##_মায়ার_বাধঁন
১১তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

১১. ★★★★
ভোরে ঘুম ভাঙতেই আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি। গত রাতে কী হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করতেই রক্ত হিম হয়ে আসে।কিছুক্ষণ বসে থেকে উনাকে ডেকে তুলতে চেষ্টা করি!কিন্ত উনাকে ডেকে তোলতে পারি নি।তাই বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নামাযটা পড়ে নেই।নামায পড়ে এক ধ্যানে উনার দিকে তাকিঁয়ে আছি।সকালের সোনালী রোদের আলোয় উনার মুখটা অপূর্ব
সুন্দর লাগছে। এই অপূর্ব সুন্দর মুখের মানুষটা প্রতিনিয়ত আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে ভাবতেই খুব কষ্ট লাগছে।আমার ভাবনার মাঝেই উনি জেগে উঠলেন।উনাকে ফ্রেশ হতে বলে আমি উনার জন্য চা আনতে গেলাম।আজ শুক্রবার।আজ উনার ছুটির দিন।
আমি চায়ের কাপ সায়ানের হাতে দিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
-সানার সাথে কী আপনার কথা হয়েছে।
উনি চা পান করতে করতে উত্তর দিলেন,-হুম!কথা হয়েছে!
কিছুক্ষণ নিরব থেকে উনি বললেন,-মানুষ যে দুটো বিয়ে করে সংসার করে।এতো প্যারা সহ্য করে কী করে!উফ আমি তো হাপিয়ে উঠেছি এ ছয়মাসে।বাকী জীবনটা কাটাবো কী করে সেটাই প্রতিনিয়ত ভাবছি আমি।
শয়তানের ফাঁদে কী করে যে পা দিলাম আমি!সেটাই এখন ভাবছি।আমার কারনে মা এখন বাড়ি ছাড়া।সানার কারনে উনি এখন এই বয়সে নানুর বাড়িতেই থাকেন বেশীরভাগ সময়।সানার চাল-চলন মা তো সহ্যই করতে পারেন না।বাবা আবার তোমাকে পছন্দ করেন না!আমার জীবনটাই এত প্যারাময় কেনো বলতে পারো?আমি আর এসব নিতে পারছি না!
আমি উনার কথা শুনে উনার পাশে বসে বললাম,
-আপনি এতো চিন্তা করবেন না।উপরে আল্লাহ তো আছেন।উনি সব ঠিক করে দিবেন।আমরা বেশীরভাগ সময় ভাবতে থাকি যে এটা করলাম ক্ষতি হলো ঐটা করলে হয়তো ভালো হতো।বেশিরভাগ সময় আমরা আল্লাহকে দোষারোপ করতে থাকি, অধৈর্য হয়ে পড়ি। কিন্তু এটা করা মোটেও উচিত নয়। কারণ আমরা আমাদের যতটা ভালো চাই, তারচেয়ে অনেক বেশি ওই আরশের অধিপতি আমাদের ভালো চান। আর তিনি যা জানেন তা আমরা জানি না। তাই বিপদ-আপদে বা কোন দুর্ঘটনায় পড়লে আমাদের সবসময় ধৈর্য ধরা উচিত আর এটা মনে করা উচিত যে আল্লাহ পাক হয়তো এর মধ্যেই আমাদের জন্য কোন কল্যাণ রেখেছেন!
আমার কথা শুনে উনি ভাবনায় তলিয়ে গেলেন।হয়তো উনি সানার কথাই ভাবছেন!
আমি উনার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
-আল্লাহর হুকুমেই সবকিছু হয়েছে যদিও আমি আর আপনি ওসিলামাত্র।আপনি যদিও ইসলাম সম্পর্কে কম জানতেন কিন্ত আমি তো জানতম!জানেন
আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেছেন,
‘‘যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।’’ (সূরাহঃ আন-নিসাঃ ৩)
আর তোমরা চাইলেও নারীদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কখনো সমআচরণ (তা’দিলু) করতে সমর্থ হবে না! অতএব একজনকে উপেক্ষা করে অন্যের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ো না!আর যদি তোমরা ভুল সংশোধন করে নাও ও আল্লাহকে ভয় করো (আল্লাহ-সচেতন হও) আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আর যদি তারা পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য্য থেকে তাদের প্রত্যেকেকে স্বচ্ছল করবেন; আল্লাহ সর্বব্যাপী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা – ৪)
দেখুন কোরআন মাজীদে কি বলা হয়েছে, যদি সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো তবে ওয়াহিদা (প্রথম স্ত্রী) নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়েছে,,
অন্য হাদিসে আছে,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার দুই স্ত্রী রয়েছে কিন্তু
একজনের দিকেই সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়েছে!সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে তার শরীরের অর্ধেক অংশের গোশত খসে পড়বে।’ (আবু দাউদ : ৩২২)
আমি চাই না আপনাকে কিয়ামতের দিন ঝলসানো অবস্থায় উঠানো হউক।
বহু বিয়ে আল্লাহতায়ালা জায়েজ করেছেন!কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত আছে অতিরিক্ত দায়িত্ব। আর সেই সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সতর্কবাণী । সুতরাং যার পক্ষে সম্ভব সে এই দায়িত্ব নেবে আর যার পক্ষে সম্ভব নয় সে বিরত থাকবে।
দ্বীনদার মহিলার উচিত যদি স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে সবরের সাথে মেনে নেওয়া। স্বামীর সাথে রাগারাগি না করা। মনে রাগ, হিংসা আসলেও সবর করা।
উনি নিরবে আমার সব কথা শুনে বললেন,
-আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ডিসিসন নিয়ে ফেলেছি যে তোমরা
আলাদা আলাদা থাকবে।তোমাদের দু-জনের সব চাহিদা আলাদা আলাদা ভাবে আমি পূরণ করার চেষ্টা করবে।এতে দুজনেই সুখে থাকবে।আর পরিবারেও এতো অশান্তি আসবে না।
কথাটা বলেই উনি আমার দিকে তাকালেন।
আমি উনার কথা শুনে কী বলবো!আমি তো উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
আমি তো সব সময় এ পরিবারের সবার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করি।তারপরেও একমাত্র মা ছাড়া আর কারো মন আমি জয় করতে পারি নি!মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো উনার কথাগুলো শুনে।সত্যিই এই পরিবারের মানুষজন কেমন রোবটের মতো।কারো মাঝে কোনো আন্তরিকতাদয়া-মায়া নেই।তুমি শুধু দিয়েই যাবে বিনময়ে কিছু পাওয়ার আশা করা বোকামী!আমি সব সময় উনাদের বাবা-ছেলের,মা-ছেলের,ভাইয়ে-ভাইয়ের,দু-জা’র মধ্যে এমনকি উনার আর সানার মধ্যেও সম্পর্ক ঠিক রাখতে যথাযথ চেষ্টা করতাম!উনাদের বিবাদ মেটাতে চেষ্টা করতাম!কারন,
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সদকার চেয়ে উত্তম মর্যাদার সংবাদ দিব না? তারা (সাহাবীরা) বলল: অবশ্যই। তিনি বললেন: পারস্পারিক বিবাদ মীমাংসা করা। কেননা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করা হচ্ছে মুণ্ডনকারী (দ্বীনকে ধ্বংসকারী স্বভাব)।[সুনানে তিরমিযি (২৫০৯)],,
বিনিময়ে পেলাম আমি উনাদের থেকে লান্ঞনা আর তিরস্কার!হ্যা এটাই আমার প্রাপ্য।আমি আমার এতো যত্নে গড়া#মায়ার_বাধঁন থেকে এগুলোই পেয়ে আসছি।আর যত সময় এ পরিবারে আছি আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন,
যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে”।🕋
[সূরাঃ নাহল📖, আয়াতঃ ১২৮]
সবাই ছেড়ে গেলেও আমার আল্লাহ তো আমার মত গোনাহগার বান্দার সাথেই আছেন!তাহলে আমার এতো চিন্তা কীসের।


চলবে ইনশাআল্লাহ
১১তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি
_মায়ার_বাধঁন
১১. ★★★★
ভোরে ঘুম ভাঙতেই আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি। গত রাতে কী হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করতেই রক্ত হিম হয়ে আসে।কিছুক্ষণ বসে থেকে উনাকে ডেকে তুলতে চেষ্টা করি!কিন্ত উনাকে ডেকে তোলতে পারি নি।তাই বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নামাযটা পড়ে নেই।নামায পড়ে এক ধ্যানে উনার দিকে তাকিঁয়ে আছি।সকালের সোনালী রোদের আলোয় উনার মুখটা অপূর্ব
সুন্দর লাগছে। এই অপূর্ব সুন্দর মুখের মানুষটা প্রতিনিয়ত আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে ভাবতেই খুব কষ্ট লাগছে।আমার ভাবনার মাঝেই উনি জেগে উঠলেন।উনাকে ফ্রেশ হতে বলে আমি উনার জন্য চা আনতে গেলাম।আজ শুক্রবার।আজ উনার ছুটির দিন।
আমি চায়ের কাপ সায়ানের হাতে দিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
-সানার সাথে কী আপনার কথা হয়েছে।
উনি চা পান করতে করতে উত্তর দিলেন,-হুম!কথা হয়েছে!
কিছুক্ষণ নিরব থেকে উনি বললেন,-মানুষ যে দুটো বিয়ে করে সংসার করে।এতো প্যারা সহ্য করে কী করে!উফ আমি তো হাপিয়ে উঠেছি এ ছয়মাসে।বাকী জীবনটা কাটাবো কী করে সেটাই প্রতিনিয়ত ভাবছি আমি।
শয়তানের ফাঁদে কী করে যে পা দিলাম আমি!সেটাই এখন ভাবছি।আমার কারনে মা এখন বাড়ি ছাড়া।সানার কারনে উনি এখন এই বয়সে নানুর বাড়িতেই থাকেন বেশীরভাগ সময়।সানার চাল-চলন মা তো সহ্যই করতে পারেন না।বাবা আবার তোমাকে পছন্দ করেন না!আমার জীবনটাই এত প্যারাময় কেনো বলতে পারো?আমি আর এসব নিতে পারছি না!
আমি উনার কথা শুনে উনার পাশে বসে বললাম,
-আপনি এতো চিন্তা করবেন না।উপরে আল্লাহ তো আছেন।উনি সব ঠিক করে দিবেন।আমরা বেশীরভাগ সময় ভাবতে থাকি যে এটা করলাম ক্ষতি হলো ঐটা করলে হয়তো ভালো হতো।বেশিরভাগ সময় আমরা আল্লাহকে দোষারোপ করতে থাকি, অধৈর্য হয়ে পড়ি। কিন্তু এটা করা মোটেও উচিত নয়। কারণ আমরা আমাদের যতটা ভালো চাই, তারচেয়ে অনেক বেশি ওই আরশের অধিপতি আমাদের ভালো চান। আর তিনি যা জানেন তা আমরা জানি না। তাই বিপদ-আপদে বা কোন দুর্ঘটনায় পড়লে আমাদের সবসময় ধৈর্য ধরা উচিত আর এটা মনে করা উচিত যে আল্লাহ পাক হয়তো এর মধ্যেই আমাদের জন্য কোন কল্যাণ রেখেছেন!
আমার কথা শুনে উনি ভাবনায় তলিয়ে গেলেন।হয়তো উনি সানার কথাই ভাবছেন!
আমি উনার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
-আল্লাহর হুকুমেই সবকিছু হয়েছে যদিও আমি আর আপনি ওসিলামাত্র।আপনি যদিও ইসলাম সম্পর্কে কম জানতেন কিন্ত আমি তো জানতম!জানেন
আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেছেন,
‘‘যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।’’ (সূরাহঃ আন-নিসাঃ ৩)
আর তোমরা চাইলেও নারীদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কখনো সমআচরণ (তা’দিলু) করতে সমর্থ হবে না! অতএব একজনকে উপেক্ষা করে অন্যের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ো না!আর যদি তোমরা ভুল সংশোধন করে নাও ও আল্লাহকে ভয় করো (আল্লাহ-সচেতন হও) আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আর যদি তারা পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য্য থেকে তাদের প্রত্যেকেকে স্বচ্ছল করবেন; আল্লাহ সর্বব্যাপী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা – ৪)
দেখুন কোরআন মাজীদে কি বলা হয়েছে, যদি সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো তবে ওয়াহিদা (প্রথম স্ত্রী) নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়েছে,,
অন্য হাদিসে আছে,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার দুই স্ত্রী রয়েছে কিন্তু
একজনের দিকেই সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়েছে!সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে তার শরীরের অর্ধেক অংশের গোশত খসে পড়বে।’ (আবু দাউদ : ৩২২)
আমি চাই না আপনাকে কিয়ামতের দিন ঝলসানো অবস্থায় উঠানো হউক।
বহু বিয়ে আল্লাহতায়ালা জায়েজ করেছেন!কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত আছে অতিরিক্ত দায়িত্ব। আর সেই সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সতর্কবাণী । সুতরাং যার পক্ষে সম্ভব সে এই দায়িত্ব নেবে আর যার পক্ষে সম্ভব নয় সে বিরত থাকবে।
দ্বীনদার মহিলার উচিত যদি স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে সবরের সাথে মেনে নেওয়া। স্বামীর সাথে রাগারাগি না করা। মনে রাগ, হিংসা আসলেও সবর করা।
উনি নিরবে আমার সব কথা শুনে বললেন,
-আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ডিসিসন নিয়ে ফেলেছি যে তোমরা
আলাদা আলাদা থাকবে।তোমাদের দু-জনের সব চাহিদা আলাদা আলাদা ভাবে আমি পূরণ করার চেষ্টা করবে।এতে দুজনেই সুখে থাকবে।আর পরিবারেও এতো অশান্তি আসবে না।
কথাটা বলেই উনি আমার দিকে তাকালেন।
আমি উনার কথা শুনে কী বলবো!আমি তো উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
আমি তো সব সময় এ পরিবারের সবার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করি।তারপরেও একমাত্র মা ছাড়া আর কারো মন আমি জয় করতে পারি নি!মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো উনার কথাগুলো শুনে।সত্যিই এই পরিবারের মানুষজন কেমন রোবটের মতো।কারো মাঝে কোনো আন্তরিকতাদয়া-মায়া নেই।তুমি শুধু দিয়েই যাবে বিনময়ে কিছু পাওয়ার আশা করা বোকামী!আমি সব সময় উনাদের বাবা-ছেলের,মা-ছেলের,ভাইয়ে-ভাইয়ের,দু-জা’র মধ্যে এমনকি উনার আর সানার মধ্যেও সম্পর্ক ঠিক রাখতে যথাযথ চেষ্টা করতাম!উনাদের বিবাদ মেটাতে চেষ্টা করতাম!কারন,
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সদকার চেয়ে উত্তম মর্যাদার সংবাদ দিব না? তারা (সাহাবীরা) বলল: অবশ্যই। তিনি বললেন: পারস্পারিক বিবাদ মীমাংসা করা। কেননা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করা হচ্ছে মুণ্ডনকারী (দ্বীনকে ধ্বংসকারী স্বভাব)।[সুনানে তিরমিযি (২৫০৯)],,
বিনিময়ে পেলাম আমি উনাদের থেকে লান্ঞনা আর তিরস্কার!হ্যা এটাই আমার প্রাপ্য।আমি আমার এতো যত্নে গড়া#মায়ার_বাধঁন থেকে এগুলোই পেয়ে আসছি।আর যত সময় এ পরিবারে আছি আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন,
যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে”।🕋
[সূরাঃ নাহল📖, আয়াতঃ ১২৮]
সবাই ছেড়ে গেলেও আমার আল্লাহ তো আমার মত গোনাহগার বান্দার সাথেই আছেন!তাহলে আমার এতো চিন্তা কীসের।


চলবে ইনশাআল্লাহ
১১. ★★★★
ভোরে ঘুম ভাঙতেই আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি। গত রাতে কী হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করতেই রক্ত হিম হয়ে আসে।কিছুক্ষণ বসে থেকে উনাকে ডেকে তুলতে চেষ্টা করি!কিন্ত উনাকে ডেকে তোলতে পারি নি।তাই বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি গোসল সেরে নামাযটা পড়ে নেই।নামায পড়ে এক ধ্যানে উনার দিকে তাকিঁয়ে আছি।সকালের সোনালী রোদের আলোয় উনার মুখটা অপূর্ব
সুন্দর লাগছে। এই অপূর্ব সুন্দর মুখের মানুষটা প্রতিনিয়ত আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে ভাবতেই খুব কষ্ট লাগছে।আমার ভাবনার মাঝেই উনি জেগে উঠলেন।উনাকে ফ্রেশ হতে বলে আমি উনার জন্য চা আনতে গেলাম।আজ শুক্রবার।আজ উনার ছুটির দিন।
আমি চায়ের কাপ সায়ানের হাতে দিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
-সানার সাথে কী আপনার কথা হয়েছে।
উনি চা পান করতে করতে উত্তর দিলেন,-হুম!কথা হয়েছে!
কিছুক্ষণ নিরব থেকে উনি বললেন,-মানুষ যে দুটো বিয়ে করে সংসার করে।এতো প্যারা সহ্য করে কী করে!উফ আমি তো হাপিয়ে উঠেছি এ ছয়মাসে।বাকী জীবনটা কাটাবো কী করে সেটাই প্রতিনিয়ত ভাবছি আমি।
শয়তানের ফাঁদে কী করে যে পা দিলাম আমি!সেটাই এখন ভাবছি।আমার কারনে মা এখন বাড়ি ছাড়া।সানার কারনে উনি এখন এই বয়সে নানুর বাড়িতেই থাকেন বেশীরভাগ সময়।সানার চাল-চলন মা তো সহ্যই করতে পারেন না।বাবা আবার তোমাকে পছন্দ করেন না!আমার জীবনটাই এত প্যারাময় কেনো বলতে পারো?আমি আর এসব নিতে পারছি না!
আমি উনার কথা শুনে উনার পাশে বসে বললাম,
-আপনি এতো চিন্তা করবেন না।উপরে আল্লাহ তো আছেন।উনি সব ঠিক করে দিবেন।আমরা বেশীরভাগ সময় ভাবতে থাকি যে এটা করলাম ক্ষতি হলো ঐটা করলে হয়তো ভালো হতো।বেশিরভাগ সময় আমরা আল্লাহকে দোষারোপ করতে থাকি, অধৈর্য হয়ে পড়ি। কিন্তু এটা করা মোটেও উচিত নয়। কারণ আমরা আমাদের যতটা ভালো চাই, তারচেয়ে অনেক বেশি ওই আরশের অধিপতি আমাদের ভালো চান। আর তিনি যা জানেন তা আমরা জানি না। তাই বিপদ-আপদে বা কোন দুর্ঘটনায় পড়লে আমাদের সবসময় ধৈর্য ধরা উচিত আর এটা মনে করা উচিত যে আল্লাহ পাক হয়তো এর মধ্যেই আমাদের জন্য কোন কল্যাণ রেখেছেন!
আমার কথা শুনে উনি ভাবনায় তলিয়ে গেলেন।হয়তো উনি সানার কথাই ভাবছেন!
আমি উনার কাঁধে হাত দিয়ে বললাম,
-আল্লাহর হুকুমেই সবকিছু হয়েছে যদিও আমি আর আপনি ওসিলামাত্র।আপনি যদিও ইসলাম সম্পর্কে কম জানতেন কিন্ত আমি তো জানতম!জানেন
আল্লাহ কোরআন মাজীদে বলেছেন,
‘‘যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে করো। কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা করো যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।’’ (সূরাহঃ আন-নিসাঃ ৩)
আর তোমরা চাইলেও নারীদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কখনো সমআচরণ (তা’দিলু) করতে সমর্থ হবে না! অতএব একজনকে উপেক্ষা করে অন্যের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ো না!আর যদি তোমরা ভুল সংশোধন করে নাও ও আল্লাহকে ভয় করো (আল্লাহ-সচেতন হও) আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আর যদি তারা পৃথক হয়ে যায় তবে আল্লাহ তাঁর প্রাচুর্য্য থেকে তাদের প্রত্যেকেকে স্বচ্ছল করবেন; আল্লাহ সর্বব্যাপী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা নিসা – ৪)
দেখুন কোরআন মাজীদে কি বলা হয়েছে, যদি সুবিচার করতে না পারার আশঙ্কা করো তবে ওয়াহিদা (প্রথম স্ত্রী) নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়েছে,,
অন্য হাদিসে আছে,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যার দুই স্ত্রী রয়েছে কিন্তু
একজনের দিকেই সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়েছে!সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে তার শরীরের অর্ধেক অংশের গোশত খসে পড়বে।’ (আবু দাউদ : ৩২২)
আমি চাই না আপনাকে কিয়ামতের দিন ঝলসানো অবস্থায় উঠানো হউক।
বহু বিয়ে আল্লাহতায়ালা জায়েজ করেছেন!কিন্তু এর সঙ্গে জড়িত আছে অতিরিক্ত দায়িত্ব। আর সেই সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে সতর্কবাণী । সুতরাং যার পক্ষে সম্ভব সে এই দায়িত্ব নেবে আর যার পক্ষে সম্ভব নয় সে বিরত থাকবে।
দ্বীনদার মহিলার উচিত যদি স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করে তাহলে সবরের সাথে মেনে নেওয়া। স্বামীর সাথে রাগারাগি না করা। মনে রাগ, হিংসা আসলেও সবর করা।
উনি নিরবে আমার সব কথা শুনে বললেন,
-আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ডিসিসন নিয়ে ফেলেছি যে তোমরা
আলাদা আলাদা থাকবে।তোমাদের দু-জনের সব চাহিদা আলাদা আলাদা ভাবে আমি পূরণ করার চেষ্টা করবে।এতে দুজনেই সুখে থাকবে।আর পরিবারেও এতো অশান্তি আসবে না।
কথাটা বলেই উনি আমার দিকে তাকালেন।
আমি উনার কথা শুনে কী বলবো!আমি তো উনার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি।
আমি তো সব সময় এ পরিবারের সবার মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করি।তারপরেও একমাত্র মা ছাড়া আর কারো মন আমি জয় করতে পারি নি!মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো উনার কথাগুলো শুনে।সত্যিই এই পরিবারের মানুষজন কেমন রোবটের মতো।কারো মাঝে কোনো আন্তরিকতাদয়া-মায়া নেই।তুমি শুধু দিয়েই যাবে বিনময়ে কিছু পাওয়ার আশা করা বোকামী!আমি সব সময় উনাদের বাবা-ছেলের,মা-ছেলের,ভাইয়ে-ভাইয়ের,দু-জা’র মধ্যে এমনকি উনার আর সানার মধ্যেও সম্পর্ক ঠিক রাখতে যথাযথ চেষ্টা করতাম!উনাদের বিবাদ মেটাতে চেষ্টা করতাম!কারন,
আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সদকার চেয়ে উত্তম মর্যাদার সংবাদ দিব না? তারা (সাহাবীরা) বলল: অবশ্যই। তিনি বললেন: পারস্পারিক বিবাদ মীমাংসা করা। কেননা পারস্পারিক সম্পর্ক নষ্ট করা হচ্ছে মুণ্ডনকারী (দ্বীনকে ধ্বংসকারী স্বভাব)।[সুনানে তিরমিযি (২৫০৯)],,
বিনিময়ে পেলাম আমি উনাদের থেকে লান্ঞনা আর তিরস্কার!হ্যা এটাই আমার প্রাপ্য।আমি আমার এতো যত্নে গড়া#মায়ার_বাধঁন থেকে এগুলোই পেয়ে আসছি।আর যত সময় এ পরিবারে আছি আমি আমার চেষ্টা চালিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ!
“নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন,
যারা পরহেযগার এবং যারা সৎকর্ম করে”।🕋
[সূরাঃ নাহল📖, আয়াতঃ ১২৮]
সবাই ছেড়ে গেলেও আমার আল্লাহ তো আমার মত গোনাহগার বান্দার সাথেই আছেন!তাহলে আমার এতো চিন্তা কীসের।


চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here