#বসন্তের_এক_সন্ধ্যায়
#পর্ব_৫
#Sumaiya_Sumu(লেখিকা)

“ডাক্তার বললেন, ইশান মাথায় আ’ঘা’ত পেয়েছে, প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে। ৭২ ঘন্টার মধ্যে যদি জ্ঞান না ফেরে তাহলে ইশান কো’মা’য় চলে যাবে। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি”।

“এই বলে ডাক্তার চলে গেলেন। আমার মাথায় যেনো কিছুই ঢুকছে না। ইশান আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? না, না এসব আমি কি ভাবছি। ইশান আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। আমি ইশানকে সুস্থ করে তুলবো’ই”।

“ইশান কে বাচানোর জন্য আমার কাছে একটাই উপায় আছে। তা হলো দোয়া। আমি বাড়ি ফিরে এসে নামাজে দাড়িয়ে গেলাম। আল্লাহর কাছে উগড়ে দিলাম মনের সব কথা। ইয়া আল্লাহ তুমি ইশান কে সুস্থ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও। যদি তুমি ইশান কে কেড়েই নিবা তাহলে কেন ওর প্রতি আমার এত ভালোবাসা, মায়ার সৃষ্টি করলে মাবুদ। আমি তো তোমার ভরসায় ইশান কে ভালোবেসেছি।
আল্লাহর কাছে বলছি আর চোখের পানি মুছছি। আমাকে কান্না করতে দেখে বাড়ির সবাই রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কত উসিলায় যে আল্লাহর কাছে ইশানের সুস্থ কামনা করে দোয়া করেছি। তার আমি আর আমার রব জানেন। কান্না করতে করতে এক সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে জায়নামাজেই শুয়ে পড়ি। মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। চোখে মুখে পানি দেন। আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি চোখ মেলে তাকাই। চোখের সামনে ভাসমান হয় ঘুরন্ত সিলিং ফ্যান। আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। বুকের বা পাশে ব্যথা করছে। হারিয়ে ফেলার ভয় আমাকে হ্রাস করছে ক্রমশ। শরীর কাপছে। ইশান, ইশান আর ইশান। আমার পৃথিবী জুড়ে এই একটা মানুষ কেই তো ভালো বেসেছিলাম।তাকে ছাড়া থাকা যে আমার পক্ষে সম্ভব না। ঘন্টা খানেক পর হসপিটাল থেকে কল আসে।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই কলিজা শুকিয়ে গেল। কোনো দুঃসংবাদ না তো! কাপা হাতে ফোন তুললাম। কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম ইশানের জ্ঞান ফিরেছে। আমার শরীর শিরশির করে উঠলো। কাপা গলায় ‘আমি এখুনি আসছি’ বলে কল কে’টে দিয়ে ছুটে গেলাম হাসপাতালে”।

“আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে ইশান তার বাবা-মার সঙ্গে কথা বলছে। আমাকে দেখে ইশানের আম্মু বললো, ‘রোদেলা মা এদিকে আসো। দেখো আল্লাহর রহমতে ইশান সুস্থ হয়ে গেছে। তোমরা কথা বলো আমরা ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসছি’। তারা চলে যাওয়ার পর আমি ইশানকে জিজ্ঞাসা করলাম..

‘ এখন কেমন লাগছে তোমার’?

…………

“সে কিছুই বললো না। হয়তোবা একটু বেশিই অভিমান করেছে আমার উপর। এখন অভিমান টা তো আমাকে’ই ভা’ঙা’তে হবে কারণ ইশান তো আমার প্রথম প্রেম আর প্রথম ভালোবাসা তাকে ছাড়া আমি তো এখন নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না। আমি আবার ইশানকে বললাম…

‘তুমি কি কথা বলবে না আমার সাথে? আমাকে এইভাবে দূরে সরিয়ে দিতে পারছো? তোমার এই অভিমান, তোমার কথা না বলা আমাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে তুমি কি তা বুঝতেছো না’?

‘এবার ইশান বললো, কেন? আমি কথা না বললে তোমার কি? আর তোমার প্রতি আমার কোনো অভিমান নেই। আমি একাই ঠিক আছি। সেই তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলেই যাবে তাই কথা বলেই বা কি হবে’?

‘ইশান আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে আসিনি। কিছু কথা বলতে চাই তোমাকে। ইশান তোমার বৃষ্টিবিলাসিনী তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তোমার মায়ায় আসক্ত হয়েছে সে। তুমি কি জানো তুমি হীনা একটি প্রহর আমার কাছে হাজার দিনের সমান। তোমাকে ছাড়া তোমার বৃষ্টিবিলাসিনী অসম্পূর্ণ। ইশান তোমাকে ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। তুমি কি এখনো তোমার বৃষ্টিবিলাসিনীর উপর রাগ করে থাকবে? কথা বলবে না আমার সাথে’?

“ইশান অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে”।

‘কি হলো ইশান’?

‘তুমি সত্যি বলছো? তুমি আমাকে সত্যি ভালোবাসো’?

‘হ্যা ইশান খুব ভালোবাসি তোমাকে। প্লিজ আমাকে আর দূরে সরিয়ে রেখো না’।

‘ধুরর পা’গ’লী,তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখলে কি আমি ভালো থাকবো’? তুমি জানো সেদিন তুমি রাগ করে চলে যাওয়ার পর আমি কত কষ্ট পেয়েছিলাম’।

‘স্যরি ইশান’।

‘ইশান মুচকি হেসে, কিন্তু এখন জানো তুমি আমার কাছে ফিরে এসেছো, আমার সব কষ্ট চলে গেছে’।

‘হয়েছে, হয়েছে। আর কথা বলবে না। এখন একটু চুপ করে ঘুমাও দেখি। তোমার রেস্ট প্রয়োজন’।

‘আমি ঘুমালেই তো তুমি চলে যাবে’।

‘কোথাও যাবো না। তুমি ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখতে পাবে। এখন একটু ঘুমাও দেখি’।

“ইশান আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়লো। আর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবতে লাগলাম, একটা মানুষ কতটা ভালোবাসতে পারে, সেটা সত্যি ইশানকে না দেখলে জানতাম না। ওর পা’গ’লা’মো প্রমাণ করে, মানুষটা আমাকে কি পরিমাণ ভালোবাসে। না, ওকে আর কখনো কষ্ট পেতে দিবো না। এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে ইশানের বুকের উপর মাথা রেখে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম”…

#চলবে…

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here