#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১০
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
জায়ান দিকপাশ না ভেবে নৌকা থেকে লাফ দেয়!দু-মিনিটের মাথায় পদ্ম ওঠে আসলেও জায়ানের কোন হদিস নেই!
পদ্ম ওঠে জানতে পারলো জায়ানের কথা।এই কয়েক মিনিটের মধ্যে কি হয়ে গেল, বাকিরা সবাই তাজ্জব বনে গেল। পদ্ম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“কাকা উনাকে খুঁজে বের করুন, উনি সাঁতার জানেন না!
–“মাঝি ইব্রাহিম দ্রুত পানিতে নেমে খুঁজতে থাকে। সাথে সুমন ও নামে।
এদিকে পদ্ম ও খুঁজে বেরাচ্ছে। জেসি দপ করে নৌকায় বসে পড়ল। অনিতা জামিয়া অর্পিতা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। পাশেই একটা ছোট বাজার আছে, এরকম চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মানুষজন দৌড়ে আসে। তারপর পাঁচ/ছয়জন যুবক ছেলে পানিতে নেমে খুঁজতে থাকে। ইব্রাহিম’কে পানির নিচে থেকে হাত নাড়াতে দেখে সবাই ওখানে গিয়ে ডুব দেয়।ডুব দিয়ে অবশেষে আল্লাহ তা’আলার রহমতে খুঁজে পেতে সক্ষম হয় জায়ান কে।
তারপর সবাই মিলে ধরে নিয়ে তীরে এনে বালিতে শুয়ে দেয়। পাশেই বালুর গদি রয়েছে যার কারণে নদীর তীর থেকে শুরু করে নদীর অনেকটা স্থান জুড়ে বালিতে ভরে আছে।
পদ্ম ওরনা টা শরীরে ভালো করে জরিয়ে নেয়। তারপর পানি থেকে ওঠে এসে জায়ান কে ডাকতে থাকে। পাশে সবাই ডাকছে কিন্তু জায়ানের কোন সাড়া শব্দ নেই।
জামিয়া বললো,
–“পানি থেকে তোলার পর উপুড় করে দেখতে হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস আছে কি না।
রেশমা বললো,
–“নাম ধরে ডাক দিয়েও দেখা যেতে পারে তিনি সাড়া দেন কি না। যদি শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকে বা শ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়, তাহলে খেয়াল করতে হবে শ্বাসনালীর কোথাও কিছু আটকে আছে কি না। এ জন্য আঙুল দিয়ে মুখের মধ্যে কাদা-মাটি থাকলে তা বের করে দিতে হবে। তার পরও শ্বাস না নিলে মাথা টানটান করে ধরে মুখ হা করাতে হবে। এবার উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে বুক ভরে শ্বাস নিতে হবে এবং ডুবন্ত ব্যক্তির মুখের সঙ্গে এমনভাবে মুখ লাগাতে হবে যেন কোনো ফাঁকা না থাকে।
অনিতা কাঁদতে কাঁদতে বললো,
–“ভাবীমনি তুমি,নাকে হাত দিয়ে চেপে ধরে ভাইয়ার মুখে মুখ লাগাও। এ অবস্থায় জোরে শ্বাস নিয়ে ভাইয়ার মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে। দেখতে হবে যে, শ্বাস দেওয়ার ফলে ভাইয়ার পেট ফুলে যায় কি না। যদি পেট ফুলে যায়, তাহলে বোঝা যাবে যে কৃত্রিম উপায়ে এভাবে শ্বাস দেওয়া ঠিকমতই হচ্ছে। ভাইয়া নিজে থেকে শ্বাস না নেওয়া পর্যন্ত এভাবে চালাতে হবে।
সুমন প্রথমে বুকে চাপ দেয় স্পন্দন আছে কিনা দেখার জন্য, কারণ কৃত্রিমভাবে শ্বাস প্রদানের পাশাপাশি হাত ধরে কিংবা গলার উঁচু অংশ তথা অ্যাডামস অ্যাপেলের একপাশে হাত দিয়ে দেখতে হয় যে, নাড়ির স্পন্দন আছে কি না। যদি না থাকে তাহলে বুকে চাপ দিতে হয়। বুকের বামপাশে হাত রেখে জোরে জোরে চাপ দিতে হয়, যেন বুক বেশ খানিকটা ধেবে যায়।
পদ্ম জায়ানের মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে থাকে। তারপর দেখা গেল জায়ান শ্বাস নিচ্ছে।যা দেখে পদ্ম জায়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।
কিন্তু জায়ানের অবস্থা ভালো নয় তেমন!তাই প্রাথমিক চিকিৎসা চলার পাশাপাশি দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
______
কিছুক্ষণ আগে জায়ান কে হসপিটাল থেকে আনা হয়েছে। ইলোরা তাড়াতাড়ি করে গাভীর দুধ গরম করে নিয়ে আসে জামাইয়ের জন্য। পদ্ম কে বলে সবটা যেন খাইয়ে দেয় জায়ান কে। পদ্ম বলে ঠিক আছে খাওয়াবো আম্মু। ইলোরা চলে যেতেই নাক মুখ কুঁচকে জায়ান বললো,
–“আমি দুধ খাবো না, আপনি খেয়ে নিন।
পদ্ম রাগি মুখশ্রী করে বললো,
–“অসুস্থ আমি না আপনি? খেয়ে নিন বলছি। কে বলেছিল তখন মাধবুরি করে পানিতে ঝাঁপ দিতে। আপনি তো জানতেন আমি সাঁতার জানি। তাহলে কেন যাপ দিতে গেলেন, যেখানে আপনি সাতার-ই জানেন না!
–“আপনাকে পড়ে যেতে দেখে হিতাহিত জ্ঞান ছিল না। ভালোবাসি আপনাকে কেন বোঝেন না। আপনাকে দ্বিতীয় বার হারাতে পারবো না, হয়তো এবার আর বাঁচবো না আমি।
পদ্ম জায়ানের মুখ চেপে ধরে বললো,
–“একদম অলক্ষুণে কথা বলবেন না, হারাতে দিবো না আপনাকে।
জায়ান বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে, পদ্ম আর কিছু না বলে চুপটি করে জায়ানের প্রশস্ত বুকে মুখ গুজে রাখে।জায়ান তৃপ্তির হাসি হাসে, তারপর আলতো করে চুমু দেয় পদ্ম’র কপালে। এতে আরো শক্ত করে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে পদ্ম। তারপর কি মনে করে ওঠে বসে।জায়ান প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়। পদ্ম বললো,
–“আমাকে ভুলিয়ে দুধ না খাওয়ার ধান্দা তাই না? ফাজিল ছেলে কোথাকার।
এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান। ইনোসেন্ট ভাব করে বললো,
–“প্লিজ এটা খাবো না,দুধ খেতে ভালো লাগে না। আমার হয়ে আপনি খেয়ে নিন।
–“না আপনাকেই খেতে হবে।
পদ্ম দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে দেখে ঠান্ডা হয়ে গেছে।তাই বললো,
–“আপনি বসুন আমি এক্ষুনি গরম করে আনছি।আর হ্যা আম্মু অনেক দুশ্চিন্তা করছে, আপনি একটু কথা বলে নিন। তাতে আম্মু শান্তি পাবে।
পদ্ম বেড়িয়ে যায় রুম থেকে, জায়ান ফোন হাতে নিয়ে জান্নাত কে কল করে।জান্নাত ছেলের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কেঁদে ওঠে।জায়ান মাকে সান্তনা দিয়ে বলল,
–“আমি একদম ঠিক আছি আম্মু তুমি চিন্তা করো না। আল্লাহ তা’আলার রহমতে এবং তোমার দোয়ায় আমার কিছু হয়নি।
–“তুই আর কখনো পানির ধারে কাছেও যাবি না বাবা, আল্লাহ না করুক তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো?
–“আম্মু আমার মৃত্যু যদি পানিতে লেখা থাকে তাহলে কেউ আটকাতে পারবে না। তুমি প্লিজ এভাবে কেঁদো না।
জায়ানের কথার মাঝেই জেসি আসে, মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।জায়ান তার আম্মু কে বললো,
–“আম্মু তোমার সাথে পরে কথা বলবো। এখন রাখছি নিজের খেয়াল রেখো।
–“তুই ঠিক মত ঔষধ গুলো খাবি কিন্তু।আর গরম দুধ বা চা দিতে বলিস পদ্ম কে।
–“আচ্ছা আম্মু, আল্লাহ হাফেজ।
–“আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে জায়ান জেসি কে বললো,
–“বসো।
জেসি দাঁড়িয়েই রইলো।তাই জায়ান বললো,
–“কি হলো বসো।
জেসি খাটের এক কোনায় বসলো। তখন জায়ান বললো,
–“তুমি এরকম একটা কাজ কেন করলে? তুমি জানো পদ্ম কে আমি কতটা ভালোবাসি। সবকিছু জেনে শুনে আমার ক্ষতিটাই করতে চেয়েছো?
–“বিশ্বাস করো, আমি জানতাম না জায়ান মুস্তাফি তুমি এভাবে জাপ দিবে পানিতে।
–“কিন্তু পদ্ম কে তো ঠিকই ফেলতে চেয়েছো বা ফেলেছো। আমি বা পদ্ম আলাদা নই কিন্তু আমরা একে অপরের পরিপূরক। একজন ছাড়া অন্য জন অপরিপক্ক। সেই পদ্ম কে তুমি,,,
–“আমি খুব দুঃখিত জায়ান মুস্তাফি। আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ?
জায়ান মুখে কাঠিন্য ভাব নিয়ে বললো,
–“যদি মাফ চাইতেই হয় তাহলে পদ্মর কাছে চাও,ওনি যদি মাফ করেন তাহলে আমার কিছু বলার নেই।
তখনই পাদ দাও দুধ গরম করে রুমে আসে, জেসিকে দেখে ও কিছু বলল না,জায়ানের দিকে দুধের গ্লাস এগিয়ে দিল। জায়ান খাবেনা বলে যেই না কিছু বলতে যাবে অমনি পদ্ম কটমট চোখে তাকায় তাই আর কিছু বলার সাহস করে উঠতে পারে না জায়ান। অতঃপর দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে,ঢকঢক করে সবটা খেয়ে নেয় জায়ান। পদ্ম কোমরে হাত রেখে বললো,
–“কি করলেন আপনি এটা? আপনি জানেন না প্রথমে বিসমিল্লাহ বলে,তিন নিঃশ্বাসে খেতে হয়।
–“সরি সরি আসলে এটা দ্রুত শেষ করার জন্য এভাবে খেয়ে নিয়েছি।
–“এরকম আর কখনো করবেন না, ছোট ছোট ভুল থেকেই কিন্তু একদিন পাহাড় সমান হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন আমিন।
–“আমিন।
ঠোঁটে লেগে থাকা, কিছুটা দুধ নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয় পদ্ম। এতে জায়ান দুষ্টুমি করে পদ্ম’র আঙ্গুল ধরে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। পদ্ম মিছে রাগ নিয়ে বললো,
–“ফাজিল ছেলে কোথাকার।
–“হা হা হা।
জেসি দুজনের খুনসুটি ঝগড়াগুলো দেখে চলেছে, তার সাথে বেরিয়ে আসছে দীর্ঘশ্বাস। জায়ান কে খুব ভালোবাসে জেসি! কিন্তু আজকের ঘটনার পর থেকে বুঝতে পেরেছে,জায়ানের জন্মই হয়েছে পদ্ম’র জন্য।তাই ওদের দুজনকে ভালো থাকতে দিয়ে দূরে চলে যাওয়াই বেটার, অনেক দূরে যেন জেসির ছায়া ও না পরে ওদের জীবনে। জেসি সেটাই করবে। শুকনো কাশি দিয়ে দুজনের মনোযোগ নিজের দিকে করে জেসি।
তারপর বসা থেকে উঠে গিয়ে পদ্ম’র পায়ে ধরতে উদ্ধত হলে, তৎক্ষণাৎ জেসির হাত ধরে নেয় পদ্ম।আর বলে,
–“কি করছো কি? তুমি আমার থেকে বড়।তাই এভাবে পায়ে ধরতে দিতে পারি না আমি।
জেসি অনুতপ্ত প্রকাশ করে বললো,
–“আমাকে মাফ করো পদ্ম? আমার ভুল হয়ে গেছে। বিশ্বাস করো, এরকম ভুল আমি আর কখনো করবো না।
–“তুমি যে তোমার ভুল বুঝতে পেরছো এটাই অনেক। উনার থেকে জানতে পেরেছি তুমি তোমার রক্ত দিয়ে উনার প্রান বাঁচাতে সাহায্য করেছো।তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। তবে কি জানো আজকে উনার কিছু হয়ে গেলে আমি তোমাকে কখনই মাফ করতাম না। তুমি যখন অনুতপ্ত তাই আমার আর কোন রাগ নেই তোমার উপর।
তারপর জেসি পদ্ম কে জরিয়ে ধরে বোন বলে ডাকে। পদ্ম ও আপু বলে ডাকে, এতে জায়ান খুব খুশি হয়।
________
সকাল বেলা সবাই নাস্তার টেবিলে বসে আছে, তখন পদ্ম খেয়াল করলো জেসি কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে এসেছে, সাথে টলি ব্যাগ!,,,,
চলবে,,ইনশা আল্লাহ।