#আমার_প্রিয়দর্শিনী_তুমি(০৫)
#বোনাস_পার্ট
#Israt_Biney_Ishaque(লেখিকা)
(কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ)
তাকিয়া রুমটা দেখতে থাকে চোখ ঘুরিয়ে।বেডের ডান পাশে ছোট রাউন্ড শেলফ।বাম পাশে কনসোল টেবিল।যার উপর খুব সুন্দর টব।টবের ফুল গুলো যেন জীবন্ত কদম ফুল মনে হচ্ছে। রুমটা দেখেই বুঝা যায় রুমের মালিক শৌখিন একটা মানুষ।
এছাড়া রুমে আছে মেহগনি উডেন স্লাইডিং ডোর আলমারি, ফোল্ডিং হ্যাঙ্গার, শু র্যাক। সবকিছুই সুন্দর।রুম ভর্তি আসবাবপত্রে। তবুও রুমটা বড় মনে হচ্ছে।চারদিকে সবুজ জর্জেট ডাবল পার্ট পর্দা।পর্দাগুলো মৃদু দুলছে।
ঝুলানো সবুজ জর্জেট ডাবল পার্ট পর্দা দু’হাতে সরিয়ে হারিয়ে যায় তাকিয়া।
_______
“অতিত”,
-“দোস্ত ছেলেটা তোর ছবি তুলল,তুই কিছু বললি না কেন?
তাকিয়া আসেপাশে চোখ বুলিয়ে বললো, -“কোন ছেলে ছবি তুলল?
-“আরে গাধি এখন কোথায় পাবি?আমি আসতে আসতে তো চলেই গেল।
-“আচ্ছা বাদ দে। এই দেখ কি সুন্দর কিউট একটা বেবি ডগ। আমি ভাবছি এই “বেবি ডগ’টাকে” আমার সাথে নিয়া যামু!
-“হোয়াট? এই কু’ত্তা’টাকে তুই গাড়ি করে নিয়ে যাবি?
-“সুমু একদম ওকে কু’ত্তা বলবি না।
-“কু’ত্তা কে কু’ত্তা বলবো না তো কি বলবো?
-“ওকে ডিওজি সাহেব কইবি(বলবি)।
-“ইশশ,এই কু’ত্তাকে ডিওজি সাহেব বলতে আমার ভয়েই গেছে।
-“আরে গাধি ডিওজি সাহেব মানে বুঝস?
-“কি?
-“DOG(ডিওজি)
-“এ্যা..
-“হা.হা.হা.হা…
-“হইছে এতো হাসতে হবে না।তুই যদি এই কু’ত্তা কে সাথে নেস তাহলে স্যার ম্যাম’রা আমাদের আর গাড়িতে যায়গা দিবে না।
২০২০সাল,
ফ্রেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ,
তাকিয়া’র কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে, গাজীপুর “মেঘবাড়ি” রিসোর্টে নেওয়া হয়।
সবুজ রং তাকিয়া’র ভিষন পছন্দ। তাকিয়া নিজের সব কিছুতে সবুজ রঙ টা রাখার চেষ্টা করে। সেদিনও এর ব্যাতিক্রম হয়নি।
সবুজ জর্জেট গাউন,লম্বা হেয়ার গুলো পিছনে ছেড়ে দেওয়া,চাপা নাক,গোলাপি ঠোঁটের আকৃতি, মসৃণ গাল,চওড়া কপালে কিছু বেবি হেয়ার ছরিয়ে আছে। খুব আবেদনময়ী লাগছিল তাকিয়া’কে।
একটু দূরে দেখলো ছোট্ট একটি “বেবি ডগ”। তাকিয়া দৌড়ে যায় সেখানে। হাতে থাকা চকলেট এর কিছু অংশ ডগ’টাকে দিল তাকিয়া।ডগ সাহেব চকলেট এর অংশ টা শুঁকে,তাকিয়া’র দিকে তাকিয়ে রইলো। তাকিয়া বললো, কিরে খাবি না?ডগ সাহেব তার ডাগরডাগর কাজল কালো আঁখি মেলে তাকিয়েই রইলো। তাকিয়া বুঝতে পারলো ডগ সাহেবের চকলেট পছন্দ হয়নি।তাই আবার বললো আচ্ছা তুই কেক খাবি?
এবার ডগ সাহেব লেজ নেড়ে চলেছেন। তাকিয়া হেসে বললো, বুঝছি তুই কেক খাবি। তখনি সুমাইয়া এসে বললো, কোন এক ছেলে নাকি তাকিয়া’র ছবি তুলেছে।
______
বর্তমান,
সেই ছবিটাই এখন, সবুজ জর্জেট পর্দার আড়ালে লুকায়িত। তাকিয়া’র রাইট সাইট ছবিতে স্পষ্ট ভাবে ফুটে আছে!সাথে সেই ছোট্ট ডগ সাহেব ও আছে।ছবিটা খুব সুন্দর হয়েছে।ছবিটা দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে ক্যামেরা ম্যান একজন দক্ষ ফটোগ্রাফার। সবুজ প্রকৃতির মাঝে এক সবুজ পরি কে ক্যামেরা বন্দি করে, ফ্রেমে সাজানো হয়েছে।
তাহলে কি সেই ছেলেটি ইসরাক মুনতাসির ছিল?তাই তো হবে!এটা তো স্পষ্ট। তাহলে কি ইসরাক আগে থেকেই তাকিয়া’কে চিনতো? বিয়েটাও কি পূর্ব পরিকল্পনা ছিল?
আর ভাবতে পারছে না, মাথা কেমন ঝিমঝিম করছে তাকিয়া’র।
রুমের দরজা আগের মত লক করে,নিচে নেমে আসল। টুম্পাকে রান্না ঘরে দেখে এগিয়ে গেল তাকিয়া। টুম্পা সবার জন্য চা আর পাকরা তৈরি করছে। সুখী চায়ের কাপ নামিয়ে সাজাচ্ছে। তাকিয়া বললো,
-” আমি তোমাকে হেল্প করি ভাবী?
-“আচ্ছা,তুমি চা’টা একটু দেখ। আমার হাত তো আবদ্ধ হয়ে আছে।
-“চায়ে কি সব কিছু দেওয়া হয়ে গেছে ভাবী?
-“চিনি দেওয়া বাকি। একটা কাঁপে চা নিয়ে বাকি গুলো তে চিনি দিয়ে দাও।
-“আচ্ছা।
আরিসা দৌড়ে এসে বললো,
-“মেজ ভাবীমণি তোমার ফোনে কল আসছে। তাকিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখে সুমাইয়া কল করেছে। রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে তাকিয়া সুমাইয়ার সাথে কথা বলতে মগ্ন হয়ে যায়। এদিকে চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বলে টুম্পা সুখীকে দিয়ে সবার জন্য চা পাঠিয়ে দিল। চিনি ছাড়া চায়ের কথা বেমালুম ভুলে গেল!
-“সুমু তুই আগে থেকেই উনাকে চিনতি তাই না?
সুমাইয়া দুষ্টুমি করে বলল, উনি টা কে?
-“একদম ফাজলামি করবি না।
-“দোস্ত আমি সরি।
-‘আমার কথার জবাব দে?
-“ইসরাক ভাইয়া তোকে অনেক ভালবাসে,তাই ভাইয়া কে হেল্প করেছি। তুই আমাকে ভুল বুঝিস না দোস্ত।
-“তোর সাথে কেমনে পরিচয় উনার?
-“তাকিয়া তোর মনে আছে? কলেজে একবার আর্মি অফিসার এসেছিল,সেদিন তুই সেন্সলেস হয়ে তিন’তলা থেকে দুতলায় পড়ে গিয়েছিলি?
-“হুম, প্রেসার-লো হওয়ার কারণে এমন হয়েছিল।
-“হুম, সেদিন তোর মাথা ফেটে অনেক ব্লিডিং হয়েছিল। ইসরাক ভাইয়া তোকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলেন!
-“কই আমারে তো বলিসনি?
-“ইসরাক ভাইয়া নিষেধ করেছিল,তাছাড়া আন্টি আংকেল ও চলে আসছিল।তাই ভাইয়া চলে যায় ওখান থেকে।
-“ওহহ।
-“হুম।
-“আর আমাকে যে কল আর ম্যাসেজ দিয়ে বিরক্ত করতো!এটাও কি উনি ছিল?
-“কই না….
তাকিয়া সুমাইয়ার কথা পুরোপুরি শুনতে পারলো না। রাগারাগী’র শব্দ শুনে বসার ঘরে দ্রুত পায়ে আসলো। ইসহাক ব্যাপারি চেঁচিয়ে কথা বলছেন টুম্পার সাথে!
-“বড় বউমা তুমি জানো না আমি চিনি খাই না তাহলে চায়ে এতো চিনি দিলে কেন?
-“ছোট আব্বা,,,,
টুম্পা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না,তাই চুপ করে রইলো,যা দেখে ইসহাক ব্যাপারি আরো রেগে গেলেন। তাকিয়া ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
-“ছোট আব্বা,চা আমি বানাইছি। ভাবীর কোন দোষ নাই।
ইসহাক ব্যাপারি আরো ক্ষীপ্ত গলায় বললেন,
-“আমার ব্যাপারে যখন জানোই না, তখন আগ বাড়িয়ে কাজ দেখাতে গেলে কেন? বাড়িতে কি মানুষের অভাব পরেছে,যে তোমাকে চা বানাতে হবে। চেনা নেই জানা নেই হুট করে এ বাড়িতে চলে এলে।তোমার বাবা মা তোমাকে কি শিক্ষা দিয়েছেন,তোমাকে দেখেই বুঝা যায়!
খুব উচ্চস্বরে কথা গুলো বললেন, ইসহাক ব্যাপারি।তারপর গটগট পায়ে নিজের ঘরে চলে গেলেন। ইসহাক ব্যাপারির এরকম হুটহাট রেগে যাওয়া নিয়ে সবাই অভ্যস্ত। তিনি একজন ব্যাংক ম্যানেজার। অফিসে যেদিন কাজের প্রেসার বেশি হয়,সেদিন এভাবে অল্পতেই রেগে আগুন হয়ে যান।তার উপর ডায়বেটিস এর প্রেসেন্ট।ডায়বেটিস রোগীদের রাগ একটু বেশিই থাকে।
তাকিয়া’র চোখ বেয়ে অজস্র নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে, খুব কষ্ট হচ্ছে। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারছে না। গলায় এসে সব আটকে যাচ্ছে। টুম্পা কিছু বলতে যাবে তখন দৌড়ে উপরে,তাকে দেওয়া রুমে চলে যায়।
নিলুফার বুকটা কেমন পুরে যাচ্ছে। তাকিয়া’র কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারছেন না। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল তাকিয়া’র রুমের দিকে।
সাহারা বললেন, একজনের চায়ে চিনি দিয়া বইরা রাখছে, আরেকজনের টাতে চিনি’ই দেয় নাই। টুম্পা বুঝতে পারলো,আসলে সেই ভুল টা করেছে। তাকিয়া’কে জিজ্ঞাসা করে তারপর চা পরিবেশ করা উচিৎ ছিল তার।
_______
কারো স্পর্শে তাকিয়া ঘুরে তাকায়,দেখে নিলুফা। তিনি স্নেহ ভরা কন্ঠে বললেন,
-“খুব কষ্ট হচ্ছে “মা”?
তাকিয়া আবেগে আপ্লুত হয়ে,এবার শব্দ করে কেঁদে দিল। নিলুফা নিজের বুকে তাকিয়া কে পরম আবেশে জরিয়ে নিল। তাকিয়া’র কান্নার বেগ আরো কয়েক গুণ বেড়ে গেল। নিলুফা অনেক শান্তনা বাণি শুনিয়ে ও থামাতে পারছে না। তাই একটু কঠিন স্বরে বললো,
-“এই মেয়ে?এতো বড় হইয়া গেছস।শ্বশুর বাইত অব্দি আইয়া পরছোস। এহনো যদি ছোড মাইনষের মতো কান্দোস লোকে কি কইবো?
তাকিয়া নাক টেনে টেনে বললো,
-“আমি একটা ভুল করাতে, ছোট আব্বা এমনে বকলো কেন?আজ অবধি কেউ আমারে এমনে বকে নাই ছোট আম্মা।
আবার কাঁদতে শুরু করে দিল।
-“বোকা মেয়ের কথা শুন?শ্বশুর বাইত এরকম কতো কতাই হুনতে হয় মেয়েদের। আমি যহন এ বাইত আই তহন রানতে-বারতে(রান্না-বান্না) জানতাম না। আমার ননাসের মেয়েরা পর্যন্ত আমারে কতা হুনাইতে(শুনাতে)ছাড়তো না। তাইলে দেখ, এহনো তো শ্বশুর বাইত খাইয়া যাইতাছি। তবে একটা কতা শ্বশুর বাড়ির লোকজন যেমন কতা হুনাইবো,তেমনি হেরাই আবার কাছে টাইনা নিব।
তাকিয়া মাথা তুলে বললো,
-“এহন যেমন তুমি কাছে টেনে নিছ?
-“ঠিক তাই।
নিলুফা তাকিয়া’র কপালে চুমু এঁকে দিল। পিছন থেকে এবি এসে বললো,
-“এই দুদিনের মেয়েটাকে তুমি এতো আদর করতাছো আম্মা?কই আমারে তো এতো আদর করো না। সারাজীবন শুধু ছোট মেয়ের জন্যই কেঁদে গেলে।
-“আয় বাবা মায়ের কাছে আয়।
এবি কাছে যেতেই,এবি কে ও জরিয়ে নেয় নিলুফা। তাকিয়া কোমরে হাত রেখে বললো,
_তুই এত হিংসুটে কেন রে?
নিলুফার কোমল মন নাড়া দিল,তার ছোট্ট ইসু ও যে এরকম ভঙ্গিতে কথা বলতো!
এবি বললো,
_তুমি তো আম্মার মেয়ে না তাইলে কেন আমার আম্মার আদর নিবে?
তাকিয়া চুপসে গেল, কিছু বলতে পারলো না।তার আম্মুও যে তাকে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু নিলুফার বুকে যে শান্তি অনুভব হয়েছে।কাকলিও সবসময় তাকিয়াকে এভাবে জরিয়ে রাখত।কই এরকম অনুভব তো কখনো হয়নি?
নিলুফা ছেলে কে কঠিন গলায় বললেন,
-“আবু বকর এভাবে কাউরে,কইতে হয়না।ও তোর ভাবীমণী হয় না?ও তো আমার মেয়ের মত।
-“এক মেয়ের জন্য তুমি আমারে অবহেলা করে বড় করছো।আর কোন মেয়ের জন্য আমি তোমাকে হারাতে চাই না আম্মা!
এবি রেগে বেড়িয়ে গেল, নিলুফা চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তাকিয়া চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো কেদ না আম্মা, ইনশা আল্লাহ,আল্লাহ পাক সবকিছু ঠিক করে দিবেন।
_______
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাকিয়া’র। পাশে আরিসা বেগুরে ঘুমুচ্ছে।এপাশ ওপাশ করেও কিছুতেই ঘুম আসছে না,তাই ঠিক করলো ইসরাক এর ঘরে যাবে। খুব ইচ্ছে করছে মানুষটার জিনিস পত্র গুলো ছুঁয়ে দেখতে।
বসার ঘরে লাইট জ্বলছে, সেই আলোর রেখা কিছুটা উপরে বেলকনিতে এসেছে। মৃদু আলোতে এগিয়ে যাচ্ছে তাকিয়া।যেতে যেতে কেউ হেঁচকা টানে তাকিয়া’কে একটা ঘরে নিয়ে মুখ চে’পে ধরল!…..
#চলবে… ইনশা আল্লাহ।