#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 68+69
.
.
ব্রেকফাস্ট শেষে রুমে এসে ড্রেস দুটো আর শাড়ি দুটো নিয়ে আলমারিতে রেখে দিলাম।আমি বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ালাম।মনের ভেতর কেমন খুঁচখুঁচ করছে।এলোমেলো চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে।এমন কেনো লাগছে?উনি পেছনে দাড়িয়ে আমার দুইহাতের উপর উনার দুইহাত রেখে বললেন,
– টেনশন?
আমি উনার সাথে হেলান দিয়ে বললাম,
– হুম।
– সবঠিক হয়ে যাবে।এতো টেনশন নিও না।
– চাচ্ছি না তবুও মাথার মধ্যে জেঁকে বসছে।
– রুমে চলো।
– থাকি না কিছুক্ষণ।
– আমার মাথাব্যাথা করছে খুব।চুল টেনে দিবে,চলো।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ রুমে এসে বসলাম।উনি আগের ন্যায় আমার কোলে মাথা রেখে আমার হাত উনার মাথায় রেখে বললেন,
– নাও,টানো।জোরে জোরে টানবে কিন্তু।
উনার কথামতো আমি উনার চুল খুব জোরে জোরে টানতে লাগলাম।উনি চোখ বন্ধ করলেন।উনি যে এইমুহূর্তে ঘুমাবেন না এটা শিওর।আমি অন্যহাত উনার গালে রেখে কিছুক্ষণ স্লাইড করলাম।উনি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে হাতের তালু দিয়ে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরে তালুতে কাঁমড় বসিয়ে দিলেন।কাঁমড়ের জায়গায় কয়েকটা চুঁমু খেয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম।
– আব্বুকে একদিন কথার প্যাঁচে ফেলে আমি “বাবা” হবো সেইখবরটা দিয়েছিলাম বাট আব্বু ধরতে পারেনি।আব্বু আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলো “এতো তাড়াহুড়ো কিসের?হিয়া মা’তো পালিয়ে যাচ্ছে না।কিছুদিন টাইম নাও তারপর নাহয় ফ্যামিলি প্ল্যানিং নিয়ে ভাব্বে।”
উনি কথাটা বলেই হেসে উঠলেন।আবার বললেন,
– এদিকে যে আমরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে সেটা আবার সাকসেসফুল করার মিশনে লেগেছি,সেটা তো আমার বাপজান জানে না।জানলে কি হবে বলো তো?
– উফ্!টপিক চেঞ্জ করুন।এমনিতেই ভয় হচ্ছে তারউপর আবার এসব কথা।
উনি গাঁ ঝাঁকি দিয়ে বললেন,
– ইদানিং এসব বিষয় নিয়ে কেনো যেনো আমার আর টেনশন হয়না।
– তা হবে কেনো?এখন তো সব ভাবনা চিন্তা ওদেরকে নিয়ে।আমিই শুধু এরকম,যতই টেনশন কমাতে চাই টেনশন আরো জেঁকে বসে।
উনি উঠে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– প্লিজ,এই অবস্থায় এইসব টেনশন বাদ দাও।আসো আমরাএকটু রোম্যান্স করি!
.
.
ইয়াশ স্কুল থেকে বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেলো।দুপুরে আন্টির ফোন পেয়ে মলি আপু ইয়াশকে স্কুল থেকে সরাসরি বাড়িতে আঙ্কেলের সাথে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।সারাদিন আঙ্কেলের সাথে সময় কাটিয়ে আপুর সাথে সন্ধ্যের দিকে বাসায় ফিরলো।আপু ইয়াশকে বাসায় দিয়ে ইফাজের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু উনি আটকালেন।যেতে দিলেন না মলি আপুকে!অনিম ভাইয়া এসেছিলেন সন্ধ্যের পর পরই।কিছুক্ষণ গল্প করেই চলে গেলেন।
.
রাতে আমি শুঁয়ে শুঁয়ে আপুর সাথে গল্প করছিলাম।উনি পাশে বসে লো ভলিউমে টিভি দেখছিলেন।ইয়াশ লক্ষী ছেলের মতো পড়ছিলো ঠিকই কিন্তু ভাইয়ের সাথে মারামারি মিস করছিলো না।উনিও কম না,টিভি অন করে এইটুকু একটা পিচ্চির সাথে মারামারিতে মেঁতে উঠেছেন।ফোনের ভাইব্রেশনে সাইড টেবিল থেকে ফোনটা নিয়ে রিসিভ করলাম।নাফিসা কল করেছে।নাফিসা প্রায় চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
– আপু,সর্বনাশ হয়ে গেছে!
আমি বসে বললাম,
– কি হয়েছে?
– তোমার শ্বাশুড়ি মনে হয় জেনে গিয়েছে তুমি যে এতোদিন ফ্লাটে ছিলে।
– মানে!জানলো কিভাবে?
– একটু আগে উনি আম্মুকে ফোন করে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করছিলেন।সেই ফাঁকে তোমাকে নিয়ে হয়তোবা কথা উঠেছিলো।লাষ্ট আম্মুর বলা “হিয়াকে কতবার আসতে বললাম,আপনাকে ছেড়ে আসতে চাচ্ছিলো না।”কথাটা শুনেই আমি দ্রুত রুমে এসে তোমাকে ফোন দিলাম।
আমি নাফিসাকে থামিয়ে বললাম,
– তুই জানলি কিভাবে কাল উনি আসছেন?
– মন বলছে রে আপু মন বলছে।
– ফোন রাখ তুই।
নাফিসা রাখলো না ফোন।বললো,
– মিথ্যা কখনো চাঁপা থাকে না আপু!
কথাটা শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠলো।আমি দ্রুত ফোন কাটলাম।আপুর দিকে তাকাতেই আপু আমার হাত ধরে বললেন,
– কি হয়েছে?এরকম দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
– কাল মা আসছে।
– what!!!
ইফাজ চিৎকার দিয়ে উঠলো!আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকালাম।মলি আপু বললেন,
– এতোদিন কেনো ধরা পরলে না?
– এতোদিন তো মা ভেবেছিলেন আমি আম্মুর সাথেই আছি,সেজন্য আম্মুকে ফোন না করে আমাকে ফোন করেই সবার খবর নিতেন।কিন্তু আজ?
– এখন কি হবে?ইশ্!এখন তো বোঝা যায়!কত্ত ফুঁলেছে!
আমি কিচ্ছু ভাবতে পারলাম না।শুঁয়ে পরলাম।উনি আমার কাছে এসে বললেন,
– এটা নিয়ে আবার সারারাত টেনশন করে শরীর খারাপ করো না।যা হবে কাল দেখা যাবে।
– ইফাজ ঠিকই বলেছে হিয়া।এখন টেনশন করে কোনো লাভ হবে না।
– বাবু আসার পর জানলে তখন একটা কথা ছিলো।খুব ভালোভাবে সবাইকে ম্যানেজ করতে পারতাম কিন্তু এখন কিভাবে?এই বুড়ো বয়সে সবগুলোর বোকা খেতে হবে।ছিঃ!ভাবা যায়!
– বাবু আসার পর কিভাবে ম্যানেজ করতি?
মলি আপু জিজ্ঞেস করলেন।উনি আয়েশ করে বসে বললেন,
– বুঝলি না?বাবুকে সবগুলোর কোলে দিয়ে বলতাম “নাও,তোমাদের নাতি-নাতনি!” নাতি-নাতনিদের দেখলে তখন আমাদের বোকা দেওয়ার কথা একেবারে ভুলে যেতো!
আমি বললাম,
– আমার শরীর খারাপ করছে খুব!
উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– হিয়া?উফ্,এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারছি না।বারবার মানা করছি এইসব ফালতু টেনশন না নিতে,তবুও!
.
ইয়াশ কাছে আসতে চাচ্ছিলো কিন্তু ইফাজ আসতে দিচ্ছিলো না।”তোমার ভাবি অসুস্থ”বলে বার বার আটকাচ্ছিলেন।আমি হাত বাড়িয়ে ইয়াশকে কাছে ডাকতেই ইয়াশ লাফ দিয়ে ইফাজের কোল থেকে নেমে আমার পাশে এসে বসলো।আমি হাত মেলে দিলাম,ইয়াশ হাতের উপর শুঁয়ে আলতোভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।মলি আপু ইফাজকে বকাবকি করতে নিষেধ করলেন।আপু পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো।
…
ভোর চারটায় প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ঘুম ভেঙ্গে গেলো।শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।একটু নড়তেই শ্বাসকষ্টের কারন টের পেলাম।পেছন থেকে উনি আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছেন।মানুষটা এমন কেনো!!আমি প্রেগন্যান্ট জানা সত্ত্বেও সেই আগের নিয়মেই জড়িয়ে ধরে রাত পার করছেন!শক্ত করে আমার গলা পেঁচিয়ে ধরে রাখা উনার ডানহাতটা সরিয়ে দিতেই উনি একটু নড়লেন।কিন্তু উঠলেন না।আমি জোরে জোরে কিছুক্ষণ শান্তির নিশ্বাস নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলাম।
সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে দেখলাম সেই এক অবস্থায়ই উনি শুঁয়ে আছেন।আমি উঠে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ইয়াশের রুমে গেলাম।ইয়াশের আজ অফডে,নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।মলি আপুও এখনো উঠে নি।আজ সবার ঘুমের রোগ ধরলো নাকি?তুলিও এখন পর্যন্ত আসে নি।তুলিও নিশ্চিত ঘুমোচ্ছে।আমি ইয়াশের পাশে শুঁয়ে কপালে চুঁমু খেয়ে জড়িয়ে ধরলাম।ততক্ষণে আপু উঠে পরেছেন।হাই তুলতে তুলতে বললেন,
– তুমি এখানে?
– মাত্র আসলাম।
– ইফাজ কই?
– ঘুমোচ্ছে।
আপু ভ্রুঁ কুচঁকালেন।
– ও ঘুমোচ্ছে তুমি এখানে কেনো?যাও ওর কাছে।
– ছিলাম তো।ভালো লাগছিলো না তাই একটু আসলাম।
আপু আর কিছু বললেন না।উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।পাশের রুম থেকে ইফাজের চিৎকার ভেসে এলো!
“হিয়া,টিয়া,হিয়াপাখি,টিয়াপাখি, বউ,ওগো” সব একসাথে বলে বলে ডাকছেন।মেজাজটা বিগড়ে গেলো!ডাকার নমুনা কি?আপু ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বললেন,
– যাও,ডাক পড়েছে।ইয়াশের কাছে আমি আছি।
– ডাকুক!
ইফাজ রুম থেকে চিৎকার করে বললেন,
– আম্মু ফোন করে জানালো আম্মু রওনা দিয়েছে,টিয়াপাখি!এখন কি করবে?
কথাটা শোনামাত্রই আমি দ্রুত উঠে বসলাম!আপু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– তোমার ফেসটা আমাকে ধার দাও!আমি একদিনের জন্য ইফাজের হিয়া সাঁজি!আন্টি চলে যাওয়ার পর আবার নিয়ে নিও!
আমি অসহায়ভাবে আপুর দিকে তাকালাম।আপু হেসে আমার গাল টেনে বললেন,
– মজা করছিলাম ইফাজের টিয়াপাখি!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 69
.
.
আন্টি নয়টার দিকে বেল বাঁজালেন।তিনজন মিলে আন্টি আসার অপেক্ষায় ড্রইংরুমে বসে ছিলাম।আমি তো দোয়া দরূদ পড়তে পড়তে প্রায় মরে যাই যাই অবস্থা।ইফাজ একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।ইয়াশ আপুর কোলে চুপচাপ বসে ছিলো।বেলের শব্দে উনি আমাকে ছেড়ে মেইনডোর খুলতে চলে গেলেন।সেই ফাঁকে আমি দ্রুত রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।আপু আমাকে আটকাতে যেয়েও পারলো না।বেডের উপর চুপচাপ পা তুলে বসে পরলাম।কিছুক্ষণ পরই দরজায় নক করা শুরু হলো।আন্টির কন্ঠ ভেসে আসছে বাহির থেকে।
– হিয়া।
– হিয়া,দরজা খোলো।আম্মু দাড়িয়ে আছে।
– ভাবি!
– হিয়া আন্টি দাড়িয়ে আছে।দরজা খোলো।
একে একে সবাই ডাকলো।এদিকে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি।দরজায় প্রকট জোরে একটা আওয়াজ হলো।এটা নিশ্চিত ইফাজের কাজ।আমি তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে দরজা কাছে গিয়ে বুকে ফুঁ দিয়ে দরজা খুললাম।দরজা খুলেই আমি হাঁ হয়ে গেলাম।ইফাজ আন্টির চোখ ধরে রেখেছেন।মলি আপু অধির আগ্রহে কিছু একটা দেখার অপেক্ষায় আছেন।ইয়াশ দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে আমার পাশে দাড়ালো।উনি আন্টিকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে বললেন,
– আম্মু এইমুহূর্তে তুমি যেটা দেখবে সেটা দেখে তুমি মোটেও চিৎকার করবে না।ওকে?
আন্টি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন।এদিকে আমার অবস্থা ধীরে ধীরে করুন হচ্ছে।উনি হাত না সড়িয়ে আন্টির কানের কাছে আবার বললেন,
– আম্মু তুমি কিন্তু প্রমিস করেছো….বোকাঝোকা করবে না।
– আচ্ছা বাবা!বললাম তো।
– আম্মু প্রমিস কিন্তু করেছো?
– উফ্!বললাম তো বকবো না।
ইফাজ কি যেনো পড়ে নিজের বুকে ফুঁ দিয়ে কাউন্ট করা শুরু করলেন!
– ওকে!ওয়ান…টু…থ্রি…ফোর…ফাইভ..
উনি হাত সড়িয়ে নিলেন।আন্টির চোখ সরাসরি আমার উপর পড়ে দ্রুতই দৃষ্টি পেটের দিকে চলে গেলো!আন্টি “ইন্নালিল্লাহ্!” বলে মুখে হাত চেঁপে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন!উনি আন্টিকে পেছন থেকে শক্ত করে ধরে বললেন,
– আম্মু প্লিজ….
– …..
আন্টি স্তব্ধ!মুখে হাত দিয়ে রোবটের মতো দাড়িয়ে আছেন!
– শক্ত হও!তোমার বউমার অবস্থা দেখো,তোমার ভয়ে ঘেঁমে একাকার!
– What is this,Efaaz!!!
আন্টির গলা কাঁপছে!
– আম্মু এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে!সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি এই অবস্থা!আমার কিচ্ছু করার ছিলো না তখন!সিরিয়াসলি!
– থাপ্পড় দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো,বেয়াদব ছেলে!সাহস কতবড়!আবার মজা করছে!এই অসভ্য ছেলে,এটা একদিনের জিনিস!!
– সরি আম্মু!
– বেয়াদব!সকালে তুমি এই সারপ্রাইজের কথা বলছিলে?হায়!হায়!মেয়েটার একি অবস্থা হয়েছে!একা একা এতোদিন কিভাবে সম্ভব!
মলি আপু আন্টির হাত ধরে বললেন,
– আন্টি,বেচারী আপনার টেনশনে এতক্ষণ মরে যাচ্ছিলো।প্রবলেম হবে ওর।একটু নরমাল হোন।
– এটা দেখার পরও তুমি আমাকে নরমাল থাকতে বলছো?
– আন্টি ছোট মানুষ!ভুল করে হয়ে গিয়েছে!
– কিহ্!!!ছোট মানুষ?এগুলো ছোট মানুষের কাজ?
আন্টি খুব জোরে জোরে চিৎকার করে কথা বলছেন।রাগে দাঁতে দাঁত চেঁপে আবার বললেন,
– ok!মানলাম হিয়া ছোট,কিন্তু ইফাজ?ইয়াশ খেলার ছঁলে মাঝে মাঝেই বলতো ভাবির পেটে ফুটবল ঢুকে গেছে।ছোট মানুষ বলে তেমন গুরত্ব দিতাম না।বাট এটা কোন ফুটবল ঢুকেছে!!!
– সব দোষ এই ইফাজ অসভ্যটার,আন্টি!ওকে মেরে….
আন্টি হাত উঠিয়ে আপুকে থামিয়ে দিলেন।উনার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।কাছে গিয়ে বললেন,
– কয়মাস?
উনি মাথা নিচু করে বললেন,
– সামনের ২৮তারিখে ডেলিভারি ডেট!
আন্টি উনার কলার ধরে কঠিন ভাষায় কয়েকটা গালি দিয়ে কটমট করে বললেন,
– এখনো যে আমাকে বলিস নি,ওর যদি কিছু হয়ে যেতো তখন আমি সবাইকে কি জবাব দিতাম?ভাবতে পারছিস এখন জানাজানি হলে কি বিচ্ছিরি কান্ড হবে?ছিঃ ছিঃ!এ আমি কাকে পেটে ধরেছি?
উনি গর্বিত কন্ঠে মাথা তুলে বললেন,
– উনাদের কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই!এই কয়েকটা দিন তুমি একাই একটু ম্যানেজ করো,প্লিজ!
– চুপ!একদম চুপ!সাহস কতবড়!আবার মুখে মুখে কথা বলছে।চূড়ান্ত পর্যায়ের সাহস বেড়েছে তোমার,তাইনা?এটা হেলাফেলা করার জিনিস?
আন্টি খুব লাউডে চিৎকার করছেন।যেটা আমার কানের পর্দায় প্রচন্ড বেঁগে আঘাত হেঁনে চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।মাথা ভঁন ভঁন করছে।আন্টি ধপাস্ করে বিছানায় বসে পরলেন।ঠোঁট কামড়াচ্ছেন।ইয়াশ আন্টির চিৎকারে সেই যে একবার আমার পেছনে লুকিয়ে পরেছে,আর বের হওয়ার নাম নেই।আন্টি হ্যান্ডপার্স থেকে ফোন বের করছিলেন,ইফাজ খোঁপ করে আন্টির হাত ধরে বললেন,
– আম্মু,প্লিজ!কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই।আর কয়েকটা দিনই তো,একাই একটু ম্যানেজ করো,প্লিজ!এখন জানালে সবাই তোমার মতো চেঁচামেঁচি শুরু করবে।বাট বেবিরা হওয়ার পর জানালে তখন নাতি-নাতনিদের নিয়েই পড়ে থাকবে।আমাদের কথা ভুলে যাবে।
– আমার সামনে থেকে সরে যা বেয়াদব!
– আম্মু প্লিজ!
– মলি,হিয়ার কাপড়-চোপড় সব গুঁছিয়ে দাও!
আমি কাছে গিয়ে হাত ধরে বললাম,
– মা!
আন্টি কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতে যেয়েও মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন।আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এখনো দাড়িয়ে আছো কেনো?ওর কাপড়-চোপড় গুঁছাতে বললাম না?যাও..
আপু দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমি আন্টিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– মা!
– এইমুহূর্তে কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না।
– মা,প্লিজ বাবাকে বলিয়েন না।
– তোমার বাবাকে বলবো মানে বলবোই এন্ড সেটা এক্ষুনি।
আন্টি আঙ্কেলের নাম্বারে ডায়াল করলেন!কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্টি বললেন,
– যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইফাজের ফ্লাটে চলে আসো।
– ….
– কেলেঙ্কারি হয়ে গিয়েছে!ফোনে এতো কিছু বলা সম্ভব না।রাখলাম।
– …
– তোমার গুনধর ছেলে বাবা হচ্ছে!আসার সময় পারলে দশকেজি মিষ্টি কিনে এনো।তোমার ছেলে আর ছেলের বউকে খাওয়াতে হবে তো।কত বড় খুশির খবর!
– ….
– ইয়েস!তোমার হিয়া মা প্রেগন্যান্ট!
– ….
– মাস জিজ্ঞেস করছো তুমি?সামনের ২৮তারিখে তুমি নানাভাই হতে চলেছো!
– ……
– হ্যা!তোমার ছেলের দেখা-সাক্ষাৎ কমে যাওয়ার কারন এটাই!
– …..
– আমারও মাথা কাজ করছে না।এইমুহূর্তে উনাদের না জানানোই বেটার।
আন্টির বলা শেষ কথাটা শুনে মনে মনে আমি ভীষন জোরে একটা আনন্দের চিৎকার দিলাম!অবশেষে আন্টি ইফাজের কথাটা মাথায় ঢুকিয়েছেন!উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বুঝালেন “এসো,দুজন মিলে নাঁচি!”
আন্টি বারবার আঙ্কেলকে বলছেন “আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আসো,রাখছি!”
কিন্তু আদৌও তিনি রাখার নাম নিচ্ছেন না।আন্টি ধঁমক দিয়ে বললেন,
– রাখবে তুমি?
– …
– আমি জানি নাকি?তোমার পুত্রই ভালো জানে।
– ….
– অসহ্য!সব তো ফোনেই শুনে নিচ্ছো!তোমার কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে তুমি খুব খুশী হয়েছো!ব্যাপার কি?
– ….
– বাহ্!ছেলে বাবা হবে এতে দুঃখ পাওয়ার কি আছে,ভালোই বলেছো!
– …..
– এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।সবদিক বিবেচনা করে কথা বলো,শুধু একটাদিক ভাবলেই তো হবে না!
– ….
হঠাৎ আন্টি হোঁ হোঁ করে হেসে উঠলেন!ওয়াও!আমাদের দুজনের জন্য প্লাস পয়েন্ট!আন্টির মাথা তারমানে ঠান্ডা হয়েছে!আমরা দুজন মুঁচকি হেসে দুজনের দিকে তাকালাম!
.
কিছুক্ষনের মধ্যেই আঙ্কেল ফ্লাটে চলে এলেন।রুমে ঢুকেই আগে ইফাজের দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন,
– কনগ্রাচুলেশন,হ্যান্ডসাম!
উনি হেসে আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– খুশি হয়েছো তুমি?
– অফকোর্স!সেটা আর বলতে!তোমার মা কোথায়?
– ওয়াশরুমে!
– ওহ্!
আঙ্কেল উনাকে ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।আমি সালাম দিতেই আঙ্কেল মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
– এই না হলে আমার মা!খুব খুশি হয়েছি!
আমি আঙ্কেলের কথা শুনে হাঁ হয়ে গেলাম।উনিই এই বিষয়ে বেশি কড়া ছিলেন,আজ কিনা উনি নিজেই বলছেন খুব খুশি হয়েছেন!!এতো ভালো কেনো সবাই?একেবারে ইফাজের মতো।প্রথমে উনিও তো “না!না!” করে যখন জানতে পারলেন তখন কত্ত খুশি হয়েছিলেন,আঙ্কেলও সেইম!ইফাজ অবশ্য বোকাঝোঁকা করেছিলো একটু বাট আঙ্কেল সেটার ধারের কাছেও যান নি!
আঙ্কেল বললেন,
– তোমার মা’র কথামতো বিশকেজি মিষ্টি কিনে এনেছি!খাবে চলো!
আমি বললাম,
– বাবা,মা’তো দশকেজি আনতে বলেছিলেন।
– তাই নাকি?দেখেছো,
বেশি এক্সাইটমেন্টের জন্য সব ভুলে গিয়েছি!প্রবলেম নেই আমি একাই দশকেজি শেষ করতে পারবো!যেই খবর দিলে আজ!
.
.
(চলবে)