#_মায়ার_বাধঁন
১৫তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

১৫. ★★★★
কলিংবেল চাপ দিতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিলেন।আমার দিকে ভালো করে লক্ষ করে বললেন,
-কী রে সাফা! তুই একাই এসেছিস!সায়ান ভাই,সানা আসে নি?আর তোকে এত অগোছালো লাগছে কেনো?
আমি ভাবির কথার প্রতিউত্তরে উনাকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম।ড্রয়িংরুমে বাবাও বসা ছিলেন।বাবাকেও সালাম করে জড়িয়ে ধরে আমি কেঁদে ফেললাম।
ভাবি জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিঁয়ে আছেন।
আমি কিছুক্ষণ নিরবে চোখের জল ফেললাম।তারপর নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে আজকে দুপুরের পুরো ঘটনা ভাবিকে আর বাবাকে
খুলে বললাম।আমার কথাগুলো শুনে বাবা চোখের পানি মুছে বললেন,
-কাদিস না মা!আল্লাহ যা করেন আমাদের ভালোর জন্যই করেন।এতেও নিশ্চয়ই ভালো কোনো দিক আছে।আল্লাহ বলেছেন,
“আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছু ভয়,ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির সল্পতার মাধ্যমে। তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।যাদের ওপর কোনো বিপদ নিপতিত হলে তারা বললো,নিশ্চয়ই আমরা তারই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।তাদের ওপর রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত,,(সূরা বাকারা,০২ঃ১৫৫-১৫৭)
আমি বাবার কথা শুনে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।
বাবা বললেন সব সময় আল্লাহর পথে চলবি আর বেশি করে
দুরূদ পড়বি।দুরূদ পড়লে গুনাহ ক্ষমা হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায় :
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
“যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ ক্ষমা করবেন, আর তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।”
(নাসাঈ, হা/১২৯৭),,
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সারাদিন ক্লান্ত থাকায় বিছানার সাথে গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসে।
ভোরে ঘুম ভাঙ্গে মাথায় কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শে।চোখ খুলে দেখি!এটা আমার বাবার হাতের স্পর্শ।
বাবাকে দেখে আমি উঠে বসলাম।বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
-মারে ঘুম কেমন হলো।
আমি বাবার কথা শুনে স্লান হেসে বললাম,
-বাবা ঘুম ভালোই হয়েছে।
আমাকে মনমরা অবস্থায় দেখে বাবা বললেন,-মারে
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিন নারী-পুরুষের নিজ জীবনে, তাদের সন্তানাদির জীবনে ও মাল-সম্পদে সর্বদা বিপদাপদ লেগেই থাকে। অতঃপর সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার কোনো পাপই থাকে না।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৩২০; হাদিসটি সহিহ],,
আল্লাহ তোকে দুনিয়াতে পরীক্ষা নিচ্ছেন!তুই ধৈর্য্য সহকারে সেই পরীক্ষায় পাশ করার চেষ্টা কর!
বাবার কথা শুনে বললাম,
-হ্যা বাবা আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো!দুনিয়ার এই পরীক্ষায় যাতে আমি পাশ করতে পারি!
আমার কথা শুনে বাবা বললেন,
-আল্লাহ তোর মনের সকল নেক আশা পূরন করুক রে মা!এখন যা তাড়াতাড়ি নামাযটা আদায় করে নেয় আর প্রতিদিন ফজরের নামাযের পরে এই দোয়াটা পাঠ করতে চেষ্টা করিস।এই দোয়ায় অল্প সময়ে অনেক নেকী পাওয়া যায়,,
—-“হযরত জুয়াইরিয়া রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. ফজরের নামাযের সময় আমার ঘর হতে গেলেন। আমি বিছানায় বসে তাসবীহ তাহলীল পাঠ করতেছিলাম। তিনি চাশতের নামায আদায় করে আসার পরও আমাকে বিছানায় বসা দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, তোমাকে যে অবস্থায় দেখে গিয়েছি এখনো সে অবস্থায় আছো? আমি বললাম হ্যাঁ। রাসুল সা. বললেন তোমার নিকট হতে যাওয়ার পর আমি ৪ টি কথা ৩ বার পাঠ করেছি। তুমি ভোর হতে এ যাবত যা কিছু পাঠ করেছো যদি তার মোকাবিলায় সেই ৪ টি কথা পরিমাপ করা হয় তবে সেই ৪ টি কথার ওজন বেশী হবে।
♦সেই কথা হচ্ছে,
(سبحان الله وبحمده عدد خلقه
ورضى نفسه وزنةعرشه ومداد كلماته)

“”সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী আ’দাদা খালক্বিহী ওয়ারিজা নাফসিহী ওয়াজিনাতা আ’রশিহী ওয়া মিদাদা কালিমাতিহী””। অর্থাৎ আমি আল্লাহর সৃষ্টির সংখ্যার সমান আল্লাহর সন্তুষ্টি, আল্লাহর আরশের ওজন এবং আল্লাহর প্রশংসা লেখার কালির সমপরিমাণ তাসবীহ এবং প্রশংসা বর্ণনা করিতেছি। ( মুসলিম শরীফ),,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মৃত্যু পর্যন্ত আমাদেরকে ফজরের নামাজ পড়ে এই আমল করার তাওফীক্ব দান করেন আমীন।

কেটে গেছে আরো একটি সাপ্তাহ।এই এক সাপ্তাহে ও পরিবারের কারো সাথে আমার আর কথা হয় নি।
আজকে আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম কিছু টেস্ট করাতে।ইদানিং আমার কী হয়েছে!কিছু খেতে পারি না!বমি বমি ভাব হয়!আজকে সকালে তো হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাই।ডাক্তার দেখাতে গেলে ডাক্তার কিছু টেস্ট দেয়।রিপোর্ট পাওয়ার পর জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট!
এই কথাটি শুনার সাথে সাথে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই।এই কথাটি যদি আরে এক সাপ্তাহ আগে জানতে পারতাম!তাহলে হয়তো আমার জীবনটা অন্যরকম হতো।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব কথা ভাবছিলাম আর সায়ানের সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্তের কথা মনে করছিলাম।কত ভালোবাসাময় ছিলো সে দিনগুলি।সব সময় সায়ান বলতেন আমাকে ছাড়া তিনি অসম্পূর্ণ। তাহলে এই এক সপ্তাহে একবার খবর পর্যন্ত নেয়ার সময় হয় নি উনার। ভালোবাসা নাই ছিলো কিন্তু সামান্য দায়িত্ববোধের কারনে তো একবার ফোন দিয়ে খবর নিতে পারতেন।
না আমিও আর উনার সাথে যোগাযোগ করবো না।আমার তো বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ! ওকে নিয়েই বাকীটা জীবন না হয় কাটিয়ে নেবো।
আর উনাকেও আমার সন্তানের কথা জানাবো না।যেখানে উনি আমার এত অবদান,ভালবাসার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন! সেখানে এই সন্তানের কথা ভেবে সংসার করলেও সেখানে ভালোবাসা থাকবে না।তাছাড়া উনি তো সানার সন্তানের মাধ্যমে অলরেডী বাবা হতে চলেছেনই।তাহলে আমি উনার করুনার পাত্রী কেনো হতে যাবো।থাকুন না উনি উনার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো।আমিও আমার বেচেঁ থাকার অবলম্বনকে নিয়ে ইনশাআল্লাহ ভালো থাকার চেষ্টা করবো।
আমি আমার সন্তানের জন্য এমন বাবা চাই না।
কথাগুলো মনে করে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
এখন তো উনাকে পূর্ণ করতে আমার আর আমার সন্তানের প্রয়োজন নেই। এখন তাকে পূর্ণ করার জন্য অন্য একজন আছে।তাই এতদিন ধরে উনি আমার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।কথাগুলো মনে করতে না চাইলেও কিভাবে যেন মনে এসে যায়।যখনই একা থাকি ঐ স্মৃতিগুলো আমাকে তাড়া করে।উনার সাথে কাটানো সেই সুখ-দুঃখের স্মৃতিগুলো চাইলেও তো কোনো দিন আমি ভুলতে পারবো না।


চলবে ইনশাআল্লাহ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here