#ছত্রিশ_ঝামেলা
#পর্ব_৭

লায়লা পরপর দু-গ্লাস পানি খেলো। একটু পানি হাতে নিয়ে মাথার তালুতে দিলো। তার ভীষণ শরীর খারাপ লাগছে। একটু আগেই লায়লা একটা বিশেষ ফোনকল পেয়েছে। ফোনকলটি এসেছে সিডনি থেকে। ফোনকলটি আসবার ছত্রিশ_ঝামেলা পর থেকেই লায়লার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। দুশ্চিন্তা এবং সুচিন্তায় এই দুইয়ে মিলে। ফোন করেছে মার্লিনা মেট্রিন নামের এক রিনরিনে কণ্ঠস্বরের নারী। লায়লা তখন যাস্ট একটা মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বসেছে। প্রচন্ড ক্লান্তিতে যখনি সে কফিতে চুমুক দিয়েছে, ঠিক তখনি ফোনকলটা আসে। লায়লা ফোন ধরতেই মার্লিনা নামের মেয়েটি স্পষ্ট বাংলায় বলেছে,
-“হ্যালো। আপনি কি লায়লা?”
-“ইয়েস।”
-“আমি সিডনি থেকে মার্লিনা মেট্রিন বলছি। আপনার সাথে আমারা জরুরি কিছু কথা আছে। কথাগুলো আমি আপনার সাথে সরাসরি বলতে চাই।”
-“সরাসরি বলতে?”
-“নেক্সট মান্থে আমি বাংলাদেশে আসবো। আপনার সাথে আমার কথা বলা বিশেষভাবে জরুরি।”
লায়লা নিজের উদ্বেগ চাপা দিয়ে বলল,
-“আপনি কি দয়া করে আমায় একটু হিন্ট দেবেন, ঠিক কোন ধরনের জরুরি কথা আপনি আমার সাথে বলতে চান?”
-“কথাটা হাসিব বিষয়ক এবং স্পর্শকাতর।”
এতটুকু শোনবার পরপরই লায়লায় গলা শুকিয়ে গিয়েছে। মার্লিনা কী বলতে চায়?
-“হাসিব কি ভালো আছে?”
-“আমি খুবই দুঃখিত ম্যাম। এর থেকে বেশি হিন্ট আমি এই মুহূর্তে আপনাকে দিতে পারবো না।”
লায়লার বুকটা তখন ধক করে উঠেছে। হাসিব লায়লার স্বামী। তার ভালো নাম হাসিবুল চৌধুরী। সে ইউনিভার্সিটি অফ সিডনিতে একজন রিসার্চ এনালিস্ট হিসেবে কাজ করছে। তার কাজের সময় প্রায় পাঁচবছর। পাঁচবছরে এই প্রথম কেউ হাসিবের কথা বলবে বলে ফোন করেছে। লায়লার মনটা কু গেয়ে উঠলো।
-“খুব বেশি কিছু নয়, আপনি শুধু বলুন হাসিব কোনো বিপদে পড়েছে কি না?”
-“আমি খুবই দুঃখিত ম্যাডাম। আমি কোনো হিন্টই দিতে পারবো না।”
লায়লা কাতর স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
-“হাসিবকে আপনি কী করে চিনেন?”
-“আমি একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করি। হাসিব সেই রেস্টুরেন্টের একজন নিয়মিত ক্লায়েন্ট। সেই আসা যাওয়ার সূত্র ধরেই পরিচয়।”
-“কেমন পরিচয়?”
-“ভালো পরিচয়। হাসিব আমার খুব ভালো বন্ধু। আগামী সপ্তাহেই আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসবো। ভালো থাকবেন।”

লায়লা ফোন রেখেই হাসিবকে ফোন করেছে। হাসিব বেশ স্বাভাবিকভাবেই ফোন রিসিভ করে কথা বলেছে। আগামী তিন তারিখে মায়ের জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ কী উপহার দিতে পারে, সেই নিয়ে কথা বলেছে। মিমির পড়ে যাওয়া নতুন দাঁতটা কতটুকু উঠেছে, লায়লা এখনো কেন দাঁতের ছবি তুলে পাঠাচ্ছে না, সেটা নিয়েও ঘ্যানঘ্যান করলো। লায়লা এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলো,
-“ওখানে কি তোমার মার্লিনা নামের কারো সাথে পরিচয় আছে?”
হাসিব অনেকক্ষণ চিন্তা করে জানিয়েছে, তার পরিচিত কোনো মার্লিনা নামের বান্ধবী নেই।
তাহলে মার্লিনা নামক মেয়েটি কী বলতে চায়? এমন কী কথা যেটা বাংলাদেশে এসেই লায়লাকে বলতে হবে?
হাত-পায়ের কাঁপাকাঁপির সাথে লায়লার মাথার ভেতরটাও এখন দপদপ করছে। এই ব্যাপারটা নিয়ে একজনের সাথে কথা বলা দরকার। কাকে বলা যায়?
লায়লা দ্রুত চিন্তা করতে লাগলো। আলাপ করার মতো লায়লার কাছে তিনটি অপশন আছে। প্রথমে, তার শাশুড়ি সুলতানা চৌধুরী। তিনি স্বভাবে প্রচন্ড ভীতু মানুষ। পারিবারিক যে কোনো ব্যাপারে অল্পতেই বিচলিত হয়ে পড়েন। লায়লার শ্বশুর জনাব আসহাব চৌধুরী মারা যাবার পর থেকে তার রেখে যাওয়া জুয়েলারি বিজনেসটা তিনি একা হাতে সামলাচ্ছেন। ব্যবসায়িক ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত সাহসী, স্থির এবং ঠান্ডা মাথা। কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে অসহায়, স্নেহকাতুরে, ঝরঝর করে ভেঙ্গে পড়া মা। দ্বিতীয়জন, লায়লার বড় ননদ সুরভি। সুরভীর বিয়ে হয়ে গেছে। সে বর্তমানে কানাডাতে থাকে। সে তার দুই ভাইয়ের প্রতি স্নেহে অন্ধ। ভাইদের যে কোনো ব্যাপার তার কাছে বলা মানে উল্টো তোপের মুখে পড়া। এছাড়াও তার আরেকটা বিশেষ স্বভাব হলো সিম্পল কন্টেন্টকে এগজেজারেট করে করে ফেলা। সুরভীকে বলা মাত্র সুরভী কথাটা অতি রঞ্জিত করে আত্মীয়স্বজনকে জানিয়ে দেবে। তৃতীয় এবং লাস্ট অপশন হলো, শাকিব।
লায়লার ভাবনায় ছেদ পড়লো। দরজায় নক হচ্ছে। নক করছে শাকিব।
-“আসবো ভাবী?”
লায়লা হাসলো।
-“শাকিব… এসো! তোমায় কতবার বলেছি, এমন করে আসবো জিজ্ঞেস করবে না। বলবে, এসে পড়েছি ভাবী।”
-“ভাবী চট করে লাঞ্চের অর্ডার দাও তো। ক্ষিধায় চোখে ঝাপসা দেখছি। নাড়িভুড়িগুলোর অর্ধেক হজম শেষ। বাকি অর্ধেক হজমের পথে।”
টেবিলের উপর ব্যাগ রেখে শাকিব অতি দ্রুত বাথরুমে ঢুকে পড়লো। লায়লা মনে মনে একটু আশ্বস্ত অনুভব করতে লাগলো। যাক, ব্যাপারটা এখন শাকিবকে বলা যাবে। শাকিব বেরিয়ে এলো হাত-মুখ চুপচুপা ভিজিয়ে।
শার্টের হাতায় কপাল গাল মুছতে মুছতে বললো,
-“কী ব্যাপার ভাবী? খাবার কই?”
-“বলা আছে। আব্বাস নিয়ে আসছে। আজকেও পাতলা খিচুড়ি। খেতে পারবে তো?”
-“শুধু পাতলা খিচুড়ি না, এখন তুমি আমাকে পাতলা ইয়ে দিলেও আমি ফুউউৎ করে টান দিয়ে গিলে ফেলবো। সকালে বেরিয়েছি। ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে শুনি ওরা আমাকে পি এইচ ডি’র জন্য স্কলারশিপ দিয়েছে। পি এইচ ডি দিয়ে আমি করবোটা কী? এই ঝামেলা শেষ করতে করতে জীবন শেষ।”
-“পি এইচ ডি করবে না?”
-“উঁহু। তখন জোশ ছিল, তাই এপ্লিকেশন করেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে ব্রেনটাকে আর পড়াশোনার প্রেশার দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। ঠিক করেছি কিছুদিনের মাঝে আমি ইউনিভার্সিটিও ছেড়ে দেবো।”
-“বলছো কী? ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দেবে?”
-“ইয়েস। ব্রুকস ইনস্টিটিউট আমায় ডাক দিয়েছে। ওখানে স্কুল অফ ফটোগ্রাফিতে আমি পড়তে যাচ্ছি।সবকিছু ফাইনাল হয়ে গেছে। এখন শুধু, বাধো পেটা, আর ধরো হাটা।”
-“মা জানে?”
-“জানে না। ওখানে গিয়ে তবে জানাবো।”
-“জানবার পর মা হার্টঅ্যাটাক করলে?”
-“ভাবী, হার্টঅ্যাটাক করলে হার্টের চিকিৎসাও আছে। আমি তবু যাবো। এবারে কেউ মোরে বাঁধিতে পারবে না।”

ধোঁয়া উঠা গরম খিচুড়ি চলে এসেছে। সাথে ডিমভাজি। খিঁচুড়ি নিয়ে এসেছে লায়লার ব্যক্তিগত সাহায্যকারী আব্বাস। ব্যক্তিগত সাহায্যকারীরা সাধারণত অফিশিয়াল কাজে সহায়তা করে। আব্বাস করে না। সে শুধু লায়লার খাবার দাবারের ব্যাপারটা দেখে। কফি বানায়, নাশতা বানায় এবং যত্ন করে নিজের হাতে এই খিচুড়ি রান্না করে। খেতে অত্যন্ত অমৃত। শাকিবের ধারণা আব্বাস জন্মেছেই এই পাতলা খিচুড়ি রান্নার জন্য।
আব্বাস বেটে এবং শুকনা শরীরের মুখভর্তি লম্বা দাঁড়িওয়ালা মধ্যবয়সী হাসিখুশি লোক। এক ঝোঁপ দাঁড়ির ফাঁকে এইটুকু মুখটা একটু করে দেখা যায়। আব্বাস মিয়া কঠিন নামাজি। নামাজ পড়তে পড়তে কপালের তিন জায়গায় দাগ পড়ে গেছে। নামাজ ছাড়া আব্বাসের জীবনে দ্বিতীয় প্রধান বিষয় তার একমাত্র মেয়ে। কিছুদিন আগেই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের জামাই দুবাইয়ে থাকে।
শাকিবকে দেখলেই কৃতজ্ঞতায় আব্বাসের চোখ ভিজে আসে। আব্বাসের মেয়ের বিয়েতে শাকিব একটা অদ্ভুত কান্ড করেছিল। সেই কান্ডের কথা মনে হলেই আব্বাস মনে মনে বড় খতমের দোয়া পড়ে শাকিবের জন্য দোয়া করে।
শাকিব খিচুড়ি প্লেটে নিতে নিতে বললো,
-“আব্বাস ভাই, কী খবর বলুনতো আপনার?”
-“আর খবর! মেয়েটার সন্তান হবে। বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি।”
-“দুশ্চিন্তায় আমরা সবাই-ই আছি। আপনি মেয়ের জন্য, আমি ফটোগ্রাফি পড়তে যাবার জন্য, লায়লা ভাবী ভাইয়ার জন্য। এবার বলো ভাবী, ভাইয়ার জন্য দুশ্চিন্তা কেমন চলছে তোমার?”
লায়লা ভীষণ চমকে উঠলো। শাড়ির আঁচলটা ঠিকঠাক করার অযুহাতে নিজের উদ্বেগ চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলো। তাতে কাজ হলো না। কনুইয়ে লেগে টেবিল থেকে কয়েকটা ফাইল পড়ে গেল। শাকিব সেটা দেখলো না অবশ্য!
-“আব্বাস ভাই চট করে আমার ব্যাগটা খুলুন তো। ওখানে একটা নীল প্যাকেট আছে। এখানে খুলবেন না। নিয়ে চলে যান। প্যাকেট বিষয়ে আপনার সাথে পরে কথা বলবো।”
আব্বাস ব্যাগ খুলে প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে গেল।
-“ভাবী তোমার ঘরের সিসি ক্যামেরাটা একটু অফ করো তো। আমি এখন একটা বিশেষ পদ্ধতিতে খিচুড়ি খাবো৷ নল পদ্ধতি। এই যে এই পাইপটা প্লেটে রেখে জোরে দিয়ে টান দেবো। গড়গড় করে খিঁচুড়ি গলায়।”
লায়লা বিস্মিত হয়ে তাকালো। শাকিবের হাতে আট ন’ইঞ্চি লম্বা প্লাস্টিকের পাইপ।
-“এটা পেলে কোথায়?”
-“কিনেছি। ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতির দোকান থেকে৷ তোমার অফিসে এলেই এই ঝোল ঝোল খিঁচুড়ি খেতে হয় তাই। গতবার এই খিচুড়ি পড়ে আমার হোয়াইট পিজিওন শার্টটা নষ্ট হলো। আমি দরিদ্র মানুষ৷ কাপড়চোপড় তো বারবার কিনতে পারবো না।”
শাকিব সত্যিসত্যিই নল দিয়ে গরগর শব্দ করে খিচুড়ি খেতে লাগলো। লায়লা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে।
-“ভাবী তুমিও ট্রাই করবে না কি? আই হ্যাভ এনাদার পাইপ ইন মাই ব্যাগ।”
লায়লা শাকিবের ব্যাগ থেকে পাইপ বের করে নিলো। অনিশ্চিত ভাবে খিচুড়িতে ছোঁয়ালো। আশ্চর্য! পাইপ দিয়ে খিচুড়ি খেতে তার ভালো লাগছে।
-“দেখেছো ভাবী, হাতে লাগার চান্সই নেই। আমি ঠিক করেছি। এখন থেকে ডালভাতও এরকম করে খাবো।”
-“সবই ঠিক আছে। আওয়াজটা কেমন যেন হুক্কা টানবার মতো শোনাচ্ছে।”
-“শোনাক। আওয়াজে ফোকাস করা বাদ দাও। ফোকাস ইন খাওয়া। এখন বলো তুমি কী নিয়ে এত চিন্তিত?”
-“আমি চিন্তিত নই। আমার কিসের চিন্তা?”
-“ভাইয়ার জন্য চিন্তা ছেড়ে দিয়েছো? ভাবী আমার ধারণা তোমার চিন্তা করার লিমিট শেষ হয়ে গেছে। তাই এখন আর চিন্তা করতে পারছো না। নাহলে ভাইয়ার এইসময়েও তোমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই।”
লায়লার হাত থেকে পাইপ পড়ে গেল। শাকিব কী তাহলে মার্লিনা বিষয়ক কোনো খবর পেয়ে গেছে অলরেডি? লায়লা বলতেই যাচ্ছিলো, শাকিব আগে কথা বলে ফেললো।
-“ভাইয়ার জন্মদিনে বিড়াল উপহাট দেবে, বিড়ালই তো এখনো যোগাড় হয়নি। অথচ তুমি বলছো, তোমার চিন্তা কিসের?”
-“ওহহো….!”
-“ওহহো মানে? শুধু একটা ছবি দিলেই হবে, বিড়াল দেবে না?”
-“আমি ঠিক করেছি শাকিব বাংলাদেশ থেকে বিড়াল নিয়ে যাবো না। ওখানে গিয়ে বিড়াল কিনে ফেলবো।”
-“ও দেশে গিয়ে বিড়াল কিনবে মানে? ওরা তোমাকে ভুলভাল ব্রিড দিয়ে দিলে? আমাদের দেশের বিড়াল খাঁটি বিড়াল ভাবী৷”
-“তুমি যে কীসব বলো না শাকিব। বিড়ালের আবার খাঁটি ভেজাল কী? বিড়াল তো বিড়ালই। চুপ করে খাও তো। বিড়াল বিড়াল করে আমার খাওয়াটাই শেষ করে দিচ্ছো তুমি।”
লায়লা নিচু হয়ে পাইপটা তুললো। বেসিনে গিয়ে ধুয়ে নিয়ে এলো।
শাকিব আরো দু-বার প্লেটে খিচুড়ি নিলো। খাওয়ার পর আয়েশী স্বরে বললো,
-“কাঁচা সুপারি দিয়ে পান খেতে ইচ্ছে করছে ভাবী। তোমার আব্বাসকে ডাকো।”
লায়লা আব্বাসকে ডেকে পানের ব্যবস্থা করলো।
শাকিব পান মুখে দিয়ে চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে রইলো বেশ অনেকক্ষণ।
-“এখন বলো তো ভাবী, তুমি কী নিয়ে এত ভেবে মরছো?”
লায়লা পুরোপুরি হকচকিয়ে গেল। সে ভেবেছিল শাকিব ঘুমিয়ে পড়েছে। অথচ কথা বলছে স্পষ্ট আর ঝরঝরে গলায়।
-“আমি কিছুই ভাবছি না। তোমার কথা বলো, অফিসে এলে যে হঠাৎ করে?”
-“তোমার জন্যই তো এলাম। হুট করে মনে হলো, তোমার আমাকে দরকার। তাই চলে এলাম।”
লায়লা নিজের সামনে ল্যাপটপ খুলে মনোযোগী হলো। কোনোকিছু নিশ্চিত না জেনে শাকিবকে এক্ষুনি কিছু বলা যাবে না। নিজের একমাত্র বড়ভাই সম্পর্কিত সন্দেহজনক অপ্রিয় কথা কারোরই শুনতে ভালো লাগে না। শাকিব ব্যাগ খুলে ক্যামেরা বের করলো। বেশ কয়েকটা ছবি তুললো লায়লার। ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললো,
-“খাওয়া, বিশ্রাম সবশেষ আমার। এখন আল্লাহ হাফেজ।”
-“চলে যাচ্ছো না কি?”
-“হুঁ।”
লায়লা ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ালো। শাড়ির আঁচলটা পেছনে হাত মুড়িয়ে গলায় বুলালো। শাড়ির রঙের মতোই পুরো মুখটাতে অপূর্ব কোমল আভা। ঠোঁটের নিচের কালো তিলটা যেন এক রাজ্য সৌন্দর্য নিয়ে ভাসছে।
-“তোমাকে গোলাপি জাদুর মতো দেখতে লাগছে ভাবী। এই জাদুময়ী মুখটাতে চিন্তার ছাপটা মানাচ্ছে না ভাবী।এখনো সময় আছে, কী নিয়ে চিন্তিত, বলে ফেলো। আগামী দু’দিন আমায় পাবে না।”
লায়লা ক্লান্ত স্বরে বললো,
-“আমি কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত নই, শাকিব। চলো তোমাকে এগিয়ে দিই।”
লিফটে ঢুকেই শাকিব বললো,
-“তোমার উপহার দেওয়া শার্ট পরে তোমায় দেখাতে এলাম অথচ খেয়ালই করলে না। তোমায় হিন্ট দিতে খিচুড়ির অযুহাতে শার্টের কথাও টানলাম, তাও তুমি বুঝলে না। আমি খুব কষ্ট পেয়েছি ভাবী।”
লায়লা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
-“ওহ! এটা আমার দেওয়া না কি? ওপস! আসলে এত কাজের চাপে ছিলাম। বাই দ্য ওয়ে তোমাকে সুন্দর লাগছে।”
বাইকে উঠে শাকিব হ্যালমেট পরবার আগে তাকালো।
-“ভাবী আগামী কয়েকদিন আমায় বাড়িতে পাবে না। এক বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছি। ঢাকার বাইরে। ফোনেও পাবে না। মা’কে ম্যানেজ করো প্লিজ।”
-“ঢাকার বাইরে? এই সময়ে? কেন? ফোনেও পাবো না?”
-“তোমার কোনো দরকার আছে? সেরকম ইমার্জেন্সি কিছু হলে বলো। আমি প্রোগ্রাম ক্যানসেল করবো।”
লায়লা একমুহূর্ত ভাবলো। শাকিব নিশ্চয়ই ফটোগ্রাফির কোনো প্রজেক্টে কাজ করতে ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলার মানে হয় না।
-“না না একদম না।”
-“ভালো করে ভেবে দেখো ভাবী।”
-“উঁহু।”
লায়লা বিষন্ন তাকিয়ে হাত নাড়লো। তার দৃষ্টিতে ভয় এবং দুশ্চিন্তা। সে কি শাকিবকে বলবে মার্লিনা মেট্রিন নামে তোমার ভাইয়ের একটি পরিচিত মেয়ে আমায় ফোন করেছে। বলেছে, হাসিব বিষয়ক স্পর্শকাতর কথা বলবে। লায়লার ভাবনার মাঝেই শাকিব বাইক নিয়ে হুশ করে বেরিয়ে গেল।
লায়লা আর অফিসে ফেরত গেল না। নিচে দাঁড়িয়েই আব্বাসকে ব্যাগ নিয়ে আসতে বললো। আজ আর অফিস করবে না সে। বাড়ি গিয়ে বরং মিমির দাঁতের ছবি তুলে হাসিবকে পাঠানো যাক। মেয়ের দাঁত দেখবার জন্য বেচারা কত আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। আহারে!

লায়লা গাড়িতে উঠে বসতেই শাকিবের মেসেজ এলো লায়লার ফোনে,
“ভাবী তোমাকে আজ দুটো মিথ্যে কথা বলেছি। এক. আমার গায়ের শার্টটা তোমার দেওয়া নয়। তুমি ঠিক কতটা এবসেন্ট মাইন্ডেড সেটা জানতে বললাম। দুই. এই মিথ্যেটা তোমায় জানাতে ইচ্ছে করছে না।”

লায়লা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হাসিবকে নিয়ে এত ভয় কেন করছে তার? কেন?

~চলবে~

#তৃধাআনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here