মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১৩
তানিয়া রহমান

লিভিং রুমে মনির আর মনিরের বোন সালমা পাশাপাশি বসে আছে, ইরিন মনিরের মুখোমুখি হয়ে মেহবুবের পাশে বসলো।
সালমা স্মিথ হেসে বলল – কেমন আছ ইরিন
– ভাল,আপনি
– ঐ আছি আর কি
ইরিন খেয়াল করলো মনির অপলকভাবে তার গলার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনের মনটা নেচে উঠলো মনিরের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে। মনে মনে বলল “কেমন লাগছে মনির? আমারো কষ্ট হতো,তুমি কখনো বুঝতে চাওনি ভালবাসার মানুষকে অন্য কেউ ভালবাসলে কতটা যন্ত্রণা হয়।”
সালমা মেহবুবকে বলল- আমি ইরিনের সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাচ্ছি
– ইরা! আপাকে স্টাডি রুমে নিয়ে কথা বল
ইরিন সালমাকে নিয়ে চলে যাবার পর মনির তীক্ষ্ণ চোখে মেহবুবের দিকে তাকিয়ে বলল- তুই কি ওকে ভালবাসিস
– আমার কথা বাদ তোদের সমস্যার সমাধান কর
– ইরিনকে দেখে মনে হচ্ছে তোদের সম্পর্ক অনেক গভীরে পৌঁছেছে
– স্যরি দোস্ত, বুঝতেই পারছিস–,আর এটাতো লিগ্যাল তাই না!
মনিরের ইচ্ছে করছে মেহবুবের মুখটা গুড়িয়ে দিতে,শালা!আমার বৌ নিয়ে ফুর্তি করে আমাকে লিগ্যাল শিখাচ্ছে।
অনেকটা সময় পার হবার পরও ইরিন যখন আসছে না তখন মেহবুব ঘামতে শুরু করলো, মাথা ভারী হয়ে এল,মেহবুব মনিরকে বলল- আমার খারাপ লাগছে, তুই বোস আমি ভিতরে যাচ্ছি
অপুকে ডেকে বলল- ব্লাড প্রেশার মাপ
অপু বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মেহবুবের শরীর খারাপ করেছে।প্রেশার মেপে দেখলো বেশ বাড়তি।
– বাবা! সকালে মেডিসিন নিয়েছিলে
– হুম
– রেস্ট নাও
– তোমার আন্টিকে ডাক, স্টাডি রুমে আছে
অপু প্রায় দৌড়ে স্টাডি রুমে এল, ইরিনকে হাত ধরে টেনে বলল- তারাতাড়ি এস বাবার শরীর খারাপ করেছে
ইরিন ফ্রিজ থেকে আইস ব্যাগ বের করলো,আম্বিয়াকে ডেকে বলল- তেঁতুলের জুস বানিয়ে নিয়ে আসুন
মেহবুব এসির মধ্যেও দরদর করে ঘামছে, ইরিন অপুকে বলল- এসি কমিয়ে এইটিনে দাও
মেহবুবের টিশার্ট খুলে ভেজা টাওয়াল দিয়ে গা মুছিয়ে দিল, ঘাড়ের কাছে আইস ব্যাগ ধরে বলল- রিল্যাক্স! প্লিজ! আমি বলছিতো টেনশনের কিছু নাই
মেহবুব ইরিনের একটা হাত বুকের কাছে চেপে ধরলো
দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে মনির আর সালমা সবই অবলোকন করছে, মনিরের ভিতর ক্ষয়ে যাচ্ছে এক অজানা কষ্টে।
অপু আর চোখে মনির আর সালমার দিকে তাকালো, মনিরের সঙ্গে চোখাচোখি হওয়ায় মনির বলল- হসপিটাল নিয়ে যাই কি বল
অপু দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বাইরে এসে বলল- লাগবে না, আসুন আমরা লিভিঙে বসি

মনির আর সালমা উত্তরায় ফিরে এসেছে।
নিজের রুমে শুয়ে ফেসবুক স্ক্রল করছিল মনির। সালমা দরজায় নক করে বলল – আসব?
শোয়া থেকে উঠে বসে বলল মনির – এস আপা
-কি একটা বিশ্রী ব্যাপার হলো বলতো
– কোন ব্যাপারে বলছো
– তুই যে বললি মেহবুব আর ইরিনের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই আমার কিন্তু সেরকম মনে হচ্ছে না
– আপা! ইরিনের সঙ্গে কেউ টানা সাতদিন কথা বললে ওর প্রেমে পরে যাবে আর সেখানে ওরাতো এক বাসায় থাকছে,বাই দ্যা ওয়ে ইরিন কি বলল, আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো মনির
– কি আর বলবে তার আগেইতো মেহবুব অসুস্থ হয়ে গেল
– তোমার কি মনে হয় ইরিন ফিরে আসবে
– কি দরকার ঝামেলা বাড়ানোর,তার চেয়ে একটা ভাল মেয়ে দেখে বিয়ে কর
– ভাবিনি যে তা নয় কিন্তু পারছি কই, সালামার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে আবার বলল – ওর জন্য আমার এত পুরে কেন আপা
মনিরের কথায় সালমার চোখ ভিজে এল।

অসুস্থ মেহবুবকে দেখার ছুতোয় মনির পরের দিন আবার চলে এল মেহবুবের বাসায়। আম্বিয়া দরজা খুলে দিলে মনির বলল- মেহবুব আছে
-জ্বে আছে
– ডেকে দিন
– ফোন দেন,খালাম্মা -খালুজানের ঘড়ে যাওয়া নিষেধ
মনির লিভিং রুমে বসে শুনতে পেল ইরিন আর মেহবুবের হাসির শব্দ, কল না করে ইরিনের রুমের দিকে এগিয়ে গেল মনির এক দুর্নিবার আকর্ষণে।
ফ্যানের বাতাসে দরজার পর্দা সরে গিয়েছে অনেকটা,তার ফাঁক গলে দেখা যাচ্ছে ইরিন আর মেহবুব বেডে শুয়ে খুনসুটি করছে।মেহবুব ইরিনের পেটে সুরসুরি দিচ্ছে আর কানের কাছে মুখ নিয়ে কি জেন বলছে, ইরিন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে, হাতের সুরসুরিতে কখনো আবার খিলখিল করে হেসে উঠছে।
মনির লিভিং রুমে ফিরে এসে পকেট থেকে ফোন বের করে মেহবুবকে কল করলো।
হাসির শব্দ নিমিষেই উবে গেল। মেহবুব ফোন রিসিভ করে বলল – দোস্ত কি খবর
– আমি তোর বাসায়
– কখন এলি
– এইতো
– বোস আসছি
বেড থেকে উঠে বসে ইরিনকে বলল মেহবুব – কোথাও যাবে না, আমি আসছি ওনলি টেন মিনিটস
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here