মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১১
তানিয়া রহমান

মেহবুব ডিভানে বসে টিভিতে বিভিন্ন চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ দেখছিল। কফির মগে চুমুক দিয়ে আর চোখে ইরিনের দিকে তাকালো, নজরুলের কবিতার বই পড়ছে ইরিন। একহাতে কোমড় জরিয়ে মেহবুব ইরিনকে নিজের কাছে নিয়ে এল।ইরিনের গায়ের femme এর সৌরভ মেহবুবকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়, নিজেকে সামলে নিয়ে বলে- কি পড়ছো
ইরিন আবৃত্তি করে বলল –
তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান
এইটুকু শুধু রবে পরিচয়
আর সব অবসান
বাকিটা মেহবুব বলল-
অন্তর তলে অন্তর তরে
যে ব্যাথা লুকায়ে রয়
গান আড়ালে পাও নাই তার
কোনদিন পরিচয়?
দুজনেই হেসে উঠলো।ইরিনের পাশে থাকা এটা সেটা নিয়ে খুনসুটি করা মেহবুবের নিয়মের জীবনে লাগিয়ে দিয়েছে এক অনিয়মের হাওয়া। মেহবুব বুঝতে পারে বদলে যাচ্ছে তার মরিচা ধরা জীবন।

অপু পর্দা সরিয়ে রুমে ঢুকে ইরিনের হাতে ফোন দিয়ে বলল – তোমার বন্ধু অন্জন, কল ব্যাক করতে বলেছে
– ওর ফোন তোমার কাছে কেন
– আন্টি আমার রুমে রেখে এসেছিল,তারপর হেসে বলল”বাবা জানো আন্টির বন্ধুরা আন্টিকে কি বলে ডাকে”
ইরিন চোখ পাকিয়ে ইশারায় মানা করলো না বলতে
অপু মেহবুবের গলা জরিয়ে ধরলো
– তুমি শুনতে চাও বাবা
মেহবুব আগ্রহের দৃষ্টিতে অপুর দিকে তাকালো
অপু খিলখিল করে হেসে বলে উঠলো – আন্টিকে ওরা মিসেস টাকলা বলে
মেহবুব একথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না, হাতে থাকা কফির মগ থেকে কিছুটা ছলকে পরলো মেঝেতে আর মুখে যেটুকু ছিল তাও আটকে গেল গলায়। ভারী কন্ঠ নিয়ে ইরিনের দিকে তাকিয়ে বলল – আমি মোটেও টাকলা নই
– বেশতো ওদের বলব চুল গুণে সার্টিফিকেট দিয়ে যেতে
ইরিনের কথা শুনে অপুর হাসির বেগ বেড়ে গেল।
মেহবুব গম্ভীর ভাবে বলল – ইটস নট ফেয়ার অপু
– স্যরি বাবা কিন্তু আমার যে হাসি পাচ্ছে
ইরিন হাসি চেপে বলল – অপু! তোমার না এক্সাম চলছে যাও পড়তে বস

মনিরের মা সাতদিন ধরে হসপিটালাইজড্।মনির বারবার মেহবুবকে বলেছে ইরিনকে ওর মা দেখতে চায় কিন্তু মেহবুব নির্বিকার।
গতকাল মনির আবার ফোন করে বলল- দোস্ত আম্মার অবস্থা ভাল না প্লিজ তুই ইরিকে বলনা চোখের দেখা দেখে যেতে
– বিকেলে নিয়ে আসব
– থ্যাংস দোস্ত

ইরিন বেবীপিংক কালারের সালোয়ার স্যুট পরেছে সাথে নুড কালার লিপস্টিক আর কাজল তাতেই সে হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয়।
মেহবুব ইরিনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল কিছুসময়, ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে লিপস্টিক আর কাজল মুছে বলল- আমরা হসপিটাল যাচ্ছি পার্টিতে নয়
– এটা মোটেও পার্টি সাজ নয়
– তা নয়,কিন্তু যাচ্ছিতো বিস্টের গুহায় আমার বিউটিকে যদি রেখে দেয়
– এত ভয়!
মেহবুব হেসে ইরিনের কানের লতিতে হালকা করে কামড়ে দিল
– উফ!এটা কি হলো
– জেন নজর না লাগে

মনিরের মা শাহানা আছে ২৩০নাম্বার কেবিনে। ইরিন আর মেহবুব এল সন্ধ্যার পর।ইরিনকে দেখে মনির বলল- তুমি এসেছো,এত দেরি হলো যে,আমি কখন থেকে ওয়েট করছি
শাহানা মনিরের কথা শুনে চোখ মেলে তাকালো,ইরিনকে দেখে ইশারায় পাশে বসতে বলল। ইরিন গুটি গুটি পায়ে শাহানার কাছে এসে চেয়ার টেনে বসে বলে- কেমন আছেন
শাহানার চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। অস্ফুট স্বরে বলল – আমাকে ক্ষমা করে দাও মা
– এভাবে বলবেন না প্লিজ! তাছাড়া আপনিতো কোন অপরাধ করেননি
– মনিরের অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি এর চেয়ে বড় অপরাধ আর কি হতে পারে
-যা হবার ছিল হয়েছে ওসব নিয়ে ভেবে আর কি হবে
মেহবুবের দিকে তাকিয়ে শাহানা বলল- ও কে! তোমার বর
ইরিন বলার আগেই মনির বলে উঠলো – আমার বন্ধু মেহবুব তোমার মনে নেই আম্মা, আমরা এক সঙ্গে স্কুল কলেজ পড়েছি তারপর ও বুয়েটে চলে গেল আর আমি ডিফেন্সে
– ও আচ্ছা, অনেক কিছু মনে থাকে না, তুমি কিছু মনে করোনা বাবা
– না না ঠিক আছে আন্টি মেহবুব ইরিনের দিকে তাকালো, ইরিন বুঝতে পারলো মেহবুবের চোখের তীব্রতা,ইরিন শাহানার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে বলল – আমি আশি
– যেও না, কথা আছে, মেহবুবের দিকে তাকিয়ে অনুরোধের স্বরে বলল “তুমি কি একটু বাইরে যাবে
– ওহ্ সিওর
মেহবুব বাহির হয়ে এল।অস্থিরতা নিয়ে কিছু সময় পায়চারি করলো।বন্ধ দরজার দিকে তার মনে হলো সে কনডেম সেলে আছে। দ্রুত ম্যাসেজ পাঠালো ইরিনকে ” বের হয়ে আস, আমার দম বন্ধ লাগছে, মনে হচ্ছে তুমিই আমার অক্সিজেন।”
মেহবুব আরও কিছু সময় ওয়েট করে কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে ইরিনের হাত ধরে টেনে উঠালো, শাহানার দিকে তাকিয়ে বলল – স্যরি! আমাদের কাজ আছে আজ আশি
মনির বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে মেহবুবের দিকে তাকিয়ে রইল। মেহবুব মনিরকে উপেক্ষা করে ইরিনকে নিয়ে বেরিয়ে এল।

ইরিন মেহবুবকে অপলকভাবে দেখে যাচ্ছে। মেহবুব একবার পায়চারি করছেতো আর একবার সোফায় বসে দু’হাতে মুখ ঘসছে,মেহবুবের অস্থিরতা দেখে ইরিন বলল- ঘুমাতে আসুন
– অস্থির লাগছে ইরিনের পাশে বসে বলল মেহবুব
– কোন কারণে টেন্স
– একটা কথা জিজ্ঞেস করি
– বলুন
– কিছু মনে করবে না তো
– কি মনে করবো
– মনিরের মা তোমাকে কি বলল
– কি আর বলবে সব কিছু ভুলে মনিরকে মেনে নিতে বলল
– তুমি কি বললে
– বলার সুযোগ পেলাম কই তার আগেইতো আপনি টেনে নিয়ে এলেন
– বেশ করেছি,আমার বৌকে নিয়ে নিতে চাইছে, হাও ফানি!
ইরিন হাসি চেপে বলল – আপনিতো আমাকে বৌ মানতে নারাজ
– কে বলেছে
ইরিন বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরে শুলো
– আলো নিভিয়ে দিন চোখে লাগছে
মেহবুব আলো নিভিয়ে দিয়ে ড্রিম লাইট জ্বেলে ইরিনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে বলল- তোমাকে একটু আদর করি
-এখন না প্লিজ!
– ওকে!
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here