_মায়ার_বাধঁন
১৪তম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবিৌ
১৪. ★★★★
মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছি আমি।জীবন মাঝে মাঝে আমাদের কঠিন সব পরীক্ষার সম্মুখীন করে দেয়। সেসব পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে শক্ত রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।আমরা চাইলেও এদিকটায় অস্বীকার করতে পারি না। তাই তো সব মেনে নিতে হয়। আজকের এই মুহূর্ত পর কী হবে কেউ জানি না।মায়ের অবস্থা ভালো না।আমার কথা শুনে উনি সিড়ি থেকে পড়ে গেছেন। ভাগ্য ভালো তিনটা সিঁড়ি থেকে পড়েছেন নয়তো কি যে হত আজ। মাথায় একটু ব্যাথা পেয়েছেন।এখন অবশ্য আগের থেকে কিছুটা ভালো আছেন।মাকে এই অবস্থায় রেখেও পাষাণ হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে এলাম।কী করবো আমি!আমি যে আজ নিরুপায়!বার বার মাথায় ঘুরছে সায়ানের ঐ কথাগুলো!সায়ান কী করে পারলেন ঐ কথাগুলো বলতে!নিজের ওপর ঘৃনা হচ্ছে এই মানুষটার সাথে এতদিন সংসার করেছি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর আজকে দুপুড়ের ঘটনা বার বার মনে পড়ছে!
দুপুড়ে সায়ান যখন জুমা’র নামায পড়ে বাসায় ফিরেন তখন সানা আর রামিসা ভাবি আমার সাথে ঝগড়া করছিলেন!
উনি এসব দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলেন!আমি উনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললাম!
-কী দোষ করেছি আমি যার কারণে সবাই আমার সাথে এরকম ব্যবহার করছে!আপনিও আমার সাথে এমন করছেন।আমার একবার খোঁজও নিচ্ছেন না!আপনার সব কাজে আপনাকে একজন ভালো বন্ধুর মতো সাপোর্ট করেছি। তাহলে কেন আপনি এমন করছেন?কেনো আপনি আমাকে এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছেন?
আপনার এক কথায় আপনাকে বিশ্বাস করে নিজের জায়গায় আরেকজনের স্থান দিয়েছি!আপনি আমার বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলেন?
চিন্তা করবেন না!এত কিছু পরও আপনার সাথে সংসার করবো বলে আমি পরে আছি!শুধুমাত্র আপনি আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো দিয়ে দিন! তারপর আর কখনোই আপনাদের সামনে আসবো না আমি।চিরদিনের জন্য চলে যাব আপনাদের সবার জীবন থেকে।
প্রতিউত্তরে সায়ান রেগে গিয়ে বলেছিলেন,
-বাসায় থাকলেই শুধু ঝগড়া আর ঝগড়া!কেনো সাফা কেনো!সানা তো তোমারই বোন!তাহলে ওর সাথে অযথা কেনো সব সময় ঝগড়ায় লিপ্ত হও!কীসের এতো অহংকার তোমার!চার বছরে একটি সন্তানের মুখও দেখাতে পারো নি!কী আছে তোমার না চেহারা না কোনো যোগ্যতা!
সানার দিকে তাকাও!ও আমার সন্তানের মা হতে চলেছে!ওর যেমন রূপ আছে তেমনি গুনসম্পন্ন একজন স্বাধীন নারী।যেমন মেয়ে আমি সবসময় চাইতাম আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে।
তুমি তো পারো সারাদিন শাড়ি পড়ে কতগুলো রান্না করতে।
আমি চোখে জল নিয়ে বললাম,
-সায়ান!সব সময় আপনার চাওয়া-পাওয়াকে প্রধান্য দেয়ার এই প্রতিদান দিলেন!
উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
-আমার চাওয়া-পাওয়ার কথা বলছো তো?তোমার আর সারাদিন বাসায় কি কাজই থাকে।সারাদিন তো বাসায় পড়ে পড়ে আমার খাবার ধ্বংস করো।তোমার বেড পারফরম্যান্সও অতো ভালো না। ইভেন সানার বেড পারফরম্যান্স তোমার থেকে শতগুণ ভালো।এইসব কারণে আমি তোমার কাছ থেকে এখন মুক্তি চাই!তোমার প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয়ই পেয়েছো এবার!
কথাগুলো একনাগারে বলেই সায়ান উপরে চলে যান!
আমি উনার কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম!অন্যদিকে সানা আর রামিসা ভাবি কথাগুলো শুনে পৈশাচিক হাসি দিচ্ছিলেন!
আমি চোখে জল নিয়ে নিজের রুমে চলে যাই।এমন সময় বাবা ফোন দেন!
আমি বাবার ফোন পেয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠি।আমি যে পরিবেশে থাকছি সে পরিবেশ সম্পর্কে বাবার ধারণা আছে।বাবা বার বার আমাকে এ পরিবার থেকে চলে আসতে বলতেন!কিন্ত নাছোড়বান্দা আমি স্বামী, সংসারের মায়া ছাড়তে রাজি নই।
বাবা আমার কান্না শুনে বলেন,
-মারে
রাসূল ﷺ বলেছেন – “যখন আল্লাহ কোনো বান্দার জন্য কল্যাণ চান, তখন তাকে দ্রুত তার গুনাহের জন্য এই পৃথিবীতেই শাস্তি দিয়ে দেন। আর যদি কল্যাণ না চান, তখন তাকে শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকেন। এভাবে সে কিয়ামতে তার সকল গুনাহ নিয়ে উপস্থিত হয়।” (তিরমিযী),,
সে জন্যই কখনো খুব বেশি দুঃখিত না হয়ে আল্লাহ্র কাজে সর্বদা ভরসা করতে হয়।
বিপদ-আপদ আসলে কখনই বলবি নারে মা!সবসময় শুধু আমিই কেনো? অন্যদের কেনো বিপদ আসে না?’
মারে কখনও বিপদ আসে পরীক্ষা হিসেবে।আল্লাহ দেখতে চান,বান্দা বিপদে কেমন আচরণ করে,কীভাবে বিপদকে মোকাবেলা করে। সে কি আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকে নাকি বেসামাল হয়ে পড়ে।
তোর পরিবারে কী হচ্ছে আমি জানি না!তবে শোনে রাখ নিজেকে কখনো দূর্বল ভাবিস না!যে পদক্ষেপই নিস না কেনো আর কেউ তোর পাশে থাকে আর না থাকে তোর এই বুড়ো বাবাকে সবসময় তোর পাশে পাবি।মারে একবার নিজেকে সুযোগ দিয়েই দেখ না!জানিস তো যে নিজেকে সাহায্য করে তাকে আল্লাহও সাহায্য করেন।অন্তত আজীবন আফসোস তো থাকবে না।
আর সব সময় সত্যকে পাশে রাখবি। মিথ্যা অনেক সহজ।কিন্তু তা সব সময় ক্ষণিকের জন্য।সত্য সব সময়ের জন্য। তা যত কষ্টেরই হোক।
বাবার কথাগুলো মন দিয়ে শুনে অবশেষ সকল পিছুটান ফেলে বেড়িয়ে আসি আমার অতি যত্নে গরা মায়ার_বাঁধন থেকে!
বাসা থেকে বেরুবার আগে সায়ানের রুমে গিয়েছিলাম বিদায় নিতে!কিন্ত সায়ান এতই পরিবর্তন হয়ে গেছেন যে আমার সাথে একটাও কথা বলেন নি।সানাও উনার পাশে ছিলো!আমি দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলি,
রাসূল সাঃ বলেছেন:-
“তোমরা যদি পাপাচার করতে এমনকি তোমাদের পাপ আকাশ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে যেতো,অতঃপর তোমরা তওবা করতে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের তাওবাহ কবুল করবেন।”
সুনানে ইবনে মাজাহ-৪২৪৮,,
-আমি সব সময় চাইবো তোমরা ভালো থাকো,সুখে থাকো!আর আল্লাহর কাছে সব সময় তোমাদের
হেদায়েতের জন্য দোয়া করবো।
কথাগুলো বলে আমি আর পিছু ফিরে চাই নি চোখে জল নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসি।
।
।
চলবে ইনশাআল্লাহ,,