#_মায়ার_বাধঁন
৮ম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি
★★★★
-আপু তুই এবার শান্তি হয়েছিস!তুই তো এটাই চাস যাতে আমরা দু-জন ঝগড়া করি।কত কষ্ট
করে শিলার বাসায় যাওয়ার জন্য উনাকে রাজি করিয়ে ছিলাম!মাঝখানে তুই এসে সব কিছু এলোমেলো করে দিলি।
আমি এখন ‘আদনান’ আর ‘শিলা’কে কী বলবো!ওরা হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আমি ওর পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
-আমি সত্যি জানতাম না রে তুই যে উনাকে নিয়ে শিলার বাসায় যাচ্ছিস।জানলে এভাবে তোকে কষ্ট দিতাম না।আচ্ছা আমি দেখছি উনাকে রাজি করাতে পারি কী না!
উনি মনে হয় ছাদে গেছেন।
-তার আর কোনো দরকার নেই।আমি সবই বুঝি!এসবই তো উনাকে পটানোর ফন্দি!আমার নামে উনার কান ভারি করতে তো এটাই মোক্ষম সময়!
আমি চোখের পানি মুছে বললাম,
-সবাইকে তোর মত মনে করিস না বোন!একথা ভুলে যাস না আমার উসিলায় তুই এখানে।আর আজ আমাকেই তুই দেখতে পারিস না।
আমার কথা শুনে সানা বললো,
-তো কী করবো আমি হ্যা!উঠতে,বসতে,ঘুমাতে সব সময় শুধু তোর গুনগান।এসব শুনতে শুনতে আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।এতই যখন বউ পাগল ছিলেন তাহলে আমাকে বিয়ে করতে গেলেন কেনো?আমি কী নাচতে নাচতে এখানে এসেছি নাকি!আমি ওর কথা শুনে ওর পাশে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
-আচ্ছা বোন মাথা ঠান্ডা কর।স্বামীর সাথে এভাবে উচু গলায় কথা বলে না।
যা আগে গিয়ে অজু করে আয় দেখবি মাথা অনেকটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
-কেনো এখন অজু করলে কী হবে?
আমি ওর কথা শুনে বললাম,
নবী করীম সাঃ বলেছেন,নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে।আর শয়তান আগুনের তৈরী।নিশ্চয়ই পানি দ্বারা আগুন নির্বাসিত হয়।সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে,(সুনানে আবু দাউদ-৪৭৮৬),,
-হুম মাথা তো আমাকে ঠান্ডা করতেই হবে!নয়তো উনাকে রাজি কীভাবে করবো?উনাকে যে আজ না নিয়ে গেলে আদনানের কাছে আমার মান-সম্মান কিছুই থাকবে না।ও আমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে আমারই বান্দবীর প্রস্তাব একসেপ্ট করে। আমিও ওকে দেখাতে চাই ওর থেকেও ব্যাটার,হ্যান্ডসাম,কোটিপতি কাউকে আমি আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে পেয়েছি!
আমি স্লান হেসে বললাম,তোর বাচ্চামি স্বভাব এখনো গেলো না!উনি কী বাজারের কোন পণ্য নাকি!যে উনাকে অন্য কারও সাথে তুলনা করছিস।বোন এভাবে উনাকে নিয়ে গিয়ে নিজেকে পরপুরুষের সামনে উপস্থাপন করিস না।মেয়েরা এত সস্তা নয়।মেয়েরা মুক্তার মতো।নিজেকে পর্দার আবরণে ঢেকে রাখ!এই সৌন্দর্য দেখার হক শুধু তোর স্বামীর।
আমার কথা শুনে সানা চেতে উঠলো।
-সব সময় তোর এসব লেকচার আমার ভাল লাগে না।তুই মনে করেছিস আমি তোর কথায় তোর মত হুজুরানী হয়ে বসে থাকবো!nope ! never !
আমি তোর মত হতে পারবো না!
সায়ান তোকে রেখে আমাকে তো আর এমনি এমনি বিয়ে করেন নি!
আমি ওর কথায় কান না দিয়ে বললাম,
-বোন একটু চুপ থাক!
চুপ না থাকলে আমাদের মধ্যে আরো অশান্তি বাড়বে।আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত,তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো।কঠিন করো না।যখন তুমি রাগ্বানিত হও তখন চুপ থাকো।(মুসনাদে আহমদ,হাদিস-৪৭৮৬),,
এ কথাগুলো বলে আমি রুম থেকে চলে আসলাম।
।
চাঁদনি রাত! মেঘমেদুর আকাশে তাঁরার দেখা নেই৷ মেঘে ডাকা আকাশটা গুমোট হয়ে আছে। সে আকাশে একফালি চাঁদ কালো মেঘকে সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে পৃথিবীতে।সে আকাশটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সায়ানের সাথে কাটানো পূ্র্বের প্রতিটা মুহূর্তের কথা মনে করছি আমি।কত সুন্দর ছিলো সে সব দিন।কত ভালবাসতো সায়ান আমাকে।কিন্ত এখন সে সানার আবদার পুরণ করতে ব্যস্ত।আজ যেহেতু বলেছিলো বাবার বাড়িতে নিয়ে যাবে কিন্ত মাঝখানে সানা ঝগড়া বাধিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে দিলো।
জীবন মাঝে মাঝে আমাদের কঠিন সব পরীক্ষার সম্মুখীন করে দেয়। সেসব পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা চাইলেও এদিকটায় অস্বীকার করতে পারি না।
কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।একবার মনে হয় দূরে কোথাও চলে যাই।নাই বা থাকলাম আমি ওদের জীবনে বাধা হয়ে!ভালো থাকুক না ভালোবাসার মানুষটি।কিন্ত হায়!মন যে মানে না।মন বলে আমি কেনো বাধা হবো!সানাই তো আমাদের মাঝে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।পরক্ষনেই মনে হয় উনার জীবনে সানাই তো এখন সব। আমি চার বছরেও উনাকে একটি সন্তানের মুখ দেখাতে পারি নি।তাহলে কী দরকার জন্জাল হয়ে উনাদের মাঝে পরে থাকার।তারপরও এ #মায়ার_বাঁধন ছেড়ে যেতে বেহায়া মন যে সায় দেয় না।সায়ান আমার সাথে থাকুন আর না থাকুন একই ছাদের নিচে তো আছি।প্রতিদিন তো উনাকে দেখতে পাচ্ছি!এটাই বা কম কীসের!
।
।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,