মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৯
তানিয়া রহমান

মেহবুব নিজের রুমে শিফ্ট করেছে আজ চার- পাঁচ দিন। কারো সঙ্গে কারো দেখা নেই এমন কি কথাও না।দুজনের মধ্যে চলছে এক অলিখিত ধর্মঘট।
দুজনেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে দরজার দিকে তাকিয়ে, মেহবুব ভাবছে এই বুঝি ইরিন আসবে তাকে ডাকতে আর ইরিন দরজা খুলে রেখেছে যদি মেহবুব আসে।
অপু কিছুটা আঁচ করতে পারছে কিন্তু নিজেকে জড়াতে চাচ্ছে না।তার বুঝতে অসুবিধা হয় না ইরিনকে এরানোর জন্যই মেহবুব ভোরে বেরিয়ে গভীর রাতে ফেরে।ইরিনের প্রতি মেহবুবের এমন উদাসীনতা অপুকে কষ্ট দেয়।

অফিসে নিজের রুমে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে মেহবুব “প্রেমের বুঝি সত্যি কোন বয়স নেই, সে সব বয়সেই ভীষণ দূরন্ত, চপলা,বাঁধাহীন।এই ষাটের কাছাকাছি এসেও মেহবুব তার ভিতর খুঁজে পাচ্ছে একুশের বাঁধভাঙা জোয়ার। কোন কাজে মন দিতে পারছে না,ঘুমোও বিদায় নিয়েছে। ভিতরের আকুলতা বেরে গিয়ে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে মর্মে মর্মে বিষময় যন্ত্রণা।

অনিদ্রা আর অনিয়মে মেহবুবের শরীর খারাপ লাগছে। হাফ বেলা অফিস করে বাসায় চলে এল। আম্বিয়া দরজা খুলে দিলে মেহবুব ইরিনের রুমে ছুটে যায়, কাউকে দেখতে না পেয়ে আম্বিয়াকে জিজ্ঞেস করে – অপুর আন্টি কোথায়
– হাসপাতাল গেছে
– হসপিটাল কেন, উদ্দিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করল মেহবুব
– খালাম্মার জ্বর তাই আপা নিয়া গেছে
মেহবুবের ভিতর অপরাধবোধ জেগে উঠলো। তার ঘড়ের মানুষ অসুস্থ অথচ সেই জানে না!দ্রুত অপুর নাম্বারে ডায়াল করলো, বন্ধ বলছে। একবার, দুইবার বারবার, প্রতিবারই বন্ধ। মেহবুবের ভিতর অস্থিরতা বারতে লাগলো। আম্বিয়াকে ডেকে বলল- কোন হসপিটাল বলতে পারেন
– জ্বে না
ইরিনের নাম্বারে ট্রাই করলো ওটাও বন্ধ।
একরাশ অস্থিরতা নিয়ে ফিরে এল ইরিনের রুমে। ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পরলো, বালিশ বুকে জরিয়ে প্রান ভরে শ্বাস নিয়ে পেতে চাইলো ইরিনের গায়ের ঘ্রাণ।একসময় চোখে নেমে এল শান্তির ঘুম। চার-পাঁচদিনের অভুক্ত ঘুম ভাঙলো অপুর ডাকে
– বাবা!বাবা!
মেহবুব চোখ খুলে দেখলো অপু দাঁড়িয়ে
– কখন এসেছো,ফোন বন্ধ রেখেছো কেন, কিছুটা রাগ নিয়ে বলল মেয়েকে
– অনেকক্ষন এসেছি
– তোমার আন্টি কই
-আন্টির বাসায় দিয়ে এসেছি
মেহবুব শোয়া থেকে উঠে বসলো, উত্তেজিত হয়ে বলল- ওখানে কেন
– তুমি ভোরে বেরিয়ে যাও রাতে ফিরছো আমিও বাসায় থাকি না,আম্বিয়া আপা কদিকে সামলাবে
– আমার সঙ্গে ডিসকাস করতে পারতে
-স্যরি বাবা
– ডাক্তার কি বলল
– ভাইরাল ফিবার
মেহবুব ওয়ালেট আর মোবাইল প্যান্টের পকেটে গুঁজে বলল- আমি আসছি
– কোথায় যাচ্ছ
– ওকে নিয়ে আসতে
অপুর মনে শস্তি ফিরে এল।মনে মনে বলল”ঔষধে কাজ হয়েছে”

মেহবুব যখন ইরিনের বাসায় পৌঁছালো তখন রাত দশটা।রুনা মেহবুবকে দেখে বলল- এতদিনে মনে পরলো
– সময় করতে পারি না ভাবী
– আজ সময় করলেন কিভাবে
মেহবুব লাজুক হেসে মাথা চুলকে বলল- ওর কি অবস্থা এখন
– ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন
মেহবুব বিয়ের পর দ্বিতীয়বার এল ইরিনদের বাসায়, রুমে এসে ড্রিম লাইটের আলোয় দেখলো ইরিন শ্বেতশুভ্র বিছানায় দেয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। ব্লাংকেটের উপর দিয়েও বোঝা যাচ্ছে ইরিন কাঁপছে। দ্বিতীয়বার ভাবলো না মেহবুব। পাশে শুয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ইরিনকে।চেনা গায়ের গন্ধে ইরিন বুঝতে পারলো মেহবুব এসেছে। বিচলিত না হয়ে চুপ করে রইল। ইরিনের চুলে নাক ডুবিয়ে বলল- স্যরি
– ইরিন নিশ্চুপ
– কতদিন ঘুম হয় না, নিজেদের ঘড়ে চল জরিয়ে ধরে ঘুমাব
ইরিন মনে মনে বলল – স্বার্থপর
মেহবুব ইরিনের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল – তুমি যদি চাও তবে আমি তোমার সমস্ত উত্তাপ নিয়ে নিতে পারি
ইরিন এবারও মনে মনে বলল – কি অসভ্য, অথচ দেখে মনে হয় সাধু
মেহবুব হঠাৎ ইরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ইরিনের ঠোঁটজোরা নিজের দখলে নিয়ে নিল।এমন বিহেভিয়ারের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না ইরিন।আবার নিজেকে ছাড়িয়েও নিল না।কি অদ্ভুত ভালবাসায় দুটি মন ভেসে গেল।ভিজে গেল মধ্যবয়সী প্রেম,যতটুকু দূরত্ব ছিল তাও আজ ঘুচে গেল।
চলবে
কপি করা যাবে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here