#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 66+67
.
.
পরেরদিন সকালে আমি নাফিসাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম।আব্বু বাসায় নেই,আম্মু একা।নাফিসারও সামনে পরীক্ষা।মলি আপু তো আমার কাছে আছেনই।শুধু শুধু নাফিসার থাকার দরকার কি?
সারাদিন মলি আপু আমার আশেপাশেই হাঁটাহাঁটি করেন।টুকটাক কথা বলা থেকে শুরু করে সবধরনের সাহায্য উনার কাছ থেকে পাচ্ছি।
রাতে ইয়াশকে মাঝখানে শুঁইয়ে দিয়ে দুজন দুপাশে শুঁয়ে পড়ি।আপু সারাক্ষণ বিভিন্ন ধরনের হাসি-তামাশা,ভার্সিটি লাইফের বিভিন্ন ধরনের কুকীর্তি শেয়ার করে আমাকে সবসময় ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন।একদম মনখারাপ হতে দিচ্ছেন না।অনিম ভাইয়া কিছু সময়ের জন্য এসে আবার চলে যাচ্ছেন।অনিম ভাইয়া একদিন হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন “আঙ্কেল এরকম হুটহাট কাজের প্রেশারে তিন-চারমাসের জন্য দেশের বাহিরে প্রায়ই যান!”অনিম ভাইয়া কথাটা বলার সাথে সাথেই জিভ কেটে বলেছিলেন “এইবার মনে হয় আঙ্কেল বেশিদিন থাকবে না,হিয়া!সম্ভবত এবার তাড়াতাড়িই চলে আসবে!”
সেদিন রাতেই উনাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলাম,”আপনি আসবেন কবে?”
উনি কিউট ভয়েস টোনে খুব সুন্দর করে আমাকে “টিয়াপাখি” ডেকে বলেছিলেন,”কাজ প্রায় কমপ্লিট!
কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাক করবো!”
আমি অনিম ভাইয়ার কথাটা বলতেই উনি বলেছিলেন,”এইবার এতো টাইম লাগবে না আব্বুর!আমি তো এবার সাথে থেকে হেল্প করছি!”
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেদিন ফোন কেটে দিয়েছিলাম!
.
ইয়াশকে রাতে আগের নিয়মে আমিই পড়াই।শুধু পাশে উনি থাকেন না।উনি যখনই সময় পাচ্ছেন ফোন করে আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন।দিনের বেলায় বলতে গেলে সময়ই পান না।রাতে যা একটু সময় পান আমি প্রেগন্যান্ট বলে রাতজেগে কথা না বলে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে বলেন!প্রতিদিন সকালে উঠে ফোনটা আগে হাতে নেই।উনার “গুড মর্নিং মাই ডিয়ার টিয়াপাখি!” ম্যাসেজটা স্ক্রিনে ভেসে উঠতেই আনমোনে ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি ফুঁটে ওঠে!উনি বাংলাদেশের টাইম অনুযায়ী প্রতিদিন সকালে এইকাজটা করেন!আমি সাথে সাথেই রিপ্লেই দেই “গুড মর্নিং টুন-টুনিদের আব্বু!”
আমার ম্যাসেজ পাওয়ার সাথে সাথেই উনি বুঝে যান আমি ঘুম থেকে উঠেছি!সাথে সাথেই কল নয়তো ভিডিও কল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আমাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেন!প্রতিদিন এভাবেই উনি আমার একাকিত্ব সকালের সঙ্গী হোন!একদিন তো ভুলে মুখ ফসকে বেরিয়ে পড়েছিলো “এখন সকালের ব্রেকফাস্ট কিভাবে করেন?”
প্রতিত্ত্যুরে উনি হেসে বলেছিলেন “আমার টিয়াপাখির দুটো শাড়ি আমি সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি!সেটা দিয়েই আমি আগের মতো সকালের আসল ব্রেকফাস্টটা সেড়ে ফেলি!দেন আব্বুর সাথে নকল ব্রেকফাস্ট করি!”কথাটা শোনামাত্রই চোখে জলের ভীড় জমেছিলো সেদিন!
মাঝখানে একটানা দুদিন উনি কথা বলতে পারেননি!কাজের প্রেশার অনেক!তিনদিনের মাথায় ফোন করে যখন ক্ষমা চেয়েছিলেন আমি কোনো কথা বলিনি!যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি ক্ষমা করেছি ততক্ষণই উনি আমার সাথে কানেক্ট ছিলেন।যেটা আটত্রিশ মিনিটের উপর চলে গিয়েছিলো!
.
দেড়মাসের মাথায় উনি বললেন,
– টিয়াপাখি!একটা কথা ছিলো,বলবো?
রাত দু’টার সময় উনি কল করে একটা কথা বলার জন্য পারমিশন চাচ্ছেন।আমি ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– রাত দু’টা বাঁজে!
– হুম জানি!
– গভীর ঘুমে নিমজ্জিত ছিলাম!
– সেটাও জানি!
– বাবুরাও ঘুমোচ্ছিলো!
– জানি!
– রাত দু’টোর সময় তাদের বাবা তাদের মা’কে কল করে একটা কথা বলার জন্য পারমিশন নিচ্ছে!তাদের বাবা কি কাজটা ঠিক করলো?
– খুশির খবর!তাই ভাবলাম গভীর রাতে স্পেশাল মানুষটাকে স্পেশালভাবে দেই!
আমি উঠে বসে বললাম,
– এইমুহূর্তে আমার কাছে খুশির খবর একটাই,সেটা হলো আপনার দেশে ফেরার খবর!
উনি কেঁশে বললেন,
– এখন যদি আমি বলি আমরা দেশে ব্যাক করছি!তুমি কি খুব খুশি হবে?
– কিহ্!!!
– ইয়েস!বাবুদের বাবাই আসছে!
– সত্যিই!!!
– …..
উনি চুপ!আমি বললাম,
– ফ্লাইট কখন?
– আমরা ফ্লাইটে!
আমি সাথে সাথেই মুখ চেঁপে নিজের ভেতর থেকে আসা আনন্দের চিৎকারটাকে কন্ট্রোল করে বললাম,
– তারমানে আজ!!!
– হুম!রাতের ঘুম হারাম করে দিলাম নাকি?
– একদম না!
উনি ফ্লাইটে আছেন বলে বেশিক্ষণ কথা বলতে পারলেন না।কিছুক্ষণ কথা বলেই রেখে দিলেন।পাশে ইয়াশ ঘুমিয়ে ছিলো।ইয়াশের পাশে মলি আপু।আমি আস্তে করে বেড থেকে নেমে পা টিঁপে টিঁপে মলির আপুর কাছে যেয়ে ফিসফিস করে বললাম,
– আপু!ইফাজ আসছে!
আপ ভয় পেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বললো,
– নড়েছে?নড়েছে?
আমি দ্রুত আপুর মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– ইয়াশ উঠে পড়বে,আস্তে!
আপু চোখ ঢলতে ঢলতে বললো,
– বেশি জোরে কিক মেরেছে?
– কেউ কোনো কিক মারে নি!ইফাজ ফ্লাইটে!উনি আসছেন!
আমার কথা শুনে আপু হাঁ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন!তারপর বললো,
– ওর না কয়েকদিন পর আসার কথা?
– হুম।
– তাহলে?
– জানিনা।
আপু কিছুটা রেগে গিয়ে বললো,
– এতো রাতে তোমাকে জাগিয়ে খবরটা না দিলেই কি চলছিলো না?প্রেগন্যান্ট বউ,এমনিতেই এখন রাতে ঠিকঠাক ঘুমোতে পারে না তারউপর এইরকম একটা সারপ্রাইজ দিয়ে রাতের ঘুমটা নষ্ট করলো!আক্কেল বলতে কিছু নেই নাকি?
– আপু প্লিজ এভাবে বোকো না!কষ্ট পাই!
– হুহ্!কথাগুলো এমনি এমনি বলছি না!তোমাদের কাউকে নিয়ে আমার টেনশন না!আমার টেনশন তোমাদের বেবিকে নিয়ে!
– একটা রাতই তো!কিচ্ছু হবে না!
বলেই আমি কিচেনের দিকে পা বাড়ালাম।আপু দৌড়ে এসে আমার সামনে দাড়িয়ে বললেন,
– কোথায় যাচ্ছো?
– কিচেনে।
– নো ওয়ে!এই অবস্থায় ওর জন্য স্পেশাল কিচ্ছু করতে হবে না।যাও শুঁয়ে পড়ো।
– আপু বেশি কিছু করবো না।যাস্ট মিষ্টিজাতীয় কিছু একটা করি,পাচঁমিনিট লাগবে!
– নো!নো!নো!
বলে আপু জোর করে আমাকে বেডে শুঁইয়ে দিয়ে বললেন,
– চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।বসে বসে আজরাত তোমাকে পাহারা দেবো।সো নো চালাকি!
– বেশি টাইম লাগবে না!প্লিজ?
– উফ্,হিয়া!আর একটা কথা বললে দেখো কি করি!চোখ বন্ধ করো!
আমি সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করলাম।আমি শিওর আমি এখন কিচ্ছু করতে পারবো না।কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে একবার চোখ খুলে দেখলাম আপু কি করে?আপু সেভাবেই দাড়িয়ে আছে।চোখ রাঙ্গিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম।কিছুতেই ঘুম আসবে না আজরাতে!আপু পাশে বসে মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো।ওহ্ মাই গড!প্লিজ আপু,হাতটা সড়িয়ে নাও!আমার ঘুম চলে আসবে!আমি ঘুমোতে চাই না!প্লিজ!
আপু আরো নিবিড়ভাবে হাত বুলানো শুরু করলো।আমি এইমুহূর্তে মোটেও ঘুমোতে চাচ্ছি না।
.
গরম নিশ্বাস আমার গালে পড়ছে!আমার পুরো দেহ বেধে রাখা।হাত-পা নাড়াতে পারছি না।নিশ্চয় আপুর কাজ।আমি জোরে একটা চিৎকার দিয়ে একঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলাম।আমার পায়ের উপর হাফপ্যান্টওয়ালা লম্বা একটা পা!আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে পাশফিরে বললাম “ইয়াশশশ!”
চোখের পলক ফেলার আগেই ইফাজ একটানে আমাকে শুঁইয়ে দিয়ে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে বললেন,
– টিয়াপাখি!ইয়াশ মলির সাথে স্কুলে চলে গিয়েছে!
আমি সারাশরীর কেঁপে উঠলো!চোখদুটো ঝাঁপসা হয়ে এলো!আমি কাঁপাহাতে উনার গালে হাত রাখলাম!উনি কিউট একটা হাসি দিলেন!অন্যহাত উনার বুকের ঠিক মাঝখানটায় রাখলাম!উনি খালি গায়ে,উনার বুকের ভেতর কাঁপছে!প্রচন্ড জোরে জোরে কাঁপছে!আমি চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম!ঘোর লেগে যাচ্ছে!উনি আমার কপালে চুঁমু খেয়ে ফিসফিস করে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুঁম!
আমি কম্পিত কন্ঠে জবাব দিলাম!উনি আরেকটা চুঁমু দিয়ে বললেন,
– এটা কি পরেছো?
আমি চোখ খুলে উনার দিকে তাকালাম! একচোখের পানি অন্যচোখের পাতার উপর দিয়ে দুইচোখের পানি মিলিত হয়ে গড়িয়ে উনার বাহুর উপর পড়লো!উনি চোখের পানি মুঁছে দিলেন!আমি চোখ নামিয়ে বললাম,
– মেক্সি!
– আমি রুমে ঢুকে যখন এই লুকে আমার ঘুমন্ত পরীকে দেখলাম….ওহ্ মাই গড!!!নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারিনি!মলি আর ইয়াশকে অন্যরুমে পাঠিয়ে দিয়ে কোনোরকমে শাওয়ার নিয়ে সেই যে বিসমিল্লাহ্ বলে জাপটে ধরে শুয়েছিলাম,আর ছাড়ার নাম নেই নি!তুমি তো দেখলাম খুব আরাম পেয়েছিলে!কি সুন্দর গুঁটিশুঁটি মেরে বাবু হয়ে এইবুকের ভেতর ঢুকে গিয়েছিলে,মাই গড্….মনে হলো কতদিন আমার টিয়াপাখিটা তৃষ্ণার্ত ছিলো!!!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 67
.
.
আমি উনাকে যতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরা যায় ততটাই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুকে কয়েকটা চুঁমু খেয়ে বুকে নাক ঘষে বললাম,
– সরি!আমি জেগে থাকার চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু আপু এমনভাবে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিলেন কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়াল করিনি।
উনি আমার পেছনে চুলের ভেতর একহাত ঢুকিয়ে আমার মাথা উনার বুকে চেঁপে ধরে বললেন,
– জেগে থাকলে কি লাভ হতো?কিছুই না!মলি একদম ঠিক কাজ করেছে!
– কখন এসেছেন?
– চারটার সময়!
উনার কথা শুনে আমি হাঁ হয়ে গেলাম!এতো আগে এসেছেন অথচ একটাবারের জন্যও আমি টের পেলাম না!এখন কয়টা বাঁজে?
আমি দেয়ালে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম!ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাঁজে!উনার বুক থেকে মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– খেয়েছেন কিছু?
– নাহ্!আসার সময় রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়েদেয়ে একেবারে রওনা দিয়েছি!
– কিহ্!দেখি ছাড়ুন….আমি এখনই কিছু বানিয়ে আনছি!
– একদম না!উঠলেই মাইর লাগাবো!আমার পেট ভরা!আর এখন ব্রেকফাস্টটা সেড়ে ফেললে বিকেল পর্যন্ত থাকতে পারবো!
কথাটা বলে উনি আমার থুতনী উচুঁ করে ধরলেন!হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে কিছুক্ষণ স্লাইড করে বিকেল পর্যন্ত যাতে না খেতে হয় সেইকাজটা সেড়ে ফেললেন!ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে মনে হলো একযুগ পেরিয়ে গেছে!ঠোঁটের কোণায় কামড়ের আঘাতে একটু কেটে গেছে!যেখানে উনি কিছুক্ষণ মালিশ করে ব্যাথাটা কমিয়ে দিলেন!কঁপালে কঁপাল ঠেকিয়ে বললেন,
– মলির কাছে শুনলাম বাবুরা নাকি এখন কিক মারে?
আমি লজ্জায় চোখ বন্ধ করে মাথা নেড়ে “হ্যা” সূচক উত্তর দিলাম!উনি আমাকে ছেড়ে পেটে মাথা রেখে ফিসফিস করে বললেন,
– আস্তে কিক মারবি!মা’যে ব্যাথা পায়!
উনি আঙ্গুল দিয়ে পেটের উপর বড় করে একটা লাভ আঁকলেন!তারপর লাভের মধ্যে পাশাপাশি সাতটা দাঁগ দিলেন!মাঝের পাঁচটা ছোট দাঁগ আর দুইপাশের দুইটা বড় দাঁগ দিলেন!আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না!তবুও উনি বুঝিয়ে দিলেন কোন দাঁগটা কে?আমি উঠে বসতেই উনি দ্রুত আমাকে ধরে বললেন,
– উঠলে কেনো?শুঁয়ে পড়ো!
– আপনাকে দেখবো!প্লিজ…
আমি বেডের সাথে হেলান দিয়ে হাতের ইশারায় উনাকে আমার কোলের মধ্যে শুঁতে বললাম!উনি হেসে সাবধানে শুঁয়ে বাবুদের আদর করা শুরু করলেন!সেই সুযোগে আমি একধ্যানে উনার দিকে তাকিয়ে উনাকে স্ক্যান করতে শুরু করলাম আর চুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে টেনে দিতে লাগলাম।উনি কোমড় জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বললেন,
– যতই চুল নিয়ে টানাটানি করো,আজ আমার ঘুম আসবে না!
– ফ্লাইটে ঘুমিয়ে ছিলেন?
– উহুম!
– তাহলে?
– টিয়াপাখি,বুঝো না কেনো?কতদিন পর আমার এই জানটাকে কাছে পেলাম,বলো তো!
কেউ কলিংবেল বাঁজালো!বেলের শব্দ শুনে উনি বললেন,
– এই অসময়ে আবার কে এলো?
– তুলি এসেছে,মনে হয়।
– এতো লেইট-এ কেনো?
– কয়েকদিন আগেই তো বিয়ে হলো।এখন এরকম একটু-আধটু লেইট হবেই।দেখি….উঠুন!খুলে দিয়ে আসি।
– তোমাকে যেতে হবে না।আমি যাচ্ছি।
– একদম না!ঢং…..সবসময় মেয়েদের বডি দেখানোর ইচ্ছা!
উনি চোখ বড় বড় করে বললেন,
– নাউযুবিল্লাহ্!কি যে বলো তুমি!তোমার ভালোর জন্যই বললাম!ওয়েট…আমি এখনই চেঞ্জ করছি!
উনি উঠে আলমারি থেকে একটা টি-শার্ট বের করে পড়ে নিলেন।একটানে বেড থেকে কম্বলটা নিয়ে হাফ-প্যান্টের উপর লুঙ্গি স্টাইলে পড়ে মেইনডোর খুলতে চলে গেলেন!উনার কান্ড দেখে আমি অবাক!এভাবে উদ্ভট সেঁজে চলে গেলেন?মানুষটা এমন কেনো?
আমি ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলাম।কিছুক্ষণ পর উনি লুঙ্গি খুলতে খুলতে রুমে ঢুকে বললেন,
– কনগ্রেস জানিয়ে আসলাম!
– আপনাকে দেখে লজ্জা পেলো না?
– লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
– হুট করে আজ আপনাকে দেখলো,তাও আবার এরকম উদ্ভট বেঁশে!সেই সাথে বিয়ের শুভেচ্ছা,তাই বললাম আরকি!
– নাহ্!ও তোমার মতো লাজুক না!
উনি টি-শার্ট খুলে বেডের উপর ফেলে রেখে আলমারি খুলে একটা প্যাকেট বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।আমি বললাম,
– কি এতে?
– খুলে দেখো!
আমি প্যাকেটটা খুলে ভেতরে বাচ্চাদের সেইম ডিজাইন,সেইম কালারের দুটো ওয়েস্টার্ন ড্রেস দেখলাম!ভীষন গর্জিয়াস!আমি অসহায়ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যদি একটা হয়,তখন?
– সো হোয়াট!নেক্সট ইয়ার আরেকজনকে নিয়ে আসবো!
– আর যদি ছেলে হয়?
– ওয়েট!
উনি আলমারি থেকে আরেকটা শপিংব্যাগ বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলেন!আমি ব্যাগটা খুলে দেখলাম ছেলেবাবুর ড্রেস!উনার দিকে ভ্রুঁ কুচঁকে তাকিয়ে বললাম,
– আলমারির ভেতর আর কি কি আছে?দেখি বের করুন!
– ইফায়া,ফাহিয়া আর তোমার জন্য কিছু আনি নি।সরি…
– কেনো?আমরা আপনার কেউ না?
– ওহ্ হো!আমার টিয়াপাখিটা দেখছি রাগ করেছে!সরি…পরেরবার তোমাদের জন্য আনবো!
আমি উঠে আলমারির কাছে গেলাম।তন্নতন্ন করে আলমারি খুঁজলাম।আমাদের তিনজনের জন্য কিছুই পেলাম না।উনি সত্যি করে কিছুই আনেন নি!
ম্যাজাজটা চরম রকমের খারাপ হয়ে গেলো!আমি প্রচন্ড পরিমানে রেগে গিয়ে ক্লিপ দিয়ে চুল আটকাতে আটকাতে হেলেদুলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।মানুষ যে এতটা খারাপ হতে পারে,সেটা উনাকে না দেখলে বোঝা যেতো না!
পেছন পেছন উনিও আসছেন।আমি উনাকে দেখেও না দেখার ভাঁন করে ড্রইংরুমে বসে টিভি অন করলাম।উনি আমার গাঁ ঘেষে বসলেন।হাত থেকে রিমোটটা নিয়ে নিউজ চ্যানেল দিলেন।আমি কিছুই বললাম না!উঠে ডাইনিং-এ চলে এলাম।চেয়ার টেনে বসে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খেতে শুরু করলাম।চেয়ার টেনে পাশে বসে সেইম কাজটা উনিও করলেন।আমি উঠে আসতেই উনি পেছন থেকে আস্তে করে আমার চুলের ক্লিপটা খুলে দিলেন।কিছুই বললাম না।রুমে পা দেওয়ার আগে বিসমিল্লাহ্ বলে নিলাম।চোখ বন্ধ করে রুমে ঢুকে চোখ খুলে প্রথমেই বেডের দিকে তাকালাম।আলহামদুলিল্লাহ্ বেডের ঠিক মাঝখানটায় দুটো শাড়ি আর দুটো ড্রেস রাখা!
উনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– খুশি তো?
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে একটু উঁচু হয়ে উনার থুঁতনীতে চুঁমু খেয়ে বললাম,
– মন বলছিলো সারপ্রাইজ আছে!
তুলি কিচেন থেকে ডাক দিয়ে জানান দিলো ব্রেকফাস্ট রেডী।
আমি বেডের দিকে পা বাড়ালাম!উনি যেতে দিলেন না!পেছন থেকে টেনে ধরে খুবই সাবধানে কোলে তুলে নিলেন!বললেন,
– এখন না।আগে ব্রেকফাস্ট।
আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে মাথা হেলিয়ে উনার কাধের উপর রাখলাম।
.
চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে দিয়ে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– এটা আগে শেষ করো!
আমি তিন নিশ্বাসে পানিটুকু শেষ করলাম।উনি মাত্রই আমার মুখের সামনে খাবার ধরেছেন সেইমুহূর্তে উনার ফোন বেঁজে উঠলো।দ্রুত বেডরুম থেকে ফোন নিয়ে আবার ব্যাক করলেন।লাউডে দিয়ে রিসিভ করে টেবিলের উপর ফোনটা রাখলেন।উনি আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন,
– বলো আম্মু।
– কেমন আছিস?
– ভালো,তুমি কেমন আছো?
– ভালো।বেয়াইয়ের কাছ থেকে হিয়াকে নিয়ে এসেছিস?
আন্টির কথাটা শোনামাত্রই আমি বেশম্ খেলাম!উনি দ্রুত পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে আন্টিকে বললেন,
– হ্যা আম্মু!এইতো ও আমার সামনেই বসে আছে।
– আহারে!কতদিন পর মনে হয় শান্তি পেলো মেয়েটা!ও’কে একটু দে’তো,কথা বলি!
আমি বেশম্ খাওয়ার উপরেই আছি!উনি ইশারায় আমাকে বললেন “কথা বলো!”
আমি আরেকগ্লাস পানি খেয়ে প্রথমেই সালাম দিলাম।আন্টি সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,
– কি?আমার মা’টা কি শান্তি পেলো নাকি এখনো মনখারাপ?
ইশ্!আন্টির এরকম প্রশ্ন শুনে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি!তাও আবার উনার সামনে!উনি মিটিমিটি হাসছেন!মাঝেমাঝে পরিস্থিতি এতোটা নির্মম কেনো হয়?
আমি বললাম,
– মা…
– কি মা,হুম?
আমি আস্তে করে বললাম,
– লজ্জা পাচ্ছি মা!
– ওরে আমার লজ্জাবতী মেয়েরে!এখন লজ্জা পাওয়া হচ্ছে,না?তা…এখানে আসছো কবে?
আমি কেঁশে বললাম,
– আপনার ছেলেকে বলুন!উনি যেদিন নিয়ে যাবে,সেদিনই যাবো।
– দেখি,দাও তো ইফাজকে।
উনি আমাকে খাঁইয়ে দিতে দিতে বললেন,
– বলো আম্মু!
– আসছিস কবে?
– কোথায়?
– কোথায় মানে?বাড়িতে!
– ওহ্ আম্মু,আজই তো হিয়াকে নিয়ে আসলাম!আর কিছুদিন যাক…তারপরই নাহয় একেবারে বাড়িতে নিয়ে যাবো।আর ফ্লাটে থাকবো না ভাবছি।
– আমার ছেলেটাকে আমি ভালোভাবে কাছে পাচ্ছিই না।মাঝে মাঝে যা একটু মলি নিয়ে আসে কিছুক্ষণ থাকতে না থাকতেই চলে যায়।
উনি মাথা চুঁলকে বললেন,
– কোন ছেলে মা?
– ভাবিস না তোর কথা বলছি।আমার ছোট ছেলে ইয়াশের কথা বলছি।
– ওহ্!
উনি আন্টির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দিলেন।আমাকে বললেন,
– মা’র সাথে কথা হয়?
– হুম!
– কিছু বলে না?
– কি বলবে?
– এই যে আম্মুর মতো লাইক “আসছিস কবে?যাবি কবে?”
– হুম হয়!
– কি বলো তখন?
– এভাবেই ম্যানেজ করি!বলি যে বাবা বাড়িতে নেই,আপুও থাকে শ্বশুরবাড়ি!মা একা একা থাকবে,মা’কে একা রেখে যাওয়া সম্ভব না।আম্মুও বুঝে যায়,তখন আর কিছু বলে না।
– ডেলিভারি ডেটেরও তো বেশিদিন নেই।ঠান্ডা মাথায় কিছু প্ল্যান সাঁজাতে হবে।আম্মুর হুটহাট আগমন ঘটতে পারে।
.
.
(চলবে)