#_মায়ার_বাধঁন
১০ম পর্ব
লেখনিতে-জান্নাত_রুবি

১০.★★★★
পরিপাটি করে ঘুছানো গেষ্ট রুমে চোখদুটো বন্ধ করে শুয়ে আছেন সায়ান। মনটা খারাপ হয়ে আছে উনার।একটু আগেই সানার সাথে ঝগড়া হয়েছে উনার।সানার কথা মনে পড়তেই হঠাৎ আঁতকে উঠলাম।ওর কথা তো আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।সায়ানের সাথে ঝগড়া করে ও কোথায় গেলো!কতবার কল দিলাম ! রিং হয়েছে কিন্তু সানা কল রিসিভ করে নি।আমি বুঝতে পারছিলাম যে ও নিশ্চয়ই আমার উপরও রেগে আছে। যদিও সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে আমারই বা কি দোষ কোথায়? আমি তো উনাকে এ বিষয়ে কিছুই বলি নি! রুমের বাইরে এসে ওকে আবার ফোন দিলাম! মনে মনে বলতে লাগলাম,বোন প্লিজ একবার রিসিভ কর!প্লিজ পিক আপ দ্যা ফোন !
বারদুয়েক ট্রাই করার পর কল রিসিভ হলো।সানা কর্কশ কন্ঠে রেগে বললো –
-কি সমস্যা? এতোবার কল দিচ্ছিস কেনো? দেখতে পাচ্ছিস না যে ফোন রিসিভ করছিনা।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, – আমি জানি তুই রেগে আছিস।কিন্ত কিছু বলার আগে আমার কথাটা তো একবার শুনবি নাকি?
-কি শুনবো তোর কথা!হুম!সব সময় তো ইসলামি নীতিকথা শোনাতে শোনাতে আমার কান ভারি করিস!এখন মনে হয় উনাকেও জব্দ করেছিস!এই কারনেই তো উনি আমাকে চাকরী করতে দিতে চান না!
আমি ওর কথা শুনে বললাম-আগে তুই মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাটা একবার শোন প্লিজ !
ও কিছুটা শান্ত স্বরে বললো,
-আচ্ছা বল কি বলবি আমি শুনছি ।
আমি শান্ত স্বরে বললাম,
বোন! তুই পুরুষের সঙ্গে কাজ করতে চাইছিস সায়ান তোকে কাজ করতে দিচ্ছেন না!তাই তো?তাহলে শোন বোন!মুসলিম হিসেবে আমি মর্মাহত, আমি ব্যথিত এবং খুবই দুঃখিত আমি। না, আমার কোন কারণে নয়, শুধু তোর জন্য এবং শুধু তোর কল্যাণের কথা চিন্তা করেই। মেয়েরা কাজ করছে! তাও আবার পুরুষের সঙ্গে এবং তাদের মাঝে থেকেই। কারণ, এটা তাদের দীনদারি খতম করে দিবে,তাদের চরিত্রের ওপর কলঙ্কের ছাপ এঁটে দিবে। এটা আমার মায়াকান্না নয়, আমার কথাগুলো তুই নাক ছিটকে ফেলে দিস না এবং মনে করিস না আমি খুব বাড়াবাড়ি করছি, বরং আমার কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। আছে এর যুক্তিসংগত কারণ। মনে রাখিস, ইসলামের সম্পর্ক ছাড়া তোর সঙ্গে আমার আর কোন সম্পর্ক নেই। এবং এর সঙ্গে আমার কোন ইহজাগতিক স্বার্থও সংশ্লিষ্ট নয়। বরং এর দ্বারা আমার সময় ও শ্রম ব্যয় হচ্ছে, মেধার ক্ষয় হচ্ছে। আশা করছি আমার এ কথাগুলোর মূল্য তুই দিবে। আমি যা বলছি তুই তা বারবার চিন্তা করবি। তবে অবশ্যই তুই আমাকে তোর একান্ত হিতাকাঙ্ক্ষী মনে করবি।
জেনে রাখিস, পুরুষের সঙ্গে যে কোন সহাবস্থানে নারী সঙ্কুচিত ও নির্যাতিত থাকে। যদি না তার সঙ্গে তার মাহরাম থাকে। কারণ, পুরুষরা সাধারণত নারীর দিকে প্রবৃত্তি ও কামভাব নিয়েই তাকায়। এর বিপরীত যে বলবে সে মিথ্যুক। কারণ, আল্লাহ তাআলা পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি মোহের সৃষ্টি করেছেন এবং নারীর মধ্যে দিয়েছেন পুরুষের প্রতি গভীর আগ্রহ। অধিকন্তু নারীর মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা ও কোমলতা। ফলে নারী-পুরুষের সহাবস্থানে শয়তান স্নায়ুতন্ত্র ও অনুভূতিগুলোকে প্ররোচিত করার মোক্ষম সময় মনে করে। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে নারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত বেশী হয়। কারণ, সৃষ্টিগতভাবে নারীরা পুরুষের থেকে ভিন্ন। সহাবস্থানের ফলে নারীরা যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়, পুরুষরা সে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় না। যেমন নারীদের অনেক সময় গর্ভ সঞ্চার হয়, কখনো গর্ভপাত করতে গিয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হয় নারী। এসব কারণেই শরিয়ত নারী-পুরুষের সহাবস্থান নিষিদ্ধ করেছে। আমি এখানে নারী-পুরুষ সহাবস্থান নিষিদ্ধ করার কিছু দলিল উল্লেখ করছি।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
{قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ {النور:30.
মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টি সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে। (নুর : ৩০)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা পুরুষের দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু নারী-পুরুষ পাশাপাশি কর্মরত থাকলে দৃষ্টি অবনত রাখা সম্ভব নয়, তাই শরিয়ত তাদের সহাবস্থান নিষিদ্ধ করেছে। নারীর পুরোটাই সতর বা পর্দার বস্তু। তার দিকে দৃষ্টি দেয়া হারাম।
রাসূল সা. বলেন, হে আলী, বারবার নজর দিবে না, প্রথম নজর তোমার কিন্তু দ্বিতীয় নজর তোমার নয়। (তিরমিজি)
অর্থাৎ হঠাৎ প্রথম যে দৃষ্টি নারীর প্রতি পড়ে যায় তাতে কোন গুনা নেই, কিন্তু দ্বিতীয়বার স্বেচ্ছায় দৃষ্টি দেয়া গুনা বা অপরাধ।
হাদিসে এসেছে যে, চোখের যেনা দৃষ্টি দেয়া, কানের যেনা শ্রবণ করা, মুখের যেনা কথা বলা, হাতের যেনা স্পর্শ করা, পায়ের যেনা পথ চলা। (মুসলিম)
চোখের যেনা দৃষ্টি। এর মাধ্যমে ব্যক্তি নারীর সৌন্দর্য ও রূপ উপভোগ করে। পরবর্তীতে তার সঙ্গে অন্তরের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। আর এ পথ ধরেই শুরু হয় অশ্লীলতা। এতে সন্দেহ নেই যে, নারী-পুরুষের সহাবস্থানে দৃষ্টি হেফাজত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়।
রাসূল সা. বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর পুরুষের জন্য নারীই সব চেয়ে ক্ষতিকর ফিতনা। (বুখারি)
সে হিসেবে উভয়ের একত্রে জব করা বা কর্মরত থাকা কোন অবস্থাতেই নিরাপদ নয়।
রাসুল সা. যখন মসজিদ নিমার্ণ করেন, তখন নারীদের জন্য আলাদা দরজা তৈরি করেন এবং তিনি বলেন, আমরা কি এ দরজাটি নারীদের জন্য রেখে দিতে পারি না? (আবুদাউদ)
ওমর রা. মসজিদে নারীদের দরজা দিয়ে পুরুষদের প্রবেশ করতে নিষেধ করতেন। অতএব যেখানে শুধু দরজাতেই নারী-পুরুষ একত্রিত হওয়া নিষেধ, সেখানে একই অফিসে নারী-পুরুষের সহাবস্থান কীভাবে বৈধ?
রাসূল সা. নারীদের রাস্তার পাশ ধরে হাঁটতে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে না হাঁটে এবং পুরুষের সঙ্গে তাদের মিশ্রণ না ঘটে।
রাসূল সা. সালাতের শেষে সালাম ফিরিয়ে কেবলা মুখি হয়ে বসে থাকতেন তার সঙ্গে পুরুষরাও বসে থাকত। যতক্ষণ না নারীরা চলে যেত এবং তাদের ঘরে প্রবেশ করত। অতঃপর তিনি বের হতেন এবং তার সঙ্গে অন্যান্য পুরুষরা বের হত। যাতে নারীদের প্রতি তাদের দৃষ্টি না পড়ে।
এসব আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নারী-পুরুষের সহাবস্থান হারাম। হারাম পুরুষের সঙ্গে নারীর জব করা ও চাকরি করা। এ ব্যাপারে আলেমদের কোন দ্বিমত নেই।
বোন! নারীরা ঘরে বসে থাকার জন্য আদিষ্ট। জানিস এটা কেন?
এর কারণ হচ্ছে নারীরা যাতে পুরুষের দৃষ্টির শিকার না হয় এবং তাদের সঙ্গে নারীদের মিশ্রণ না ঘটে।
এটা সুবিদিত যে, নারী-পুরুষের সহাবস্থান ইজ্জত ও সম্মানের ওপর আঘাত, পরিবার ধ্বংস, যুবতীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট ও পর্নোছবির ছড়াছড়ির জন্য একমাত্রদায়ী।
নারী-পুরুষের সহাবস্থানে কি সমস্যার জন্ম হতে পারে এটা যদি তুই ভাল করে জানতে চাস, তবে পাশ্চাত্য দেশগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয় এবং দেখ যে তারা এ কারণে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, এখন তাদের কি চিন্তা? তারা তো এখন সহাবস্থানের শিক্ষাও বন্ধ করতে চাচ্ছে। আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হচ্ছে। জেনে রাখিস তারা সহাবস্থানের অশুভ পরিণতি ও তার ক্ষতির সম্মুখিন না হয়ে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। আমরা কি এসব বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নিবো না!?
এটা কি অশুভ বুদ্ধির কথা নয় যে, তারা যে ভুল করেছে আমরাও তা করব? অথচ তারা তা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছে।
বোন!
মা জাতি আমাদের কাছে সব চেয়ে দামি ও সম্মানের।জানিস বোন এগুলো আমার কথা নয়!এগুলো বলেছেন,
আবু সারা
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব,,
তুমি মেয়ে, তুমি স্ত্রী এবং তুমি মা।
আমরা তোমাকে রক্ষা করতে চাই, আমরা তোমাদের হেফাজত করতে চাই, তোমার উচিত আমাদের কাজে সহযোগিতা করা।
সমাজের অর্ধেক, তুমি অন্যদের জন্ম দাও।
আমরা আশা করছি, তুমি আমাদের জন্য এমন ব্যক্তিত্ব জন্ম দিবে, যে এ জাতির নেতৃত্ব দিবে।
তুমি যদি ঘর ত্যাগ কর, তুমি যদি ঘরের কাজ ও সন্তানের লালন ও পালন ছেড়ে দাও আর পুরুষের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ো, তবে তোমার দ্বারা এটা কি সম্ভব?
জেনে রেখো, আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন, আল্লাহ তোমাকে তোমার কল্যাণের জন্যই ঘরে অবস্থান করার নিদের্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, {وقرن في بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الأولي }
আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। (আহজাব : ৩৩)
কারণ, যখন তুমি ঘর থেকে বের হবে তখনই পুরুষরা তোমার প্রতি লালায়িত হবে। তুমি এর সত্যতা যাচাই করার জন্য পাশ্চাত্যে নারীর অবস্থার দিকে একটু দৃষ্টি দাও। তারা সর্বদা পুরুষের নির্যাতনের কথা বলছে, তারা সবখানে অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। তারা সহবস্থান থেকে বাঁচার জন্য শত চেষ্টার পরও সক্ষম হচ্ছে না। কারণ, তারা যদি কর্ম ত্যাগ করে, তবে তাদেরকে না খেয়ে মরতে হবে। তারা খুব দুঃখে রয়েছে, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ।
পক্ষান্তরে তুমি! আল্লাহ তোমাকে ইসলাম দ্বারা ইজ্জত দান করেছেন। এ ইসলাম তোমাকে পিতা, স্বামী, ভাই ও সন্তান উপহার দিয়েছে। যারা তোমার ভরণপোষণ করছে, তাদের ওপর আল্লাহ এ দায়িত্ব ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তোমাকে কখনো পানাহার ও বাসস্থানের জন্য কর্মে যোগ দিতে বলে নি ইসলাম। এটা একটা বড় নেয়ামত, যা আল্লাহ তোমাকে তোমার কষ্ট ছাড়াই দান করেছেন। কি চমৎকার! রানীর মত ঘরে থাকবে আর অন্যরা তোমার জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করবে। এটা কি বড় নেয়ামত নয়?
খবরদার! দুনিয়ার চাকচিক্য এবং বাইরে বের হওয়া ও কাজে যোগদানের শয়তানি প্ররোচনায় ধোঁকা খাবে না। তুমি যদি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাও, তবে ঘরে অবস্থান কর।
রাসূল সা. বলেন, নারী সতর। যখন সে বের হয় শয়তান তাকে চোখ তুলে দেখে। নারী ঘরের মধ্যে অবস্থানকালেই আল্লাহর বেশি নৈকট্য প্রাপ্ত থাকে। (তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান)
বোন! তোমাকে বলছি, তোমার নিকট সবচেয়ে দামি জিনিস হচ্ছে তোমার ইমান ও তোমার সতিত্ব। তুমি যখন পুরুষের সঙ্গে অবস্থান করবে তখন এ দুটো সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের থেকে দূরে থাক। স্বামী বা মাহরাম ব্যতীত অন্য কোন পুরুষের মুখোমুখি হয়ো না। জেনে রেখো! ঘরে বসেই তুমি পুতচরিত্র ও অহমিকা সম্পন্ন পুরুষ লাভে ধন্য হবে। আর যদি তুমি ঘর ছেড়ে বের হয়ে যাও এবং তাদের সঙ্গে অবস্থান কর, তবে তুমি পুরুষত্ব সম্পন্ন ও ব্যক্তিত্বর অধিকারী স্বামী থেকে বঞ্চিত হবে।
বোন! এ কথা বলো না, পুরুষের সঙ্গে থাকলেও আমি নিজেকে নিজে হেফাজত করতে সক্ষম। মনে রেখো! আল্লাহ তাআলা দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ এবং নারী-পুরুষকে আলাদা থাকার নিদেশ খামাখা দেন নি। তিনি জানেন, নারী-পুরুষের মাঝে যৌন সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর। আল্লাহ তাআলা মুসলমানকে এসব ফেতনার জায়গা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তার জন্য বৈধ নয় যে, সে নিজেকে নিজেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। মানুষ ক্ষুধার্থ হলে খানা থেকে বিরত থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলে তদ্রূপ মানুষ যৌন ক্ষুধায়ও নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মুদ্দাকথা : আমাদের এসব দলিল দ্বারা প্রমাণিত হল যে, নারী-পুরুষের সহাবস্থান হারাম এবং নারী-পুরুষের একে অপরের পাশে কর্মরত থাকা অবৈধ। যদিও তারা পরহেজগার হয়। যৌন কামনা থাকা বা না-থাকার কোন কথা নেই অথবা এরও কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই যে, নারী তার হেফাজতের জন্য সক্ষম।
বোন! তোমার যদি একান্ত কাজ করতেই হয়, তবে পুরুষের থেকে আলাদা কাজ কর।
বোন! আমি জানি না, আমার এ কথাগুলো তোমার অন্তরে কোন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে কি না?
বোন! আমি জানি না, আমার এ কথাগুলো তোমার হৃদয়ের গভীরে পৌঁছতে সক্ষম হবে কি না? আমি অন্তর থেকে তোমার জন্য দোয়া করছি। আরও দোয়া করছি যে, আল্লাহ তোমাকে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করে। যারা তোমাকে যে কোন হালাতে কর্মে যোগদানের জন্য পরিকল্পনা করে। তারা তোমাকে ঘরের বাইরে ও পুরুষদের সঙ্গে দেখে খুব খুশি।
কারণ, তারা খুব ভাল করেই জানে যে, তুমি প্রতিভাবান ও মহা ব্যক্তিদের জন্মদানকারী ও লালন-পালনকারী। তুমি বিপদগামী হলে মহান ব্যক্তিরা শৈশবেই জড়ে পড়বে। তখন পুরো জাতি তাদের তল্পিবাহক ও দাসে পরিণত হবে। আমি আশা করছি, তুমি খুব গভীর ভাবে আমার কথাগুলো গ্রহণ করবে এবং তোমার অবস্থানের ক্ষতি সম্পর্কে অবগত হবে।
আর যদি এমন হয় যে, তুমি আমার কথায় কোন ভ্রূক্ষেপ করছ না (যদিও আমি তোমার থেকে এমনটি আশা করি না) আমি সকাল-সন্ধ্যা তোমার জন্য দোয়া করব। আমি এ দোয়া থেকে কখনই বিরত হবো না।
যাই হোক! তুমি আমার বোন, আমার বিশ্বাস তুমি একদিন না একদিন ফিরে আসবেই। আমার বিশ্বাস আল্লাহ তাআলা আমার এ প্রচেষ্টা বিফলে যেতে দিবেন না। সব তওফিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা।
আমি তোমার থেকে আশা করছি, তুমি আমার এ কথাগুলো বারবার পড়বে এবং বারবার চিন্তা করবে।,,
.
সানা নিরব থেকে আমার সব কথাগুলো শুনে।ও আজকের রাত নানুবাড়িতে থাকবে জানিয়ে এ বিষয়ে আর কোন কথা না বলে ফোন রেখে দেয়।
আমি সানার কথাগুলো ভাবতে ভাবতে গেস্ট রুমে যাই।দরজা আগে যেভাবে খোলা ছিল এখনো সেভাবেই খোলা আছে তাই ঘরে ঢুকতে সমস্যা হয নি।উনার পাশে বসে উনার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি!কতদিন পর উনাকে এভাবে একান্তে দেখছি!রাতের খাবার শেষে উনি রুমে না গিয়ে এখানে এসে শুয়ে পড়েছেন।উনার উপর পাতলা একটা চাদর দিয়ে আমি চলে আসতে যাবো এমন সময় উনি পেছন থেকে আমার হাতটি ধরে ফেললেন!
আমি পেছন ফিরে উনার দিকে তাঁকিয়ে বললাম,
-আপনি উঠে পড়েছেন!আমি আরো ভাবলাম আপনি………..
উনি আমাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ দিলেন না!আমাকে উনার পাশে বসিয়ে আমার ঠোঁটে দুই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন কথা না বলার জন্য!
উনি কীরকম করে আমার দিকে তাকিঁয়ে আছেন!আমার কীরকম লাগছিলো উনার চাহনী দেখে!আমারও অদ্ভুত এক অসুখে ধরেছে।
ইদানীং আমার কিছুতেই যেন মন বসছে না এ পরিবারে।উনার প্রতিও মনে হয় আগের সম্মান,ভালোবাসাটা উঠে গেছে।উনার সঙ্গটাও এখন যেন কেমন বিরক্ত লাগছে আমার কাছে।
কিন্ত উনাকে একদমই বাধা দিলাম না।কারন মহানবী সা: বলেছেন “ স্বামী যখন তাঁর স্ত্রীকে দৈহিক প্রয়োজনে আহবান করবে, সে যেনো স্বামীর কাছে অত্যন্ত দ্রুত চলে আসে এমনকি সে রান্না ঘরে রুটি পাকানোর কাজে ব্যস্ত থাকলেও ।”
(সুনানে তিরমিযি ১১৬০
ছহীহুল জামে ৫৩৪),,
তাছাড়া আমরা অনেকেই জানি না নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিকহারে জাহান্নামে যাবে?
জানেন কেনো?
উসামা ইবনে যায়েদ রা.থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আমি জান্নাতের গেটে দাড়ালাম, দেখলাম যারা তাতে প্রবেশ করেছে তারা অধিকাংশ ছিল দুনিয়াতে দরিদ্র অসহায়। আর ধনী ও প্রভাবশালীদের
আটকে দেয়া হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে যাদের জাহান্নামে যাওয়ার ফয়সালা হয়ে গেছে তাদের কথা আলাদা। আর আমি জাহান্নামের প্রবেশ পথে দাড়ালাম। দেখলাম, যারা প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশ নারী।
[বুখারী ও মুসলিম]
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
হে নারীগণ! তোমরা দান-সদাক করো। বেশী বেশী করে আল্লাহ
তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিকহারে দেখেছি। এ কথা শোনার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন -যার নাম ছিল জাযলা-প্রশ্ন করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের কেন এ অবস্থা? কেন
জাহান্নামে আমরা বেশী সংখ্যায় যাবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা স্বামীর প্রতি বেশী অকৃতজ্ঞ ও অভিশাপ দাও বেশী।
[মুসলিম শরীফ],,
আর আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আমি চলে যাবো ওদের জীবন থেকে!আমাকে ছাড়া থাকুক না ওরা ভালো!চলে যাবার আগে যদি আল্লাহ চান তো সায়ানের একটা চিহ্ন আমার কাছে থাকতেও তো পারে।আল্লাহ চান তো
এই চিহ্নটা নিয়ে আমি বাকি জীবনটা অনায়াসে কাটিয়ে দিতে পারবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here