#Gangster_Husband
#Part_16
#Writer_Fariha_Jannat_Oriddhi
ডাক্তার বর্ণ সহ সবাইকে আকবরের কেবিনে নিয়ে যায়। ওদের পায়ের আওয়াজ পেয়ে আকবর চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে মনিমাকে ।সে মনিমাকে আগে থেকেই চিনে, বর্ণকে না চিনতে পারলেও ওর কথা শুনে বুজতে পারছে ও বর্ণ চৌধুরীই হবে আর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা দুটো ছেলে মেয়ে শ্রাবণ ও বর্ষাকে সে চিনতে পারে নি।
মনিমা আকবরের কাছে যেয়ে বলে,
আকবর এখন কেমন লাগছে?
আকবর উত্তরে বলে, মনিমা আমি আমার পাপের শাস্তি পেয়ে গেছি। আমার সময় শেষ মনিমা কিন্তু যাওয়ার আগে তোমাদের সত্যি কথা বলে যেতে চাই, যা তোমাদের থেকে লুকিয়ে রেখেছিলো আলতাফ মির্জা।
মনিমা বলে উঠে, ককি আলতাফ মির্জা!!!
হ্যাঁ মনিমা ও তো এই খেলার পরিচালক ।
বর্ণ বলে উঠে ,মানে!!!
আকবর বর্ণকে চুপ করতে বলে এবং বললো আমার সময় বেশি নেই দয়া করে আমার কথা আপনারা শুনুন।
তারপর আকবর বলতে শুরু করে,
আমি চৌধুরী বাড়ির পুরোনো চাকর।আমি চৌধুরী বাড়ির ইতিহাস সব জানি। আপনার বাবা আশরাফ চৌধুরী, আলতাফ মির্জা ও বেলাল জামাম ছিলেন বাল্যকালের বন্ধু। ওদের বন্ধুত্ব দেখলে সবাই হিংসা করতো। খাবার খাওয়া থেকে শুরু করে ওনারা তিনজন সব কাজ ইই একসাথে করতো ।আপনার বাবা আর বেলাল জামান ছিলো সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ কিন্ত আলতাব মির্জার পেটে ছিলো অনেক শয়তানি বুদ্ধি। আলতাফ মির্জা ছিলো গরিব ঘরের সন্তান আর বাকি দুই বন্ধু ছিলো প্রচুর ধন সম্পদের মালিক ,তারা আলতাফ মির্জা কে সাহায্য করতো অর্থ দিয়ে। তাকে খুব বিশ্বাস করে বেলাল জামান ও আশরাফ চৌধুরী। আপনাদের দুই পরিবারের সব সম্পত্তি ও ব্যাবসা বানিজ্যর দেখেশুনে আলতাফ মির্জা ইইই করতো।আপনার বাবা আশরাফ চৌধুরী তিনি পরিবারকে বেশি সময় দিতো। তখন বর্ণ ও অর্ণ চৌধুরীর বয়স ছিলো 10 বছর, আশরাফ চৌধুরীর আর একটা কন্যা সন্তান হয় তার নাম বর্ষা। অপরদিকে বেলাল জামানের ঘর আলো করে আসে তার রাজকন্যা বিন্দু । যখন বর্ষা ও বিন্দুর বয়স দুই বছর হয় তখন দুই পরিবার সিধান্ত নেয় তাদের জন্মদিন একসাথে পালন করবে একদিনে।
সেই অনুযায়ী সবাই কাজ শুরু করে দেয়। চৌধুরী বাড়ি উৎসব মুখর হয়ে উঠে।
অনুষ্ঠানের দিনে দুই পরিবারের সব গেস্টরা আসতে শুরু করে, কেক কাটার আগেই মনিমা বেলাল জামানের ছোট ভাই শাফিদ জামানের সাথে তার ছোট কন্যা অর্থাৎ আশরাফ চৌধুরীর ছোট বোন আফসা চৌধুরীর সাথে বিয়ের কথা বলে সবাইকে সারপ্রাইজ দেয়। সবাই অবাক হয়ে যায় কিন্ত তা সাময়িক মাত্র। সবাই খুশি হয়ে হাত তালি দেয়। শুধু একজন খুশি হতে পারে নি তা হলো আলতাফ মির্জা ,সে দূর থেকে দেখছে সব কিছু আর রাগের ফুলছে। কারণ তার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিলো আফসাকে বিয়ে করে এই বাড়িতে ঢুকে চৌধুরীর বাড়ির সব সম্পত্তি নিজের নামে করার। যদিও সে বিয়ে না করেও সব সম্পত্তি নিজের নামে করতে পারতো কিন্তু আফসার দিকে তার কুনজর ছিলো, আফসা ছিলো খুব সুন্দরী। তারপর বিন্দু ও বর্ষা দুজন একসাথে কেক কেটে সবাইকে খাওয়াই। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে শাফিদ জামান আফসা কে ইশারাই ছাদে যেতে বলে, তারা একে অপরকে ভালো বসতো আগে থেকেই। আফসা সবার চোখ ফাকি দিয়ে ছাদে চলে যায় আর এদিকে আলতাফ মির্জা রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ডিনার টেবিলে খাবারে বিষ মিশিয়ে দেয়,অর্ণ ,বর্ণ, বর্ষা ও বিন্দু ওরা কেক, আইসক্রিম, চিপস, ফুসকা খেয়ে ডিনার না করে ঘুমিয়ে পরে। ডিনার টেবিলে সবাই বসেছে শুধু আলতাফ মির্জা ছাড়া আর মনিমার শরীর খারাপ সেজন্য আসে নি ।এর মধ্যে আশরাফ চৌধুরী খেয়াল করে আলতাফ, শাফিদ ও আফসা নেই। তারা দু বন্ধু খাবার না খেয়ে দুজন দুদিকে তাদের খুঁজতে যায়।
এদিকে ডিনার টেবিলে বর্ণের মা ও বিন্দুর মা সহ গেস্টরা সবাই খেতে বসে ।
অন্যদিকে আশরাফ চৌধুরী সবদিকে খুজে ওদের না পেয়ে ছাদে যায়, যেয়ে দেখে তার আদরে ছোট বোনের নিথর দেহ পরে আছে শরীরে কাপড় ঠিক নেই। সে চিৎকার দিয়ে বোনের মাথা নিজের কোলে নেয়, আফসা বলে ডাকে কিন্তু কোন সাড়া পায় না।
বল বোন তোর এ অবস্থা কে করছে। আফসা তুতলিয়ে বলে ভা,, ভ, ই য়য়য়য়া শশশা বলার আগেই দেহ ত্যাগ করে। আশরাফ চৌধুরী মনে করে শাফিদ তার এতো বড় ক্ষতি করছে, সে চিৎকার করে নিচে এসে দেখে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পরছে আর তার স্ত্রী ববিতা ছটফট করছে ।সে ববিতার কাছে যায়, ববিতা অনেক কষ্ট পাচ্ছে!! কথা বলার মতো অবস্থায় সে নেই। তবুও অনেক কষ্টে বললো খাবারে কেউ বিষ দিয়েছে, আশরাফ চৌধুরী ববিতাকে তুলতে নিলে ববিতা মারা যায় ।এর মধ্যে আলতাফ মির্জা এসে আশরাফের কানে কান পড়া দেয় যে, এসব কিছু বেলালের প্লান, বেলাল বাগানে আছে। আশরাফ আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে বাগানে যায় ।যেয়ে দেখে শাফিদ বাগানে পরে আছে তার বুকে ছুড়ি, আশরাফ শাফিদের কাছে যেয়ে ডাকে ও ছুড়িটা বের করতে নিলে বেলাল চলে আসে।
বেলাল বলে, আশরাফ তুই আমার বন্ধু হয়ে এতো বড় ক্ষতি করতে পারলি তুই আমার ভাইকে মেরে ফেললি ? তখন আশরাফ বলে আমি খুন করি নি বরং তোর ভাই খুন করেছে আমার বোনকে, সে ধর্ষণ করেছে। এভাবে দুই বন্ধু তর্ক শুরু করে দেয়। একপর্যায়ে আশরাফ হাতে ছুড়ি নিয়ে বেলালের দিয়ে এগিয়ে গেলে বেলাল গুলি টার্গেট করে আশরাফের দিকে। এই সুযোগে আলতাফ পিছন থেকে গুলি করে আশরাফকে। তখন মনিমা অর্ণ বর্ণ উঠে আসে। এসে দেখে বেলালের হাতে গুলি আর আশরাফ মাটিতে লুটিয়ে পরছে, অর্ণ পাপা বলে দৌড়ে যায় তাকেও গুলি করে আলতাফ কিন্ত সবাই ভেবে নেই বেলাল।
মনিমা ও বর্ণ ওদের ধরে কাঁদতে থাকে।
বেলালকে পুলিশ নিয়ে যায়।
বিন্দুর যেহেতু কেউ নেই সেজন্য বেলাল তাকে বিন্দুর নানি বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
আর এদিকে আলতাফ মির্জা সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নেই আর আপনাদের বের করে দেয়।
বর্তমান,
আকবর সহ সবাই কাঁদছে।
বর্ণ বলে উঠে, আকবর চাচা আমার ফুপির ও অবস্থা কে করেছিলো,,,?
আকবর উত্তরে বলে আলতাফ মির্জা। সেরাতে তোমার ফুপু ছাদে গেলে আলতাফ ডিনারে বিষ দিয়েও শান্ত হয় নি, সে প্রচুর ড্রিংকস করে ও ছাদে যায় যেয়ে দেখে শাফিদ ও আফসা দুজনকে জড়িয়ে আছে। আলতাফ ওদের কাছে যেয়ে দুজনকে ছাড়িয়ে ড্রিংকের গ্লাসটা ভেঙে শাফিদের বুকে ঢুকিয়ে দেয়, ছটফট করলে পাশে রাখা ছুড়ি নিয়ে তার বুকে খুচাতে থাকে তারপর ছাদ থেকে বাগানে ফেলে দেয়।
তোমার ফুফু চিৎকার করলে সে তার মুখ চেপে ধরে তোমার ফুফুর উপর ঝাঁপিয়ে পারে।
আমি সব দেখে ফিলি, আলতাফ আমায় দেখে ফেলে। আমার মুখ বন্ধ রাখতে বলে নয়তো আমার বৌ বাচ্চাকে মেরে ফেলবে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি সে এমন কেন করলো।
নেশাগ্রস্ত থাকার জন্য সব বলে দেয়, আমি যখনি তোমার বাবাকে সব বলতে আসবো তখন ও আমার পায়ে গুলি করে, আমি পালিয়ে এসে দেখি সব শেষ এখানে।
তখন আমি চৌধুরী বাড়ি থেকে পালিয়ে আসি, সে আমার পিছনে লোক লাগাই, আমি শহরে এসে ভিক্ষা করা শুরু করে দেয়।
বলে কাঁদতে নিলো আকবর, পাশে বসে মনিমা কাঁদছে। বর্ণ সব কথা শুনে ফ্লোরে বসে পরে।
শ্রাবণ ও বর্ষা বর্ণের কাধে হাত রাখে।
সবাই যেন ভয়ঙ্কর অতীতে ডুব দিয়েছিলো, যেখানে সাঁতার কাটা অত্যন্ত বোকামির কাজ। এর মধ্যে আকবরের অবস্থা খারাপের দিকে, সে নিশ্বাস নিতে পারছে না। একসময় সে বর্ণের হাত ধরে অনেক কষ্টে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তারপর সে আস্তে আস্তে নির্জীব হয়ে যায়, জোরে একবার নিশ্বাস নিয়ে বর্ণের কোলে ঢোলে পড়ে।
বর্ণ জোরে চিৎকার করে উঠে —আকবর চাচা!!!!
রুমে সবাই নিরবতা পালন করছে ,আকবরের এভাবে চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছে না।
নিরবতা বেশী সময় থাকে না, দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকা কেউ একজন চিৎকার করে উঠে।
এ কন্ঠ যে সবার চেনা, এ আর কেউ না এ হচ্ছে বিন্দু!!!
সবাই বিন্দুর দিকে তাকায়, বিন্দু সব শুনেছে।
বিন্দু আর দাড়িয়ে না থেকে দৌড় দেয়। সমনে পিছনে কি হচ্ছে তার কোন খেয়াল নেই, তার শুধু ইচ্ছা করছে যে দিকে দুচোখ যায় সেদিকে যেতে।
সবাই বিন্দুর পিছনে আসছে। বর্ণ অনেক বার ডাক দেয় কিন্তু বিন্দু পিছনে না তাকিয়ে দৌড়াতে থাকে।
এক পর্যায়ে বর্ণ গাড়ি নিয়ে বিন্দু কে ফ্লো করে।
বিন্দু ত দৌড়াতেই আছে কিন্তু বর্ণের কথা না শুনে আসা টা যে বিন্দুর জন্য কতোটা বিপদ তা বিন্দু বুজতে পারছে না।
.
.
.
চলবে,,,,
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here