#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখনীতে)
জমিতে সদ্য ধান গাছ রোপণ করা পানিতে কোলা ব্যাঙ মশাইদের ঘ্যাঙ ডাকে মুখরিত চারিদিক। গ্রাম অঞ্চলে যাকে বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস বলে।তার সাথে প্রকৃতি ও নতুন রুপে সতেজ হয়ে উঠবে। যেখানে পা রাখবে সেখানেই সবুজের স্পর্শে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভালো লাগার ভেলায় ভাসবে।এরই মধ্যে বাতাস বইতে শুরু হয়েছে। রান্নাঘরের জানালা টা বন্ধ করা হয়নি মনে পড়তেই, রুম থেকে বেরিয়ে আসে জান্নাত। শেষের সিঁড়িতে পা ফেলতেই খোরশেদার বিলাপ শুনতে পায়। রান্না ঘরে আর না গিয়ে খোরশেদার বিলাপ অনুসরণ করে জায়ানের রুমের কাছে এসে কিছুই বুঝতে পারলো না।তাই জিজ্ঞাসা করলো,
–“আপা কি হয়েছে?
–“এই মাইয়ার আগেও একটা বিয়া অইছে! তুমি জানতা না? কোন খোঁজ খবর না নিয়া কেমনে পারলা জায়ানের গলায় ঝুলায় দিতে?
–“আপা আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে পদ্ম,,
মুখের কথা কেরে নিয়ে,তেজ দেখিয়ে মোরশেদা বললো,
–“আমি নিজের কানে হুনছি জায়ান নিজে কইছে এই কতা।এর পরে তোমার কোন ছাফাই হুনুম না আমি। এই মাইয়ারে কাইলই বিদায় করুম আমি!
পদ্মর চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট,জায়ান কে ছেড়ে যেতে হবে! কথাটা যেন তীরের মত আঘাত করলো।জায়ান পদ্মর কাছাকাছি থাকায় খামচে ধরল জায়ানের হাত। ছোট ছোট নখ গুলো ভুতা দায়ের মতো করে বিঁধছে। তবে সহজে চামড়া ছিঁড়ে যাওয়ার ভয় নেই।ভুতা দা যেরকম চামরা ভেদ করে ভিতরে ঢুকতে সময় নেয়, তেমনি পদ্মর আঙুলের নখ গুলো।
জায়ান পদ্মর মুখপানে তাকিয়ে খোরশেদা কে বললো,
–“ফুপ্পি উনি এখন আমার বউ। এখন এটাই উনার একমাত্র পরিচয়,আগে কি হয়েছে না হয়েছে তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার।তাই আমি চাই না তুমি বা অন্য কেউ এ নিয়ে দ্বিতীয় বার কোন কথা বলো।আর যদি বলো তাহলে আমাকে আর এবাড়িতে দেখতে পাবে না।
ছেলের এরকম মন মানসিকতার পরিচয় এবং স্ত্রী পরায়নতা দেখে জান্নাতে’র চোখে পানি চলে এলো। কিন্তু খোরশেদা সন্তুষ্ট হতে পারলো না, রাগে দুঃখে গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেল।জান্নাত এগিয়ে এসে ছেলের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে পদ্মর কপালে চুমু এঁকে দিল। তারপর শুভ রাত্রি বলে,জান্নাত চলে যেতেই জায়ান রুমে এসে গান ছেড়ে বারান্দায় চলে গেল। বারান্দার গ্রিলে হাত রাখতেই চোখে পড়লো, ইংরেজি লেটার ইউর মতো করে হাতে দাগ বসে আছে পাঁচটি। আনমনে নিজ হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় জায়ান।
রুমে শিল্পী নচিকেতার গান বাজছে:-
আনমনে তারিই ছবি এঁকেছি,
তার স্বপ্নের স্রোতে ভেসেছি।
সে আমার হৃদয়ের স্পন্দন,
তার চোখে আকাশ কে দেখেছি।
আনমনে তারিই ছবি এঁকেছি,
তার স্বপ্নের স্রোতে ভেসেছি।
সে আমার হৃদয়ের স্পন্দন,
তার চোখে আকাশ কে দেখেছি।
ঝর্নার জল যেন হায়না,
তার ছবি তাকে খুঁজে পাই না।
ঝর্নার জল যেন হায়না,
তার ছবি তাকে খুঁজে পাই না।
বাতাসেতে সূর বাজে ভিসাধে,
ভালোবাসা হারিয়েছে আকাশে।
ভাঙ্গা ঘরা খেলা খেলে,
তার আসা চলে যাওয়া।
আলো হয়ে ছায়া হয়ে,
লোকুচুরি খেলে যাওয়া।
দাঁড়িয়ে আমি যে শুধু দেখেছি।
পদ্ম জানে আজ থেকেই তার জীবনে গান নামক অত্যাচার শুরু!এর কারণ কি? কারণ জায়ানের গান প্রচুর পছন্দ।আর গান সবচেয়ে বিরক্তিকর পদ্মর কাছে। কয়েক বছর আগে যখন জায়ানের সাথে কথা হতো,তখন অনেক বুঝিয়ে ও গান ছাড়াতে ব্যার্থ হয় পদ্ম। তবে জায়ান বলেছিল,ঘুমবাবু আপনাকে পেলে গান শুনা ছেড়ে দিব আমি! সেই সময় পদ্মর উওর ছিল”তা হওয়ার নয়”।
এরই মধ্যে একটু আধটু করে জুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। জায়ান এখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। পদ্ম কিছুক্ষণ কানে হাত দিয়ে পায়চারি করে এগিয়ে যায় বারান্দায়।
–“গান শুনার সাথে সাথে রাত জেগে থাকতে প্রস্তুত তো আপনি?
পদ্ম বারান্দায় যেতেই কথাটা বলল জায়ান। এতে পদ্মর মোখের ভাবভঙ্গি একটুও পাল্টালো না! বরং পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
–“অভ্যাস টা কি পাল্টানো যায় না?
–“যাকে ঘিরে পাল্টাবো ভেবেছিলাম সেই তো ছেড়ে চলে গেল!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে,পদ্ম বলল,
–“বৃষ্টির ছিটেফোঁটায় তো ভিজে যাচ্ছেন, ভিতরে চলুন?
খুব শান্ত কন্ঠে জায়ান বলল,
–“সেই আগের মতই কথা ঘুরিয়ে পালাতে চাইছেন!কেন এমন করেন? এখন যখন নিজের ইচ্ছায় আমাতে ধরা দিয়েছেন তাহলে একটা ট্রেইলার হয়ে যাক!
–“মা’মানে?
–“শিষষ!,,,
পদ্ম কে পাঁজা কোলে করে এগিয়ে গেল জায়ান। পদ্ম বেচারি ছোটাছুটি করে চলেছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা?এক পা এক পা করে সিঁড়ির ধাপ পার করছে জায়ান। পদ্মর মাথায় কিছু ডুকছে না,কি করতে চলেছে জায়ান। খুব সাবধান অবলম্বন করে পদ্ম কে ধরে রেখেই এক হাতে জায়ান ছাদের দরজা খুলল। তারপর এগিয়ে গেল ছাদের মধ্যখানটাতে,পদ্ম কে নামিয়ে প্রান ভরে দম নিয়ে পদ্মর এক হাত নিজের কাঁধে রেখে অন্য হাত মোলায়েম ভাবে নিজের হাতে রাখলো।আর নিজের বাম হাত টা পদ্মর শাড়ি ভেদ করে কোমড়ে জায়গা করে নিলো। হঠাৎ কোমড়ে আলতো স্পর্শে কেঁপে ওঠে ভরকালো, বিদ্যুৎপৃষ্টের ন্যায় কেঁপে উঠলো পদ্ম!এরই মধ্যে কাক ভেজা হয়ে গেছে দু’জনে,সে দিকে খেয়াল নেই কারো। পদ্ম ও যেন অজানা এক ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।
বৃষ্টি তার গতিতেই ঝরে পড়ছে, চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে।এক প্রহর এক প্রহর করে রাত বেড়ে চলেছে।দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু কারো মুখোমন্ডল স্পষ্ট নয়, তবে অবয়ব অবলোকন করা যাচ্ছে।
কাঁপল ডান্স শুরু করে জায়ান! সাথে পদ্ম কেও। এই মুহূর্তে সফট মিউজিক প্লে করলে বেশ জমতো বটে কিন্তু সিনেমা হলে সম্ভব ছিল, বাস্তব বলে সে আশায় বালি।
–“আমার ভালোবাসা আপনার মতো ঠুনকো নয় যে আপনার মতো আমিও আপনাকে ছেড়ে দিব! তবে আগের মতো করে ভালোবাসতে পারবো কিনা জানিনা।
–“আমার ভালোবাসা ঠুনকো?
–“ঠুনকো নয় বলছেন?
–“আপনাকে আমার অনেক কথা জানানোর আছে। শুনবেন?
–“ছলনাময়ীর কথা শুনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার!
জায়ানের কথার আঘাতে হাত পা থেমে গেল পদ্মর।জায়ান কে ছেড়ে চলে যেতে নিলে, শক্ত পোক্ত ভাবে আটকে রাখে জায়ান।
–“এখানে আমার ইচ্ছায় এসেছেন আপনি,তাই আমার ইচ্ছাতেই ফিরে যাবেন।
–“আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভিজতে।
–“যান মুক্ত করে দিলাম, চলে যান।
পদ্ম কে ছেড়ে দিয়ে রেলিং গেসে দাঁড়িয়ে রইলো জায়ান। পিছন থেকে পদ্ম বললো,
–“আপনি ও চলুন প্লিজ? এভাবে ভিজলে আল্লাহ না করুক ভালো মন্দ কিছু হয়ে যাবে।
–“তাতে আপনার কি?
পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মোলায়েম সুরে পদ্ম বলল,
–“প্লিজ নিচে চলুন মিষ্টার নির্ঘুম?
দীর্ঘ তিন বছর পর পদ্মর মুখে মি.নির্ঘুম! ডাক শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে জায়ান।তাই আর অবাধ্য হতে পারলো না।
________
বাহিরে উঠুনে ডেকোরেশন করা হয়েছে, এখানেই বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সবকিছু পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে,দাওয়াতি লোকজন আসতে শুরু করেছে। বাড়ির মেয়ে বউরা সাজগোজে ব্যাস্ত,পদ্ম কে সাজানো সদ্য শেষ করে মেয়েদের সাজানো শুরু করেছে পার্লার থেকে আনা মেয়ে দুটো।দাওয়াতি মহিলারা নব বধূকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছে। পদ্ম সবাই কে সালাম দিয়ে কদমবুসী করতে ব্যাস্ত। তবে পুরুষ মানুষদের নব বধূর রুমে প্রবেশ নিষেধ। ভুল ক্রমেও যেন পুরুষ মানুষ ডুকে না যায় সে কারণে দরজার সামনে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত আছে আলি।যে কিনা জায়ান’দের ফরমায়েশ খাটে।আলি সহজ সরল খুব ভালো ছেলে বটে।জায়ানদের পাশের গ্রামেই তার বাড়ি। বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজে চলেছে কিন্তু এখনো কোনো সুপাত্রির খোঁজ মিলেনি।বলা বাহুল্য জায়ানের শ্বশুর বাড়িতে একজন কে তার বড্ড মনে ধরেছে! অনুসন্ধান করে তার নাম জানা গেছে সীমা।আহা কি সুন্দর নাম সীমা সীমা সীমা তার সীমান্তে বন্দি হতে চায় আলি।দেখা যাক সেই সীমা কে নিজের করে পায় কিনা আলি।
বেশ কিছুক্ষণ রুমের বাহিরে পায়চারি করছে জায়ান। মহিলাদের জন্য ভিতরে ঢুকতে পাচ্ছে না।তার মন পদ্ম কে দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে। আজকে নিশ্চই গর্জিয়াস ভাবে সাজিয়েছে পদ্ম কে। পদ্ম কে সব রকম সাজেই দারুন সুন্দর লাগে জায়ানের কাছে। আগে যখন কথা হতো পদ্মর সাথে তখন জায়ান এক বছরের মতো ছবি চেয়ে গ্যাংগ্যাং করতে করতে একটা ছবি দেখতে পেত! তবে করা নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল।জায়ান যেন কোন মতেই পদ্মর ছবি ডাউনলোড করে না রাখে।এ ব্যাপারে খুবই কঠিন ছিল পদ্ম। ছবি দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার ডিলেট করে দিত।জায়ান ও বাধ্য ছেলের মত মেনে নিত। কি আর করা মেনে না নিয়ে, অন্তত একবার হলেও পদ্ম কে দেখার সুযোগ তো হতো।
বর্তমান,
উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দেখা যাচ্ছে পদ্মর রুমে আপাতত কেউ নেই। এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া না করে রুমের দিকে এগিয়ে যায় জায়ান। দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে নিলে,আলি বাধা দিয়ে বলল,
–“পুরুষ মাইনষের ডুকা নিষেধ!
–“এক থাপ্পর মারবো তখন বুঝবি হাদারাম কোথাকার।
জায়ানের ধমকে চুপসে গিয়ে আলি বলল,
–“ভাইজান চরি চরি।
মুচকি হেসে ভিতরে ঢুকে জায়ান, গিয়ে পদ্মর সামনে দাঁড়ায়। মেরুন রঙের টিস্যু শাড়ি পড়ানো হয়েছে পদ্ম কে। চুল গুলো খোঁপা করে বেলি ফুলের গাঁজরা সেট করা। মাথা থেকে শরীরে দু-পাট্টা ঝরানো। গলায় গোল্ডের কন্ঠ হারের সাথে গোল্ডপ্লেটের শীতাহার সাথে গর্জিয়াস সাজ এতে খুব আময়িক সুন্দর লাগছে পদ্ম কে ঠিক যেন ফুটন্ত পদ্ম ফুল।
পদ্ম হাতের চুড়ি গুলো নেড়েচেড়ে দেখছিল।
জায়ান এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে। পদ্ম বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়ে যায়।যে কেউ যদি বেশি নয় দুমিনিট ধরে তাকিয়ে থাকে সেখানেই একটা লজ্জার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।আর এখানে তো জায়ান তাকিয়ে। পদ্ম নিজেকে ধাতস্থ করে জিজ্ঞাসা করে,
–“কিছু বলবেন?
–“দিনকে দিন আপনার সুন্দর্যো বেড়েই চলেছে”জুনিয়র পদ্ম”।
–“আপনার মাথা।
–“হুম,সবিই আমার মাথা।
দুজুনেই মন ভরে হেসে দেয়, ঠিক আগের মতো!
জান্নাত এসে দেখে ছেলে বউ দুজনের মুখে হাসি,যা দেখে প্রান ভরে গেল। এগিয়ে এসে বললো,
–“মা শা আল্লাহ! আমার ছেলে মেয়ে দুটো কে খুব সুন্দর লাগছে, কারো নজর না লাগুক।
জান্নাত’কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে জায়ান বললো,
–“আমার মা জননী কম কিসে? আব্বু দেখলে তো মাথা ঘুরে পড়ে যাবে।হা হা হা
–“তাই না? বাঁদর ছেলে মায়ের সাথে মজা করা হচ্ছে।
জান্নাত আর দাঁড়াল না বেড়িয়ে গেল মেহমানদের আপ্যায়ন করতে।জায়ান কাবার্ড খুলে কিছু করছিল, তখন অনিতা এসে বললো,
–“ভাইয়া দেক কে এসেছে?
হোয়াট এ প্রেসেন্ট সারপ্রাইজ!
–“জেসি তুমি?
–“কেমন দিলাম বলো?
–“আমি কিন্তু খুব সারপ্রাইজড।
–“হা হা হা,,সে জন্যই তোমায় না বলে চলে এসেছি।
কি গায়ে পরা মেয়েরে বাবা! অনিতা কে এই নেকার ষষ্টি? ফিসফিস করে বলল পদ্ম। আসলে জেসি নামের মেয়েটি পড়েছে তো একিই ওয়েস্টান ড্রেস তার উপর,আসা অবধি জায়ানের সাথে লেপ্টে আছে।কে এই জেসি??
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)