#মন_নিয়ে_খেলা (৬)
*********************
পূনম এর আগেও একবার মালদ্বীপে এসেছিলেন, প্রায় ত্রিশ বছর আগে। তখন অবশ্য তাঁর আব্বা-আম্মার সঙ্গে এসেছিলেন৷ বিয়ের পর অনেক দেশ ঘোরা হলেও, মালদ্বীপে আর আসা হয়নি। ত্রিশ বছর আগের মালদ্বীপের সঙ্গে আজকের মালদ্বীপের ফারাকটা বেশ চোখে পড়ছে। বিশেষ করে পর্যটন শিল্পে। পর্যটনের ওপর এঁরা ব্যাপক কাজ করেছে। পর্যটকদের রুচি আর পছন্দ নিয়ে, এঁরা রীতিমতো গবেষণা করে। যখনই দেশের বাইরে যান, সুন্দর কোনও স্পট চোখে পড়লেই নিজের দেশের পর্যটনের সঙ্গে তুলনা করেন পূনম। অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকার পরও বাংলাদেশের সবচেয়ে অবহেলিত খাতগুলোর একটি বোধহয় পর্যটন শিল্প। ইদানিং ব্যক্তি উদ্যোগে ভালো কিছু কাজ হলেও, সাধারণ মানুষ আর বিদেশি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে তেমনভাবে বড়ো কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যাতায়াত ব্যবস্থার তথৈবচ অবস্থাও উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে এই খাতে বিনিয়োগ করতে।
হাজারখানেকের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপে, বসবাসের জন্য মোটামুটি দুইশো দ্বীপকে উপযোগী করে তোলা হয়েছে। লেডিস টিমের সদস্যরা মালদ্বীপে এসেছেন দুইদিন আগে। মালে, বানানা রিফ, মাফুসি আইল্যান্ড ও হুলহুমালে আইসল্যান্ড হয়ে তাঁরা এখন আছেন আদারান প্রেস্টিজ ভাদুতে। তাঁর এই জায়গাটা দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন ধরে। ফিচার পড়ে আর ছবি দেখে যতটা সুন্দর মনে হয়েছিল, জায়গাটা তারচেয়ে অনেক বেশি সুন্দর। লাঞ্চ আর ডিনারের এক ঘন্টা করে সবার সাথে কাটানো ছাড়া, বলতে গেলে পুরোটা সময় তিনি নিজের রুমেই ছিলেন। রুমে শুয়ে-বসে, কখনও বারান্দার ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে, তিনি সমুদ্র দর্শন করেছেন৷ পানির ওপর ভেসে থেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখার মধ্যে আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করেছে। কাছের পানির রং কেমন সবজেনীল আর দূরের ঐ সমুদ্রের গাঢ় নীল রঙের সীমাহীন জলরাশি হাতছানি দিয়ে ডাকছে।
দৃষ্টিসীমার মধ্যেই একটা ছোট্টো দ্বীপ আছে। ঘন সবুজে ঘেরা দ্বীপটায় তাঁর খুব যেতে ইচ্ছা করেছিল। ম্যানেজমেন্টকে জানালে, ওরা বলল, তাদের স্পিডবোট করেই ওখান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। পূনম যাওয়ার জন্য তৈরিও হচ্ছিলেন; কিন্তু হঠাৎ করে কোনও কারণ ছাড়াই তাঁর মুড সুইং করে গেল! না যাওয়ার কথাটা ফোন করে জানিয়ে দিলেন। কোনও কারণ ছাড়া হঠাৎ মুড সুইং কেন হয়, বিষয়টা পূনম নিজেও বোঝেন না। ফাহাদ একবার তাঁকে বলেছিলেন, এটা নাকি একটা অসুখ। মানসিক অসুখ। এই অসুখের নাম, বাইপোলার ডিসঅর্ডার। কথাটা শুনে, পূনমের মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিল। কোনোরকম ভাবনাচিন্তা না করে তিনি ফাহাদের গেঞ্জির কলার খামচে ধরে বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে পাগল বললে? আমি মানসিক রুগী!’
ফাহাদ, পূনমের হাতটা গেঞ্জির কলার থেকে ছাড়িয়ে দিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, শরীরের যেমন ছোটোবড়ো নানারকম অসুখ হয়, মনেরও তেমনি অনেক রকমের অসুখ হয়। মনের অসুখ মানেই মানসিক রুগী বা পাগল না। তোমার মনে কোনও আক্ষেপ, কোনও বিষন্নতা, অন্য কোনও অজানা কষ্ট বা ক্ষোভ জমে থাকতে পারে। যেটা তুমি নিজেও হয়ত জানো না। আমি তোমাকে আগেও অনেকবার এই বিষয়টা নিয়ে বলেছি, পূনম। তুমি কখনোই আমার কথার গুরুত্ব দাওনি। আচ্ছা তুমি নিজে কী বুঝতে পার না, তোমার রাগ, যখন-তখন হুট করে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলা, এগুলো দিন, দিন বেড়ে যাচ্ছে? মেয়ে দু’জন বড়ো হয়ে যাচ্ছে। অরণী আর কিছুদিন পর ভার্সিটিতে যাবে। এই বয়সে সে তোমার সাথে বন্ধুর মতো মিশবে, অথচ সে ভয়ে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারে না। তোমার এমন আচরণের কারণে, ওরা দু’জন তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নিজেকে একটু পালটে নেওয়া যায় না, কী বলো?
পূনম এক দৃষ্টিতে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ফাহাদ বুঝতে পারছিলেন না, পূনমের মনের ভেতর ঠিক কী চলছে। তবুও তিনি সাহস করে বলেছিলেন, একবার তৃপ্তির সঙ্গে কথা বলবে, পূনম?
তৃপ্তি, ফাহাদের ছোটো ভাইয়ের বউ। তিনি শহরের নামকরা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তৃপ্তির নাম শুনেই পূনমের কী হয়েছিল, কে জানে? তিনি দুই হাতের মুঠিতে ফাহাদের মাথার চুলগুলো ধরে চিৎকার করে উঠেছিলেন, ‘তুমি আমাকে পাগলের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাও? আমি পাগল? পাগল আমি?
ঘটনার আকর্ষিকতায় ফাহাদ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলেন৷ তিনি খুব শান্ত মেজাজে পূনমকে বোঝাতে চেয়েছিলেন; কিন্তু সেদিন পূনম মাত্রাতিরিক্ত রেগে গেলেন। ফাহাদ কোনোমতে নিজেকে পূনমের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে, নিজের রুমে চলে গিয়েছিলেন। পরের পনের দিন পূনম, ফাহাদের সঙ্গে একটাও কথা বলেননি।
হঠাৎ করে এতদিন আগের ঘটনাটা কেন মনে পড়ল, পূনম বুঝতে পারলেন না। ঐ ঘটনার জন্য ফাহাদকে কখনও সরি বলেননি তিনি। এখন কী মনে করে মোবাইলটা হাতে নিলেন। ফাহাদকে ফোন করলেন; কিন্তু তিনবার ফোন করার পরও ফাহাদ ফোন ধরলেন না। ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে ফাহাদকে ‘সরি’ কথাটা লিখলেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন প্রায় সাতটা বাজে। রাতে পার্টি আছে। আজকের পার্টির জন্য তিনি নাবিলা থেকে পিচ কালারের, হাতের কাজ করা একটা শাড়ি নিয়েছিলেন। লাগেজ থেকে শাড়ি ও শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং গয়না বের করলেন। যত্ন করে, সময় নিয়ে শাড়ি পরলেন, গয়না পরলেন। হালকা মেক-আপে নিজেকে আরও আকর্ষণীয় করে সাজালেন। চুলগুলো আঁচড়ে, পিঠের উপর ছড়িয়ে দিলেন। আঞ্জুমান আপাকে ফোন করার জন্য মোবাইল হাতে নিতেই, দেখলেন আঞ্জুমান ফোন করেছেন। দশ মিনিটে পার্টিতে উপস্থিত হচ্ছেন বলে, পূনম ফোন রেখে দিলেন।
সাজগোজ শেষে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, নিজেকে ভালো করে আরেকবার দেখে নিলেন পূনম। মাঝে, মাঝে তিনি নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। আজও মুগ্ধ হলেন। আজকের পার্টির মধ্যমনি যে তিনি হবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই। শুধু মধ্যমনি কেন, তাঁকে দেখে অনেকের কলিজা পুড়তে থাকবে, এটা তিনি জানেন। কলিজা পুড়তে থাকা রমণীরা যখন দূরে দাঁড়িয়ে আড়চোখে তাঁকে দেখে আর তাঁর নামে কুটকাচালি করতে থাকে, বিষয়টা ভীষণ উপভোগ করেন পূনম। তিনি তো এখন থেকেই পোড়া গন্ধ পাচ্ছেন।
পূনম যখন পার্টিতে এলেন, ততক্ষণে সবাই চলে এসেছে। আঞ্জুমান এগিয়ে এসে, তাঁকে উষ্ণ আলিঙ্গন করে বললেন, সব আলো তো তুমি কেড়ে নিলে, পূনম। তোমাকে যে কতটা সুন্দর লাগছে, সেটা বলার মতো সঠিক শব্দটা খুঁজে পাচ্ছি না।
আপা, আপানাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। আপনার এই স্নিগ্ধ রূপটা আমার খুব পছন্দের।
আঞ্জুমান, পূনমকে সাথে নিয়ে ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কথা বলছেন। দূরে দাঁড়ানো চার-পাঁচজনের একটা জটলা, ততক্ষণে পূনমকে নিয়ে সমালোচনা করতে শুরু করে দিয়েছেন। রুমকি বলল, দেখেছ অবস্থা? বুড়ো বয়সে এই মহিলার নিজেকে ছুঁড়ি বানানোর কী যে শখ! এর ঢং দেখে আর বাঁচি না। এবার ট্যুরে আসার পর থেকে সারাক্ষণ এমন একটা ভাব নিয়ে থাকছে, যেন তাঁর দয়ায় আমরা এখানে এসেছি। ফালতু একটা মহিলা, যত্তসব!
মম বলল, একদম ঠিক বলেছ, রুমকি। স্বামীর পয়সা আছে। সেই পয়সা দিয়ে সারাক্ষণ শো-অফ করতে থাকে। একদিন ওনার শো-রুমে গিয়েছিলাম, বুঝতে পেরেছ। ওমা, জিনিসপত্রের কী দাম! জিনিসগুলো মোটামুটি ভালোই রাখে; কিন্তু দামের কারণে কিনতে মন চায় না। আমার একটা লেদার ব্যাগ পছন্দ হয়ে গেল। ব্যাগ হাতে নিয়ে প্রাইস ট্যাগ ধরে দেখি, ষোলো হাজার টাকা দাম। পূনম আপু তখন শপে ছিলেন। ব্যাগটা আমার এত পছন্দ হয়েছিল যে, আমি কোনোকিছু চিন্তা না করে, সোজা ওনার সামনে গিয়ে ডিসকাউন্ট চাইলাম। মহিলা কী বলে, শুনবে? বলল, ‘এখন তো কোনও অফার চলছে না। আচ্ছা আপনি কাউন্টারে যান। আমি বলে দিচ্ছি।’
রুমকি জিজ্ঞেস করল, ডিসকাউন্ট পেয়েছিলে?
কিসের ডিসকাউন্ট? ফকিন্নি একটা! লাখ, লাখ টাকার জিনিস বিক্রি করছে, অথচ আমাকে মাত্র পাঁচ পারসেন্ট ডিসকাউন্ট দিল। ভাবতে পার? তখনই আমি বুঝতে পেরেছি, তুমি যত ধনী হবে, তোমার মনটা ততটাই ছোটো হয়ে যাবে।
নিসা বলল, ওনার মেয়েগুলোকে দেখেছ, তোমরা?
রুমকি বলল, আমি একবার একজনকে দেখেছিলাম। তা-ও চার-পাঁচ বছর আগে। আবুধাবি যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিল। কেন বলো তো?
নিসা বলল, উনি শুধু নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। সুন্দরী হলে যা হয় আরকি। মেয়েগুলো তো তাঁর মতো সুন্দরী হয়নি। খুবই সাধারণ দেখতে। ছোটো মেয়েটা তবুও কিছুটা ওনার মতো চেহারা পেয়েছে; কিন্তু বড়ো মেয়েটা একেবারেই, কী যেন একটা উপমা আছে না? ঐ যে পাশের বাড়ির বালিকা না কী যেন বলে? ঐ টাইপের দেখতে। ওনার পাশে দাঁড়ালে কেউ বলবেই না, মেয়েটা যে ওনার মেয়ে। উনি নিজে যেমন ঝলমল করতে থাকেন, মেয়েগুলো ঠিক ততটাই নিস্প্রভ!
মম বলল, তুমি ওনার মেয়েদেরকে কোথায় দেখলে?
সোনারগাঁওয়ে একটা পার্টিতে দেখা হয়েছিল। মেয়ে দুইটাকে অবশ্য খুব ভদ্র মনে হল। আমি কথা বলেছিলাম ওনার মেয়েদের সঙ্গে। মেয়েরা, ওনার মতো এমন অহংকারী না। পূনম আপু তো অহংকারে সবার সঙ্গে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। উহ, বাবা, এত অহংকারী মহিলা আমি কমই দেখেছি। এখন আমাদের লেডিস ক্লাবের প্রসিডেন্ট হয়ে, আরও ভাব বেড়েছে। পছন্দ না করলেও, ওনার অত্যাচার আগামী এক বছর সহ্য করতেই হবে।
প্রচুর খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। কন্টিনেন্টাল ফুডের পাশাপাশি, মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী মাস হুনি, বোশি মাসুনি, ফ্রাইড ইয়ামসসহ আরও অনেক খাবার রাখা আছে। সবাই যে যাঁর মতো নিয়ে খাওয়া শুরু করেছেন। একটা কোনায় বিয়ার, হুইস্কি আর শ্যাম্পেনের বোতল রাখা। ওয়েটার যাঁর, যাঁর প্রয়োজন মাফিক সবাইকে সার্ভ করছে। পূনম একটা প্লেটে ফ্রুট সালাদ আর চিকেন স্টেক নিয়ে এসে আঞ্জুমানের পাশে বসলেন। ওয়েটার এসে পানি আর জুস রেখে গেল। আঞ্জুমান মালদ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখবেন বলে, সবগুলোই অল্প করে প্লেটে তুলে নিয়েছিলেন। পূনমের প্লেটের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি সালাদ ছাড়া কিছু খাবে না?
কেন আপা? এই তো স্টেক নিয়েছি।
আমার প্লেটের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো তো। আমি তো সবই নিয়ে আসলাম।
আপনি খান, আপা। আমি একটু আগে কফি খেয়েছিলাম। এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।
আঞ্জুমান খাওয়ার ফাঁকে কথা বলছেন আর পূনম তাকিয়ে অন্যদের খাওয়া দেখছেন৷ কারও, কারও অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, দেশে থাকতে এঁরা অনাহারে ছিল৷ হামলে পড়ে গ্রোগাসে গিলছে একেকজন। পানীয়র কাউন্টারের সামনে ভিড় লেগেই আছে। তন্দ্রার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই, তন্দ্রা এগিয়ে এসে বলল, আসসালামু আলাইকুম, আপা।
আঞ্জুমান খাচ্ছিলেন তাই সালামের উত্তর দিলেন না। পূনম সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, আপনারা এমন লম্বা করে সালাম দেন কেন?
তন্দ্রা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন, লম্বা করে মানে, ঠিক বুঝলাম না, আপা।
সারাজীবন আমরা সালাম দিলাম একভাবে। আমাদের আম্মা-আব্বাকেও দেখেছি এভাবে সালাম দিতে৷ এখন আপনারা শুরু করেছেন, আসসালামু আলাইকুম। এটা কেন?
এটাই তো শুদ্ধভাবে সালামের উচ্চারণ, আপা।
তাহলে সারাজীবন আমরা যেভাবে সালাম দিলাম, সেটা ভুল বলতে চাচ্ছেন?
সেটাই তো শুনলাম আপা। আমরাও তো ছোটোবেলায় স্লামালেকুম বলেই সালাম দিয়েছি। এতদিনে এসে শুনলাম, ঐ উচ্চারণ ভুল। জানার পরে আর ভুলটা উচ্চারণ করতে চাই না। আপা, আপনাকে কিছু এনে দেবো? আপনি তো কিছুই খাননি!
থ্যাংকস, তন্দ্রা। আমার কিছু লাগবে না। লাগলে, ওয়েটারকে বলব।
আঞ্জুমান কাউন্টারের দিকে গেলে, তন্দ্রা বলল, আপা, রুমকি ভাবী আগে আপনার ব্যবসার পার্টনার ছিলেন না?
কোন রুমকি?
ঐ যে পার্পল কালারের টপস আর সাদা প্যান্ট পরে আছে।
ও আচ্ছা। না উনি কখনোই আমার পার্টনার ছিলেন না। ওনার হাসব্যান্ড বোধহয় আমাদের ফ্যাক্টরীর সাপ্লায়ার ছিলেন একসময়। সেটাও আট-দশ বছর আগে। কেন বলেন তো?
উনি আপনাকে নিয়ে খুব মজা করে গসিপ করছিলেন অন্যদের সঙ্গে।
আমাকে নিয়ে অনেক গসিপ চলে, তন্দ্রা। তাতে অবশ্য আমার কিছু আসলো-গেল না। কে, কী বলছে, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানের এত সময় আছে নাকি? আপনারও এত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। বলি কী, কে, কার সম্বন্ধে কী বলল, এগুলো নিয়ে চর্চা না করে, নিজের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করেন। এতে আপনার নিজেরই লাভ হবে।
পূনমের কথাগুলো তন্দ্রার খুব একটা পছন্দ হল না। আঞ্জুমান ফিরে এলে, তন্দ্রা তাঁদের সামনে থেকে সরে গেল। আঞ্জুমান জিজ্ঞেস করলেন, তন্দ্রা কী এত কথা বলল?
তেমন কিছু না, আপা। মনের কষ্ট শেয়ার করতে এসেছিল।
ওর আবার কী কষ্ট?
মানুষের কষ্টের শেষ আছে, আপা? যাঁর কোনও কষ্ট নেই, সে হন্যে হয়ে কষ্ট খোঁজে।
কথাটা বলে পূনমের মনে হল, তিনিও কী কষ্টের চাষ করেন? তাঁর মেয়েরা নাকি তাঁর কাছ থেকে কষ্ট পায়, স্বামীও কষ্ট পান; কিন্তু তিনি তো ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে কষ্ট দেন না।………………………