#ইস্ক
#সাদিয়া
১১
ভরদুপুরের রোদ মাথায় এসে লাগছে। তপ্ত হাওয়া চারিদিকে বইছে। এই গরমে তিতিল রান্নাঘরে রান্না করছে। শরীর ঘামে অনেকখানি ভিজে গেছে কাপড়। মুখে ঘামের কণা গুলি বিন্দু বিন্দু হয়ে জায়গা দখল করেছে। ভেতর থেকে গরম লাগছে তিতিলের। ফ্রিজ থেকে পানি খেয়ে পিছন ঘুরতেই দেখতে পেল ইয়াদ কে। তার মুখে এখনো পানিটা রয়ে গেছে। ইয়াদ নেশাক্ত চোখে তাকিয়েছে তার দিকে। কোমরে ওড়না পেঁচানো, চুল গুলি উপরে কাকরা দিয়ে বাঁধা সামনের কিছু চুল এলোমেলো হয়ে রয়েছে। ইয়াদের যেটায় চোখ বেশি পড়েছে তা ওই ঘামযুক্ত মুখ। মুখ তখনো লাড্ডুর মতো ফুলে ছিল মেয়ের। ইয়াদ মুচকি হেসে ফেলল। তিতিল ঢোক গিলল। ঠোঁট উল্টে চুলার কাছে গেল।
ইয়াদ আর রেহেলা বেগম সোফায় এসে বসেছেন। গরমে নাজেহাল অবস্থা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রেহেলা বেগম বললেন,
“ইয়াদ ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানি আন বাবা। কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে গরমে। আল্লাহ মরার পর কি করে সহ্য করব এত গরম যখন সূর্য থাকবে মাথার উপরে।”
ইয়াদ এগিয়ে গেল কিচেনের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তিতিল কে। তিতিল একবার তাকিয়ে আবার রান্নায় চোখ দিয়ে তরকারি নাড়তে লাগল। ইয়াদ ফ্রিজ থেকে পানি নামালে তিতিল নিজের জায়গায় দাঁড়িয়েই বলল,
“আম্মা আপনাকে কি শরবত করে দিব?”
তিতিলের ব্যস্ততার কারণে তিনি বলেন নি। কিন্তু শরবতটা খেলে আত্মা জুড়াত উনার। বললেন,
“দিলে ভালো হয়রে মা।”
“আপনি বসেন আমি করে নিয়ে আসছি।”
ইয়াদ ফিসফিস করে বলল,
“তোমার হাতের ঠান্ডা শরবত খেয়ে আমার মন কেও তৃপ্ত করো প্রিয়।”
মুখ ভেংচে তিতিল ফ্রিজ থেকে পানি আর লেবু নিল। ইয়াদ মুচকি হেসে চলে গেছে ড্রয়িংরুমে।
“আন্টি দেখো তরকারি টা যেন লেগে না যায়। নাড়াচাড়া দিও।” ফরিদা আন্টি কে এ কথা বলে তিতিল শরবত বানাতে চলে গেল।
নরমাল ফ্রিজের পানির সাথে তিতিল অনেকটা লেবুর রস নিয়েছে। বেশি গরমে লেবুর শরবত টাই ভালো লাগবে। অল্প চিনি আর বক্স থেকে টেস্টিস্যালাইন নিল সে। গরমে শরীরের ক্লান্ত ভাব টাও এতে দূর হয়ে যাবে। আবার খেতেও ভালো লাগবে।
“কি খাচ্ছো তোমরা?”
“গরম গরম চা খাচ্ছি খাবি?”
“এই গরমে তোমরা চা খাচ্ছো ভাইয়া?”
“কোথায় গরম? ঠান্ডায় ভাসছি আমরা।”
হিমা ভাইয়ের কথার মানে বুঝে ঠোঁট মুচড়াল। তিতিল কে বলল,
“তিতিল আপু কি বানাচ্ছো? লাচ্চি?”
“তোর ভাবি শরবত বানাচ্ছে।”
হিমা কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকাল ইয়াদ। তিতিলের দিকে চেয়ে দেখল তিতিল শরবত রেখে তার দিকে গোল চোখে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ পাশ ফিরে মায়ের মুখ দেখল। তিনি এতক্ষণ মুচকি হাসছিলেন ছেলের তাকানো দেখে এবার শব্দ করে হাসলেন। হিমাও নীরবে হাসছে। তিতিল বেশ লজ্জার মুখে পড়ে গেছে। লোক টা তাকে পদে পদে এমন বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।
ইয়াদ হাসার চেষ্টা করল মায়ের দিকে তাকিয়ে। তারপর মাথা চুলকালো। ইনাও দুপুরে খাওয়ার জন্যে চলে এসে।
“কিছু কি হয়েছে? সবাই এখানে যে।”
“কি হবে আপু? সবাই তিতিল আপুর লেবুর স্পেশাল শরবত খাওয়ার জন্যে বসে আছে।”
“তাহলে তো ভালোই হবে।”
“আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?” বললেন রেহেলা বেগম।
“যা গরম। আর টিকে থাকা যায় না।”
“ঠিকি বলেছিস। তিতিল তোর হলো?”
“হ্যাঁ আম্মা হয়ে গেছে।”
তিতিল শরবত নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। সবাই কে দেওয়ার পর গ্লাস নিয়ে ইয়াদের কাছে গেলে। মিষ্টি করে হাসল ইয়াদ। তিতিল সবটা আবেগ ঝেড়ে দিয়ে সে হাসির দিকে তাকালো এক পলক। সময় দীর্ঘস্থায়ী করার পূর্বেই চোখ নামিয়ে নিল সে।
তীক্ষ্ণ চোখে তাদের দেখল ইনা। হঠাৎ তার মা বলে উঠলেন
“কি রে ইনা? শরবত হাতে কি ভাবছিস?”
বলে চেয়েও ইনা কথা ঘুরিয়ে বলল “কিছু না মা খাও।”
শরবত খেয়ে সবাই বেশ প্রশংসা করা তিতিলে।
“তোমার হাতের ওই শরবত তো আমি কনকনে ঠান্ডাতেও খেতে পারব তিতিল। তবুও হৃদয়ে আমার উষ্ণই থাকবে ততক্ষণ যতক্ষণ তোমাকে জয় করতে না পারি।”
“কিরে ইয়াদ কি বিড়বিড় করছিস?”
ঘোর কাটল তার। জবাব দিল,
“কিছু না মা। আমার একটা কথা ছিল।”
“কি কথা?”
“…
“কিরে ভাই বল।”
“আমি ভেবেছি আজ ডিনার টা বাহিরে করব।”
“বাহিরে মানে?” কপাল কুঁচকে বললেন রেহেলা বেগম।
“কোনো একটা রেস্টুরেন্টে।”
ইয়াদ কথা শেষ করতেই হিমা লাফিয়ে উঠল। চঞ্চলতায় ভরপুর এই মেয়েটা বাহিরে খাওয়ার কথা উঠলেই হাতে চাঁদ সূর্য পেয়ে বসে।
“সত্যি ভাইয়া? আজ তুমি আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে?”
ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ সবাই যাবে।”
“ইয়ে কি মজা।”
ইনা বলল,
“তোর টাকার ট্রিট?”
“হ্যাঁ আপু।”
সে আবার জিজ্ঞেস করল,
“কি উপলক্ষে?”
ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকল। তিতিল উত্তর শুনার জন্যে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখে চোখ পরতেই মুখের গঠন কঠিন করে ইনার দিকে তাকাল।
“ব্যস এমনি। সবাই রাতে তৈরি থেকো।”
তিতিল একটু চুপ থেকে বলল,
“আম্মা আমি কোথাও যাবো না।”
“কেন রে তিতিল? সবাই মিলে যাবো ভালোই লাগবে।”
“এমনি যাবো না আম্মা। আর আমার শরীর টাও ভালো লাগছে না।”
“তোমাকে একা রেখে যাবো কি করে আমরা?”
ইনার কথায় তিতিল জবাব দিল,
“কিছু হবে না আপু তোমরা যাও।”
হিমা বলল,
“কেন যাবে না আপু? তুমিও চলো না।”
“আমি যাবো না। তোমরা যাও হিমা।”
ইয়াদ শক্ত কন্ঠে বলল,
“সবাই এত করে বলার পরও কি তুমি শুনবে না তিতিল?”
সে জবাব দিল না ইয়াদের কথায়। শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আম্মা আমার মনে হয় আপনার ছেলের এই টুকও খেয়াল নেই আজ একটু বেশি গরম। এই অবস্থায় বাহিরের খাবার শরীর কে আরো খারাপ করতে পারে। আজ না গেলেই ভালো হয়।”
সবাই কিছুক্ষণ চুপ থাকল। রেহেলা বেগম বললেন,
“তিতিল ঠিক কথাই বলছে আজ না কাল সবাই মিলে যাবো।”
ইনাও রাজি হলো এতে। হিমা আর ইয়াদের মুখ শুকিয়ে গেছে। হিমা মন খারাপ করে উপরে চলে গেল। তিতিল চুপচাদ দাঁড়িয়ে ভাবতে বসেছে,
“আজ তো বললাম শরীর খারাপ। কাল কি বলে আটকাব? দূর একটা কিছু বলে সামলে নিব না হয়।”
ইনা ফ্রেশ হওয়ার জন্যে উপরে গেল। ধীর পায়ে রেহেলা বেগমও গেলেন গোসল করতে। ছেলে নিচে এনেছিল বলে এসেছেন। নয়তো উপরেই থাকতেন তিনি। আর উপরে যে গরম! সবাই চলে গেলে ড্রয়িংরুমে তিতিল আর ইয়াদ। ইয়াদ বসে আছে সোফায় আর তিতিল কি যেন ভাবছে।
“এটা একদম ঠিক হয়নি।”
তিতিল তাকাল ইয়াদের দিকে। ইয়াদের মুখের গতি দেখে হাসি পাচ্ছে তার বড্ড। ঠোঁট চেঁপে রেখেছে চেষ্টায়।
“ইচ্ছা করছে তোমায় এখন এই রোদে নিয়ে হাটাই।”
তিতিলের আরো হাসি পেল। হাসি চেঁপে রাখতে না পেরে তিতিল রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। যাওয়ার আগেই পিছন ফিরে তাকাল একবার। ঠোঁট টিপে হেসে আবার ঘুরে গেল সে। আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ। মাথায় কিছু আসছেই না ওইটুক একটা মেয়ে তাকে নির্বোধ বানিয়ে চলে গেল। মুখ খানিক হা হয়ে আছে ইয়াদের। চোখে বিস্ময় উবছে পড়ছে।
—-
রাতের খাওয়া দাওয়া করে তিতিল বাকি কাজ সেরে নিল। ইয়াদ তখন ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেছে। তিতিল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। কেমন করে তাকচ্ছিল তার দিকে। ঠোঁট উল্টে মুখ ভেংচে তিতিল বাকি তরকারি নরমালে রেখে দিল। মাঝ রাতে তার বড্ড খিদে লাগে। তখন বিস্কিট খেলে গ্যাস হয়। মিষ্টি জিনিসটা তার ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে। আবার ফ্রিজ খুলে মিষ্টি দেখে মুচকি হাসল তিতিল। দুইটা সন্দেশ, একটা মিষ্টি আর ফ্রিজের পানি নিয়ে তিতিল ঘরে গেল। এইটুকতেই পেট ভরে যাবে তার। খিদে থাকলে তার ঘুম হয় না একদম।
হেসে তিতিল ঘরে গেল। হন্তদন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে পিছন ফিরতেই তিতিল চমকে গেল। শুকনো ঢোক গিলে তিতিল বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিষ্পল চোখে।
চলবে♥