#শেষ বিকেলের তুমি❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 3
।
।
ঘুমাবে ভালো কথা..বিছানায় কেনো?(কোমরে হাত রেখে)
।
তো কই ঘুমাবো?(অবাক হয়ে)
।
জাহান্নামের চৌরাস্তায়,,, বাট খাটে না…..সারাদিন আমার সাথে ভাওতাভাজি করে এখন আসছে খাটে ঘুমোতে….নামো বলছি।।এক্ষুনি নামবা(রাগী গলায়)
।
আরে..আমি ঘুমাবোটা কোথায়??
।
সোফায় ঘুমাও….ব্যালকনিতে ঘুমাও…চাইলে ওয়াশ রুমে ঘুমাও.. আই ডোন্ট কেয়ার বাট বিছানায় নয়।।
।
এই ঠান্ডায়??(করুন গলায়)
।
জি হ্যা,,এই ঠান্ডায়….ওহহো ওয়ান সেকেন্ড… একটা কাজ করো তোমার ওই প্রেমিকার কাছে চলে যাও… তাহলেই তো হয়…মামলা ডিশমিশ।।
।
ছি ছি..কি বলছো এসব…তুমি থাকতে অন্য মেয়ের কাছে কেনো যাবো???এসব ভাবাও পাপ..
।
তেল মারা বন্ধ করে গেট লস্ট…. (চিৎকার করে)
।
ওকে ওকে…যাচ্ছি কুল(অসহায় দৃষ্টিতে)
।
।
শুভ্র সোফায় চুপচাপ বসে আছে..আর মহারানী আরামে ঘুমুচ্ছে।।একদিনে শুভ্রর লাইফটা যে এমন অগোছালো হয়ে যাবে কে জানতো??নিজের রুমেই নিজেকে রোহিঙ্গা রোহিঙ্গা লাগছে শুভ্রর।।আচ্ছা এটা কি স্বপ্ন??ঘুমিয়ে পড়লেই শেষ হয়ে যাবে টাইপ??শুভ্র এবার ঘুমানোর চেষ্টায় মেতে উঠলো যেনো ঘুম থেকে উঠলেই সব ঠিক হয়ে যায় কিন্তু এতো সহজে নিস্তার মিললে তো…হতচ্ছাড়া ঘুম চোখে ধরায় দিচ্ছে না…আর এদিকে শীতে কুকড়ে যাচ্ছে শরীর।।শুভ্র ডিসিশন নিয়ে নিয়েছে, এটা যদি স্বপ্ন হয়ে থাকে তো সে আর কোনোদিন বিয়েই করবো না।।বউরা কি মারাত্মক হয়,,, বাপ রে….শুভ্রর মতো বাঘকে মিনি বিড়াল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।।।
।
হালকা রোদের ঝিলিকে ঘুম ভাঙলো শুভ্রর,,নিজের দিকে তাকিয়েই অবাক হলো সে,,ওর গায়ে কম্বল জড়ানো, কাল রাতে এই কম্বল তার ভাগ্যে জুটে নি….নিশ্চয় এটা তার “হঠাৎ উদয় হওয়া বউ” এর কাজ…ভাবতেই মনটা খুশি খুশি হয়ে গেলো শুভ্রর…যাক বাবা!মায়া দয়া আছে তাহলে।।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হলো শুভ্র একি ১২ টা বাজে?আর তাকে কেউ ডাকে নি??তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই অফিসে রৌওনা দিলো,,সাথে নিয়ে গেলো হাজারো টেনশন।।।শুভ্র কি পাগল হয়ে গেছে??নাকি ওর মেমোরি লস হয়েছে??কিন্তু মেমোরি লস হলে তো সবাইকে ভুলে যাওয়া উচিত বা নিদির্ষ্ট একটা টাইমিং বাট বাকি সব তো ঠিকই আছে শুধু একটা মানুষকে ঘিরে সব ভুলে গেছে সে,,কিভাবে সম্ভব এটা??এটা কি নতুন কোনো রোগ??
।
স্যার আসবো??(নক করে)
।
হ্যা হ্যা,,আসুন ম্যানেজার সাহেব….কোনো কাজ ছিলো?
।
জি এখানে একটা সই লাগবে…আর স্যার আজ ৫ টায় একটা মিটিং আছে….আরেকটা মিটিং রাত ৯ টায়… সিক্রেট মিটিং সামনের ডিলটার জন্য….
।
ওহ হ্যা,,,মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।।মনে করে দেওয়ার জন্য থেংক্স,,, প্রেজেন্টেশন এখনো রেডি করা হয় নি।।।
।
ইটস মাই প্লেজার স্যার,,আসছি(মুচকি হেসে)
।
ম্যানেজার সাহেব??(আনমনে)
।
জি স্যার??(ফিরে তাকিয়ে)
।
আমি কি ম্যারিড???
।
ম্যানেজারের চোখে বিস্ময়ের ছাপ,,,এমন একটা প্রশ্ন তার দিকে ছুড়া হবে হয়তো সে কল্পনাও করে নি।।
।
সরি স্যার??
।
নাথিং নাথিং,,আপনি আসুন।।
।
ম্যানেজার চলে যাওয়াতে শুভ্র যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো,,কে জানে আরেকটু হলে ম্যানেজার তাকে পাগল ভেবে বসতো কি না??আচ্ছা,,ফেসবুকে তার এভাউটটা চেক করলেই তো উত্তর পাওয়া যায়,,,শুভ্র তাড়াতাড়ি ফেসবুকে লগ ইন করলো…এভাউট চেক করার আগেই শুরু হলো ম্যাসেজের তুমুল বর্ষন,,মনে হচ্ছে সবাই যেনো তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো।।ম্যাসেজ চেক করে শুভ্র অবাক,,,আরে এরা তো সব তার ভার্সিটি ফ্রেন্ড,,,মুহূর্তে মনটা ভালো হয়ে গেলো শুভ্রর,,কিন্তু কথায় আছে না,,ভালো সময় বেশিক্ষন থাকে না,,শুভ্রর ক্ষেত্রেও তাই ঘটলো।।বন্ধুর করা ছোট্ট এক প্রশ্নে তার মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো,,,”দোস্ত ভাবি কেমন আছে??তোদের বিয়ের পর আর দেখা হয় নি”।। শুভ্র কোনো উত্তর না দিয়েই এফবি থেকে বেরিয়ে এলো।।তার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাইও জানে সে ম্যারিড বাট সে নিজেই জানে না,,ব্যাপারটা নির্দ্বিধায় হাস্যকর।।হঠাৎই ফোন বেজে উঠলো,,স্ক্রিনে রোহানের নাম ভাসতেই তুলে নিল ফটাফট,, রহস্যের সমাধান পাবার আশায়,,,
।
হ্যালো?
।
দোস্ত??আম সো ডিসএপোন্টেট ইয়ার?
।
মি টু,,বাট তুই ডিসএপোন্টেট কেন??
।
ভাবি কনসিভ করছে আর তুই আমাকে জানাইলি না??
।
কিহহহ??
।
শুভ্রর মাথায় যেনো এবার আকাশ ভেঙে পড়লো,,তার জানা মতে সে এখনো পিউর ভার্জিন আর এখন শুনছে,,সে নাকি বাপ হয়ে যাচ্ছে??আরে ব্যাটা সে তো নিজেই জানে না তোকে কি বলবে??কেমনে কি??উফফ,,উফফ,,আর কি বাকি আছে শোনার??
।
।
রাত ১২ টা বাজে শুভ্র বাড়ির দরজায় দাড়িয়ে আছে,,ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে করছে না….এইসব অগত্যা ঝামেলাও তার আর ভালো লাগছে না।।তবু সে দরজা টপকালো।।একি??পুরো বাড়ি এমন অন্ধকার হয়ে আছে কেন??শুভ্র ফোনের লাইট জ্বেলে কয়েকবার “মা ” বলে ডাকলো কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই।।অন্ধকারে হাতড়িয়ে সুইচ অন করতেই মনে হলো বোম ফুটলো,,চমকে পিছনে তাকাতেই সবাই একসাথে বলে উঠলো,, হ্যাপি বার্থডে শুভ্র””আজ যে শুভ্রর জন্মদিন তা শুভ্রর মাথাতেই ছিলো না।।এতো টেনশনে মনে থাকার কথাও না।।সবার দিকে তাকিয়ে শুভ্র বেশ অবাক,,প্রায় ২০/৩০ জন হবে,,আর সবাই ওর ভার্সিটি ক্লোজ ফ্রেন্ড,,ওর বাবা-মা,,ফুপা-ফুপি,,ওর কিউফিশান ওয়ালা বউ,,আর দুজন অপরিচিত লোক।।চারদিকে অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,,তার বউটাকেও হুর পরি লাগছে,,হালকা গোলাপি শাড়িতে একদম মায়াবতী,,বউ যখন পেয়েই গেছে আজ রাতে বাসরটা সেরে ফেললেই হয়,,এমনিতেও প্রেমে তো পড়েই গেছে মনে হয়,,,শুভ্রর চিন্তার সুতোকে টুকরো টুকরো করে তার বউ বলে উঠলো,,,
।
কি শুভ্র ভাই কেমন দিলাম???
।
“ভাই” শব্দটা শুনেই শুভ্র কুপোকাত,, বউ তাকে ভাই ডাকছে এ আবার কোন নতুন ড্রামা??
।
মানে??
।
দেখছো মামানি,,শুভ্র ভাই এখনো আমায় চিনতে পারে নি….আমি কিন্তু তাকে প্রথম দেখাই চিনে ফেলছি।।
।
এসবের মানে কি?? কি বলছো এসব??
।
আরে,,ও রোদ,,চিনিস নাই ওকে??ছোট বেলায় তোর পিছন পিছন ছুটতো,,
।
কিহহহ,,,তুমি মানে তুই ওই পিচ্চি??(অবাক হয়ে)
।
এখন আর পিচ্চি নাই,,,এখন আর ক্লাস ফাইভে পড়ি না,,গ্র্যাজুয়েশন করছি,, এবার সেকেন্ড ইয়ার(মুচকি হেসে)
।
তারমানে এসব প্রি-প্ল্যানড ছিলো???(বিস্ফারিত চোখে)
।
পুরোটাই,,,(দাঁত কেলিয়ে)তবে দোষটা তোমার ছিলো,,আমি তোমাদের বাড়িই আসছিলাম….রাস্তায় হঠাৎ এভাবে বৃষ্টি শুরু হবে বুঝতে পারি নি।।তখনি কাকতালীয়ভাবে তোমাকে দেখতে পাই,,প্রথমে না চিনলেও পরে ঠিক চিনে যায়,,,তাই তাড়াহুড়ো করে তোমার গাড়িতে গিয়ে বসি।এই ঠান্ডায় বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছা আমার ছিলো না,,ভেবেছিলাম তোমায় বলবো পৌঁছে দিতে,,,,কিন্তু তোমার তাকানো দেখেই বুঝতে পারছিলাম,,আমায় তুমি চেনো নি,,তাই ভাবলাম একটু মজা করা যাক,,, কিন্তু তুমি যে আমায় ওভাবে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিবে তাও ভাবি নি,, তাও এই বৃষ্টির মধ্যে,,, কি নির্দয় তুমি….
।
এবার বাকিটুকু আমি বলি,,,রোদ বাসায় এসে কাকিমনিকে সব বলছিলো,,ভাগ্যক্রমে আমিও তখন এখানে,,ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগছিলো বেশ।।ভার্সিটিতে যে ছেলে সবার সাথে প্রেংক করতো,,তার সাথে প্রেংক করার এমন সুবর্ন সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না,,,আর পরেরদিনই তোর বার্থডে ছিলো,,তাই ভাবলাম এটা তোর জন্য বিগ সারপ্রাইজ হবে।।তাই সব ভার্সিটি ফ্রেন্ডদের খুঁজে বের করে,, কনট্রাক্ট করে,, শুরু হলো প্ল্যানিং,,তারসাথে আমাদের ছোটো খাটো রিইউনিয়ন ও হয়ে গেলো।।।হাহাহাহা,,তবে অল ক্রেডিট গোস টু রোদ,,দারুন এক্টিং করেছো,,মানতেই হবে,,
।
থেংকিউ থেংকিউ(সামনের দিকে ঝুকে,, একটু ভাব নিয়ে)
।
আর বেড রুমের ওই ছবি??(কনফিউজড হয়ে)
।
ওটা রুহানের কাজ,,,গ্রাফিক্স,,,এডিটিং হেন তেন করে ওটা বানাইছে,,,দোস্ত তোর টেলেন্ট আছে,,(রুহানের দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে)
।
থেংক্স দোস্ত,,,অনেকদিন পর মনে হচ্ছে আবার ভার্সিটি লাইফে ফিরে এসেছি,,,সেই আগের দুষ্টামী
।
হারামির বাচ্চারা,,,তোগর তো আমি দেখে নিবো,,,আর মা-বাবা তোমরা ও??
।
তো??মামু আর মামানি আমার কথা রাখবে না তা হতেই পারে না,,(চোখ টিপে)
।
তবে রে,,,তুই পুচকি হয়ে আমাকে ঝাড়ু পেটা করতে চাইলি,,তোর লজ্জা করলো না,,অসভ্য মাইয়া…ঠাডায় দিমু একটা.
।
একটুও করলো না….দোষটা তোমার ছিলো,,তুমি আমাকে চেনো নি,,এটা তোমার অপরাধ মাত্র দশ বছরে ভুলে গেছো??আমি তো তোমাকে ঠিকি চিনেছি,,,তাই শাস্তি তোমার প্রাপ্য
।
এহহহ আসছে,,,তুই তখন ছিলি ক্লাস ফাইভের বাচ্চা,,আর আমি কলেজে পড়ি,,আমার চেহারা আগের মতোই আছে আর তুই টোটালি চেঞ্জ তো কি করে চিনবো??
।
কে বললো আগের মতো আছে??বহুত চেঞ্জ হয়ছে,,আগে ছিলা কিউট পোলা,,এখন হইছো হটটট(,চোখ টিপে)
।
শয়তান,,,বাচ্চা মেয়ে হট কি বুঝিস??(কান টেনে)
।
তো,,হট কি সেটা বুঝার এখনি তো সময়,,,শুভ্র ভাই(দাঁত কেলিয়ে)
।
রোদের কথায় সবাই হেসে ওঠলো,,কিন্তু শুভ্রর মোটেও হাসি পাচ্ছে না বরং কষ্ট লাগছে সাথে রাগও,,,রোদের মুখে “ভাই” ডাকটা মেনে নেওয়ার মতো না।।আগেই তো ভালো ছিলো,,বউ হিসেবে টর্চার করছিলো,,,শুভ্রর ইচ্ছে হচ্ছে রোদকে একটা আছাড় দিতে।।জীবনটা কি অদ্ভূত,, ছোট বেলায় রোদ যখন তাকে শুভ্র শুভ্র করে অস্থির করে তুলতো,,কি মারই না মারতো শুভ্র রোদকে,,আর বলতো “কতোবার বলছি ভাই ডাকবি,,,আবার যদি শুভ্র ডাকছিস খুন করে ফেলবো”,, আর আজ যখন ভাই ডাকছে তখনও শুভ্রর রাগ লাগছে
।।সময় আসলেই অনেককিছু পাল্টে দেই,,মানুষের মনকেও।।
।
#চলবে❤