#_মায়ার_বাধঁন
১৮তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

১৮.★★★★
জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না।আমার জীবনও থেমে নেই।আমার জীবনও এগিয়ে চলছে!আমার প্রেগনেন্সির সাত মাস চলছে।আমি পাঁচ মাস ধরে বাবার বাড়িতে আছি!বর্তমানে অবশ্য এখন ফুপির বাড়িতে।এ পাঁচ মাসে আমার শশুরবাড়ি থেকে আমার শাশুরী ব্যতীত আর কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে নি।আমিও আগ বাড়িয়ে কারো সাথে যোগাযোগে করি নি।আমাকে ভুলে যদি সবাই ভালো থাকতে পারে তবে আমি কেনো পারবো না।এইতো আমিও দিব্যি ভালো আছি !সেদিন বাবা আমাকে কৌশলে আমার একমাত্র ফুপির বাসায় আমাকে রেখে যান!আমার সাথে করা ভাবির মানসিক নির্যাতন,চারপাশের মানুষের কটু কথা এসব বাবা সহ্য করতে পারছিলেন না।এজন্য বাবা আমাকে ফুপির বাসায় নিয়ে আসেন।আমাকে ফুপির বাসায় রেখে উনি পরের দিনই চলে যান!যাবার আগে বলে যান,দু-সাপ্তাহ পর উনি আমাকে নিতে আসবেন!কিন্ত এই যাওয়াই বাবার শেষ যাওয়া হবে তা কী আর আমি জানতাম!বাবা আমাকে নিতে আর আসেন নি!
বাবা বাড়িতে গিয়েই দুই দিন পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন।সেই অসুস্থতা থেকে বাবা আর সুস্থ হন নি!চিরবিদায় নেন।
বাবা মারা গেছেন আজ তিন মাস হতে চললো।বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কথা স্মৃতিচরণ করছিলাম।সবকিছু দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছে আমার।মনে হচ্ছে ঘুম ভেঙে গেলেই যেন এই কষ্ট, যন্ত্রণা সব চলে যাবে।চোখে এখনো জল টলমল করছে। কিছুক্ষণ পর পরই দুই এক ফোঁটা জল আপনাআপনি গড়িয়ে পড়ছে।কারো পায়ের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে বারান্দার দরজার কাছে।আমার তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না কে এসেছে।
এমন সময় ফুপি এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
-কী রে মা এভাবে মনমরা হয়ে কী ভাবছিস?এসময় অতিরিক্ত টেনশন করা ঠিক না রে মা!
আমি ফুপির কাঁধে মাথা রেখে ফুপিয়ে কেঁদে বললাম,
-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ফুপি।এ দুনিয়ায় আমার আপন বলতে তো তুমি ছাড়া আর কেউ রইলো না।ভাইয়াও তো অনেক আগ থেকেই পর হয়ে গেছে!বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তো আমি ভাইয়া-ভাবির কাছে আরো পর হয়ে গেছি।আমাকে শিক্ষা দিতে ভাবিও চলে গেলেন উনার বাপের বাড়িতে।আর আমি একা অসহায় হয়ে পড়ে রইলাম!ভাগ্যিস তুমি সেদিন গিয়েছিলে!নয়তো আমার একা কীভাবে যে দিন কাটতো!
আমার কথাগুলো শুনে ফুপি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন,
-মা রে কাঁদিস না আর!জানিস সেদিন তোর বাবা তোকে যখন আমার কাছে রেখে গিয়েছিলেন বার বার বলেছিলেন,তোর চোখে যেন আমি পানি আসতে না দেই!তোকে সব সময় হাসি-খুশিতে মাতিয়ে রাখি।
আর দেখ তুই আমার সামনেই এভাবে কান্না করছিস!এভাবে কাদিঁস না মা আমার!,শোন রে মা,
আবু হুরাইরা রা.থেকে বর্নিত,রাসূল সা.ইরশাদ করেছেন,”আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার কোনো নিঃস্বার্থ আপনজনকে যখন আমি মৃত্যু দান করি,আর সে সবর করে, প্রতিদানের আশা রাখে,তখন আমার কাছে জান্নাতই তার একমাত্র প্রতিদান”(বুখারীঃ৬৪২৪)”।
আসলেই আমরা যখন প্রিয় মানুষকে হারিয়ে ছন্নছাড়া হয়ে ঘুরি কিন্তু এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের জন্য কত বড়ই না প্রতিদান রেখেছেন।আমরা তা বুঝতে চেষ্টা করি না।
জীবন জীবিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা,
রিযিক নিয়ে পেরেশানি,
উত্তম জীবনসঙ্গীসহ নানাবিধ সমস্যায় যখন তুই-আমি র্জযরিত ঠিক সে সময় বেশি করে
ইস্তিগফার পড়া উচিত!কারন
“যে ব্যাক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার পাঠ করবে,আল্লাহ তাকে সর্বপ্রকার বিপদ আপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা করবেন”
(আবু দাউদ-১৫১৮),,
ফুপির কথাগুলো শুনে মনে অনেকটা বল পেলাম!সত্যিই তো আমাদের আল্লাহ কত মহান!কত দয়ালু!আমরা দুনিয়ার প্রতি এতটাই ঝুকে পড়ি যে আমরা আমাদের জীবনে ‘পাওয়া’র হিসেব না করে ‘না পাওয়ার’দিকটা নিয়ে আফসোস করি বেশী!চারবছরেও যখন কোন সন্তানের মুখ দেখতে পারি নি আমি!তখন লোকের কটুকথা থেকে বাঁচতে,সংসারে ঠিকে থাকতে দিন-রাত কত কান্না করেছি,কত নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি আমার রবের তরে মুনাজাত করে!আমার আল্লাহ তো আমার কথা শুনেছেন।তাহলে আমি এত আফসোস করছি কেনো!মানুষ মাত্রই তো মরণশীল! একজন আসবে,একজন যাবে এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম।আমার বাবারও দুনিয়াতে এতদিনের রিযিক ছিলো,এতদিনের হায়াত ছিলো!তাই উনি এতদিন বেঁচে ছিলেন।উনার রিযিক শেষ হয়েছে,হায়াত ফুরিয়েছে! তাই তো উনি চলে গেছেন।উনার কথা ভেবে কান্না করলে আমার আল্লাহ তো আমার উপর নারায হবেন!
কারন আমার আল্লাহ তো আমাকে কখনো নিরাশ করেন নি!তাহলে আমি এতো ধৈর্যহারা হবো কেনো?
আমার আল্লাহই তো পবিত্র কুরআনে বলছেনঃ-
কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মউত,
অর্থাৎ,
প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
আমাদের মৃত্যু থেকে বাঁচার সকল রাস্তাই বন্ধ।তাই আমাদের উচিত ধৈর্য্য ধারণ করা।
মৃত্যু যেমনই হোক প্রস্তুত থাকা! ঈমানের সাথে,পবিত্রতার সাথে আল্লাহ পাকের ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য।
মনে মনে কুরআন মাজীদের এই সুন্দর আয়াতটি মনে করলাম,,

رَّبِّ اغۡفِرۡ وَ ارۡحَمۡ وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الرّٰحِمِیۡنَ.
“হে আমার রব! ক্ষমা করুন ও দয়া করুন, আর আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
সূরাঃমুমিনুন-১১৮।

রাতে ঘুম আসছিলো না।খুব অস্থির লাগছিলো।তাই বেড থেকে উঠে ছাদে গেলাম।এখন আগের থেকে একটু ভালো লাগছে।
চারদিকে বাতাস বইছে।কি সুন্দর পরিবেশ।চোখ বন্ধ করেই আমি সায়ানকে দেখতে পেলাম।
চোখ খুলে ভয় পেয়ে যাই।কেউ তো নেই এখানে!ইদানীং কী হয়েছে আমার স্বপ্নে,বাস্তবে সব জায়গায় সায়ানকেই দেখতে পাই।
কিছুদিন ধরেই আমার মোডেরও পরিবর্তন হচ্ছে।
ফুপির কাছে থাকতে এখন আগের মতো আর মন্দ লাগে না।
তবে মাঝে মধ্যে খুব একা একা লাগে।এসময় মেয়েদের বাবা-মা মেয়েদের কাছে কাছে থাকে।
আমার তো বাবা-মা কেউই নেই।
মাঝে মধ্যে নিশ্বাস নিতেও খুব কষ্ট হয় আমার।
বেশীরভাগ সময় আমি অসুস্থ থাকি।
কিছু মুখে দিতে পারি না।
সবকিছুই নাকে কীরকম পচা গন্ধ লাগে।শরীরটাও ভেঙে পড়েছে।
ফুপি আমার চিন্তায় শেষ।
দুঃশ্চিতা যেনো উনার পিছু ছাড়ছেনা।উনি আর উনার একমাত্র মেয়ের আমার প্রতি এতো খেয়াল রাখার পরেও আমার এতো অসুস্থতা উনাদেরকে চিন্তিত করে তোলছে।ফুপি আর আমার ফুপাতো বোন ‘রাফা’নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করে আমার সুস্থতার জন্য।
ডক্টরও ফুপিকে আশ্বস্ত করে প্রেগ্ন্যাসিতে মেয়েদের এমন কমপ্লিকেশন হয়ে থাকে সচারাচর।
বেবির জন্ম হয়ে গেলে আমি ভালো হয়ে যাবো।
কিন্ত আমি মনে মনে চিন্তা করি আমি আদ্য ভালো হতে পারবো তো!নাকি আমিও চলে যাবো সানার মতো?


চলবে ইনশাআল্লাহ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here