মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৮
তানিয়া রহমান

মেহবুব ঘুম ভেঙ্গে দেখলো ইরিন পাশে নেই।এ একমাসে ইরিন তার অভ্যেসে পরিনত হয়েছে, বন্ধুত্ব বেড়েছে তাদের কিন্তু দূরত্ব কমেনি।
মেহবুব ওয়াসরুমে না ঢুকে বেড়িয়ে এল ইরিনের খোঁজে। অদূরে দাঁড়িয়ে দেখলো ইরিন কোমড়ে আঁচল গুঁজে রান্না করছে। ঘেমে পিঠের কাছের ব্লাউজ লেগে গিয়েছে গায়ের সঙ্গে। চুলগুলো পনি টেইল করায় ঘাড় থেকে পিঠ অনেকটা উন্মুক্ত। ঘাম জমে কোথাও আবার মুক্তোর দানার মতো চিকচিক করছে।
মেহবুব কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল
– এখানে কি
আম্বিয়া মেহবুবকে দেখে তটস্থ হয়ে বলল- আমি মানা করছি খালাম্মা শুনে না
মেহবুব ইরিনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল – ঘেমে গিয়েছেন,চেঞ্জ করবেন আসুন
– হাতের কাজ শেষ করে আসছি
মেহবুব আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আম্বিয়া বিদায় নিয়েছে, ইরিনের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল – আমার আগে কখনো ঘুম থেকে উঠবেন না আমার পছন্দ নয়
– কেন
মেহবুবের বলতে ইচ্ছে করলো তোমায় দেখে আমার দিন শুরু করতে চাই কিন্তু সেটা সে বলল না, সে বলল – আমার ইচ্ছে তাই
– আপনি কিন্তু ভীষণ একরোখা
– আমার বউ হতে হলে আমার মতই চলতে হবে
– ইশ! পারবো না
মেহবুব ইরিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল,ইরিনের কপালে, নাকে ঘাম জমেছে, গলার কাছটা ভিজা,এ জেন এক নিকটিনের নেশা।এ নেশা কাটানোর উপায় একটাই আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে হৃদয় ক্ষত করা।
– কি দেখছেন
– দেখছি না ভাবছি
– কি
– ঐ যে সবসময় যা ভাবি
– সবসময় কি ভাবা হয়
– লোকে শেষে না আমায় বউ চোর বলে
ইরিন হেসে দিল
অপু কিচেনে এসে মেহবুব আর ইরিনকে দেখে বলল- আম্বিয়া আপা কই
– আমাকে বল (ইরিন)
– টেবিলে ব্রেকফাস্ট দেখছি না আন্টি
– দিচ্ছি বোস,আজ আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়েছি
– সত্যি
– হুম, অপুর গাল ছুঁয়ে বলল”আমার মেয়ের জন্য ”
– আর কখনো কিচেনে আসা যাবে না, ঘেমে ঠান্ডা লেগে যাবে (মেহবুব)
অপু ইরিনকে জরিয়ে ধরলো
– একদম ঠিক বলেছে বাবা

মেহবুব অফিসে যাবার জন্য রেডি হয়ে ডাইনিঙে এসে দেখলো ইরিন অপুকে খাইয়ে দিচ্ছে।অপুর মাথার চুল হালকা করে টেনে দিয়ে বলল- নিজে হাতে খাচ্ছ না কেন
– আন্টির আদর নিচ্ছি
– আমি কেন বাদ যাব
– আমার শেষ আন্টি বাবাকে খাইয়ে দাও
মেহবুব ইরিনের পাশে বসে পরলো
– সব্জি দিয়ে দিন
ইরিন মেহবুবকে খাইয়ে দিতে দিতে বলল – এমন লজ্জায় কেন ফেললেন
মেহবুব আশেপাশে তাকিয়ে বলে – কাউকেতো দেখছি না কাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছেন
কথার ছেদ ঘটিয়ে বেল বেজে উঠলো।মেহবুব বলল- কোন বেরসিক আবার এল
আম্বিয়া দরজা খুলে দিলে মনির ঢুকলো,লিভিং আর ডাইনিং ওপেন হওয়ায় মনিরের চোখ চলে গেল ডাইনিঙে।
ইরিন মেহবুবকে খাইয়ে দিচ্ছে।মনিরের ভিতরটা নড়ে উঠলো এরকম কতশত সুন্দর মুহূর্ত তাদের জীবনে আছে অথচ সে নিজে পিষে নষ্ট করেছে সে ভালবাসা।
মনিরকে দেখে মেহবুব অপ্রস্তত হলো
– তুই! এখানে
– কেন ডিস্টার্ব করলাম
– বোস্
ইরিনের দিকে তাকিয়ে মেহবুবকে উদ্দেশ্য করে বলল মনির – জমিয়ে প্রেম করছিস মনে হয়
অনুরোধের স্বরে মেহবুব বলল- প্লিজ! অপু আছে
– মনির ভাই ব্রেকফাস্ট করুন(ইরিন)
মনির তীর্যক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ইরিনের দিকে, ক্রোধ নিয়ে বলল – আমি ভাই
– হাসবেন্ডের বন্ধুকে তাহলে কি বলবো
পরিস্থিতি সামাল দিতে মেহবুব বলে উঠলো – ইরিন আমার ওয়ালেট আর ফোন এনে দিবেন প্লিজ!
ইরিনের চলে যাবার দিকে মনির তাকিয়ে রইল কিছুসময়
– ওর সমস্যা কি
– আমি নিজেই বুঝতে পারছি না তোকে কি বলবো
– প্রেমে পরেছে তোর
– আমাকে দেখে মনে হয় প্রেমে পরার মত কিছু আছে
– মেয়েরা অদ্ভুত যার মধ্যে কিছু নাই দেখা যায় তার প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছে
মেহবুব হাসতে হাসতে বলল- কলস ধরিয়ে দিয়ে যা যেন ডুবে না মরে

আকাশে চাঁদ উঠে এসেছে মধ্য গগনে।মিনমিনে আলোয় নদীর জলে পরেছে তার ছায়া, ইরিন নৌকার মাঝামাঝি বসে আছে ছইয়ের কাছ ঘেঁষে আর মেহবুব শুয়ে আছে পাটাতনে দুহাত মাথার নিচে গুঁজে। চাঁদের যে রাঙ্গা আলো নদীর জলে পরে ঢেউ খেলছে তার মাঝ থেকে অঞ্জলি ভরে পানি তুলে মেহবুবের দিকে ছুড়ে দিল ইরিন
মেহবুব চমকিয়ে উঠলো
– এটা কি হলো
– চাঁদের আলোয় ভিজিয়ে দিলাম
মেহবুব উঠে এসে ইরিনের কাছ ঘেঁষে বলল- এ আলোয় ভিজে মন ভরবে না আমার চাই পূর্নিমা
– শুধু চাই,ছুঁয়ে দিতে মন চায় না
– খুউব
– তবে কেন এত আড়াল
– বেড়িয়ে আসুন
– সমুখেই আছি কেবল হাত বারিয়ে দিন

হঠাৎ আকাশের রং বদলে গেল, শরতেও শুরু হলো ঝড়ো হাওয়া, নদীতে ঢেউ বেড়ে গিয়ে নৌকা দুলতে লাগলো।বড় বড় ফোটায় শুরু হলো বৃষ্টি তার সঙ্গে গর্জন।
ইরিনকে নিয়ে ছইয়ের ভিতর চলে এল মেহবুব। বাজের বিকট শব্দে ইরিন মেহবুবের বুকে মুখ লুকিয়ে বলে- আমি কিন্তু সুইমিং জানিনা
দুহাতে আগলে ধরে ফিসফিস করে বলল মেহবুব – ভয় কি, আমি আছিতো
কোলের মধ্যে টেনে নিল ইরিনকে।পাগল করা আদরে ভরিয়ে দিতে লগলো।
ঘোর লাগা কন্ঠে ইরিন বলল- কি করছেন
– ভালবাসছি
– এখন নয় প্লিজ!
মেহবুবের ঘোর কেটে গেল।তীক্ষ্ণ চোখে ইরিনের দিকে চেয়ে বলল- বাইরে দেখেছেন কেমন ঝড় হচ্ছে, আমার ভিতরেও বইছে,সো এত কাছে আসবেন না আমি বেসামাল হয়ে যাই
– আমিও হতে চাই
– তবে বাঁধা দিচ্ছ যে
ইরিন এ কথার জবাব খুঁজে পেল না

ঝড়ের বেগ কমে এসেছে কিন্তু ইরিনের ভিতর চলছে গঙ্গা যমুনার উথাল পাথাল, তারই ঝাপটা এসে পরলো ইরিনের চোখে। জল টলমল চোখ থেকে গড়িয়ে পরলো দু ফোটা শিশির। মেহবুব কি বুঝলো কে জানে, চোখের জল না মুছিয়ে কঠিন স্বরে বলল – আমার কাছে আসতে হলে আমার হয়েই আসতে হবে।
চলবে
কপি করা যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here