#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 62+63
.
.
নাফিসা আমার পেটে মাথা রেখে পেটে হাত বুলিয়ে বললো,
– আপু!ওরা হওয়ার পর আমাকে দিয়ে দিও।ওদেরকে আমি পালবো।আমার বিয়ের পর আবার নিয়ে নিও।
নাফিসার কথা শুনে বুকের ভেতর ধুঁক করে উঠলো!স্বপ্নটার কথা মনে পড়ে গেলো!আমি দ্রুত শোঁয়া থেকে উঠে বসলাম!বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই দেখলাম গ্লাস নেই।আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,
– পানির গ্লাস রাখিস না কেনো?
– আমার দরকার হয়না।আনবো?
– থাক,লাগবে না!আমার হিজাবটা খুলে দে তো!
নাফিসা মাথার কাছে দাড়িয়ে হিজাব খুলে দিলো।খোলা শেষে আবার আমার কোমড়ের কাছে শুয়ে পেটে হাত রেখে বললো,
– তোমাদের বেবিগুলো যে কি কিউট হবে আপু!আমি তো ভাবছি ভাইয়ার মতো সুন্দর হবে নাকি তোমার মতো কিউট হবে!তোমরা দুইটাই তো হ্যান্ডসাম আর কিউটের ডিব্বা!
আমি নরমাল হয়ে বললাম,
– ছেলে হলে যেনো আমার মতো হয় আর মেয়ে হলে উনার মতো!
নাফিসা হাসতে হাসতে বললো,
– কারোর মতোই হওয়া লাগবে না!বেবিগুলো তাদের খালামনির মতো হলেই চলবে!
বলেই পেটে চুঁমু খেলো!সেইমুহূর্তে ইফাজ রুমে ঢুকে পরলো!নাফিসার কান্ড দেখে উনি বললেন,
– চুঁমু খেতে খেতে মেরে ফেলছো নাকি আমার বউটাকে?
নাফিসা চঁমকে উঠে উনার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই হেসে বললো,
– মাত্রই শুরু করলাম!একটামাত্র দিলাম!
উনি ব্যঙ্গ করে বললেন,
– মাত্র একটা!তোমাকে দিয়ে দেখছি কিচ্ছু হবে না।
নাফিসা হাসলো কিছু বললো না।উনি বেডে বসতেই নাফিসা উঠে চলে গেলো।যাওয়ার সময় দরজা হালকা লাগিয়ে গেলো।উনি আমার পেটের একটু উপরে শুঁয়ে পেটে হাত রেখে বললেন,
– বাবুসোনারা যে কবে আসবে আমার টিয়াপাখির কোল জুড়ে,উফ্!
– শুধু আমার কেনো?
উনি চুঁমু খেয়ে বললেন,
– তোমার কোলজুড়ে আসা মানেই তো আমার কোল ভরিয়ে দেওয়া!বুঝো না কেনো?
বলেই উনি উঠে শার্টের ইন খুলতে খুলতে বললেন,
– মা-বাবার সাথে যে দেখা করলে টের পেলেন না উনারা?
– উহুম!সাবধানে ছিলাম!একটা কথা ছিলো?
– বলো!
– আজ থেকে যাই,প্লিজ?
– পারমিশন নেওয়ার কি আছে?তুমি থাকতে চাইলে আমারই ভালো লাগবে!এইসময় সব মেয়েরই বাবা-মায়ের কাছে থাকার ইচ্ছা জাগে!
উনি শার্ট খুলে ব্যাগ থেকে একটা ট্রাওজার নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে প্যান্ট বদলে ট্রাওজার পরে নিলেন।টি-শার্ট হাতে নিলেন ঠিকই কিন্তু পরলেন না।দরজা লক করে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুঁয়ে পরলেন।আমার একহাত উনার মাথায় রেখে বললেন,
– চুল টেনে দাও!
আমি চুল টানতে টানতে বললাম,
– অনিম ভাইয়ার সাথে একবার দেখা করে আসলে ভালো হতো না?
– ওহ্ হো ওর কথা তো ভুলেই গেছি!এখন থাক….বিকেলের দিকে দেখা করবো!
– ভাইয়ার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?
– হুম,আছে!ওয়েট…
বলেই উনি ফোন বের করে লক খুলে গ্যালারিতে ঢুকলেন!ফ্রেন্ডসদের ফোল্ডারে ঢুকে অনিম ভাইয়া আর আপুর অনেকগুলো পিক দেখিয়ে বললেন,
– কেমন দেখতে?
– মানিয়েছে দুজনকে!ফ্যামিলি জানে?
– হুম!নেক্সট ইয়ার বিয়ে!আমাদের বিয়ের সময় তো এসেছিলো মলি!তোমাকে দেখে তো আমাকে পিঞ্চ করে বলেছিলো “ইফাজ,তুই এতো লুচু কেনো?এইটুকুন একটা মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছিস!দেশে কি মেয়ের অভাব পরেছিলো?” ওর এই কথা শুনে সেদিন ওর মাথায় গাড্ডি মেরে বলেছিলাম “তুই আর মানুষ হইলি নারে!নিচের মতো সবাইরে ভাবিস,ফালতু মাইয়া!”
উনার কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
– ছিঃ,আপু বলেছে এই কথা?
– হুম!আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলে মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু ছিলো ও!
– সেইম এইজ নাকি?
– হুম!তুমি মনে হয় মলিকে একবার দেখেছিলে!ওই যে এ্যানগেইজম্যান্ট ডিনারে আমাদের সামনের চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটা তোমাকে বোকা বানাতে টেবিলের নিচে তোমার পায়ের সাথে পা লাগিয়ে একবার মজা নিতে চেয়েছিলো,মনে আছে?ওটাই এই মলি!
– ও হ্যা!মনে পরেছে!আপুটা কি সাংঘাতিক ছিলো!আর একটু হলেই তো আমি ধরা পরে যেতাম!
.
আমাদের এ্যানগেইজম্যান্ট ডিনারে আমি চুপচাপ বসে স্পুন দিয়ে খাবার খাচ্ছিলাম!উনি আগে থেকেই আমার পায়ের উপর পা তুলে ছিলেন।মাঝখান থেকে হুট করে আরেকটা পায়ের স্পর্শ পেলাম।আমি ভেবেছিলাম উনার অন্য একটা পা!ওই পা’টা আস্তে আস্তে উপরে উঠছিলো!কাজটা উনি করছেন ভেবে আমি বামহাত দিয়ে উনার প্যান্ট আঁকড়ে ধরে আস্তে করে বললাম “আর একইঞ্চি উপরে তুললে বাসররাত ক্যান্সেল,বলে দিলাম!” উনি ভ্রুঁ কুচঁকে সেদিন আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় “কি হয়েছে?” জিজ্ঞেস করেছিলেন!আমি দাঁতে দাঁত চেঁপে বলেছিলাম “আর না,প্লিজ!”
উনি বলেছিলেন “কি বিড়বিড় করছো?”
– পা কেনো উপরে উঠাচ্ছেন?
– মানে?
– একদম নাটক করবেন না।অলরেডি হাঁটু অব্দি তুলেছেন!
হঠাৎ উনি আমার পায়ের উপর থেকে পা সড়িয়ে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে আমাদের সামনে বসা মলি আপুর চুল টেনে বলেছিলেন “আর কখনো করবি এরকম?”
মলি আপু চিৎকার দিয়ে বলেছিলো “ভুল হয়ে গেছে ভাই!মাফ করে দে!ব্যাথা পাচ্ছি,ছাড়!”
“মনে থাকে যেনো!” বলেই উনি ছেড়ে দিয়ে আবার ব্যাক করেছিলেন।
.
ওইদিনের কাহিনীটা মনে পরতেই আমি খিলখিল করে হেসে উঠলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুচঁকে বললেন,
– হাসছো কেনো?
– এমনি!সরি…
আমি আবার উনার চুল টানতে লাগলাম।
.
জোহরের সময় উনি আব্বুর সাথে নামাজ পড়তে চলে গেলেন।আম্মু কাজে ব্যস্ত ছিলো।সেই ফাঁকে আমি নাফিসাকে ডেকে খাবার দিতে বললাম।লাঞ্চ টাইমে সবার সাথে বসে খাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব!কালরাতের মতো যদি বমি করে দেই,সর্বনাশ!
নাফিসা পানির গ্লাসটা পাশে রেখে প্লেটটা আমার হাতে দিয়ে বললো,
– একসাথে লাঞ্চ করলেই পারতে!
– পেট না থাকলে পারতাম।আব্বু-আম্মুর সামনে যদি একবার ওয়াক করি,আমি নিশ্চিত সেইমুহূর্তেই আব্বু-আম্মু টের পেয়ে যাবে।দরকার কি এতো রিস্ক নেওয়ার।
– বমি কি রেগুলার নাকি ব্রেক?
– মাঝে মাঝে!কালরাতে তোর ভাইয়া দুইপ্লেট ভাত একসাথে খাইয়ে দিয়েছেন,ওয়াশরুমে ঢুকেই সব বের করে দিয়েছি!তোর ভাইয়া জানে না,জানলে ওইমুহূর্তেই আবার খাওয়ানো শুরু করতেন।
আমি ফ্লোরে হাত ধুঁয়ে খাওয়া শুরু করলাম।আমি প্রেগন্যান্ট না হলে নাফিসা এতক্ষণে আম্মুকে ডেকে চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিতো,কেনো আমি ফ্লোরে পানি ফেলে হাত ধুলাম!কিন্তু আজ ও কিছুই বললো না।হাসিমুখে টিস্যুবক্স থেকে একগাদা টিস্যু বের করে ফ্লোরের পানিটুকু মুঁছে ফেললো।শুধু শুধু টিস্যুপেপার নষ্ট করলো!
.
খাওয়া শেষ হতেই নাফিসাকে তাড়াতাড়ি লেবু আনতে বললাম।নাফিসা একদৌড়ে ফ্রিজ থেকে লেবু এনে সেটা গ্লাসের মধ্যে চিঁপে রস বানিয়ে দিলো।আমি খেয়েই শুঁয়ে পরলাম।গাঁ গুলাচ্ছে খুব!নাফিসা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
– তোর অনেক কষ্ট হয়,তাই না আপু?
আমি চোখ বন্ধ রেখে হেসে বললাম,
– কিসের কষ্ট?
– এই যে তুই মা হবি,সেটা খুশিমনে আব্বু-আম্মুকে বলতে পারছিস না!
– আমি তো বাবু আসার অপেক্ষায় আছি!সেদিন আমার এইসব কষ্টের ফল পাবো!দেখবি আব্বু-আম্মু কত্ত খুশি হয়!
– ইশ্!ওইদিনের কথা ভাবতেই আমার চোখ চিঁকচিঁক করছে!আব্বু-আম্মুর ফার্স্ট নাতি-নাতনী!যখন কোলে নিবে বাবুকে,ভাবতে পারছিস কত্ত খুশি হবে!!!আব্বু তো মাথায় তুলে রাখবে!কান্না করে না দিলে হয়!
– ওই খুশিটা যদি এখন শুনে হতো,ভালোই হতো!কিন্তু সেটা তো অসম্ভব!খুশি না হয়ে উল্টো উনাকে কথা শোনাবেন,উনার উপর রাগ দেখাবেন!যেটা সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে ভাসে!
– উফ্!এইসব মন-খারাপের কথা বাদ দে!জানিস আমি কি ভেবে রেখেছি?
– কি?
– বাবু যেদিন হবে,সেদিন আমি সবাইকে ক্যামেরাবন্দী করবো!তোর শ্বশুর-শ্বাশুরি থেকে শুরু করে আব্বু-আম্মু,ভাইয়া সবাইকে!কাউকে বাদ রাখবো না!
নাফিসা আমার চোখের পানি মুঁছে দিয়ে বললো,
– একদম কাঁদবি না,আপু!অলওয়েজ বাবুর কথা ভাব!এদের কারোর কথা ভাবতে হবে না তোর!
নাফিসা আমার কপালে চুঁমু খেয়ে বললো,
– আই লাভ ইউ,আপু!খুব ভালোবাসি রে তোকে,খুব!
.
.
#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 63
.
.
কাজিন সবগুলো স্কুল-কলেজ থেকে আসলো দুটোর পর।সবার সাথে গল্প করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো।সন্ধ্যের পরে উনার সাথে একটু ছাঁদে গিয়েছিলাম।আকাশের চাঁদটা আঁবছা দেখা যাচ্ছে।উনি আমাকে পেছন থেকে আমার দুইহাতের উপর হাত রেখে কোমড় জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে ছিলেন।আমি আমার পুরো শরীরের ভার উনার উপর ছেড়ে দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আজ কি পূর্নিমা?
– উহুম!দেখছো না এখনো চাঁদটা অসম্পূর্ণ!
পূর্নিমা শেষ নাকি সামনে পূর্নিমা, বুঝতে পারছি না!
– সুন্দর লাগছে খুব!
– চাঁদকে জানিয়েছো তোমার যে বাবু আসছে?
আমি চোখ উল্টিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে হাসলাম!তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে উনার হাতদুটো আরো শক্ত করে ধরে একলাইনে বললাম,
– চাঁদমামা আমাদের বাবু আসছে,ঠিক তোমার মতো আমাদের জীবনে আলো ছড়াতে!
– শেষ?আরো কিছু বলো!
আমি আর কিছুই বললাম না!উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বললেন,
– এখানে এসে কেমন লাগছে?
আমি উনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে বললাম,
– শান্তি!
– থাকবে আর কিছুদিন?
– অসম্ভব!সবার কাছ থেকে আপনার বাবুদের প্রটেক্ট করতে করতে একদিনেই আমি হাঁপিয়ে উঠেছি!আর না…
ইফাজ আমার কথা শুনে হাসলেন!আমি বললাম,
– মাকে একটা কল দিন।ইয়াশের সাথে একটু কথা বলবো।
উনি আমাকে কোল থেকে নামালেন।ট্রাওজারের পকেট থেকে ফোন বের করে আন্টির নাম্বারে ডায়াল করলেন।আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– রিং হচ্ছে, নাও!
আমি ফোনটা কানে ধরতেই আন্টি রিসিভ করলেন।আমি সালাম দিয়ে বললাম,
– কেমন আছেন,মা?
– আলহামদুলিল্লাহ্।তুমি কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি!বাবা,ইয়াশ কেমন আছে?
– ওদের কথা আর বলো না।জ্বালিয়ে খাচ্ছে আমাকে।দিনে দুইবার দুইজন মিলে ঝরনায় গোসল করতে যায়,একটা কথাও শোনে না আমার।এখন ঠান্ডা বাঁধিয়ে বসে আছে দুজন।তোমার বাবাকে তো চেনোই,আমার কোনো কথা শোনার পাত্র সে নয়।মন যা চাচ্ছে তাই করছে।সাথে ইয়াশটাকেও সঙ্গী বানাচ্ছে।ইয়াশ পিচ্চি মানুষ,ও তো বলবেই আব্বু ঝরনায় গোসল করবো,তাই বলে যতবার বলবে ততবারই কি গোসল করাতে নিয়ে যেতে হবে?এখানে এসেও আমার দুজনের সেবা করতে করতে দিন গেলো।
আন্টি একনাগাড়ে সব বলে যাচ্ছেন!আন্টির কথাগুলো শুনে আমি চুপচাপ হাসছি!কিছু বলছি না!
– এভাবে হেসো না!দুঃখ তোমার কপালেও আছে,ইয়াশের যে বউ হবে তার কপালেও আছে!দুইছেলে হুবহু তাদের বাবার কার্বনকপি!বউকে জ্বালানো তাদের বাঁ হাতের খেল!আমার একমাত্র মেয়েটাই আমার মতো সাঁদাসিধে হয়েছে!
আন্টির কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকালাম!উনি ট্রাওজারের পকেটে হাত দিয়ে পা’দুটো দুইপ্রান্তে রেখে দাড়িয়ে আছেন!আমি আন্টিকে বললাম,
– ইয়াশ কই,মা?ওর সাথে একটু কথা বলতাম।
– সারাদিন লাফালাফি করে দুজনে এখন গলা জড়াজড়ি করে ঘুমোচ্ছে!উঠলে আমি কল করে জানাবো!ইফাজ কোথায়?
– এইতো পাশেই।কথা বলবেন?
– দাও….
আমি ফোনটা উনাকে দিয়ে দোলনায় এসে বসলাম।উনিও আন্টির সাথে কথা বলতে বলতে আমার পাশে এসে বসলেন।আমার মাথা উনার কাধে রেখে আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলেন।
.
রাতে আমি কিছুই খেলাম না।উনি জোর করে যা একটু খাইয়েছেন!ডিনার শেষে উনি একটু হাঁটাহাঁটি করতে নিচে চলে গেলেন,সাথে অনিম ভাইয়াকে সঙ্গী বানালেন!
আমি ডাইনিং-এ বসে গলার স্বর উঁচু করে কিচেনে কর্মরত আম্মুর সাথে কথা বলছিলাম,নাফিসা রুম থেকে বেরিয়ে আমার কাছে এসে গলার স্বর নিচু করে বললো,
– আপু,আস্তে কথা বল।আম্মুর সাথে সাথে কি তোকেও চিল্লাতে হবে।আজব!
– সরি!খেয়াল ছিলো না!
– দেখি,উঠ!
– কেনো?
– রুমে চল।আমার সাথে গল্প করবি।
– তোর তো সামনে পরীক্ষা।
– একদিনই তো।একদিন না পড়লে রেজাল্ট খারাপ হবে না।চল….
নাফিসা আমার হাত টেনে রুমে নিয়ে এলো।রুমে মাত্রই পা দিবো তখনই কলিংবেল বেঁজে উঠলো।নাফিসা হতাশ হয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
– ভাইয়া এসে পড়েছে।যা….রুমে যা।আমার অনেক পড়া।পড়তে হবে।গল্প করার টাইম নেই আমার।
– দরজা খুলে দিয়ে আয়।
– আম্মু খুলে দিবে।
নাফিসা রুমে ঢুকে পড়লো।পেছন পেছন আমিও ঢুকলাম।নাফিসা চেয়ারে বসে বই খুলে বললো,
– তুই আবার আসলি কেনো?
আমি বেডে বসে বললাম,
– তুই-ই তো বললি,গল্প করবি!বই বন্ধ করে এদিকে আয়,গল্প করবো!
নাফিসার চোখ চিঁকচিঁক করে উঠলো!বই বন্ধ করে একলাফে বেডে উঠে আমার পাশে এসে বসলো।আমি বালিশ ঠিক করে শুঁয়ে পরলাম।নাফিসাও আমার মুখোমুখি শুঁয়ে পরলো।দুজনে মিলে গল্প শুরু করে দিলাম।এরমাঝে আম্মু এসে জানালো আব্বু আমাদের দুজনকে ডাকছে।দুজনে উঠে আব্বুর রুমে গেলাম।আব্বু আমাদের দেখে হাতের ইশারায় বেডে বসতে বললো।আমরা বসতেই আব্বু পেছন থেকে দুটো আইসক্রিম বের করে আমাদের দুজনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– দেখি কে আগে শেষ করতে পারে!
অনেকদিন পর আব্বু এইকাজটা করলো।আগে প্রায় সময়-ই আব্বু অফিস থেকে ফিরে এভাবেই আমাদের রুমে ডেকে লুকিয়ে রাখা আইসক্রিম বের করে দুজনের হাতে দিয়ে বলতো “দেখি কে আগে শেষ করতে পারে!”
আমরা দুজন পাল্লা দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলতাম।যে আগে শেষ করতো তাকে আব্বু আরেকটা আইসক্রিম দিতো।আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।প্রতিবারের মতো এবারও নাফিসার আগে আমি শেষ করলাম।আব্বু সাথে সাথেই আরেকটা আইসক্রিম বের করে বললো “ইওর প্রাইজ!”
আমি হেসে আইসক্রিমটা আব্বুর হাত থেকে নিলাম।নাফিসার খাওয়া শেষ হতেই আব্বু আরেকটা আইসক্রিম বের করে নাফিসার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো “তোমার জন্য শান্ত্বনা পুরষ্কার!”
নাফিসা হেসে সাথে সাথেই আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললো “লাভ ইউ আব্বু!”
.
.
আমি আমার রুমে এসে ইফাজকে কল দিলাম।উনি এখনো বাসায় আসেন নি।তখন আব্বু কলিংবেল বাঁজিয়েছিলো।আমি,নাফিসা ভেবেছিলাম উনি এসেছেন।
উনি রিসিভ করে বললেন,
– বলো!
– আসছেন না কেনো এখনো?
– আমি তো তোমার জন্যই লেইট করছি।
– মানে?
– মানে আর কি!কতদিন পর এলে,ভাবলাম উনাদেরকে সময় দেওয়ারই সময় পাবে না,সেখানে আমি আর কি!সেই তুমিই দেখছি আমার অপেক্ষাতে বসে আছো!নো প্রবলেম….আমার জন্য ভালোই হলো!ওয়েট টিয়াপাখি,আমি আসছি!
– তাড়াতাড়ি আসুন!
পাশ থেকে অন্য কারোর ভয়েজ টোন শুনতে পেলাম।উনি বললেন,
– অনিম একটু কথা বলবে তোমার সাথে!দেবো কি?
– এভাবে কেনো বলছেন?
উনি হাসলেন।অনিম ভাইয়া বললেন,
– কেমন আছো,হিয়া?
“শালা,ভাবি হয় তোর!হিয়া এখন আর তোর এ্যাপার্টমেন্টের মেয়ে না!তোর ফ্রেন্ডের বউ,সম্মান দে!”পাশ থেকে উনি অনিম ভাইয়াকে কথাটা বলে উঠলেন।উনার কথা শুনে আমি হাসলাম।উনার কথার প্রতিত্ত্যুরে অনিম ভাইয়া বললেন “শালা,যেইখানে ছোটবেলা থেকে কোলেপিঠে কইরা তোর বউরে মানুষ করলাম আমি,হাতি সেঁজে পিঠে নিয়ে তোর বউরে নিয়ে সারা দুনিয়া ঘুরলাম সেই পিচ্চি হিয়ারে এখন তোর জন্য ভাবি ডাকতে হবে!কঁপাল দেখছিস আমার!”
ইয়া খোদা!!!অনিম ভাইয়া এগুলো কি বলছেন!তাও আবার উনার সামনে!ছিঃ,লজ্জায় মাথাকাটা যাচ্ছে আমার!
.
অনিম ভাইয়া আমাকে বললেন,
– ভাবি,ইফাজকে মারতে মানা করেন।আনলিমিটেড মেরে যাচ্ছে!
অনিম ভাইয়ার কথা শুনে আমি দ্রুত বেলকুনিতে গিয়ে দাড়ালাম।ফিল্ডের দিকে তাকাতেই দেখলাম দুইবন্ধু ফিল্ডের মাঝখানে বসে আছে।উনি ইচ্ছামতো অনিম ভাইয়াকে মারছেন।অনিম ভাইয়া ফোন ফেলে উঠে দৌড় দিলেন।উনি ঘাঁসের উপর শুঁয়ে পরলেন!ফোন কানে ধরে বললেন,
– অনিমের কথাগুলো কি সত্যি?
আমি থতমত খেয়ে বললাম,
– সব মিথ্যা!এরকম কিছুই হয়নি!আমি তো ছোটবেলা থেকে ঢাকার বাহিরে ছিলাম!আজ এখানে তো কাল ওখানে!ঢাকায় আসতামই কয়েকদিনের জন্য! উনার সামনে পর্যন্ত যেতাম না!কিন্তু ভাইয়া কিসব বানিয়ে বললেন!
– অনিমরে আমি দেখে নিবো!তুমি ফোন রাখো,আমি আসছি!
– আচ্ছা!
আমি কল কেটে দিলাম।উনার দিকে তাকিয়ে আছি!উনি উঠে দাড়ালেন।
এ্যাপার্টমেন্টের দিকে আসতে আসতে হুট করে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে ফ্লাইং কিস করলেন!আমি চঁমকে উঠে শক্ত করে রেলিং আঁকড়ে ধরলাম!উনি জানলেন কিভাবে আমি বেলকুনিতে?উনি যতক্ষণ পর্যন্ত কলিংবেল না বাঁজিয়েছেন ততক্ষণ আমি ওভাবেই ঠাঁই দাড়িয়ে ছিলাম!কলিংবেলের শব্দে আমি রুমে এসে বেডে বসলাম!কিছুক্ষণের মধ্যে উনি রুমে ঢুকে দরজা লক করে কাছে এসে পরম আবেশে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আগে বলবে তো একা আছো!এতক্ষণ কত কষ্ট পাচ্ছিলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here