মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ১০
তানিয়া রহমান

ভালবাসার রং বদলে যায়, কারণে কিম্বা অকারণে বদলায়। উদভ্রান্ত প্রেমিকের সবকিছু অগোছালো হয় প্রেমিকার চোখের রঙের ভাষায়। প্রেম বুঝি এমনই!
ইরিনের অসুখকে মেহবুবের মনে হলো আশীর্বাদ। এত কাছাকাছি আসার জন্য এরকম কিছুর দরকার ছিল। দু’হাতের উপর মুখ রেখে মেহবুব
ইরিনের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করতে পারছে তার ভিতরের কাঁচ কাটা হিরার জলপ্রপাত। এলোমেলো রঙহীন জীবনে ইরিন নামের সুনামি তাকে ভাসিয়ে দিচ্ছে।ক্ষয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়ের কূল।মেহবুবের ভাবনায় কাঁটা বসালো মোবাইলের রিংটোন।

বিরস মুখে দ্রুত মনিরের ফোন রিসিভ করল পাছে ইরিনের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
– তুই কই দোস্ত
মেহবুব বারান্দায় এসে গলার স্বর নামিয়ে বলল- শ্বশুরালয়
– ওখানে কি করছিস
– জামাই আদর নিচ্ছি
– অপু বলল ইরির নাকি জ্বর
– হুম
– এখন কি অবস্থা
– ভোর থেকে কিছুটা কম
– দোস্ত ওকে দিবি কথা বলতাম কাতর কন্ঠে বলল মনির
– ঘুমুচ্ছে
– খুব দেখতে ইচ্ছে করছে
– আমার বোউকে তোর কেন দেখতে ইচ্ছে করবে
– তোর বোউ মানে
– কেন সন্দেহ আছে
– অধিকার দেখাচ্ছিস
– অধিকার নেই বলছিস
মনিরের ভিতরটা জ্বলে উঠলো, কল কেটে দিয়ে সেলফোনটা আছাড় দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।মনিরের ইচ্ছে করছে মেহবুবকে কষে কয়েকটা লাগিয়ে ইরিনকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে।

গা থেকে কম্বল সরিয়ে দিল ইরিন। ঘেমে ভিজে গিয়েছে, রাতের কথা মনে হতে পাশে তাকালো। মেহবুব নেই, ইরিন মনে মনে বলল ” ওতো কখনো আগে উঠে না তবে কি আসেনি”মন খারাপ নিয়ে উঠে বসলো। নিজেকে আয়নায় দেখে তর্জনী দিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল,জ্বরের ঘোরে সবকিছু এত বাস্তব ছিল! ইরিনের কান্না পেল।অস্ফুট ভাবে বলল”এত নিষ্ঠুর!”

মেহবুব বারান্দার স্লাইড ডোর সরিয়ে রুমে এসে দেখলো ইরিন কাঁদছে, দ্রুত কাছে এসে বলল- কি হয়েছে, শরীর বেশী খারাপ লাগছে
ইরিন বুঝতে পারছে না সে কি পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি আবার জ্বর বারছে।গালে কপালে হাত ঠেকিয়ে আবার তাকালো মেহবুবের দিকে।
মেহবুব পাশে বসে হাতের উল্টো পিঠ ইরিনের কপালে রেখে জ্বরের আঁচ বুঝতে চেষ্টা করলো।
গভীর দৃষ্টি নিয়ে বলল- জ্বর নেইতো, চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে আবার বলল – কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে
ইরিনের মাথাটা কেমন ঝিমিয়ে যাচ্ছে, বিড়বিড় করে বলল – আপনি সত্যি এসেছেন
মেহবুব ইরিনকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এল
– এই মেয়ে!কি হয়েছে তোমার, সারা রাত আদর খেয়ে এখন বলছো সত্যি এসেছি কিনা
– কোথায় ছিলেন এত সময়, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল ইরিন
– বারান্দায়, একদম ঘেমে ভিজে গিয়েছো, হট শাওয়ার নিয়ে নাও ভালো লাগবে।
ইরিন মেহবুবের বুকে মুখ গুজে দিল
– আমি কি সপ্ন দেখছি
– আমরা দুজনেই সপ্ন দেখছি ইরা,খুব সুন্দর স্বপ্ন, সারাজীবন এমন স্বপ্ন দেখতে চাই তোমাকে পাশে নিয়ে
– সত্যি বলছেন
– তিন সত্যি

মেহবুব অফিসে এসে দেখলো মনির রুমে বসে আছে।
– কি খবর
– খবরতো তোর কাছে
– আমি আবার কবে থেকে নিউজ চ্যানেল হলাম
– ঠাট্টা রাখ,ইরিতো আমাকে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে
মেহবুব সরু চোখে তাকিয়ে বলল – বুঝলাম না
– ইরির সঙ্গে তোর কথা হয় না
– হবে না কেন, কিন্তু তোর প্রসঙ্গে হয় না
– অনেক দিনতো হলো এবার
মেহবুব মনিরের কথা কেড়ে নিয়ে বলল – আমিতো তোকে আগেই বলেছি জঘন্য কাজটা আমি কখনো করব না তবে ইরা যদি করতে চায় আমি বাঁধা দিব না
– তুই ওকে ইরা বলিস
– হুম
– তোদের মধ্যে কি কিছু চলছে
– কিছু হলে তুই কি আর ওকে নিবি না
– যা ইচ্ছে তাই চলুক, মেহবুবের হাত ধরে বলল- আমি ইরিকে ফেরৎ চাই দোস্ত
– এতই যখন ভালবাসিস তবে ডিভোর্স করলি কেন
– মতিভ্রম দোস্ত মতিভ্রম, ভুলের শাস্তি প্রতি মুহূর্তে পাচ্ছি
– ও একবার কথায় কথায় বলেছিল তুই নাকি থার্ড রিলেশন শুরু করেছিলি
– হুম ঠিকই বলেছে ওর বান্ধবী শোভার প্রেমে পরেছিলাম, প্রথম প্রথম আড়াল ছিল কিন্তু যখন ধরা পরে গেলাম তখন আর আড়াল রইল না,ওর সামনেই ঘটতে লাগলো অনেক অপ্রিতিকর ঘটনা, ইরির গায়েও হাত তুলতে দ্বিধা করিনি,অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম।
– যার জন্য এতকিছু করলি তাকে বিয়ে করলি না কেন
– ইরিকে ডিভোর্স করার বছর খানেকের মাথায় বুঝতে পারলাম এরা গার্লফ্রেন্ড হতে পারে বাট বৌ না
মেহবুবের দিকে তাকিয়ে করুন স্বরে আবার বলল মনির – এখন বুঝতে পারছি তখন ওর ভিতর কি ঝড় বইতো,সেদিন ইরিকে দেখলাম তোকে খাইয়ে দিচ্ছে আমার ভিতরটা ভেঙ্গে গুরিয়ে গেল।তোরা এক বাসায় একই রুমে থাকছিস এসব ভাবলে আমার পাগল পাগল লাগে, কিযে অসহ্য রকম যন্ত্রণা তোকে বোঝাতে পারব না
– তোরা কথা বল, তাছাড়া আমিও এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই
– কিভাবে কথা বলবো
– ওর সঙ্গে কথা বলে আমি তোকে জানাব
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here