#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১২
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

আলী এসে জোরে জোরে জান ভাইজান জান ভাইজান ডেকে চলেছে। তৈমুর রহমান তাকে দেখে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে। সাথে করে অনেক বাজারের ব্যাগ নিয়ে এসেছে, মূলত জান্নাত তাকে পাঠিয়েছে,বাজার সদাই দিয়ে। তৈমুর রহমান মাছ খেতে খুব পছন্দ করেন। জায়ানদের বাসায়, পাশের একটা বিল থেকে অনেক ধরনের মাছ এনেছেন এরশাদ হোসেন,
বেয়াইয়ের মাছ পছন্দ বলে আলীকে দিয়ে এই রাত্রিবেলায় মাছ পাঠিয়ে দিয়েছেন।
মাছ দেখে তৈমুর রহমান খুব খুশি হন। পদ্ম আলীর জন্য লেবুর শরবত করে আনে, তারপর কুশল বিনিময় করে, শাশুড়ি মাকে কল করে।
______
বিকালবেলা
জায়ান আর পদ্ম হাঁটতে বের হয়, সাথে আলী ও থাকে। একপর্যায়ে কলসি হাতে সীমা নদীর পাড়ে আসে, যা দেখে লাজুক হাসে আলী। পদ্ম কে দেখে সীমা কুশল বিনিময় করে, পানি নিয়ে চলে যায়। আর তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে, যা দেখে জায়ান পদ্ম সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সীমা যাওয়ার পর সামনে ফিরে তাকায় আলী, তাকিয়ে দেখে জায়ান পদ্ম তার দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে। শুকনো ঢুক গিলে আলী। দুজনে মিলে জেরা শুরু করে আলীকে, একপর্যায়ে আলী বলে দেয় সীমাকে সে পছন্দ করে। পদ্ম মুচকি হেসে বলল,
–“তাহলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়ে দেই কি বলেন?

প্রশন্ন হাসে আলী।যা দেখে জায়ান মশকরা করে বলে নাহ আলীর মনে হয় সম্মতি নেই এই বিয়েতে! দেখেন না কিছু বলছে না, চুপ করে আছে। পদ্ম তখন বলে, নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ।
তারপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয় সীমা দের বাসায়। সীমার বাবা নেই, আর্থিক অবস্থা ও কেমন উন্নত নয়, যার কারণে আলীর মত ছেলেকে সদরে গ্রহণ করে তারা। তারপর একটা সুন্দর দিন দেখে বিয়ে হয় দুজনের।
______
জায়ান পদ্ম ফিরে আসে, বিয়ের কারণে অনেক দিন ছুটি নেয়া হয়েছে, ছুটি ফুরিয়ে এসেছে ঢাকায় ফিরে যেতে হবে জায়ান কে। একটা কলেজে অধ্যায়নরত আছে জায়ান। এখন পদ্ম’র একদম ইচ্ছে করছে না ঢাকায় যেতে, তার ইচ্ছে জান্নাত আর অনিতার সঙ্গে কিছুদিন হেসে খেলে দিন কাটাতে। জান্নাত, এরশাদ হোসেন গ্রামেই থাকেন, পদ্ম আর জায়ানের প্রথম বিয়ের সময় ওরা ঢাকায় বেড়াতে গিয়েছিল।জায়ানের চাচার বাসা ঢাকা সেখানেই তারা মাঝে মাঝে যায় বেড়াতে। অবশ্য এখন জায়ান আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।
বর্তমানে,জায়ান চাচ্ছে পদ্ম কে সাথে নিয়ে যাবে, অবশ্য সবার সামনে বলতে পারছে না। শুধু পদ্মকে খোঁচাচ্ছে,পদ্ম যেন নিজেই যায় জায়ানের সাথে। পদ্ম ও নাছর বান্দা যাবে না মানে যাবে না। তারপর আর কি সব কিছু গুছিয়ে দেয় জান্নাত, জায়ান সবাই কে বলে সালাম জানিয়ে চলে যায় ঢাকায়।রাগ করে পদ্ম’র সাথে একটি কথাও বলে না।

পদ্ম জান্নাতের এবং অনিতার সাথে হেসে খেলে দিন পার করলেও জায়ান কে খুব মিস করে। খুব কথা বলতে ইচ্ছে করে,জায়ানের কথা গুলো ও বড্ড মিস করে। মাগরিব নামাজ পড়ে, ফোন হাতে নিয়ে বসে আছি পদ্ম, জায়ান কল করবে কিনা ভাবছে বসে বসে। জায়ান সেই যে সকালে গিয়েছে, এই অব্দি কোন কল করেনি পদ্ম কে। শুধু জান্নাত কে কল করে জানিয়েছে, ঠিক ঠিকমতো গিয়ে পৌঁছেছে।
অনিতা পিছন থেকে হঠাৎ করে হালুম বলে চেঁচিয়ে উঠল যার ফলে পদ্ম ভয়ে কান চেপে ধরে আল্লাহ বলে চিৎকার করে উঠে। অনিতা ভাবতেও পারেনি পদ্ম এতোটা ভয় পেয়ে যাবে। সাথে সাথে জরিয়ে ধরে বললো,
–“ভাবীমনি তুমি এতোটা ভয় পাবে আমি বুঝতে পারিনি সরি, এই দেখো কান ধরছি।

পদ্ম বিস্তর হেসে বললো,
–“দূর পাগলি, আমি একদম রাগ করিনি। ছোট থেকেই আমি একটু এরকম ভিতু অল্পতেই খুব ভয় পেয়ে যাই।

তখন অনিতা হাসতে হাসতে বললো,
–“জানো ভাইয়া একটা ভীতুর ডিম, ভাইয়া একা ঘুমাতে ভয় পেত রাতের বেলা,তাই আম্মুকে সাথে নিয়ে ঘুমাতে। তোমার আর ভাইয়ার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে কিন্তু।
–“তাই না?
–“হুম, তাইতো মনে হচ্ছে। নাস্তা করবে, আজকে একটা জিনিস তৈরি করেছি খাবে চলো।
–“ওয়াও কি তৈরি করেছো?
–“চলো, দেখবে আর খাবে।

পদ্ম কে টেনে ড্রইংরুমে নিয়ে চলে অনিতা। আলুর দম তৈরি করেছে সে, পদ্ম দেখে খুব খুশি হয় কারণ পদ্ম’র আলুর দম খুব খুব পছন্দ। একটা বড় ডিসে নিয়ে, এরশাদ হোসেন,জান্নাত, পদ্ম আর অনিতা একসাথে মেঝেতে বসে খেতে শুরু করে, মেঝেতে বসে একসাথে খাওয়ার মজাই আলাদা। এরশাদ হোসেন তার ছোট বেলার গল্প বলছেন আর মনোযোগ দিয়ে শুনে চলেছে সাথে আলুরদম খাচ্ছে। এরকম করে পদ্ম জায়ানের কথা একদম ভুলে যায়। এদিকে জায়ান বেচারা একটু পর পর ফোন চেক করে, পদ্ম কোন কল বা মেসেজ দিয়েছি কিনা। কিন্তু বেচারা বারবারি নিরাশ হয়। তাই রাগ করে ফোন বন্ধ করে রেখে দেয়।
______
আজকে অনিতা আর পদ্ম মিলে শপিং করতে বের হয়েছে। দুজনে মিলে প্রথমে শপিং করবে তার পর রেস্তোরাঁয় খাবে।
এরকম ঘুরে ফিরে ওদের বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়, মেয়েদের শপিং বলে কথা। বাসায় ফিরে মাগরিব নামাজ পড়ে চা তৈরি করে সবাইকে দিয়েছে সাথে নিজেও খেয়েছে, তারপর বালিশে হেলান দিয়ে বসে পদ্ম, খুব মাথা ব্যথা করছে তাঁর। চুল গুলো টেনে ধরে, ধীরে ধীরে যেন বেড়ে চলেছে ব্যথা!জান্নাত কি কথা যেন বলতে এসে দেখে পদ্ম নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, তাকে জিজ্ঞাসা করতে বললো, মাথা ব্যথা অনেক।
জান্নাত পদ্মর চুলে বিলি কেটে কেটে তেল দিয়ে চুল গুলো হালকা করে টেনে দেয়,এতে অনেকটা আরাম বোধ করে পদ্ম। তারপর এশারের আযান হলে, নামাজ পড়ে কোন রকম একটু খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

এরপরের দিন সকালে গানের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় পদ্ম’র। মাথা চেপে ধরে ওঠে বসে,ফজর নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পরে পদ্ম।আর সেই ঘুম এখন দশটায় ভাঙলো। এখনো মাথা ব্যাথা রয়ে গেছে, তার উপর এতো সাউন্ড গানের! পদ্ম’র খুব রাগ লাগছে, এরা এত গান কিভাবে শুনে বুঝে না পদ্ম।যেমন মা তেমনি হয়েছে তার ছেলে!তিন ছেলে মেয়ের জননীর পছন্দের হিন্দি গান-
“মে তানো সমজ্জাওয়াকী না তেরে বিনা লাগদাজি”
পদ্ম’র কাছে খুব অবাক লাগে উনি এই বয়সে কিনা এই গান শুনেন।যাই হোক পদ্ম রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে, রিমোট হাতে নিয়ে গান বন্ধ করে দেয়। জান্নাত কিচেন থেকে আসতে আসতে বললো,
–“এই গানটা বন্ধ করলো কে?

পদ্ম মলিন মুখে বললো,
–“আম্মু আমি বন্ধ করেছি।
–“কেন পদ্ম’মা? গান শুনতে শুনতে কাজ করতে আমার অনেক ভালো লাগে। লাগিয়ে দে তো আবার।

এটা বলে উনি আবার কিচেনে চলে গেলেন। পদ্ম কি করবে বুঝতে পারছে না, সে নিজ হাতে কিছুতেই গান চালাবে না।যেটা তার অপছন্দের তালিকায় একটা।তা ছাড়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে গান শুনা নিষেধ। মূলত সেই কারণে পদ্ম গান পছন্দ করে না।জান্নাত আবার এসে বললো,
–“, কিরে চালা গানটা? আচ্ছা দে আমি চালিয়ে নিচ্ছি।
–“আম্মু আমার কিছু কথা শুনবে?
–“পরে শুনবো রান্না করে নেই তারপর।
–“তোমাকে এক্ষুনি শুনতে হবে চলো।

তারপর পদ্ম জোর করে সোফায় নিয়ে বসায় জান্নাত কে। আর বলে,
–“গান শোনার বিষয়ে হাদিস কি বলে জানো?
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
–“আমার উম্মতের ভিতর এমন কিছু লোকের আগমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি কাপড়,মদ,ও গান বাজনাকে বৈধ (হালাল)মনে করবে,(অথচ তা সম্পূর্ণ হারাম) বুখারী,
রাসূলুল্লাহু( সাঃ)আরোও বলেন
–“আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পাল্টিয়ে তা পান করবে,তাদের সামনে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাইবে,আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন,এবং তাদের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকুরে পরিণত করে দিবেন,
(ইবনে মাজাহ,নং -৩০০)
রাসুলুল্লাহ( সাঃ)আরও বলেছেন
–“আল্লাহ তায়ালা আমাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত ও পথপ্রদর্শিত হিসেবে প্রেরণ করেছেন,এবং বাদ্যযন্ত্র, বাঁশী, মূর্তি জাহেলি যুগের কুপ্রথা মিটানোর জন্য হুকুম করেছেন,(মেসকাত শরিফ পৃঃ৩১৮)
আল্লাহর নবী( সঃ)বলছেন,
–“গান বাজনা অন্তরের মুনাফেকি সৃষ্টি করে, যেমনভাবে পানি দ্বারা ক্ষেতে শস্য বৃদ্ধি পায় (মেসকাত পৃঃনং৪১১)
রাসূল (সঃ)আরও বলেছেন,
–“যখন গান বাজনা গায়িকা নারী ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপক প্রচলন হবে, যখন মদ্য পান শুরু হবে, তখন তোমরা অপেক্ষা কর একটি লাল বর্ণযুক্ত বায়ুর, ভূমিকম্পের, ভূমিধসের, আকৃতি বিকৃত হয়ে যাওয়ার, শীলা বৃষ্টির,এবং কিয়ামতের নিদর্শন সমূহের, যে গুলো একের পর এক প্রকাশ হতে থাকবে,
–“যেমন কোন মালা ছিঁড়ে গেলে দানাগুলো একের পর এক পড়তে থাকে।
(তিরমিজি)
গান বাজনা কতটা ভয়াবহ তা উপরিউক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, এ থেকে দূরে না থাকলে পরকালের কতটা ভয়াবহ হতে পারে কখনো ভেবে দেখেছেন কি?
অনেকেই বলে গান শুনলে মন ভাল হয়,
আসলেই কি তাই,?যদি তাই হতো তাহলে কোরাআন হাদিসে এত কড়াকড়িভাবে গানকে শুনতে নিষেধ করা হতো না,গান মন ভালো করার কোন মাধ্যম নয়,বরং গানের মাধ্যমে শরীলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়,মাতলামির ভাব হয়,নাচানাচি লাফালাফি করতে ইচ্ছে হয়,
গান দিয়ে পাগলামীর বহিঃপ্রকাশ ঘটে,শুধু তাই নয় গান বাজনা শুনতে যদি কেউ জায়েজ এবং ভালো মনে করে হারামকে হালাল বানানোর কারনে ঈমান নষ্ট হবে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে,
(মাজমুয়াতুল কাওয়ায়িদুল ফিকহি পৃঃ২৬২)
মন ভালো করার প্রকৃত ও একমাত্র পন্থা হলো আল্লাহ তা’আলা ইরশদ করেছেন,
–“যারা ঈমাণদার তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে,জেনে রেখো আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়,,( সূরা রাদঃ৩৬)
সুতরাং মন ভালো করতে গান বাজনা নয় আল্লাহর জিকিরই যথেষ্ট, গান বাজনা,টিবি দেখা নয়।

জান্নাত নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললো,
–“আস্তাগফিরুল্লাহ।
অর্থ-আল্লাহ আমাকে মাফ করুন।
–“আমিন।
অর্থ-আল্লাহ আমার দো’আ কবুল করুন।

তারপর থেকে জান্নাত গান শুনা ছেড়ে দেয় এবং ছেলে মেয়েদের কেও নিষেধ করে। পদ্ম অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর গজল,নাতে রাসুল জান্নাতের ফোনে ডাউনলোড করে দেয় যা শুনলে মন ভালো হয়ে যায়,কবরের কথা স্মরণ হয় এবং আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা বেশি বেশি স্মরন হয়।

#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here