মধুচন্দ্রিমা
পর্ব ৫
তানিয়া রহমান
ইরিন ঘড়ে ঢুকে দেখলো সত্যি সত্যিই বেড অলকানন্দা দিয়ে সাজানো হয়েছে। ক্যান্ডেলের আলো এলোমেলো হয়ে ঢেউ খেলছে।বহুদিন পর ইরিনের মনটা ভালো লাগায় ভরে গেল।
অপু বলল- আন্টি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও
-তুমি সাজিয়েছো রুম
– হু
-সুন্দর!
– থ্যাংকস্,অনেক রাত হয়েছে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও,আমি ওদিকটা দেখছি
রাত তিনটা
মেহবুবের কাজিনরা প্রায় সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে,অপু ডাইনিঙে পানি খেতে এসে দেখলো স্টাডি রুমে আলো জ্বলছে। গুটিগুটি পায়ে এসে স্টাডি রুমের পর্দা সরিয়ে দেখতে পেল মেহবুব টেবিলের উপর মাথা রেখে চেয়ারে বসে আছে।বাবাকে এমন দেখে অপুর বুকের ভিতর হু হু করে উঠলো। মেহবুবের কাছে এসে আস্তে করে বলল – বাবা
মেহবুব মাথা তুলে অপুকে দেখে বলল- এখনো ঘুমাওনি
– তুমিওতো জেগে আছ
– আমার কাজ আছে, যাও শুয়ে পরো
– রাত জাগলে শরীর খারাপ করবে, চলতো ঘুমাবে
অপুর জোরাজোরিতে মেহবুব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, ইরিনের রুমের সামনে এসে বলল- তোমার আন্টি বোধহয় ঘুমিয়ে গিয়েছে ডিস্টার্ব না করাই ভালো
অপু বুঝতে পারলো বাবা লজ্জা পাচ্ছে,দরজা খুলে বলল- ভিতরে যাওতো আন্টি ওয়েট করছে
ঘড়ে ঢুকে মেহবুব রীতিমতো ভীমড়ি খেল,কি সুন্দর করে বাসর সাজিয়েছে তার মেয়ে। বেডে ইরিনকে দেখতে না পেয়ে আশেপাশে তাকালো। সোফায় এক কোন ঘেঁষে বসে আছে ইরিন।
মেহবুব বলল- এখনো জেগে আছেন কোন সমস্যা
– আপনার জন্য অপেক্ষা করছি
– কিছু বলবেন
– না
ইরিন লাগেজ থেকে মেরুন রঙের নাইটি নিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে গেল। হট শাওয়ার নেয়াতে সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছে, টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বেরিয়ে দেখলো মেহবুব সোফায় বালিশ নিয়ে পা কুচকিয়ে শুয়ে আছে।
মেহবুবের মুখের দিকে তাকিয়ে ইরিনের মনে হল কি সহজ সরল অথচ কঠিন একটা মানুষ।
– এখানে শুয়েছেন কেন
মেহবুবের চোখ প্রায় লেগে এসেছিল, ইরিনের কথায় ধরমর করে উঠে বসে বলল- আমার রুমে ফুফুআম্মা শুয়েছে তাছাড়া বাসায় অনেক গেস্ট আলাদা রুমে ঘুমালে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না!
– ওকে!ওখান থেকে উঠুন
– কোথায় শুবো ফ্লোরে?
– কি আজেবাজে কথা বলছেন, বেডে শোন
– আপনি
– আমিও বেডে শুবো
মেহবুব আমতা আমতা করে বলল – মনির জানতে পারলে কি ভাববে
ইরিন মেহবুবের কাছে এসে চোখেচোখ রেখে বলল- আপনার বন্ধু কি ভাবলো না ভাবলো তাতে আমার কিচ্ছু এসে যায় না, আপনার বন্ধুর সঙ্গে আমার চ্যাপ্টার অনেক আগেই ক্লোজ হয়ে গিয়েছে, আমি আপনার ওয়াইফ আমার সম্মান কিভাবে আপনি রক্ষা করবেন এটা আপনার দায়িত্ব, নুন্যতম বোধ থাকলে নিজের ওয়াইফকে বন্ধুর দিকে ঠেলে দিবেন না
ইরিনের কথা মেহবুবের মাথার উপর দিয়ে গেল,মনে মনে বলল ” এমনতো হবার কথা ছিল না। এ মেয়ে কি তার প্রেমে পরেছে?কিন্তু ওর চাইতে মনির বহুগুণ সুন্দর।
ইরিন আবার বলল – কি ভাবছেন, ঘুমাতে আসুন
মেহবুব ঘোর নিয়ে ইরিনের পাশে শুয়ে পরলো।
ইরিন চোখ বন্ধ করে মেহবুবের দিকে ফিরে মটকা মেরে পরে রইল।ছোট বেলা থেকে এই জেগে ঘুমানোর খেলাটা সে খুব ভাল পারে।
মেহবুব ঘন্টা খানিক পর ইরিনের দিকে পাশ ফিরলো।ইরিনের মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো সব মায়া কি শুধু তোমার মুখেই দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা!
বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার খুলে রিঙের বক্স থেকে রিং বের করে হাতে নিল,তারপর ধীরে ধীরে ইরিনের অনামিকায় পরিয়ে দিল।
ইরিন বুঝতে পারলো কিন্তু মেহবুবকে বুঝতে দিল না।
মেহবুবের ঘুম ভাঙলো মিলার ডাকে।পিটপিট করে চোখ মেলে দেখলো ইরিনকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। চারশো ভোল্টেজের শক খেয়ে ছিটকে পরলো বেডের পাশে। মনে মনে ভাবলো “ভাগ্য ভাল ঘুম আমারই আগে ভেঙ্গেছে। ”
মিলার ভাইয়া ভাইয়া ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল সারে এগারোটা, নিজেকে নিজে গালি দিতে দিতে বলল “বাসা ভর্তি গেস্ট আর আমি কিনা বুড়ো বয়সে বউ নিয়ে ঘুমিয়ে আছি এত বেলা অব্দি। ”
কিছুটা লজ্জা নিয়ে দরজা খুলে বলল- কি হয়েছে চিৎকার করছিস কেন
– চিৎকার করছি মানে কয়টা বাজে জান?ফুফুআম্মা ডাকছে তোমাদের
– তুই যা আসছি
– ভাবী কই
মেহবুব বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো ইরিন এখনো ঘুমাচ্ছে, নাইটিটা উঠে হাঁটুর কাছাকাছি চলে এসেছে, ফর্সা পায়ে একজোড়া পায়েল চিকচিক করছে। মেহবুব চোখ সরিয়ে বলল- ঘুমুচ্ছে
– সর আমি ডাকছি
মেহবুব সাইড হয়ে মিলাকে প্রবেশের জায়গা করে দিয়ে বলল – ওকে শাড়ী পরতে বলিস
– কস্টিউমসের উপরও অধিকার খাটাবে?
মিলার কথা অগ্রাহ্য করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল মেহবুব।
চলবে
কপি করা যাবে না।
–
–