#শৈবলিনী—১৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★হাতে স্ক্রু-ড্রাইভার ধরে আগন্তুকের উপর তাক করার উদ্দেশ্যে পেছনে ঘুরে তাকাতেই, আদিত্য চোখ বড়সড় করে তড়িঘড়ি করে নিজের মুখের মাস্ক খুলে বলে উঠলো।
–আরে আরে কী করছ? বিনা অপরাধেই মারবে নাকি?তাছাড়া মরাকে আর মারবেই বা কী! আমিতো অনেক আগেই তোমাতে মরে গেছি। মৃ,ত ব্যক্তিকে মেরে কী মজা পাবে?
নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–আপনি! আপনি এখানে কী করছেন? পিছু নিয়েছেন কেন আমার?
–পিছু? এখন কী একজন স্বাধীন সচেতন নাগরিক তার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারি রাস্তায় চলতেও পারবেনা? তাকে পিছু করার অপবাদ বহন করতে হবে? মানবতা আজ কোথায়?
অত্যন্ত আপসোসের সহিত বললো আদিত্য। নূর হালকা বিরক্তির স্বরে বলল,
–আপনি আবার শুরু করেছেন?
–শুরু করতে দিলে কই এখনো। এনিওয়ে, তুমি আমার সাথে যেতে রাজি হলেনা সেটা তোমার চয়েজ। তবে আমাকে আমার মতো যেতে তো তুমি মানা করতে পারবেনা। আর আজ আমার হিমু হতে মন চেয়েছে। রাতের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন পথিক হতে ইচ্ছে হচ্ছে।
–ফাইন, ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট।
নূর কাঁধের হ্যান্ডব্যাগটা ঠিক করে নিয়ে আবারও চলতে শুরু করলো। আদিত্য নিজের মুখে আবারও মাস্ক পড়ে আর মাথায় ক্যাপ পড়ে সেও নূরের কদমের সাথে তাল মিলিয়ে এগুলো। নূর একটু দ্রুতই পা ফেলছে আদিত্যকে পিছে ফেলতে। তবে আদিত্যর লম্বা লম্বা কদমের সাথে পেরে উঠছেনা। না পেরে অগত্যা স্বাভাবিক ভাবেই আবার হাঁটতে লাগলো। রাস্তার সোডিয়াম আলোয় নূরকে দেখতে আরও ভালো লাগছে আদিত্যর। বাতাসে সামনের চুলগুলো উড়ছে তার। আর সে বারবার বিরক্ত হয়ে সেই চুল কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছে। শাড়ি পড়ার অভিজ্ঞতা যে নেই তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এটা বয়ে বেড়ানোই তার কাছে ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে গেছে। আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরের পাশে হাঁটতে হাঁটতে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
♬এই পথ যদি না শেষ হয়
♬ তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
♬ যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
♬ তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আদিত্যের পানে। আদিত্য জোরপূর্বক হেসে বলল,
–ইটস ওকে,তুমি না বললেও চলবে। কোনো জোরাজুরি নেই।
হাঁটতে হাঁটতে একসময় বাসস্ট্যান্ডে চলে এলো নূর। নূরের সাথে আদিত্যও দাঁড়িয়ে গেল। বিআরটিসির বাস আসলে নূর তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো তাতে। আদিত্যও দৌড়ে উঠে পড়লো নূরের পিছে। বাসে প্রচুর ভীড়। বসার সীট নেই কোথাও। ভীড় ঠেলে কোনরকমে মাঝখানে গিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো নূর। আদিত্যর লোকাল বাসের অভিজ্ঞতা নেই। তার অবস্থা বেহাল। সে ঠেলেঠুলে কোনরকমে নূরের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।এতো লোকের গাদাগাদিতে অসহ্য গরম লাগছে, তারওপর আবার লোকজনের ঘামের বিশ্রী দুর্গন্ধ। পেট উল্টে আসছে আদিত্যর। বিরবির করে বলল,
–দেশের জনসংখ্যা যে প্রবল হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। বাপরে!
নূরের মনে মনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আদিত্যের অবস্থা দেখে। এসেছিলো হিমু সাজতে। এইটুকুতেই হাল বেহাল হয়ে গেছে। আদিত্য খেয়াল করলো নূরের অপর পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। ইচ্ছে করে ঘেঁষে দাড়াচ্ছে নূরের সাথে। পায়ের রক্ত তড়াক করে মাথায় উঠে গেল আদিত্যের। শক্ত হলো দাঁতের মাড়ি। তবে আপাতত নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিলো সে। এখানে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়া যাবে না। আদিত্য আরেকটু এগিয়ে গিয়ে এক হাত নূরের পেছনে দিকে দিয়ে আর সামনে আরেক হাত রেখে দাঁড়িয়ে রইলো, যাতে নূরকে কেউ টাচ করতে না পারে। নূর বিষয় টা খেয়াল করলো। তবে কিছু বললোনা। নিজের অজান্তেই যেন একটা অদৃশ্য ভালো লাগা কাজ করলো। আদিত্য নূরকে কোথাও বসানোর ব্যবস্থা করতে চাইলো।পাশের সিটে একটা ভুড়িওয়ালা লোক বসে আছে। আদিত্য পাঁচশ টাকার একটা নোট বের লোকটাকে ইশারা করলো উঠে যেতে। উঠে গেলে সে এই নোটটা পাবে। লোভে প্রলোভিত হয়ে লোকটাও ফট করে উঠে গেল। সবই হলো নূরের অগোচরে। লোকটা উঠতেই আদিত্য নূরকে বললো ওই সিটে বসতে। নূরও বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পড়লো ওখানে। আদিত্য নূরের সিটে এক হাত আর সামনের সীটে আরেক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নূর আরচোখে দেখলো আদিত্যকে। ঘেমে বেচারার শার্টটা ভীজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। কপাল বেয়ে ঘামের বন্যা নামছে। মায়া নামক কিছু অনুভূতি হলো নূরের। হ্যান্ডব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আদিত্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
–ঘাম মুছে নিন।
আদিত্য চমকিত নয়নে তাকালো নূরের পানে। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। নূর আজ প্রথম আদিত্যর হিতের কথা ভাবছে। অতি সামান্য হলেও এটা আদিত্যর জন্য অনেক কিছু। আদিত্য রুমালটা নিলো। নূরের রুমাল এটা, এটাতে নূরের শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। আদিত্য রুমালটা শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। নূর সেটা দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–কী হলো মুছলেন না? ভয় নেই পরিস্কার আছে।
আদিত্য মুচকি হেঁসে বলল,
–তোমার দেওয়া প্রথম কোনো জিনিস এটা। এতো স্পেশাল জিনিসটাকে আমার এই সামান্য ঘাম মুছে নষ্ট করবো নাকি?
–ঠিক আছে তাহলে আমার রুমাল ফিরিয়ে দিন।
–ওটার কথাতো ভুলে যাও। চাইলে ওটার বদলে অন্যকিছু নাও। কিন্তু ওটা পাবে না।
–অন্যকিছু চাইনা আমার। আমাকে আমার রুমাল ফিরিয়ে দিন ব্যাস।
–আরে এতো কিপ্টে কেন তুমি? একটা রুমালের মায়াই ছাড়তে পারছনা! মনে করো কোনো অসহায় ব্যাক্তিকে দান করে দিয়েছ তুমি। এর বদলে দোয়া পাবে।
আবারও হাসি পেল নূরের। নূর মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। একটু পর নূরের পাশের প্যাসেঞ্জার টা উঠে নেমে গেল। নূর জানালার কাছের সীটে বসে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
–চাইলে বসতে পারেন।
আদিত্য মুচকি হেঁসে বসলো নূরের পাশে। এখন একটু জানালা দিয়ে বাতাস লাগছে। কন্ডাকটর ভাড়া নিতে এসে বলল,
–কোথায় নামবেন?
আদিত্য একটু ভেবে বলল,
–কোন পর্যন্ত যাবে গাড়ি?
–মতিঝিল পর্যন্ত।
–তাহলে সেই পর্যন্তই যাবো।
–ঠিক আছে, ৬০ ট্যাহা দেন।
আদিত্য মানিব্যাগ থেকে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিলে কন্ডাকটর বলে উঠলো।
–এইডা কী দেন স্যার। ভাংটি দেন।
–ভাংটি তো নেই। আচ্ছা কার্ড চলবে?ক্রেডিট কার্ড,ডেবিট কার্ড?
–কী মশকারি করেন স্যার! ট্যাহা দেন নাইলে নাইমা যান।
–আচ্ছা, ভাংটি দিতে হবেনা। পুরোটাই রাখো।
কন্ডাকটর এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–জালি ট্যাহা আইনা আমারে ধরাই দিতে চাইতাছেন তাইনা! এইসব ধান্দাবাজি আমার লগে চলবো না। ভালোই ভালোই ট্যাহা বের করেন নাইলে অহনি নাইমা যান।
বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল আদিত্য। নূরের সামনে ইজ্জতের হালুয়া রুটি হয়ে যাচ্ছে বেচারার। আর আদিত্যের বেহাল দশা দেখে দম ফাটানো হাসি বহুত কষ্টে আঁটকে রাখছে নূর। শেষমেশ অবস্থা সামাল দিতে নূর বলে উঠলো।
–মামা, উনার ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।
নূর দুজনের ভাড়া দিয়ে মামলা মিটকুট করলো। আদিত্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলল,
–থ্যাংক ইউ নূর।
–থ্যাংক ইউ-এর লুচি বানিয়ে খান আপনি। আমাকে আমার টাকা কাল দিয়ে দিবেন। আমি এখানে দানশালা খুলে রাখিনি।
–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। তোমার এতবড় ঋণের বোঝা নিয়ে মরেও শান্তি পাবোনা। দেখা যাবে কবর থেকেও টেনে তুলে বলবে,আমার টাকা না দিলে কবরে থাকতে দিবোনা।
–হ্যাঁ এমনটাই করবো আমি।
মাথা নেড়ে হাসলো আদিত্য।কিছুক্ষণ পর একটা মোটা ভুড়িওয়ালা লোক এসে দাঁড়াল আদিত্যর সীটের কাছে। খালি সীট না পাওয়ায় হাত উঁচু করে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। যার দরুন লোকটার ব,গ,লে,র ঘামের বিশ্রী তীব্র দুর্গন্ধ এসে লাগলো আদিত্যর নাকে। নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম বেচারার। আদিত্য নাক চেপে ধরে ওর পকেট থেকে একটা ছোট্ট মিনি পারফিউম এর শিশি বের করে লোকটার বগলের দিকে স্প্রে করে দিলো।গন্ধে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
–এই লোকের কাছে ওর বউ কেমন করে শোয় কে জানে! এর শরীরের দূর্গন্ধে তো এর ঘরে তেলাপোকাও ঢুকতে সাহস পাবেনা।
এবার নিজের হাসির ফোয়ারা থামাতে সক্ষম হলোনা নূর। চেপে রাখা হাসিটা মুখের ভেতর ফুলতে ফুলতে একসময় ঠোঁটের বাঁধ ভেঙে বিস্ফোরিত হয়ে বেড়িয়েই এলো। আদিত্যর কাজ আর কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নূর। হাসতে হাসতে সামনের দিকে ঝুঁকে গেল সে। আর নূরের এই হাসির ঝংকারে মাতোয়ারা হলো আদিত্যের মনমঞ্জিল। মুহুর্তেই সব গরম সরিয়ে শীতল পবনে জুড়িয়ে দিলো আদিত্যর শরীর মন। নূরের মুখের হাসি হলো বৃষ্টির পড়ে ভেসে উঠা ওই সাতরঙা রংধনু, যে সৌন্দর্য শুধু অনুভব করা যায়। ভাষায় বয়ান করা যায় না।
নির্দিষ্ট স্থানে আসতেই নূর উঠে দাঁড়িয়ে নামার জন্য এগুলো। আদিত্যও আর বসে থাকবে কারজন্য। সেও তড়িঘড়ি করে নূরের পিছু পিছু নেমে গেল। নূর আর এখানে নামা নিয়ে এবার কিছু জিজ্ঞেস করলোনা। এতক্ষণে সে এতটুকু বুঝে গেছে, আদিত্য কেবল ওকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেই ওর সাথে সাথে এসেছে। তাই আর কোন কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। দুজন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে একসময় থেমে গেল নূর।নূরের থেমে যাওয়া দেখে আদিত্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। নূর পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
–আমার বাসায় চলে এসেছি।
আদিত্য একবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে আবার নূরের দিকে ফিরে বলে উঠলো।
–ওহ, ওকে। বায় দেন। সি ইউ টুমরো।
নূর সৌজন্যমূলক ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বাসার গেটের দিকে এগুলো। দুই কদম যেতেই আদিত্য পেছন থেকে ডাক দিলো। নূর থেমে গিয়ে ফিরে তাকালো। আদিত্য মায়াময় কন্ঠে বলে উঠলো।
–থ্যাংক ইউ নূর।আজকের দিনটা এতো স্পেশাল করার জন্য। আজকের এই মুহুর্তগুলো সত্যিই খুব স্পেশাল ছিলো আমার জন্য। থ্যাংক ইউ সো মাচ।
নূর প্রতিত্তোরে কী বলবে ভেবে পেলনা। আজকাল যেন ওর শব্দগুলো মাঝে মধ্যে কেমন হাতড়িয়ে পাওয়া যায় না। অগত্যা গেট খুলে ভেতরে ঢুকে গেল সে। আদিত্য অনাবিল প্রশান্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিক। তখনই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আদিত্যর। রিসিভ করে কানে ধরে কিছু শুনলো। মুহুর্তেই চেহারার রঙ পাল্টে গেল তার। চোখ মুখ ভয়ংকর কঠিন করে বলল,
–আম কামিং।
__
অন্ধকার ঘরের ফ্লোরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে কিছু লোক। নিজেদের ছাড়ানোর চেষ্টা করে ছটফট করছে আর চিল্লাচ্ছে। ওরা ভেবে পাচ্ছেনা কে বা কারা ওদের এভাবে ধরে এনে আঁটকে রেখেছে। ওরাতো তখন ওই নূর নামের মেয়েটাকে কি,ড,ন্যা,প করতে যাচ্ছিল। হঠাৎ ওদের সামনে কালো কোটপ্যান্ট পড়া কয়েকজন লোক এসে পথ আগলে দাঁড়াল। কোনকিছু না বলে গান পয়েন্টে রেখে ওদের গাড়িতে তুলে ধরে নিয়ে এলো এখানে । তারপর থেকেই এভাবে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে ওদের। কখন থেকে চিল্লাচিল্লি করছে কিন্তু কারোর কোনো সারাশব্দ নেই।
একটু পর দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালো সবাই। গটগট পায়ের শব্দ করে এগিয়ে আসছে কিছু লোক। এরইমাঝেই কেউ ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। চোখের সামনে প্রতীয়মান হলো সেই লোকগুলো। সামনে পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। চারজন হলো সেই কালো কোটপ্যান্ট পরিহিত লোকগুলো যারা ওদের ধরে এনেছে। আর এদের মাঝখানে একজন গান হাতে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে চিনতে সময় লাগলোনা ওদের। এটাযে সুপরিচিত মুখ, সুপারস্টার সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য। আদিত্যকে এভাবে এখানে দেখে অবাক আর ভীতিগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে রইলো সবাই। বাঁধা লোকগুলোর মাঝে একজন বলে উঠলো।
–আরে আদিত্য! আপনি! তাহলে এখানে কী কোনো মুভির শুটিং চলছে? এইজন্য কী আমাদের আনা হয়েছে?
আদিত্য বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ওদের সামনে এসে, এক হাঁটু নিচে গেড়ে আরেক হাঁটু ভাজ করে বসলো। ভাজ করা হাঁটুর ওপর গান ধরে রাখা হাতটা রেখে লোকগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–ইয়েস,শুটিং-ই হবে। তবে মুভির শুটিং নয়।রিয়েল শুটিং। যার ডিরেক্টর আমি, আর চরিত্র হলো তোরা।
লোকগুলো ভয় পেয়ে বলল,
–কী বলছেন এসব? দেখুন ছেড়ে দিন আমাদের। আপনার ধারণা নেই আমরা কোন গ্যাং এর লোক। আমাদের কিছু করলে আপনার বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে। কাউকে বাঁচাতে পারবেন না।
আদিত্য একবার ঘার ঘুড়িয়ে ওর লোকগুলোর দিকে তাকালো। তারপর ঘর কাঁপিয়ে একসাথে হেসে উঠলো সবাই। হাসি থামিয়ে বলল,
–তোর সেন্স অফ হিউমার পছন্দ হলো আমার। আপসোস আমার ফিল্মে কাজ করার চান্স হারিয়ে ফেললি।
ওদের মাঝে একজন ভয়ে ঢোক গিলে বলল,
–আ আআপনি তো নায়ক মানুষ। কতো ভালো লোক। তাহলে এসব কী? এটা কোন রুপ আপনার?
–গুড কুয়েশ্চন। তো এটা আমার সেই রুপ যেটা দেখতে কেউই ইচ্ছে পোষণ করবেনা। পর্দায় যেটা দেখায় সেটা আমার হিরো রুপ। আর এটা হলো আমার ভিলেন রুপ। আমার এই রুপ শুধু তারাই দেখতে পায় যারা আমার অপছন্দের তালিকায় চলে আসে। আর যারা আমার অপছন্দের তালিকায় চলে আসে তারা এনআইডি তালিকা থেকেও বাতিল হয়ে যায়। কারণ যারা আমার এই রুপ দেখতে পায় তারা আর দুনিয়ার কোনোকিছু দেখার যোগ্য থাকেনা। এখানকার আইনও আমি,উকিলও আমি আর জজও আমিই। এখানে শুধু আমার রায় চলে।
এবারে লোকগুলো সত্যি সত্যিই ভয়ে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে বলল,
–কিন্তু ভাই আমরা করেছিটা কী সেটাতো বলবেন? আমাদের অপরাধ কী? আমরা তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। আরে আমরা তো উল্টো অনেক বড়ো ফ্যান। তাহলে আমাদের কেন ধরে এনেছেন?
এবারে আদিত্যের চোখ মুখ আরও কঠিন হলো। দাবানল জ্বলে উঠলো তার দুই চোখে। সিংহের মতো থাবা মেরে প্রশ্ন করা লোকটার বুকের কাছের শার্ট চেপে ধরে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
–কী করেছিস! তোরা সেই দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করেছিস যেটা করার কথা কেউ ভাবলেও তার জীবন রেখা মিটিয়ে দেবো আমি। তোরা আজ যে মেয়েটাকে তুলে নিতে গিয়েছিলি জানি সে কে? সে হলো নূর,আমার নূর এই আদিত্যের লাইফলাইন। আর তোরা ওর ক্ষতি করতে চেয়েছিলি!
লোকগুলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
–স সসরি ভাই,ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আসলে ওই মাইয়া আমাদের গ্রুপের কিছু ছেলেকে মেরেছিল। আবার পুলিশেও ধরিয়ে দিয়েছে। তাই একটু শায়েস্তা করতে চেয়েছিলাম। তবে ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আর কখনো এমন কাজ করবোনা। প্লিজ ছেড়ে দেন আমাদের।
–মেরেছিল, বেশ করেছিল। তোরা কী ভেবেছিস আমি কিছু জানি না! নূরের হাতের আঘাত দেখে আমার সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল। আমি লোক লাগিয়ে খবর নিয়ে সব জানতে পেরেছি। তোদের ওই গুণধর ছেলেগুলো যে অন্যায় করতে গিয়েছিল তাতে তো ওদের আরও ভয়াবহ শাস্তি হওয়া উচিত। শুকুর কর আমার হাতে পরার আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ওদের । নাহলে ওদের এমন হাল করতাম যে, দুনিয়াতে আসার জন্যও আপসোস করতো ওরা। আর ওই বা,স্টা,র্ড,দের জন্য তোরা উল্টো আমার নূরকে আঘাত করতে চাইছিলি! ওকে ধরে নিয়ে যেতে পারলে যে কী করতিস তা আমার ভালো করেই জানা আছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা কীভাবে হতে দিতাম। আমি সেদিন থেকেই লোক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। নূরের ওপর সর্বদা নজর রাখার জন্য। আর আজ তোদের দেখতে পেয়েই আমাকে ফোন দিয়েছিলো। আর আমি তোদের ধরে নিয়ে আসতে বলেছি।
–ভু ভুল হয়ে গেছে ভাই। অনেক বড়ো ভুল। এবারের মতো মাফ করে দিন।
আদিত্য রহস্যময় হেঁসে বলল,
–আজ তোকে একটা গল্প বলি শোন। ছোটবেলা থেকে আমার একটা দুশমন ছিলো। দুশমনির তেমন কোনো গুরুতর কারণ ছিলো না। এমনিতেই ও আমাকে ছোটো করার চেষ্টায় লেগে থাকতো আর আমি ওকে। সাপ আর বেঁজি সম্পর্ক ছিলো আমাদের। বয়সের সাথে এই সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। ও সবসময় আমার ক্ষতি করার চেষ্টায় লেগে থাকতো। আর আমি ওকে পরাস্ত করার। আমাদের শত্রুতা ভালোই চলছিলো।একদিন কলেজে ওর অন্য কারোর সাথে লড়াই হয়ে গেল। সে আবার লোকজন নিয়ে ওকে মারতে এলো। কিন্তু বাঁধা দিলাম আমি। ওকে যারা যারা মারতে এসেছিল সবগুলোকে কুপোকাত করে দিলাম আমি। কেন জানিস? কারণ ওকে কেউ কিছু করলে আমাদের শত্রুতার কী হতো! আমার শত্রুকে দমন করার অধিকার শুধু আমার। সেটা অন্য কাউকে কীভাবে করতে দিতাম। তাহলে ভাব,আমি শত্রুতার জন্য যদি এতটা পজিসিভ হতে পারি তাহলে আমার ভালোবাসার জন্য কতটা পজিসিভ হতে পারি,কতটা উন্মাদ হতে পারি। এক্সুয়ালি তোরা চেষ্টা করলেও ভেবে পাবিনা। কারণ আমি নিজেই বলতে পারিনা ওই মেয়েটা আমার ঠিক কতটা জুড়ে আছে। শুধু জানি যতক্ষণ ও ঠিক থাকবে ততক্ষণই এই দেহে প্রাণের সঞ্চালন হবে। কেউ ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তার দুনিয়া ধ্বংস করে দিবো আমি। তাদের জন্য কোনো মাফ নেই আমার কাছে। কোনো দয়া নেই। তোরা শুধু আমার নূরের না, এর আগেও অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছিস। অনেক নিষ্পাপের জান কেঁড়ে নিয়েছিস। তোদের মতো নর্দমার কীটদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই আমার এই গ্যাং ।এখানে তোদের মতো ধরণীর আবর্জনাদের সাফ করা হয়। তবে তোদের পুরোপুরি মারবোনা। তোদের এমন হাল করবো যে,তোরা নিজেরাই নিজেদের মৃ,ত্যু,র জন্য ভিক্ষা চাইবি।
বলা শেষে উঠে দাঁড়াল আদিত্য। গান তাক করে সবকয়টার পায়ে আর হাতে গু,লি করলো। তারপর ওর লোকগুলোকে ইশারা করে বলল,
–বাকি কাজ ফটাফট সেরে ফেলো তোমরা।
বলেই বেড়িয়ে গেল আদিত্য।
চলবে…..