার ওয়েট করতে পারতে।এতো বাচ্চা বয়সে….কেমনে কি?আর ইফাজটা এরকম কিছু….ধুর!
আপুর কথা শুনে মনে হচ্ছে আপু ভীষন রেগে আছেন।কথাগুলো খুব ভারী শোনাচ্ছে।
আমি আস্তে করে বললাম,
– আপু,এখানে উনার কোনো দোষ নেই।উনি নিজেও ব্যাপারটা জানতো না।আমি একা একাই…..
আন্টি-আঙ্কেলের সামনে কথাটা আর বাড়ালাম না।শুধু বললাম,
– তুমি বাড়ি আসো।তারপর সব বলছি।
– আমি অলরেডি গাড়িতে উঠে পরেছি।আম্মু জানানোর সাথে সাথেই ড্রেস চেঞ্জ না করেই বেরিয়ে এসেছি।
– মাহিন?
– সাথেই আছে।যেই অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থায়-ই উঠিয়ে এনেছি।
– ওহ্!
– ইফাজকে দাও।বেয়াদবটার সাথে একটু কথা বলি।
আমি হেসে ফেললাম।আপু বললেন,
– খুব হাসি পাচ্ছে,তাইনা?
– দিচ্ছি।
আমি ফোনটা উনার দিকে এগিয়ে দিলাম।উনি কানে ধরে বললেন,
– বলো।
– …..
– আমার কোনো দোষ নেই আপু।সব হিয়ার প্ল্যান।বলতে পারো একা একা সব করেছে লাইক লুকিয়ে লুকিয়ে টাইপ!
ছিঃ!আন্টি-আঙ্কেলের সামনেও উনি লাগামহীনভাবে কথা বলছেন!মুখে কিছু আটকায় না নাকি?লজ্জা বলতে কিচ্ছু নেই!আঙ্কেল মুখটিঁপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আন্টিও চলে গেলেন।কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও ইয়াশকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলাম।
.
.
প্রায় বিশমিনিট পর আপু এসে হাজির।আমি ইয়াশের সাথে সোফার উপর বসে খেলছিলাম।আপু আমাকে দেখেই হাত দিয়ে মুখ চেঁপে ধরে বললেন “হিয়া!!”
আমি মাথানিচু করে সামনের চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজলাম।।আপু কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– কি মিষ্টি হয়েছো দেখতে!স্বাস্থ্যও বেড়েছি দেখছি,গুলুগুলু একটা!ভাবলাম এসেই খুব করে দুজনকে বকবো!এইঅবস্থায় তোমাকে দেখেই তো সব উঁবে গেলো।
আমি বললাম,
– বকা দাও!রাগ করবো না।
আপু হাসলেন।মাহিন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আমি আপুকে ছেড়ে মাহিনের কাছে গেলাম।আদর করার জন্য ঝুঁকতে যাবো সেইমুহূর্তে আপু ধঁমক দিলেন।মাহিনকে কোলে নিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– নাও!এখন আদর করো!
আমি আদর করতে যাবো সেইমুহূর্তে ইফাজ এসে টুপ করে আপুর কোল থেকে মাহিনকে নিয়ে নিলো।মাহিন উনার গলা জড়িয়ে ধরে সুইট করে ডাকলো,”মামা!”
উনি মাহিনের কপালে গালে চুঁমু খেয়ে বললেন,”মামা!কেমন আছো!”
মাহিন হেসে বললো,”ভালো।”
ইয়াশ চিৎকার করে বলে উঠলো,”মাহিননন।”
ইয়াশের ডাকে মাহিন উনার কোল থেকে নেমে দৌড়ে ইয়াশের কাছে ছুঁটে গেলো।
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: অন্তিম পর্ব
.
.
আপু রাতে ভাইয়াকে কল করে আমার ডেলিভারি পর্যন্ত এখানে থাকার পারমিশন নিয়েছে।ভাইয়া মাঝে মাঝে অফিস থেকে যাওয়ার পথে আপুর সাথে দেখা করে যান।সবার অনুরোধে মাঝে মাঝে এসে থেকে যান।ভাইয়া যখনই এ-বাড়িতে আসেন আমার সাথে এমনভাবে বিহেভ করেন দেখে মনে হয় কোনজন্মে আমি তার ছোট বোন ছিলাম।ব্যবহার কত্ত ভালো!মাঝে মাঝে তো ভাইয়াকে আমার খুব আদর করতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না,সম্পর্কটা মাঝখানে বাধা হয়ে দাড়ায়।যাস্ট কথা বলা অব্দি আঁটকে থাকে।মাহিন আর ইয়াশ সারাক্ষণ চিৎকার চেচাঁমেঁচিতে বাড়িটা মাথায় তুলে রাখে।আন্টিতো রীতিমতো আমার উপর হামলা চালানো শুরু করে দিয়েছেন।কিছুক্ষণ পর পরই এটা বানিয়ে আনছে তো ওটা বানিয়ে আনছেন।একটু খেয়ে রেখে দিলে ভাবে যে খাবারটা পছন্ট হয়নি।নতুন আইটেম বানিয়ে আনে।ইফাজ তো হাত-পা ছড়িয়ে আরাম-আয়েশেই ব্যস্ত থাকে,তার যে দুশ্চিন্তার দিন শেষ।বিন্দাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন!আর সারাক্ষণ দুষ্টুমি!
আপু সারাক্ষণ আমার আশেপাশেই থাকেন।কখনো একা ছাড়ছেন না।নিয়মিত হাঁটাহাঁটি,খাওয়া,ঘুমানো সব যেনো আপুর দায়িত্ব।একদিন আপু শাড়ি পড়ে শাড়ির আঁচলে পিন লাগাতে লাগাতে রুমে ঢুকলো।আমি শুঁয়ে ছিলাম।বললাম,
– আপু,আঁচলে পিন লাগালে ভাইয়া কিছু বলে না?
আপু ভ্রুঁ কুঁচকালো।বললো,
– কি বলবে?
– তোমার ভাইয়ের মতো বকা দেয় না?
– আমার ভাই আবার কি করলো?
আমি উঠে বসে বললাম,
– আমাদের বাসরে আমি শাড়ি চেঞ্জ করে যাস্ট একটা পিন লাগিয়েছিলাম,
যেটা খুলতে উনার একসেকেন্ডও লাগে নি।সেটার জন্য উনি এখন পর্যন্তও আমাকে কথা শোনায় বলে কিনা এইসব হাঁবিজাঁবি কেনো পরো,এইসব হাঁবিজাঁবি খুলতেই আমার একঘন্টা লেগে গিয়েছিলো,মনে নেই?উনার বকা শুনেই তো আর পড়ি না।
আপু বেডের বসে হাঁ হয়ে আমার তাকিয়ে আছে।আমি চুপচাপ বেড থেকে নেমে রুম ছেড়ে বেরিয়ে আসলাম!ছিঃ!উনার মতো লাগামহীন কথা বলা আমি আবার কবে থেকে শুরু করলাম?বাসররাতের কথা আপুকে বলে দিলাম?উনার সাথে থাকতে থাকতে এতো অবনতি হয়েছে আমার!!এইজন্য বেশি কথা বলতে নেই!যত কম কথা বলা যায় ততই মঙ্গল!
একদিন রাতে আমি মাথাব্যাথা আর চুলের যন্ত্রনায় ঘুমোতে পারছিলাম না।ইফাজ সাথে সাথেই উঠে আমাকে ফ্লোরে ছোট্ট টুলের উপর বসিয়ে উনি বেডের উপর বসে আমার মাথায় তেল মালিশ করতে শুরু করলেন।রাত বাঁজে একটা,এতোরাতে একজন হাজবেন্ড তার ওয়াইফের চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে!এইকাজ উনি ছাড়া আর কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়!একঘন্টা যাবৎ উনি মনের আনন্দে খুবই আস্তে আস্তে আমার মাথা ঠান্ডা করে দিলেন।লাষ্টে সুন্দর করে একটা বেণীও করে দিলেন!
.
ইয়াশ আর মাহিন দুজন আমার কাছে যখনই আসে তখনই পেটের উপর কান পেঁতে রাখে,তাদের ধারনা বাবু পেটের ভেতর থেকে যখন তখন তাদের ডাকে।এই ফালতু কথাটা ইয়াশ আর মাহিনের মাথায় ঢুকিয়েছে ইফাজ!
উনি ইদানিং নিজেকে এতই ফ্রি ভাবেন যে রাতে ঘুমানোর সময় আগে যেই মানুষটা আমার চিন্তায় সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতো সেই মানুষটা এখন ঘুমের মধ্যে হাত-পা ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে প্রেগন্যান্ট বউয়ের উপর তুলে দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ করে ফেলেন।রাগে-দুঃখে কিল-ঘুষি কয়েকটা মেরে দূরে সরিয়ে দেই,তখনই উনি টের পেয়ে যান।সাথে সাথেই জেঁগে উঠে জড়িয়ে ধরে ঘুম ঘুম কন্ঠে মিষ্টি করে বলে ওঠেন,”সরি,বউ!ব্যাথা পাও নিতো?”
আমি মাথা নেড়ে হ্যা সূঁচক উত্তর দিতাম!উনি খুব করে তখন আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন।কি অদ্ভুত ভালোবাসা!!
ডেলিভারি ডেটের সাতদিন আগেই পেইন উঠলো।সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো এতো আগে কেনো?ইফাজের ভয় দেখে কে?ইমার্জেন্সি এম্বুলেন্স ডাকা হলো।হসপিটালে নেওয়া হলো।পরীক্ষার মাধ্যমে জানানো হলো রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল!ইমার্জেন্সি সিজারিয়ান সেকশান ডাকতে হলো।রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।নামী-দামী ডক্টরদের ডেকে আনা হলো।অপারেশনের আগমুহূর্তে আমি আর চোখ খুলে রাখতে পারলাম না।
.
.
রাত দুটোর সময় জ্ঞান ফিরলো।মিটমিট করে তাকিয়ে প্রথমে আমার মুখের উপর একজনের মুখ দেখতে পেলাম।ইফাজ!উনি নিশ্বব্দে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন।আমাকে চোখ খুলতে দেখে উনি “ডক্টর!ডক্টর!” বলে চিৎকার করতে শুরু করলেন।কেবিনে দাড়িয়ে থাকা নার্স দুজন দ্রুত কেবিন থেকে বেরিয়ে ডক্টরকে ডাকতে চলে গেলেন।মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো ছিলো।খোলার উপায় নেই!হাত নড়াতে পারছি না।উনার চোখদুটো ফুঁলে গিয়েছে!অনেক কেদেছেন মনে হচ্ছে।আমি শুধু আঙ্গুল উঠিয়ে উনার হাতের একটা আঙ্গুল স্পর্শ করলাম।উনি আমার কাটাছেঁড়া হাত ধরার সাহস পাচ্ছেন না,যদি ব্যাথা পাই!শুধু আমার মাথায় হাত রেখে আমায় আশ্বস্ত করলেন “বেবি ঠিক আছে!”
কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।আমি আঙ্গুলের ইশারায় ১/২ দেখালাম!উনি বুঝে গেলেন।থেমে থেমে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন,”টিয়াপাখি!তোমার ১টা বেবি হয়নি,আর ২টা বেবিও হয়নি!”
কথাটা বলেই থেমে গেলেন।আমার বুক কেঁপে উঠলো!আমার কপাঁলে আলতো করে চুঁমু খেয়ে বললেন,”তোমার তিন তিনটে বেবি হয়েছে!”
কথাটা শোনামাত্রই আমার সারাশরীর শিহরিত হলো!
উনি থেমে ভেঁজাকন্ঠে আবার বলতে শুরু করলেন,”মেয়েদুটো তাদের বাবাইয়ের মতো দেখতে হয়েছে!আর ছেলেটা তার মায়ের মতোন!”
আমার চোখদুটো ঝাঁপসা হয়ে এলো!শরীর যতটুকু ভালো ছিলো সেটুকুও যেনো অবশ হয়ে এলো।নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছি না।
ডক্টর চলে এলেন।উনি দ্রুত উঠে ডক্টরকে তাড়া দিতে লাগলেন।ডক্টর উনার কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বললেন,”ভয়ের কিছু নেই।সেন্স যেহেতু ফিরেছে।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।বেবিদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।”
ডক্টর ইশারায় নার্সদের কিছু একটা বললেন।নার্স দ্রুত বাহিরে গিয়ে কিছুক্ষনের মধ্যে ফিরে এলো।নার্সের পেছন পেছন একে একে ফ্যামিলি মেম্বার্সরা ঢুকলো।প্রথমেই আব্বুকে ঢুকতে দেখলাম!আব্বুর কোলে সাদা টাওয়ালে মোড়ানো একটা বাবু।আব্বুর পরই আম্মু ঢুকলো।আম্মুর কোলে আরেকটা বাবু।আব্বু-আম্মু দুজনের চোখ ভেঁজা!এখনও দুজনের চোখের পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে।আম্মুর পর আন্টি ঢুকলো।আন্টির কোলেও বাবু।ওর চেহারাটা একটু বের করা ছিলো বিধায় একনজর দেখতে পেলাম।সাদা ধবধবে!চোখদুটো বন্ধ!পেছন পেছন নাফিসা,আপু,মাহিন,ইয়াশ,আঙ্কেল,
কাজিন,চাচ্চু-চাচী সবাই ঢুকলো।সবার চেহারায় ভয়ের ছাঁপ!আমার দিকে তাকাতেই সবার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।কিন্তু আব্বু-আম্মুর কান্না যেনো থামছেই না!সেকেন্ডে সেকেন্ডে বৃদ্ধি পাচ্ছে।আব্বু আমার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে।আব্বুর চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছে আব্বু অপরাধবোধে ভুগছে।আব্বু বাবুর দিকে একবার তাকাচ্ছে তো আরেকবার আমার দিকে।আব্বু বাবুকে আমার পাশে শুঁইয়ে দিয়ে বললো,”তোর ছেলে!”
কপালে চুঁমু খেয়ে আব্বু আমার কপাঁলের উপর মাথা রেখে কান্না করে দিলো।আব্বুর এরকম কান্না আজ প্রথম দেখলাম।আব্বুর কান্না দেখে আম্মুর কান্নার গতি যেনো আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি পেলো।দুজনের কান্না দেখে আমি নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলাম না।আম্মু,আব্বুর অপজিটে আমার পাশে এসে বাবুকে শুঁইয়ে দিয়ে অভিমানি সুরে বললো,”তোর মা কি এতোই খারাপ?একবার জানালে কি আমি মেরে ফেলতাম তোকে?”
আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।চোখের দুইপাশ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।আব্বু আমার চোখ মুঁছে দিয়ে বললো,”একদম কাঁদবি না!আর কখনো যেনো কাঁদতে না দেখি!”
আন্টি কাছে এসে বললেন,”এখন এই সোনাটাকে কোথায় শুঁইয়ে দেই?জায়গা তো বুকড্!”
নাফিসা পেছন থেকে বলে উঠলো,”ভাইয়ার কোল তো খালি!”
উনি চোখ মুঁছে আন্টির দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমার কোল কি চোখে পড়ে না?আমার দুই কোল খালি তবুও হিয়ার কোলেই কেনো সবগুলোকে দিতে হবে?”
আন্টি ছেলের কথা শুনে হেসে বললেন,”এতক্ষণে নবাবের মনে পড়লো তার আরেকটা বাবু এখনো অন্যের কোলে!”
উনি হাত বাড়িয়ে আন্টির কোল থেকে বাবুকে নিয়ে অজস্র চুঁমুতে বাবুকে ভরিয়ে দিলেন।
ডক্টর ভিড় কঁমাতে বললেন।সবাই ডক্টরের নির্দেশে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো শুধু আব্বু,আম্মু,ইফাজ আর আন্টি-আঙ্কেল বাদে।মাস্ক খুলে দেওয়া হলো।আমি আব্বু-আম্মুর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললাম, “কেমন আছো তোমরা?”
আম্মু সেই অভিমানি সুরে বললো,”তুই কি ভালো থাকতে দিয়েছিস?আর একটু হলে আমরা দুজনে হার্ট-এ্যাটাক করতাম।মরে গেলেই তো তুই শান্তি পেতি,না?”
– ছিঃ!আম্মু…কি বলো এগুলো?
আম্মু আর কিছুই বলতে পারলো না।আমার কপালে চুঁমুতে ভরিয়ে দিলো।উনি পাশে দাড়িয়ে শুধু আমাকেই দেখছেন।আমি চোখের ইশারায় উনাকে কাছে ডাকলাম।আন্টি-আঙ্কেল টের পেয়ে আব্বু-আম্মুকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলেন।উনি বাবু কোলে পাশে বসে বললেন,
– বেশি খারাপ লাগছে?
– উহুঁ!
– সবঠিক হয়ে যাবে!
– নাম ঠিক করেছেন?
উনি হাঁ হয়ে বললেন,
– কিসের নাম?
– ছেলের?
– কেনো?হিয়াজ!
– টুন-টুনিদের সাথে মিলিয়ে রাখুন!
উনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
– টোনা রাখলে কেমন হয়?
আমি হেসে ফেললাম!উনি একটু উঠে আমার কপালে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– এইতো আমি আমার আগের টিয়াপাখিকে পেয়ে গেছি!
– নামটা মিলেছে ঠিকই বাট সুন্দর না!
– এগুলো ওদের ডাকনাম!এই নামগুলোতেই তিনজনকে ডাকা হবে!
আমি হেসে ফেললাম!বললাম,
– ভালো নাম রাখুন,প্লিজ!
উনি ভাবুক হয়ে গেলেন!কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
– ইফায়া চোধূরী টুন;
ফাহিয়া চৌধূরী টুনি;
এন্ড হিয়াজ চৌধূরী টোনা;
এখন ঠিক আছে তো টুন-টুনি-টোনাদের মাম্মাম?
– প্লিজ একটু কাছে আসেন,জড়িয়ে ধরবো আপনাকে!এতো কেনো ভালোবাসেন আমায়?
– এখন নাহ্!আগে সুস্থ হও,তারপর জড়িয়ে ধরা,আদর করা,হানিমুন সব হবে!
– প্লিজ?
আমার এরকম অনুরোধে উনি উঠে আমার কপালে,গালে,গলায় চুঁমু খেয়ে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরার ভঙ্গিমা করে বললেন,
– খুশি?
আমি লজ্জা পেয়ে হাসলাম!উনি তিনবাবুকে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– আমরা চারজন,তুমি একা!জ্বালাময় জীবন তোমার শুরু হয়ে গেলো কিন্তু টিয়াপাখি!পারবে তো আমাদের সামলাতে?
আমি কঠিনস্বরে বললাম,
– খবরদার,ওদেরকে একদম নিজের মতো দুষ্টু বানাবেন না,বলে দিচ্ছি!
উনি হোঁ হোঁ করে হেঁসে উঠলেন!বললেন,
– দেখা যাবে টিয়াপাখি!ওরা কার মতো হয়?আমার মতো দুষ্টু নাকি তোমার মতো শান্ত-শিষ্ট,লেজবিশিষ্ট!
– ছিঃ!গরুর সাথে আপনি আমার…
– নাউযুবিল্লাহ্!গরুর সাথে কেনো তোমার তুলনা করতে যাবো?
– আপনি আসলেই একটা….!না বলতেই বুঝে গেলেন আমি গরুর সাথে তুলনার কথা বলতে চাচ্ছিলাম?
– সরি,টিয়াপাখি! ভুল হয়ে গেছে!লেজবিশিষ্ট হবে না।শান্ত-শিষ্ট লজ্জাবিশিষ্ট!
আমি হেসে ফেললাম!উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি কোলের বাবুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন!মানুষটা এতো ভালো কেনো?আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দামী জিনিস এই চারটা মানুষ!♥
.
.
সমাপ্ত♥