#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 40+41
.
.
উনি দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বললেন,
– রাগ করেছো?
– ….
– এ্যাই টিয়াপাখি!
উনি খুব আহ্লাদী কন্ঠে ডাক দিলেন!আমি তবুও সাড়া দিলাম না!উনি আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আমাকে একদম পিষে ফেললেন!কিছুক্ষণ আগে ফ্রেশ হয়ে এসেছেন!যারজন্য হাত-পা-মুখ প্রচুর ঠান্ডা!আমার দম একেবারে বন্ধ হয়ে আসছে!উনার হাতের লোমগুলো টানতে টানতে বললাম,
– মরে গেলাম!আস্তে….আস্তে ধরুন!
– উহু!আস্তে ধরলে শীত লাগে আমার!তোমার শরীর অনেক গরম!ভাল্লাগছে….
– আপনার শরীর যে বরফ হয়ে আছে!প্রচুর ঠান্ডা!
উনি গলায় একটা চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
– হয়ে যাবে গরম!আর কথা না….চুপ!
– উউউউ দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার!
– কথা কম!
– আমি ঘুমাবো এখন!ছাড়ুননন…
– একটু আগে তুমি রাতের ঘুম ঘুমিয়েছো!এখন আবার কিসের ঘুম…..চুপচাপ থাকো!
.
.
রাত দু’টোর সময় হঠাৎ কেউ রুমের দরজা নক করলো!উনি আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন,
– কে?
– ভাইয়া আমি।
নাফিসা দরজার ওপাশ থেকে উত্তর দিলো।
– হুম বলো!
– ভাইয়া…আপু কি ঘুমিয়ে পরেছে?
– হুম!কিছু বলবে?
– ভাইয়া…ইয়াশ মনে হচ্ছে উঠে পড়বে!আমার কেমন যেনো ভয় লাগছে!আপুকে একটু ডেকে তুলে পাঠিয়ে দিন না!
নাফিসার কথা শুনে উনি আমার পায়ের সাথে পা ঘষে বললেন,
– আমাদের বেবি হলে তাদেরকে ভবিষ্যতে আমি ইয়াশের বউয়ের পেছনে লাগিয়ে দেবো!তখন বুঝবে বউকে এভাবে হুটহাট কেড়ে নেওয়ার জ্বালা কত!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম!উনি আমার দু’চোখে চুমু খেয়ে আরো কিছুক্ষণ আদর করে ছেড়ে দিলেন!
.
.
ইয়াশকে মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে আমি আর নাফিসা দু’জন দুপাশে শুয়ে পরলাম!আমি ইয়াশকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম!তখন একটু ঘুমিয়েছিলাম সেইমুহূর্তে নাফিসার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো!এখন নিশ্চিত চোখ বন্ধ করলেই ঘুম চলে আসবে!
হঠাৎ নাফিসা বলে উঠলো,
– আপু,শাওয়ার না নিয়ে আসলা কেনো?
নাফিসার প্রশ্নটা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– মানে?
– ফরয গোসলের কথা বলছিলাম আরকি!
নাফিসার কথা শুনে আমি দাতের সাথে দাত চেঁপে বললাম,
– ঠিকভাবে কথা বল নাফিসা!আমি কিন্তু তোর বড়!
– আরে…রাগ করছো কেনো?আমি তো তোমার গুনাহ্ কমানোর জন্য কথাটা বললাম!
– নাফিসার বাচ্চা…..ওইসব কিচ্ছু হয়নি!আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে ছিলাম!
আমার কথাটা শোনামাত্রই নাফিসার চেহারা পরিবর্তন হয়ে মুখ হা হয়ে চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো!নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়ে কাঁচুমাঁচু হয়ে পাশফিরে শুয়ে পরলো!
.
সকাল আট’টায় ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম ইয়াশ আমার একহাতের উপর শুয়ে ফোনে গেইম খেলছে।গেইম খেলার এতো নেশা ওর।সুযোগ পেলেই ফোন নিয়ে পড়ে থাকবে।
আমি ইয়াশের কপালে চুমো দিয়ে বললাম,
– ঘুম ভেঙ্গেছে কখন সোনার?
– মাত্রই।
– ফ্রেশ হয়েছো?
– উহুম।
– ওহ্!তাহলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো।কালরাতে কিন্তু কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
– হুম!তুমিও উঠো।
আমি ইয়াশকে নিয়ে উঠে পরলাম।ইয়াশকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিয়ে নাফিসাকে ডেকে তুললাম।নাফিসা হাই তুলতে তুলতে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে গেলো।আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে গুঁছিয়ে রেখে ইয়াশকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে এলাম।
.
আম্মু ডাইনিং-এ খাবার সার্ভ করছিলো!আব্বু বসে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো!আমাদের দেখামাত্রই ইয়াশকে ডেকে চেয়ারে বসিয়ে আম্মু পাশে চেয়ার টেনে বসে ইয়াশকে খাওয়াতে শুরু করলো।ইয়াশ চুপচাপ পা নাঁচিয়ে নাঁচিয়ে খেতে লাগলো!
.
আমি আমার রুমে ঢুকতেই দেখলাম নাফিসা আবার ঘুমাচ্ছে।তখন নিশ্চয় কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছি।আমি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং-এ এসে ইয়াশের পাশের চেয়ার টেনে যেই বসতে যাবো সেইমুহূর্তে আম্মু বলে উঠলো,
– ইফাজ কই?ও’কে ডেকে আন আগে!যা…
– উনি ঘুমোচ্ছেন!ঘুম ভাঙ্গলে এমনিতেই চলে আসবেন!
– গাধী!জামাই মানুষ….বলে কিনা ঘুম ভাঙ্গলে এমনিতেই চলে আসবে।যা নিয়ে আয়!
– আম্মু প্লিজ….
– মামনি!যাও ডেকে নিয়ে আসো!
পাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো!
.
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে দাদুর ফ্লাটে চলে এলাম!উনি যেই রুমে ঘুমিয়েছেন সেই রুমের দরজা হালকা খুলে ভেতরে উঁকি দিলাম!উনি নিরালায় ঘুমোচ্ছেন!
.
আমি ধাক্কা দিয়ে দরজা পুরোটা খুলে বললাম,
– এই যে উঠুন!আম্মু ডাকছে!
উনি একটুও নড়লেন না!হয়তোবা শুনতে পাননি!আমি আবার ডাকলাম তবুও নড়লেন না!পরেরবার আরেকটু জোরে ডাকলাম!উনার কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না!
.
বাধ্য হয়ে কাছে গিয়ে উনার কাধে হাত রেখে সামান্য ধাক্কা দিলাম!উনি একটু নড়ে উঠলেন!আমি আবার ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– দশ’টা বাঁজে!তাড়াতাড়ি উঠুন!
উনি আমার কথাটা শুনতে পেয়ে দুইহাত একসাথে উপরে তুলে হাই তুলতে তুলতে বললেন,
– কয়টা বাঁজে?
– এগারোটা!
– কিহ্!এতো সকাল হয়ে গেছে!আগে ডাকোনি কেনো?
– সেই আট’টা থেকে ডাকছি!আপনি-ই তো উঠছিলেন না!আব্বু ডাকছে….তাড়াতাড়ি উঠুন!
– আমার শার্ট-প্যান্ট এনে দাও জলদি!
.
ওহ্…আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!আমি দ্রুত আমাদের ফ্লাটে যেয়ে লাগেজ থেকে উনার শার্ট-প্যান্ট বের করে কিছুক্ষণ উনার শার্টের ঘ্রাণ নিয়ে দ্রুত হাঁটা দিলাম!
.
রুমে এসে উনার সামনে শার্ট-প্যান্ট ধরে বললাম,
– নিন!
– এখন ক’টা বাঁজে?
উনার প্রশ্নটা শুনে আমি কেঁশে উঠলাম!নিচুস্বরে বললাম,
– সরি!আম্মু আপনাকে তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে যেতে বলছিলো তাই….
– সরি গ্রহনযোগ্য নয়!
বলেই উনি আমার একহাত ধরে বললেন,
– নাও…..ফাস্ট একটা লিপকিস করে ফেলো তো!
– আর কখনো মিথ্যা বলবো না!সরি…
– আবার সরি?
– আজকেই লাষ্ট!এই যে আপনার হাত ধরে প্রমিজ করলাম!
– হামলাটা দেখছি আমাকেই করতে হবে!
বলেই উনি উনার সেইবিখ্যাত কাজটা পাঁচমিনিটেই করে ফেললেন!
.
.
ওয়াশরুমে ঢুকে দশমিনিটে ফ্রেশ হয়ে আমাকে নিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে এলেন!
.
ডাইনিং-এ আব্বুকে দেখতে পেয়ে আব্বুকে সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে পাশে বসলেন!আমি রুমে চলে এলাম!নাফিসা টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো!আমাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ইয়াশ কই আপু?
– ব্রেকফাস্ট করে!
– ভাইয়া উঠেছে?
– হুম!উনিও ব্রেকফাস্ট করছেন!
.
নাফিসা টাওয়ালটা রেখে আমার পাশে বসে বললো,
– তুমি এখনো ভাইয়াকে “আপনি” বলে সম্বোধন করো?
– হুম!কেনো?
– ভাইয়া কিছু বলে না?
– হুম!বাসররাতে “তুমি” করে বলার জন্য খুব জোর করেছিলো!
নাফিসা উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– বলেছিলে তুমি?
– উহুম!আমি বলেছিলাম উনি যখন আমার সাথে রাগ করে থাকবে তখন “তুমি” করে বলবো!তার আগে নয়!
– রাগ করেছিলো একবারো?
– নাহ্!আমি উনার সামনে দাড়ালেই নাকি উনার সব রাগ উড়ে যায়!আমাকে দেখলেই নাকি উনার ঠোঁটে নিজের অজান্তেই হাসি চলে আসে!
– তাহলে তো হলোই….এইজন্মে আর বউয়ের মুখে তুমি শোনা হবে না ভাইয়ার!
নাফিসা পাশ থেকে উঠে আমার কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো,
– গুড জব….এগিয়ে যাও!
– মাইর খাবি কিন্তু আমার হাতের!বেয়াদব কোথাকার!দিনদিন আমাকে রেসপেক্ট করা ভুলে যাচ্ছিস তুই!
.
.
(চলবে)

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 41
.
.
দুপুরের লাঞ্চ করে আমরা বেরিয়ে পরলাম।শ্বশুরবাড়ি পৌছতে প্রায় পঁচিশ মিনিটের মতো লেগেছে।আমি আর ইয়াশ দু’জন দুজনের হাত ধরে আগে আগে চলে আসলাম।উনি গাড়ি থেকে লাগেজ নামিয়ে পেছন পেছন আসছেন।
.
আঙ্কেল,আন্টি,আপু,ভাইয়া,মাহিন,মনি সবাই একসাথে লাঞ্চ করছিলো।আমাদের দেখতে পেয়ে আন্টি প্লেটের উপর হাত সামান্য ঝাঁকি দিয়ে কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমরা তো ভেবেছিলাম বিকেলের দিকে আসবে।
– আপনার ছেলে তাড়া দিচ্ছিলো!বিকালে কোথায় যেনো যাওয়ার কথা আছে,সেজন্য!
– ভালো মানুষের কথা শুনেছো!তোমাকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে আনার জন্য ওর এই বাহানা!বাদ দাও…ফ্রেশ হয়ে আসো।লাঞ্চ করি একসাথে।
– আমরা লাঞ্চ করে এসেছি আন্টি!
– বোকা মেয়ে!আন্টি কাকে বলো?
আমি জিঁভে কামড় দিয়ে বললাম,
– সরি!
– সরি কি?
– সরি মা!
সাথে সাথেই আন্টিসহ সবাই হেসে দিলেন!আন্টি আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– ফ্রেশ হয়ে এসো!যাও…
– হুম!
ইয়াশও আমার সাথে আসতে নিলে আন্টি ইয়াশের হাত টান দিয়ে ইয়াশকে ডাইনিং-এ নিয়ে যেতে যেতে বললেন,
– ইয়াশ সোনা!তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে!চলো…
ইয়াশ আমার হাত টেনে আমাকেসহ নিয়ে যেতে চাইলো!কিন্তু আন্টি আমার থেকে ইয়াশের হাতটা ছাড়িয়ে ইয়াশকে একাই নিয়ে গেলেন!আমি দ্রুত ইয়াশের পেছন পেছন যেয়ে ইয়াশকে একটা চুমু দিয়ে উপরে চলে এলাম!
.
রুমে এসে হিজাবটা খুলে ভেঁজা চুলগুলো ছেড়ে দিলাম!ইফাজ লাগেজটা রুমে ঢুকিয়ে খুবই যত্নসহকারে দরজাটা লক করলেন!মনে হলো দরজা লাগানোটা উনার ডিউটি!
.
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে লাগেজ থেকে কাপড়-চোপড় বের করার জন্য পা বাড়ালাম!উনি সামনে দাড়িয়ে পরলেন!উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি মিটমিট করে হাসছেন!আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– হাসছেন কেনো?
– ওড়না কই?
উনার কথা শুনে আমি নিজের দিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে দ্রুত উনার পেছনে দাড়িয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম!উনি আমার দিকে ফেরার চেষ্টা করলেন!আমি উনাকে ফিরতে না দিয়ে শক্ত করে চেঁপে ধরলাম!দিনদুপুরে এইসব ব্যাপারে আমার ভীষন লজ্জা!যতই হাজবেন্ড হোক না কেনো!
.
আমি উনাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে আলমারির কাছে নিয়ে গেলাম!দ্রুত একহাত দিয়ে আলমারি খুলে আবার দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম!উনি আমার কান্ড দেখে রুম কাঁপিয়ে শুধু হাসছেন!কিন্তু কিছু করছেন না!
.
উনাকে ছেড়ে দিয়ে আলমারির দিকে ঘুরে অন্য একটা ড্রেসের ওড়না বের করে গায়ে জড়িয়ে নিলাম!উনার দিকে মাত্রই ঘুরতে যাবো সেইমুহূর্তে উনি জড়িয়ে ধরে বললেন,
– কি লজ্জা রে বাবা!বাট আই লাইক ইট!
– আমি এমনি!
– আই লাভ ইউ!
আমি উনার দিকে ঘুরে বললাম,
– ফ্রেশ হয়ে আসুন!
– উহু…আগে আন্সারটা দাও!
উনার কথাটা শুনে আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে পা উচু করে নাকের সাথে নাক ঘষে বললাম,
– আমিও আপনাকে ভালোবাসি!আপনার থেকে অনেক অনেক বেশি!
আমার কান্ড দেখে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!
– হাসছেন কেনো?
– তুমি অনেক দুষ্টু!আমার বাবুগুলোও তোমার মতো….
আমি উনার মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– আপনার বেবিগুলো যেনো আপনার মতো হয়!
কথাটা বলেই আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আমার কোমড় থেকে উনার হাতটা সড়িয়ে লাগেজের দিকে পা বাড়ালাম!উনি বেডের উপর বসে জুতো,ব্লেজার খুলতে খুলতে বললেন,
– বেবিরা আমার মতো হলে কিন্তু তোমাকে জ্বালিয়ে খাবে!তখন কিন্তু আমাকে বকতে পারবে না!
.
আমি লাগেজ থেকে একটা একটা করে কাপড় আলমারিতে রাখতে রাখতে বললাম,
– প্রবলেম নেই!কয়েকটা দিলেই আর জ্বালাতে আসবে না!
– খবরদার!গায়ে হাত তোলা থেকে দূরে থাকবে!
– দূর থেকেই কার্যসাধন করবো!
– আমাকে চেনো তুমি?
উনার কথাটা শুনে আমি উনার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
– অবশ্যই!আপনি মিসেস ইফাজ চৌধুরীর হাজবেন্ড,রাইট?
আমার কান্ড দেখে উনি কিউট একটা হাসি দিয়ে কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে বললেন,
– কারেক্ট আন্সার!ঠিক চিনেছো!ওয়ান পয়েন্ট পেয়ে তুমি পাশ করেছো!
উনার কথা শুনে আমি হেসে হাত বাড়িয়ে বললাম,
– গিফ্ট কই আমার?
– কিসের গিফ্ট?
– এই যে,পাশ করলাম তার গিফ্ট?
উনি হেসে আমার বাড়ানো হাতটা ধরে টান দিয়ে কোলে বসিয়ে বললেন,
– আগে মিষ্টি খাওয়াতে হয়!তারপর গিফ্ট চাইতে হয়!
– উহু…আগে গিফ্ট তারপর মিষ্টি!
– গিফ্টটা দিতে যে আমার নয়মাস লাগবে এতোদিন তো মিষ্টি খাওয়া থেকে আমি বিরত থাকবে পারবো না!
উনার কথাটা শুনে আমি লাফ দিয়ে উনার কোল থেকে উঠে বললাম,
– অসভ্য একটা!আমি সিরিয়াসলি গিফ্টের কথা বলছিলাম!আর আপনি মজা নিচ্ছিলেন!
বলেই আমি লাগেজ থেকে সবগুলো কাপড় বের করে আলমারিতে বস্তাটাইপ করে ঢুকিয়ে রাখলাম!
.
বাহিরে বের হওয়ার জন্য দরজার কাছে আসার আগেই উনি দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালেন!দুইহাত আমার দিকে বাড়িয়ে বললেন,
– দাড়িয়ে পরলে কেনো?তাড়াতাড়ি আসো….এগুলো পরে থাকতে আর ভালো লাগছে না!খুলে দাও দ্রুত!
.
আমি ঠাঁই দাড়িয়ে থেকে বললাম,
– বিকালে আপনি কোথায় যাবেন?
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
– তোমাকে নিয়ে রোম্যান্স করতে যাবো!একদম কাছে পাচ্ছিলাম না তোমাকে আমার শ্যালিকাদের জন্য!তাই তাড়াতাড়ি নিয়ে আসলাম!
উনি আমার হাতদুটো ধরে বললেন,
– রাগ করেছো?
– উহুম!
– আমার সেটা মনে হচ্ছে না!
– করিনি রাগ!
– খারাপ লাগলে চলো আবার দিয়ে আসি!
কথাটা বলেই উনি আমার হাত ধরে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতে নিলো!
আমি উনার হাত টান দিয়ে আমার দিকে ঘুরিয়ে শার্টের বোতামগুলো খুলতে খুলতে বললাম,
– বলেছি না রাগ করিনি!ওখানে আবার যেয়ে আমি কি করবো?ঘোড়াও তো নেই যে ঘোড়ার ঘাস কেটে ঘোড়াকে খাওয়াবো!
আমার কথা শুনে উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন!হাসতে হাসতে বললেন,
– বললেই হয় আমাকে ছাড়া একা একা আর থাকতে পারবে না!
কথাটা বলেই উনি পেছন ঘুরে দাড়ালেন!আমি শার্টটা খুলে দিয়ে বললাম,
– ওমনি সব দোষ আমার হয়ে গেলো,না?
আমার কথা শুনে উনি আমার হাত থেকে শার্টটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– ওরে কলিজা আমার রে!থাক আর রাগ করতে হবে না!এই যে আমি মেনে নিলাম সব দোষ আমার!আমি আর একটাদিনও আমার এই কলিজা-টাকে ছাড়া থাকতে পারবো না!
– দেখা যাবে!
– ওকে…দেখে নিও!
.
সন্ধ্যের দিকে কিচেনে ঢুকলাম!আন্টি ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলাম না!আন্টি আমাকে দেখেই বললেন,
– এখানে কেনো?কিছু লাগবে?
– নাহ্ আ…মা!
– আন্টি ডাকলে খবর ছিলো তোমার!
– ভুল করে বের হয়ে যায়!আর হবে না!
– হুম মনে থাকে যেনো!
.
আন্টি চা বানাচ্ছিলেন!আমি আন্টির কাছ ঘেষে দাড়িয়ে বললাম,
– এখন চা কে খাবে?
– তোমার শ্বশুর!প্রতিদিন এইটাইমে উনাকে র-চা বানিয়ে দিতে হয়!
– ওহ্!আপু নাকি কাল চলে যাচ্ছে?
– হুম!কথা হয়েছে ওর সাথে?
– মাত্রই গল্প করে আসলাম!
– ইয়াশ কি করে?খেলছে?
– নাহ্!কোলেই শুয়ে ছিলো!মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম!সেই সুযোগে ঘুমিয়ে পরেছে!
আন্টির চা বানানো কমপ্লিট।আন্টি চা নিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলেন।
.
আমি দ্রুত ইফাজের জন্য এককাপ কফি বানিয়ে ফেললাম!আপুর সাথে যখন গল্প করছিলাম তখন উনি আমার ফোনে ম্যাসেজ পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন এইমুহূর্তে নাকি উনার খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে তার টিয়াপাখির হাতের!কিচেনে এসে আন্টিকে দেখে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!
.
কফির মগ নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলাম আন্টি,আঙ্কেল,আপু আমাদের রুমে!তিনজনই উনার সামনে বসা!উনি দরজার দিকে মুখ করে বসেছিলেন বিধায় আমাকে দেখতে পেয়েছেন!আমি দ্রুত কফির মগটা নিয়ে ইয়াশের রুমে চলে এলাম!
.
উনাকে খুব গম্ভীর দেখাচ্ছিলো!বাকিরা সব সিরিয়াস মুডে ছিলেন!আঙ্কেল চিন্তিত ভঙ্গিতে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন!
নিজের অজান্তেই মনের ভেতর ধুঁকধুঁক করছে!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here