#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 60+61
.
.
ভয়ের চঁটে জ্বর এসে গিয়েছিলো।সকালে উঠে ব্রেকফাস্টের পর মেডিসিন খেয়ে শুঁয়ে ছিলাম।সারাদিন ইফাজ আমার সাথেই ছিলো।
.
দুদিন পর আঙ্কেল আর আন্টি এসে ইয়াশকে নিয়ে গেলেন।সকালের দিকে আন্টি-আঙ্কেল এসে কিছুক্ষণ আমার সাথে সময় কাটিয়ে বিকেলের দিকে ইয়াশকে নিয়ে চলে গেলেন।আন্টি-আঙ্কেল যতক্ষণ বাসায় ছিলেন ততক্ষণই আমি গায়ে একটা শাল জড়িয়ে ছিলাম।এই গরমে শাল নেওয়াতে আন্টি অবশ্য জিজ্ঞেস করেছিলেন শাল কেনো পরে আছি?আমি ঠান্ডা লাগার বাহানা দিয়ে কেটে পরেছি।
আন্টি-আঙ্কেলকে ফ্লাটে ঢুকতে দেখে ইয়াশের সেকি কান্না।আমাকে নিয়ে রুমে দরজা লক করে বসে ছিলো কতক্ষণ।আমি তো আন্টিকে সাফ্ জানিয়ে দিয়েছিলাম আপনারা একাই ঘুরে আসুন,ইয়াশকে অন্য কোনোদিন নিয়ে যাবেন।কিন্তু আঙ্কেলের ছেলেকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না।যারজন্য আঙ্কেল নেটে সার্চ দিয়ে ইয়াশকে বিশাল বড় বড় ঝরনা,পাহাড়,চা বাগান,সমুদ্র আরো অনেক অনেক চোখ ধাঁধানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় প্লেস দেখিয়ে ইয়াশের উইক পয়েন্টে আঘাত করে ছলেবলে কৌশলে আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলেন।
.
আজ সন্ধ্যেয় তুলি আসে নি।রাতের কোনো আইটেম এখনো করা হয়নি।কিচেনে রান্না করার জন্য ঢুকতেই পেছন পেছন ইফাজও এলেন আমাকে পাহারা দিতে।আমি রাইসকুকারে ভাত বসিয়ে দিয়ে তরকারী রাঁধার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করছিলাম!ইফাজ হঠাৎ শাড়ির আঁচল টান দিয়ে বললেন,
– টিয়াপাখি!
– হুম!
– মাঝেমধ্যে তোমার মুখ থেকে “তুমি” ডাক শুনতে ভীষন মিষ্টি লাগে।
সেইমুহূর্তে তোমাকে যাস্ট খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে!এখন একটু লক্ষী বউয়ের মতো “তুমি” করে ডাকো তো!
আমি উনার হাত থেকে শাড়ির আঁচল টান দিয়ে বললাম,
– সম্ভব না!ছাড়ুন!
বলেই আমি রান্নায় মন দিলাম!উনার দিকে তাকালাম না পর্যন্ত!এইমুহূর্তে উনার দিকে তাকালেই বিপদ!উনি শাড়ির আঁচল জোরে টান দিয়ে বললেন,
– এ্যাই বউ!
আমি হাতের নাইফটা উনার দিকে তাক করে বললাম,
– গেট আউট!
উনি নিজের বুকে হাত রেখে ভয় পেয়েছে এমন ভঙ্গিমা করে এককদম পিছিয়ে গেলেন।সাথে সাথেই কাছে এসে আমার পেছনে গা ঘেঁষে দাড়িয়ে গাল টেনে বললেন,
– এতো বড় সাহস তোমার?
– উফ্!দেখি ছাড়ুন!বারোটা বাঁজাচ্ছেন কিন্তু রান্নার!
উনি আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আঁচল কোমড়ে গুঁজে দিয়ে বললেন,
– রান্নার সময় এভাবে কোমড়ে শাড়ি গুঁজে রান্না করতে হয়,জানো না?
– নাতো!কোন বইয়ে লেখা আছে?
– তোমার বাবুদের বাবার বইয়ে লেখা আছে!সেখানে আরো অনেককিছু লেখা আছে যেমন ধরো ইফাজের বউকে পিন ছাড়া শাড়ি পরতে হবে,রাস্তায় বের হওয়ার আগে বউয়ের পেটিকোটের নাড় টাইট করে বেঁধে…..
উনার কথা শেষ করতে দিলাম না!কঁনুই দিয়ে পেটে গুঁতো দিয়ে বললাম,
– অসভ্য একটা!আপনার এখানে থাকার কোনো রাইট নেই!বের হোন কিচেন থেকে!ডাইনিং-এ গিয়ে বসুন নয়তো টিভি দেখুন!
– বাকিগুলো শুনবে না?
কথাটা বলেই উনি আমার গাল চেঁপে ধরে যাস্ট আমার মাথা উনার দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে একটা চুঁমু খেয়ে বসলেন,সাথে কামড় ফ্রি!আমি “আহ্” বলে চিৎকার দিতেই ইফাজ হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ঠোঁটে মালিশ করে দিয়ে বললেন “স্যরি,টিয়াপাখি!”
আমি উনাকে জোর করে কিচেন থেকে বের করে দিলাম!এতক্ষণে অর্ধেক রান্না হয়ে যেতো!কিচেনের দরজা লাগিয়ে রান্নায় মনোযোগ দিলাম।
.
আধাঘন্টার মধ্যে রান্না শেষ করে ডাইনিং-এ খাবার পরিবেশন করে উনাকে ডাকলাম!উনি টিভি দেখছিলেন ড্রইংরুমে!ডাইনিং-এ এসে একটা চেয়ার টেনে আমাকে বসিয়ে প্লেটে ভাত-তরকারি মাখিয়ে এক লোকমা আমার মুখের সামনে ধরে বললেন,
– হাঁ করো!
– আমি একাই খেতে পারবো।আপনি আগে শুরু করুন।
– অনেক করেছো,আর না।রান্নাটা আমি পারলে এইটুকুও করতে দিতাম না।নাও,হাঁ করো।
আমি পাশের চেয়ারটা টেনে বললাম,
– বসুন আগে!
উনি চেয়ারে বসে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলেন।উনিও খাচ্ছেন,আমাকেও খাঁইয়ে দিচ্ছেন।এভাবে আরো একপ্লেট ভাত নিয়ে সেটাও খাঁইয়ে দিলেন!উনার ভাষ্যমতে “এতক্ষণ আমরা খেয়েছি,এখন বাবুরা খাবে!”
একপ্লেট ভাত-ই এতোদিন খেতাম না,ওদের জন্য এখন নিয়ম করে দুইপ্লেট খেতে হয়!
.
ঘুমানোর সময় হঠাৎ আম্মুর ফোন আসলো।এতোরাতে কেনো?আমি রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছো?
– ভালো আছি।একটা কথা বলতে ফোন দিলাম।
– হুম,বলো।
– পরশু তো তোর আব্বু চলে যাচ্ছে,তো কাল যদি সময় করে ইফাজকে নিয়ে আসতি ভালো হতো।
– কালই?
– হুম।
– আচ্ছা,দেখি।
– আচ্ছা তাহলে রাখি,খোদা হাফেজ!
– খোদা হাফেজ!
ফোনটা ঢিল মেরে বিছানার মাঝখানে ফেলে দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ ভাবলাম।যাওয়াটা কি ঠিক হবে নাকি না?পেটের দিকে একবার তাকালাম।বোঝা যায় কি?হুম,যাচ্ছেই তো বোঝা!আমি দ্রুত বেড থেকে নেমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়ালাম!এপাশ-ওপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলাম!যাচ্ছে বোঝা!একটা শাল ইউজ করতে হবে!তাহলে আর কেউ টের পাবে না!আর নাফিসা তো আছেই….ম্যানেজ করতে পারবে!
উনি রুমে ঢুকে আমার কান্ড দেখে বললেন,
– ঘুরে ঘুরে কি দেখছো?
আমি মিররের ভেতর দিয়ে উনাকে কাছে ডাকলাম!উনি কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
– কি?
– দেখুন তো আমাকে বোঝা যায় নাকি?
উনি ভ্রুঁ কুচঁকে জিজ্ঞেস করলেন,
– মানে?
– আব্বু পরশু চলে যাবে।একটু আগে আম্মু কল করে কাল আপনাকে নিয়ে আব্বুর সাথে দেখা করার জন্য বাসায় যেতে বললো।সেটাই দেখছিলাম বোঝা যায় নাকি?
আচঁমোকা উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আজ সকালে আব্বু-আম্মুকে যেভাবে বোকা বানালে সেভাবে নাফিসা বাদে অন্য সবাইকে বোকা বানাবে!
ইফাজ পেটে হাত রেখে বললো,
– কিন্তু ম্যাডাম,আমার সোনামনিরা অলরেডি অনেকটাই বড় হয়ে গেছে!এখন কাউকে বোকা বানানো সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না!
– তাহলে?
– কালকের কথা কাল দেখা যাবে।অনেক রাত হয়েছে ঘুমাতে চলো।
বলেই কোলে তুলে নিলেন!বেডের অপজিট সাইডে এসে আমাকে বেডে নামানোর আগেই আমি বলে উঠলাম,
– প্লিজ,এখনই না!কিছুক্ষণ কোলে নিয়ে হাটুন!ভালো লাগে খুব!
ইফাজ আমার নাকের সাথে নাক ঘষে বললেন,
– ওরে আমার দুষ্টু মহারাণী রে!
উনার কথা-টা শুনে আমি হেসে ইফাজের পরনের শার্ট আঁকড়ে ধরে উনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম!
ইফাজ আমাকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন!কিছুক্ষণ পরপর সামান্য উপরে তুলে ঠোঁটে চুঁমু খাচ্ছেন!এটা নাকি উনার ফি!আমি কিছুই বলছি না!যতবার উনি কাজটা করছেন ততবারই আমার ঠোঁট প্রসারিত হচ্ছে!
.
কলিংবেলের শব্দে সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে ইফাজকে দেখতে পেলাম না।ওয়াশরুমে মনে হয়!আমি বেড থেকে নেমে মেইনডোরের দিকে পা বাড়ালাম।তুলি কলিংবেল বাঁজাচ্ছে।মেইনডোর খুলতেই তুলি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সালাম দিলো।প্রতিত্ত্যুরে আমিও হেসে সালামের উত্তর নিলাম।তুলি কিচেনে চলে গেলো।আমি রুমে এসে ওয়াশরুমে নক করে ইফাজকে তাড়াতাড়ি বের হতে বললাম।ভেতর থেকে উনি জবাব দিলেন,
– খোলা আছে!ঢুকে পড়ো!
আমি দরজা হালকা খুলে দেখলাম ইফাজ হাই কমোডের ঢাকনার উপর বসে বসে ব্রাশ করছেন।ছিঃ!কি বিচ্ছিরি অবস্থা!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,
– এটা কি ব্রাশ করার জায়গা?
উনি হেসে বললেন,
– আমি তো প্রতিদিন এই স্টাইলেই ব্রাশ করি।
আমি ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে বললাম,
– দেখি সরুন!বেশিক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়!
আমার কথা শুনে ইফাজ হাসতে হাসতে ফ্লাশের সাথে হেলান দিয়ে আমাকে একটানে কোলে বসিয়ে বললেন,
– নাও বসো!সবজায়গায় রোম্যান্স চলবে!
আমি বিরক্ত নিয়ে বললাম,
– ছিঃ!কমোড ভেঙ্গে নিচে পড়ে যাবো!আপনি উঠুন,আমি একাই বসবো!
– কি যে বলো না…তোমার আর কি ওজন!তোমার থেকে এই হাই কমোডের ওজনই বেশি!নিতে পারবে,বসো বসো!
আমি উঠে চলে আসলাম!যতোই হোক কম ওজন!ভেঙ্গে গেলেই কেলেঙ্কারি! নিউজে আসবে এক দম্পতি হাই কমোডে বসে ব্রাশ-রোম্যান্সের সময় কমোড ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে গেছে!ইয়াক!!!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 61
.
.
দুজনে একসাথে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম।আমি টাওয়াল দিয়ে হাত-মুখ মুঁছে বেডে শুঁয়ে পরলাম।উনি আলমারি থেকে দুইটা শর্টস বের করে আমার সামনে ধরে বললেন,
– দেখো তো কোনটা পরবো?
উনার কান্ড দেখে আমি হতভম্ব হয়ে চোখ বড় বড় উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– দিন দিন আপনি এতো নির্লজ্জ্ব হয়ে যাচ্ছেন কেনো?
উনি আমার কথায় ভ্রুঁক্ষেপ না করে বললেন,
– রেডটা বেশি কিউট!শ্বশুরবাড়ি এটা পরেই যাবো!
– এক্সকিউজ মি,আপনি কি শ্বশুরবাড়ি গিয়ে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াবেন “দেখো সবাই আমি রেড পরেছি!”
আমার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে ইফাজ হাসতে হাসতে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
– এক্সচুয়ালি তোমার রিয়্যাকশন দেখতে চাচ্ছিলাম!
বলেই উনি ব্ল্যাকটা আমার উপর রেখে রেডটা নিয়ে গেলেন।আলমারি থেকে স্কাই-ব্লু শার্ট,ব্ল্যাক প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।উনার মতলব কি?উনি কি এখনই শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন?
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে উনি শার্ট ইন করতে করতে বললেন,
– এখনো শুয়ে আছো যে?তাড়াতাড়ি ওঠো!ব্রেকফাস্ট করেই বের হবো,ফাস্ট!
– আমার লেইট হবে একটু!
– এভাবে শুঁয়ে থাকলে তো লেইট হবেই!
উনি আলমারি থেকে স্কাই-ব্লু কালার শাড়ি বের করে বললেন,
– এই শাড়িটা পরবে আজ!
– রাখুন!
উনি শাড়িটা কাধে নিয়ে আমাকে বেড থেকে নামিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে শাড়িটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
– দশমিনিট টাইম!তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করবে!
আমি বাধ্য বউয়ের মতো দশমিনিটে চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হলাম!উনি বেল্ট লাগাতে লাগাতে বললেন,
– ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসো!আজ আমি তোমাকে সাজিয়ে দেবো!
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সিরিয়াসলি?
– ইয়েস ম্যাডাম!
আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসতেই উনি আমার দুইকাধে হাত রেখে আয়নার ভেতর দিয়ে ঠোঁটের ইশারায় আমাকে চুঁমু খেলেন!আমি আমার কাধে উনার দুইহাতের উপর হাত রেখে উনার সাথে হেলান দিয়ে মিষ্টি হাসলাম!উনি আমার মুখটা তুলে পেছন থেকে কপালে চুঁমু খেলেন!
কিছুক্ষণ ওভাবে থেকে উনি আমার সামনে এসে কাজল,আইলানার,লিপস্টিক,
হিজাব-পিন সব একসাথে আমার কোলের মধ্যে রেখে সাজাতে শুরু করলেন!ইফাজ মেক-আপ একদম পছন্দ করে না!নরমাল সাঁজ পছন্দ!
প্রথমে কাজল নিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে চোখে আলতো করে কাঁজল পরিয়ে দিলো।দেন আইলানার দিয়ে দিলো।রেড লিপস্টিক হালকা দিয়ে নিজের আঙ্গুল দিয়ে একটু ঘষে দিলো।চুলগুলো উপরে উঠিয়ে ক্লিপ দিয়ে লাগিয়ে দিলেন।হোয়াইট কালার একটা হিজাব আলমারি থেকে বের করে সুন্দর করে হিজাব-টা পরিয়ে দিয়ে উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– ইফাজ’স কুইন!
বলেই আমাকে হাত ধরে দাড় করিয়ে কঁপালে একটা চুঁমু দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি!
আমিও উনার পিঠে হাত রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– হুম!
– ওইদিন যদি আমি অনিমের বাসায় না যেতাম,তাহলে কি হতো বলো তো?তোমাকে তো সারাজীবন সাধনা করেও পেতাম না,অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে…..
উনার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না,আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না!
– আরে এতো সিরিয়াস হচ্ছো কেনো? মজা করছিলাম তো!দেখো,আমার বাম পাঁজর দিয়ে তুমি তৈরী,সো তুমি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকতে না কেনো দিনশেষে আমার কাছেই ছুটে আসতে!
হঠাৎ তুলির কন্ঠ ভেসে এলো “আপা!ব্রেকফাস্ট রেডি,আসেন।”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– তাহলে ওটা কেনো বললেন অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে….?
উনি হেসে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
– সেই অন্য মেয়েটাও তুমিই হতে,পাগলি!
আমি উনাকে ছেড়ে দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে একটু উঁচু হতেই উনি আমার কোমড় ধরে উপরে তুলে চুঁমু খেয়ে বললেন,
– থ্যাংকস!ব্রেকফাস্ট করানোর জন্য!
আমাকে ছেড়ে উনি ড্রেসিংটেবিলের সামনে থেকে লিপস্টিক নিয়ে আমার ঠোঁটে লাগিয়ে দিলেন!পারফিউম নিয়ে নিজের বডিতে স্প্রে করতে করতে বললেন,
– যেই শাড়িটা পরেছো এটা তোমাকে যেদিন ফার্স্ট দেখেছিলাম সেদিন কিনে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম!আজ বলে দিলাম কথাটা!
উনার কথা শুনে আমি হাঁ হয়ে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে শাড়ির কুঁচি ধরে ডাইনিং-এ চলে এলাম।উনার নজরে পরার পর থেকেই তারমানে আমি উনার ভালোবাসা পাচ্ছি!!!উফ্,ভাবতেই শরীর শিঁউরে উঠছে!
.
চেয়ার টেনে বসতে বসতে তুলিকে বললাম,
– তুমিও আমাদের সাথে বসো।আমরা এখনই বেরুবো তো,তাই আরকি।
– কই যাইবেন?
আমি হেসে বললাম,
– তোমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ি!
আমার কথা শুনে তুলি ফিক করে হেসে দিলো।ইফাজকে ডাইনিং-এর দিকে আসতে দেখে তুলি হাসিমুখ বন্ধ করলো।উনি চেয়ার টেনে বসে তুলিকে বললেন,
– দাড়িয়ে আছো কেনো?বসো।আমাদের হাতে কিন্তু একদম সময় নেই।
তুলি সাত-পাঁচ না ভেবে কর্নারের একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো।
.
ব্রেকফাস্ট শেষে তুলিকে সন্ধ্যেয় আসতে মানা করলাম।রুমে এসে আমি আলমারি থেকে একটা শাল বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভালো করে নিজেকে একবার দেখে নিলাম।হাতদুটো সারাক্ষন পেটের উপর রাখলে আর বোঝা যাবে না।উনি রুমে ঢুকে আমাদের দুজনের ফোন পকেটে ঢুকিয়ে হ্যান্ডওয়াচ পরতে পরতে বললেন,
– চলো!
আমি জানালা-দরজা,লাইট,ফ্যান,এসি সব অফ করে উনার সাথে বেরিয়ে পরলাম।
.
.
এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই আমি বুকে ফুঁ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম!কি যে হবে!লিফ্টে থাকাকালীন পুরো সময় উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে ছিলেন!কলিংবেল চাঁপার আগে আমি উনার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম!উনি চোখের ইশারায় কলিংবেল চাঁপতে বললেন!আমি কলিংবেল চেঁপে ধরে থাকলাম,ছাড়লাম না!উনি আমার হাত চেঁপে ধরে বললেন,
– রিলেক্স টিয়াপাখি!
আমি কিছুই বললাম না।উনার সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালাম!
মেইনডোর নাফিসা খুললো!আমাকে দেখার সাথে সাথেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো “আপু!”
বলেই জড়িয়ে ধরে সাথে সাথেই ছেড়ে দিয়ে জিভ কেটে বললো,
– ওহ্ সরি,সরি!খেয়াল ছিলো না!
আমি হেসে বললাম,
– প্রবলেম নেই,ধরতে পারিস!
নাফিসা আমার পেটের কাছ থেকে শাল সড়িয়ে পেটের দিকে তাকিয়ে বললো,
– মাই গড!!
বলেই পেটে হাত বুলিয়ে দিলো।এই মেয়ের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের আজ ভেতরে ঢোকা হবে না।আমি নাফিসাকে সাইড করে উনাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।নাফিসা মেইনডোর লাগিয়ে আমাদের পেছন পেছন আসলো।আমি উনাকে সোফায় বসতে বলে আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালাম।আব্বু শুঁয়ে ছিলো কিন্তু চোখ খোলা।আমি কাছে গিয়ে আব্বুর কানের কাছে চিৎকার দিয়ে বললাম “আব্বু!”
চিৎকার শুনে আব্বু একলাফে বেডের অন্যসাইডে চলে গেলো।হায়!হায়!আব্বু এতো ভয় পাবে,ভাবতেই পারি নি।আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
– আমার বড় মা এসেছে দেখছি!
বলেই হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।এই চিৎকারটা যদি বিয়ের আগে দিতাম নির্ঘাত এখন একটা ঝাড়ি খেতাম।আমি আব্বুর হাত ধরে একসাইড থেকে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কেমন আছো?
– আছি ভালো।তুই কেমন আছিস?
– ভালো!
– জামাই কই?
– ড্রইংরুমে,চলো।আম্মু কোথায়?
– কিচেনে।
আব্বু বেড থেকে নেমে ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো।আমি আব্বুকে বলে কিচেনে আম্মুর কাছে চলে এলাম।আম্মুকে একইভাবে কানের কাছে চিৎকার দিয়ে ভয় দেখাতে চেয়েছিলাম,চিৎকার দিলাম ঠিকই কিন্তু আম্মু ভয় পেলো না।আমাকে দেখেই আম্মুর চোখ ছলছল করে উঠলো।জড়িয়ে ধরে বললো,
– কখন এলি?
– মাত্র!
– কেমন আছিস?
– খুব ভালো।তুমি?
– আছি….নাফিসার টেনশনে তো দিনদিন জীবন যায় যায় অবস্থা!
– কেনো?ও আবার কি করলো?
– এখানে ভর্তি করানোর পর থেকে ওর পড়াশোনা পুরো গোল্লায় গেছে।তোর আব্বু তো ইদানিং আমাকে বকতে বকতে শেষ।আমি নাকি ভালোভাবে গাইড দিচ্ছি না,বেশি আদর করছি ইদানিং।কিন্তু তিনি যে এই তিনদিন মেয়েকে নিয়ে পুরো ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে,সেটা কিছুই না।
আম্মুর কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– আব্বু তো ওরকমই।এখন তো আবার আমি নেই।সব আদর নাফিসাকেই দিচ্ছে।
– ইদানিং তোর কথা বলতেই তোর আব্বুর চোখে পানি চলে আসে।মাঝে মাঝে তো এও বলে “ইশ্!মেয়েটাকে এতো কম বয়সেই আমাদের কাছ থেকে বিদায় দিয়ে দিলাম!”
– আরে!তুমি আবার কাঁদছো কেনো?দেখি চোখ মুছো!এইসব আলোচনা বাদ!উনি ড্রইংরুমে বসে আছেন,দেখা করবে চলো!
আম্মু হেসে বললো “চল।”
.
আম্মু আর আমি ড্রইংরুমে চলে এলাম!আম্মুকে দেখে উনি দাড়িয়ে সালাম দিয়ে বসলেন।আমি নাফিসাকে নিয়ে রুমে চলে এলাম।শালটা বেডে রেখে চিৎ হয়ে শুঁয়ে পরলাম!নাফিসা আমার পাশে বসে আমার পেটে হাত রেখে বললো,
– আপু!আমি তো ভাবতেই পারছি না,তুমি প্রেগন্যান্ট!!!
নাফিসার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– আমাকে কেমন লাগছে দেখতে?
– একদম মা মা লাগছে!আগের থেকে বেশি কিউট হয়ে গেছো!
নাফিসার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– মানুষ মন থেকে কোনোকিছু চাইলে নাকি সেটাই হয়!তোর ভাইয়া তো মন থেকে টুইন্স বেবি চাচ্ছে!ভেতরে যে কয়টা আছে কে জানে!
নাফিসা চোখ বড় বড় করে উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে বললো,
– ওয়াও!টুইন্স বেবি!
.
.
(চলবে)