মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১২
তানিয়া রহমান

মেহবুব হাফবেলা অফিস করে বাসায় চলে এল। ইরিনকে ডেকে বলল- একসেট পাজামা পাঞ্জাবি বের কর আমি শাওয়ার নিয়ে আসছি।
ইরিন লাইট ব্লু কালারের পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা বের করে বেডের উপর রেখে দিল।
মেহবুব টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল- ইরা! তুমি যাবা
– কোথায়
– মনিরের মা এক্সপায়ার করেছে তুমি জান না?মেহবুব পাঞ্জাবি পরতে পরতে বলল।
– অনেক রিলেটিভস্ থাকবে আজেবাজে কথা বলবে সেজন্য যেতে চাচ্ছি না
-ওকে!উটকো ঝামেলা কাঁধে নেয়ার কোন দরকার নাই,তুমি বরং আমাকে কিছু খেতে দাও ক্ষুধা পেয়েছে
– টেবিলে ভাত দিয়েছি, আসুন
কপালে কপাল ঠেকিয়ে দু’হাতে ইরিনের দুবাহু ধরে বলল- আমার বৌটা কি আমায় খাইয়ে দিবে
– অপু আছে বাসায়
– তো! কি হয়েছে
– আমি পারব না, আপনার দেখছি লজ্জা বলতে কিছু নেই
– এখানে নিয়ে এস

মনির বারবার গেটের দিকে তাকাচ্ছে, এত লোকের মধ্যেও মনিরের একজোড়া চোখ বিশেষ একজনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আছড়ের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছে, আনমনে বলল- এখনো কেন আসছ না ইরি
মেহবুব গাড়ী পার্ক করে দ্রুত হেটে মনিরের কাছে এসে বলল- স্যরি দোস্ত দেরি করে ফেললাম
– ইটস ওকে! ইরি কই
– ও আসেনি
মনিরের বুকটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল যতটা না মাকে হারানোর ব্যাথায় তার চেয়ে বেশি ভেঙ্গে গেল কাছের মানুষকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে না পারার কষ্টে। বেদনা ভরা মুখ নিয়ে বলল – আম্মাকে শেষ দেখাটাও দেখতে এল না
– তোদের অনেক রিলেটিভস্ এসেছে, নানা ধরনের মন্তব্য করবে সেজন্য আসেনি
মনির এলোমেলো পায়ে কফিনের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসলো,একহাতে মায়ের মুখ আগলে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠলো, তীব্র কষ্ট নিয়ে বলতে লাগলো ” আমাকে ভালবাসার আর কেউ রইল না আম্মা, আমাকে তুমি কার কাছে রেখে গেলে, না আছে আমার কোন সন্তান না আছে স্ত্রী ”
মনিরের কথা শুনে মেহবুবের বুক ভারী হয়ে উঠল, ঝাপসা চোখে ভাবতে লাগলো “কোন কোন ভুলের সত্যি বুঝি কোন প্রায়শ্চিত্ত নেই। ”

জানাজা শেষে মাটি মঞ্জুর করে আসার সময় মনির বলল- মেহবুব
মেহবুব চোখ তুলে তাকালো মনিরের দিকে
মনির আবার বলল – বড় আপা ইরির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছে,তোর বাসায় নিয়ে আশি?
– কবে যেতে চাইছিস
– তোকে ফোন করে জানাব
– বাসায় অপু আছে, আপাকে বলিস ম্যানেজ করে কথা বলতে
– তুই চিন্তা করিস না, আপা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী

বাসায় ফিরে গম্ভীর মুখে স্টাডি রুমে বসে রইল মেহবুব, কিছু থ্রিডি ডিজাইন করার বাকি আছে কিন্তু মেহবুবের ইচ্ছে করছে না। ইরিন রুমে এসে মেহবুবের পাশে বসে বলল – কি হয়েছে
মেহবুব ইরিনের দিকে চোখ তুলে তাকালো, নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল – ওরা তোমাকে নিয়ে নিতে চাইছে
– আপনি কি চাইছেন
ইরিনের চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলল – তুমি বুঝনা আমি কি চাই
– এত টেন্স হচ্ছেন কেন অসুখ করবে
– তুমি বুঝি আমাকে নিয়ে ভাব? ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল মেহবুব
– না ভাবার কি আছে
– তবে কাছে আসতে দাও
– কাছেইতো আছেন
– আরও কাছে যতটুকু আসলে বর -বৌ পূর্ণতা পায়
ইরিন চোখ নামিয়ে নিল
– আপনার ঘুম দরকার, চলুন ঘুমাবেন
মেহবুব ইরিনের কাঁধে নাক ঘঁষে ফিসফিস করে বলল- আমার এই ছন্নছাড়া জীবন তোমার কাছে আশ্রয় চায়ছে ইরা

ইরিনের চোখ জলে ভরে উঠলো, মেহবুব যখনই খুব কাছে আসতে চায় তখনই ইরিন অনুভব করে উনত্রিশ বছরের ছিড়ে যাওয়া এক রঙহীন সুতোর অদৃশ্য টান।এ টান থেকে কি আদৌও সে বেরিয়ে আসতে পারবে?

মেহবুব দরজা খুলে মনির আর তার আপাকে বলল- আপা বসুন, আমি ইরাকে ডেকে আনছি

ইরা শাড়ী চেঞ্জ করে সালোয়ার কামিজ পরেছে, শাড়ীটা সে মেহবুবের জন্য পরে, এই বিশেষ পোশাক অন্য কারো জন্য নয়।
মেহবুব ঘড়ে ঢুকে ইরিনের মুখোমুখি দাঁড়ালো, কোন কথা না বলে ইরিনকে জরিয়ে ধরে গলার কাছে গভীরভাবে চুমু খেল।
ইরিন বলল- কি করছেন, দরজা খোলা
কে শুনে কার কথা, বড্ড বেপরোয়া আজ মেহবুব, নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখতে হলে অভদ্র হওয়া ছাড়া উপায় নেই তার।
বেশ কিছু সময় পর মেহবুব ছেড়ে দিল ইরিনকে।
আয়নায় ইরিন দেখলো গলার কাছে গাঢ় হয়ে কয়েক জায়গায় দাগ পরেছে।দোপাট্টা দিয়ে ঢাকতে গেলে মেহবুব বলল- একদম ঢাকবে না
– পাগল নাকি
– আমি যা বলছি তাই করবে
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here