#অবাক_মেঘের_বাড়ি
পর্ব- ৩০
সুরমা
অনুর ঘুম ভাঙ্গে একদম ভোরবেলা। চোখ খুলে তাকাতেই দেখে ইমন তার পাশে শুয়ে আছে। অনু হুরমুর করে উঠে বসে। এই ছেলেটা এখানে কি করছে? প্রিতি কোথায়? তার শরীর ঘেমে যায়। অনুর হুরমুর শব্দে ইমনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ইমন তাকিয়ে দেখে অনু বসে আছে। ইমন চোখ কচলে উঠে বসে। তার চোখে এখনও এক রাজ্যের ঘুম বিরাজমান। ইমন ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে,
-কি হলো? উঠে পড়লে কেন? কোন সমস্যা? অনু বিচলিত কণ্ঠে বলে,
-আপনি এখানে কি করছেন? ইমন চোখ গোল গোল করে তাকায়।
-এখানে কি করছি মানে? ঘুমাচ্ছি।
-কিন্তু এখানে কেন? আমার রুমে আপনি কিভাবে এলেন? ইমন বুঝতে পারছে ঘুম থেকে উঠার কারণে অনু এরকম কথা বলছে। এখনও তার চোখ থেকে ঘুম দূর হয়নি।। ইমন আবার উপুড় হয়ে শুয়ে বলে,
-কাল না আমাদের বিয়ে হয়েছে। তাই আমরা এক রুমে আছি। আর তুমি আমার বাসায় আছো। ইমনের কথা শুনে অনুর মনে পরে। হঠাৎ করে ইমনকে দেখে তার মাথা কাজ করেনি। অনু তাড়াতাড়ি নিজের চুল, শাড়ি ঠিক করে বলে,
-সরি। এতো ঘুমাইলাম যে সকাল বেলা কেমন মাতাল মাতাল কথাবার্তা বলছি।
-হুম বুঝতে পেরেছি। এখন ঘুমাও।
-ঘুমাবো কেন? নামাজ পড়বো না? আযান হয়ে গেছে মনে হয়। ইমন মাথা তুলে মোবাইলে টাইম দেখে। তারপর বলে,
-হুম। আচ্ছা পড়।
-আপনি পড়বেন না? ইমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
-কাল থেকে পড়বো।
-কাল না। আজ থেকেই পড়বেন। কাল কথাটা শয়তানের। ভালো কাজ করতে চাইলে শয়তান বলে, বল কাল থেকে কাজটা করবো। কিন্তু কাল কখনই আসে না। উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন। ইমনের খুব ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু অনুর কথা ফেলতেও পারছে না সে। ইমন বিছানায় উঠে বসে বলে,
-তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো। তারপর আমি যাচ্ছি। অনু ইমনের চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে,
-আজ থেকে আপনি আমার নামাজের সঙ্গী। দুজন এক সাথে নামাজ আদায় করবো। ইমন মিষ্টি হেসে অনুর কথায় সায় দেয়।
অনু আর ইমন এক সাথে নামাজ আদায় করে। ইমন জানে অনু প্রতিদিন নামাজ আদায় করে বাগানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে। তাই আজকের সকালটা অনুর ব্যতিক্রম করেনি। সে সকালের মিষ্টি বাতাস উপভোগ করার জন্য অনুকে তাদের বাগানে হাঁটতে নিয়ে যায়। অনু মিষ্টি হাসি মুখে রেখে বাগানে হাঁটতে শুরু করে। ইমন অপলকে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার কাছে অনুর থেকে মিষ্টি, মুগ্ধকর আর কিছু হয়না। বেশ কিছুক্ষণ সময় হাঁটাহাঁটি করার পর অনু বলে,
-ইশ! অনেক বেলা হয়ে গেলো তো। আপনিতো বাসায় যাওয়ার জন্যও কিছু বলছেন না। নিশ্চয় এতক্ষণে সবাই উঠে পড়েছে। আর আমি নতুন বউ হয়ে বাহিরে হাঁটাহাঁটি করছি। কি বলবে সবাই। ইমন অনুর দিকে এগিয়ে আসে।
-তোমার যতক্ষণ ইচ্ছে হয় হাঁটো। কেউ কিছু বলবেও না মনেও করবে না।
-তবুও এটা ঠিক হয়নি। চলুন ভেতরে যাই।
-আচ্ছা চলো। ইমন অনু বাসায় ঢুকে। সবাই ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে। নাস্তা তৈরি করাও শেষ। অনু এগিয়ে গিয়ে ইমনের মা বাবাকে কদমবুসি করে। ইমনের মা বলেন,
-থাক থাক। আমি তোমাদের জন্য এমনি দোয়া করি। অনু শাড়ির আঁচল হাতের মুঠোয় এনে অপরাধী স্বরে বলে,
-সরি মা। হাঁটতে গিয়ে লেইট করে ফেললাম। ইমনের মা অনুর গালে হাত রেখে বললেন,
-এতো ফর্মালিটি রক্ষা করতে হবে না। এটা তোমার নিজের বাড়ি। নিজের ইচ্ছে মতো চলবে। আর সকাল বেলা হাঁটাহাঁটি করা খারাপ না। স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এখন শরীরটা ভালো লাগছে তো? কাল তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছিল। অনু হেসে বলে,
-জ্বি মা। ভালো লাগছে।
-আচ্ছা এখন চলো নাস্তা করে নিবে। আমরা সবাই তোমরা দুজনের জন্যই অপেক্ষা করছি। এখনও কেউ নাস্তা করেনি।
মেঘ রয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর অবাক যে বাসা থেকে বের হলো তার আর খুঁজ খবর নেই। মেঘের মনটা কিছুটা খারাপ হলো। অবাককে কয়েকবার কলও করেছে সে। অবাক কলটা রিসিভ করেনি। মেঘ বুঝতে পারছে না অবাক কোথায় গেলো। মেঘ বিলকিস বেগমের সাথে গল্প করে সময় পার করছে।
বিলকিস বেগম মেঘ থেকে যাওয়ায় খুব খুশি হলেন। মেঘ চলে যাওয়ার কথা শুনে তিনি ভেঙ্গে পড়েছিলেন। যখন শুনলেন মেঘ যাবে না তখন থেকেই উনার খুশির সীমা নেই। অবাক মেঘকে ভালোবাসে। এই খবরটা বিলকিস বেগমকে আরো আনন্দিত করলো। তিনি আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করলেন। অবাক আর মেঘের বাকি জীবনটা যেন সুখ ও সমৃদ্ধশালী হয় তার জন্য প্রার্থনা করলেন।
মেঘের সময় যেন যেতেই চাইছে না। কারণ, অবাক বাবু সঙ্গে নেই। কোথায় গেছে সেটাও মেঘ জানে না। সারাদিনটা চলে গেলো। অবাকের খোঁজ মিলল না। সন্ধ্যাও ঘনিয়ে গেলো। এবার মেঘের ভয় করছে খুব। এতো সময়তো অবাক বাহিরে থাকে না। আজ সে অফিসেও যায় নি। ভয়ে মেঘের শরীর কাঁপছে। একবার নিজের রুমে এসে পায়চারি করছে। একবার বিলকিস বেগমের রুমে গিয়ে বসছে। বিলকিস বেগম মেঘের মুখ দেখেই বুঝে গেলেন মেঘ চিন্তিত। কিন্তু কারণটা কিছুতেই মেঘ বলছে না। বিলকিস বেগম অবাকের কথা জানতে পারলে তিনিও চিন্তা করবেন।
ইমন সারাদিনে একবারের জন্যও অনুকে একা পেলো না। সারাক্ষণ ড্রয়িংরুমে বসে সবার সাথে গল্প করছে। ইমন একবার রুমে গিয়ে বিছানায় লম্বা হয়ে শোয়। আবার ড্রয়িংরুমে এসে সবার সাথে বসে। কিন্তু অনুর সাথে তার কথা বলার কোন সুযোগ নেই। তবে, মাঝে মাঝে ইমন অবাক চোখে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অনুর কথা বলার ধরণ, কথার মাঝে মিষ্টি করে হাসি ইমনের মনটা ভরিয়ে দেয়। তখন ইমন হারিয়ে যায় অজানা ভালো লাগায়।
অবাক বাসায় ফিরলো রাত ১০টায়। অবাককে দেখা মাত্রই মেঘ দৌঁড়ে এসে অবাকের বুক আঁকড়ে ধরে কেঁদে দেয়। অবাক বিচলিত হয়ে মেঘকে নিজের বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
– কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছো কেন? মেঘের কান্না থামে না। তার চোখের পানি আর নাকের পানি এক হয়ে যায়। অবাক আবার বলে,
– কি হয়েছে আমার মেঘু রাণীর? এভাবে কাঁদছে কেন সে? মেঘু রাণী কি জানে তার কান্না দেখে তার অবাক বাবুরও খুব কান্না পাচ্ছে। এখন কি অবাক বাবুও তার মতো কান্না শুরু করবে নাকি সে কান্না থামাবে? মেঘ নাক টানে। দুহাত দিয়ে নিজের চোখ মুছে। অবাক আবার জিজ্ঞেস করে,
– কি হয়েছে? কাঁদছিলে কেন?
– আপনি কোথায় চলে গেলেন? সারাদিন বাসায় আসেন নি। আমার ভয় করছিল। এজন্য কাঁদছিলাম। মেঘ কথাটা শেষ করে আবার অবাককে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। অবাক বলে,
– একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ করছিলাম। এজন্য লেইট হলো। এর জন্য কান্না করতে হবে নাকি? তুমি আসলেই পিচ্ছি। বড় হলে না। মেঘ অবাকের বুকে নাক ঘষে বলে,
– আমি বড় হতেও চাইনা।
– আমিও চাইনা অবাকের মেঘ বড় হয়ে যাক। তাহলে আমি আমার পিচ্ছি মেঘের পাগলামি গুলো খুব মিস করবো। মেঘ অবাককে এতো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যে, মনে হচ্ছে মেঘ অবাকের বুকের ভেতরে ঢুকে যাবে। অবাক বলে,
– আচ্ছা এখন ছাড়ো। শরীর তো ঘেমে ভিজে আছে।
– থাকুক ঘামে ভেজা। আমার আপনার শরীরের এই গন্ধটা খুব ভালো লাগে। অবাক হেসে বলে,
– তোমার জন্য আজ একটা সারপ্রাইজ আছে। অবাকের কথা শুনে মেঘ অবাককে ছেড়ে দিয়ে অবাকের মুখের দিকে তাকায়। অবাক বলে,
– সারপ্রাইজ আগে বলে দিতে হয়না। আমি ফ্রেশ হবো। তারপর তোমার সারপ্রাইজটা দিবো। মেঘ মুখটাকে বাচ্চাদের মতো করে ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,
– এখনতো আমি শান্তি পাবো না। কি সারপ্রাইজ একটু বলুন। অবাক মেঘের গাল টেনে দিয়ে বলে,
– সারপ্রাইজ। ফ্রেশ হয়ে আসি।
অবাক ফ্রেশ হয়ে আসে। মেঘ সারপ্রাইজ সারপ্রাইজ ভাবতে ভাবতে রুমে পায়চারি করা শুরু করে। অবাক বলে,
– আজ তুমি লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরবে। আর আমি সাদা পাঞ্জাবি। মেঘ এগিয়ে যায়।
– কিন্তু কেন?
– কোন প্রশ্ন করা যাবে না। যা বলছি তাই করো। অবাক আলমারি খুলে মেঘের হাতে একটা শাড়ি দিয়ে বলে,
– এই শাড়িটা পরো। আর গহনা গুলোও পরবে। মেঘ অবাকের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে।
আকাশ আজ বেশ পরিষ্কার। একটা চাঁদকে ঘিরে হাজার তারার মেলা। চাঁদের আলোয় চারপাশ চকচক করছে। জোছনার এমন মায়ার খেলায় মুগ্ধ অনু। রাতের শীতল বাতাসে অনুর চুলগুলো উড়ছে। অনু দাঁড়িয়ে আছে ছাদের রেলিং ধরে। কিছুটা দূরে ইমন। অনু বলে,
-আচ্ছা চাঁদ এতো মায়াবী কেন? ইমন কথা বললো না। অনু ইমনের দিকে তাকিয়ে দেখে ইমন নিজের হাতে দিয়ে তার হাত ছুঁয়ার চেষ্টা করছে। ধীরে ধীরে ইমনের হাতটা অনুর হাতের কাছে এনেও সরিয়ে নিচ্ছে। ইমনের কাণ্ড দেখে অনু মুখ চেপে হাসে। ইমনের খেয়াল এখন অনুর হাতের দিকে। আবার যখন ইমন নিজের হাতটা অনুর হাতের কাছে নিয়ে আসে অনু টুপ করে ইমনের হাতটা চেপে ধরে।
ইমন চমকে উঠে। অনু তাড়াতাড়ি নিজের নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে। ইমন হেসে অনুর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ইমনের শরীর কিছুটা অনুর হাতে লেগে থাকে। ইমন শক্ত করে অনুর হাত ধরে রাখে। অনুর চুলগুলো উড়ে গিয়ে লাগে ইমনের মুখে। ইমন চোখ বন্ধ করে অনুর চুলের ঘ্রাণ নেয়। ইমন মুখটা অনুর কানের কাছে নিয়ে বলে,
-অনু, আমাকে তোমাতে হারাতে দিবে? ইমনের কথা শুনে অনুর শরীর কেঁপে উঠে। অনু মাথা নিচু করে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ইমন অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে অনুর চুলে মুখ গুজে দেয়। অনু নিজের চোখ বন্ধ করে ফেলে। তার শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করে। ইমন ফিসফিস করে বলে,
-আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি অনু। তোমাকে আপন করে পাওয়ার জন্য বেকুল হয়ে আছি। আমাকে আর দূরে রেখো না। আমাকে তোমার করে নাও। অনু কিছু বললো না। ইমন অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দেখে অনু লজ্জায় লজ্জাবতীর মতো কাঁচুমাচু হয়ে আছে। ইমন অনুর দুগালে হাত রেখে অনুর মুখটা উচু করে বলে,
-অনু, আমার ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পেতে চায়। তোমার ভালোবাসার রঙে রঙিন হতে চায়। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। তবুও তোমার মুখ থেকে একবার শুনতে চাই। একবার বলো ভালোবাসি। অনু চোখ তুলে তাকায়। ইমনও অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইমনের চাহনি দেখে অনু লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ফিরে বলে,
-আমি বলতে পারবো না। অনুর কথা শুনে ইমন হেসে দিয়ে বলে,
-থাক বলতেও হবেনা। যা বুঝার আমি বুঝে নিয়েছি। ইমন হুটহাট করে অনুকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। অনু তাড়াতাড়ি ইমনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
-কি করছেন? পড়ে যাব তো। ইমন নিজের মাথা অনুর কপালে লাগিয়ে বলে,
-উহু। আজ কোনো কথা হবে না। অনু নিজের মুখটা একদম ইমনের বুকে গুজে নেয়। ইমন মিষ্টি হেসে অনুর কপালের একপাশে চুমু দিয়ে দিয়ে বলে,
-আজ মধু পূর্ণিমা,
ভালোবাসা দিয়ে তোমায় রাঙাবো প্রিয়তমা।
যদি দাও আশা, আমি পেতে চাই তোমার ভালোবাসা।
মেঘ লাল শাড়ি পরেছে। তাকে দেখতে বউ বউ লাগছে। একটা পিচ্ছি রাঙা বউ। অবাক হা করে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ অবাকের কাছে এসে বলে,
-এবার আমায় সারপ্রাইজ দিন। অবাক মেঘের চোখ দুটো নিজের হাত দিয়ে বন্ধ করে ধীর কণ্ঠে বলে,
-আমি যতক্ষণ না বলবো ততক্ষণ চোখ খুলবে না। মেঘ বলে,
-আচ্ছা খুলবো না। অবাক মেঘকে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। সাথে সাথেই মেঘ চোখ খুলে ফেলে। অবাক বলে,
-বলছি না আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবে না। মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,
-আমাকে কোলে তুললেন কেন? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন? আমার তো সন্দেহ লাগছে। আবার কোথাও নিয়ে ফেলেটেলে দেন কিনা। অবাক চোখ বড় বড় করে বলে,
-কি,,,,? আচ্ছা নামো। কোনো সারপ্রাইজের দরকার নেই। সব সময় আবোলতাবোল বলতেই থাকো। অবাকের কথা শুনে মেঘ অবাকের গলা শক্ত করে ধরে বলে,
-আমি বলতে চাচ্ছিলাম আমাকে নিয়ে হাঁটার সময় যদি হোচট খেয়ে পড়ে যান। আমি চোখ খুলে রাখলে আপনাকে সতর্ক করতে পারবো। অবাক রাগান্বিত মুডে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ ডুগ গিলে বলে,
-আচ্ছা ঠিকাছে ঠিকাছে। চোখ বন্ধ করছি। মেঘ চোখ বন্ধ করে। অবাকের মুডটাই খারাপ হয়ে যায়। এখন ইচ্ছে করছে সত্যি সত্যি মেঘকে একটা আছাড় মারতে। মেঘ বলে,
-দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কতক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকবো? অবাক কিছু না বলে হাঁটা শুরু করে। অবাক মেঘকে ছাদে নিয়ে নামায়। মেঘ বলে,
-এবার চোখ খুলবো?
-হুম। খুলো। মেঘ চোখ খুলে। চোখ খুলেই মেঘ রীতিমতো শকট হয়ে যায়। ছাঁদটা এখন আর চাঁদ নেই। ছোটখাটো একটা গ্রামীণ পরিবেশে সেজে উঠেছে। ছাঁদের একপাশে বাশ দিয়ে একটা ছোট ঘর বানানো হয়েছে। পুরো ছাদের কিনারায় ফুলের গাছ। ঘরটার দরজার কাছে বোর্ড লাগানো যেটা মিটমিট ঝাড়বাতির মতো জ্বলছে আর নিভছে। বোর্ডে লিখা
“অবাক মেঘের বাড়ি”।
মেঘ বিস্মিত হয়ে যায়। এই বাড়িটা তার আকাঁ সেই বাড়িটার মতো। যেটা সে স্বপ্ন দেখেছিল। ছোট্ট ঘরের সামনে বসার জন্য আসন বানানো হয়েছে। একটা ট্রিটেবিলও আছে। সেগুলোও বাঁশের তৈরি। একটু দূরে ছোট একটা দোলনা। ঘরের একপাশে কড়ের একটা গাদিও আছে। ছাদটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে সবুজ ঘাস কার্পেট দিয়ে।
চাঁদের জোছনা আর ঘরের ভেতরে দেওয়া ছোট ছোট লাইটের আলোয় পুরো ছাদটা যেন নেচে উঠছে। মেঘ বিস্ময় নিয়ে অবাকের দিকে তাকায়। অবাক মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চোখের পাতা এক করে। মেঘ এগিয়ে যায় ঘরের দিকে। অবাকও মেঘের সাথে সমান তালে হাঁটে। আলতো করে মেঘের হাতের একটা আঙ্গুল ধরে রাখে। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে মেঘ আরো বেশি বিস্মিত হয়।
ঘরের ভেতরে একটা বিছানা। যেটা ফুল দিয়ে সাজানো। ঘরে ছোট ছোট আরো কিছু আসবাবপত্রও রয়েছে। সব গুলো আসবাবপত্র বাঁশ দিয়ে তৈরি। অবাক তাকে কখনও এরকম সারপ্রাইজ দিবে মেঘ কল্পনাও করেনি। খুশিতে মেঘের চোখে পানি চলে আসে। অবাক মেঘকে নিজের কাছে এনে বলে,
-আমি আমার মেঘকে আর কখনও কাঁদতে দেখতে চাইনা। এখন থেকে মেঘের হাসির দায়িত্ব আমি নিলাম। মেঘের চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। অবাক একটা আঙ্গুল দিয়ে মেঘের চোখের পানিটা তুলে নেয়। অবাক বলে,
-এই পানির মূল্য অনেক। যখন জানতাম না তখন পানিটা ঝরতে দিয়েছি। এখন জানি। এই পানি এখন আর নিচে পড়তে দিব না। মেঘ অবাককে জড়িয়ে ধরে। অবাকও মেঘকে জড়িয়ে ধরে। মেঘ কান্নামাখা কণ্ঠে বলে,
-আগে কেন আমার জীবনে এই সুখটা আসেনি অবাক বাবু? তাহলে তো আমার বাবুটা,,,,,,,,,অবাক মেঘের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে। মেঘ ছলছল চোখে অবাকের দিকে তাকায়। অবাক বলে,
-কষ্ট পাবেনা মেঘ। আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে আরেকটা ছোট্ট মেঘু এনে দিবো। মেঘের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। অবাক মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরে একদম নিজের সাথে মেঘকে মিশিয়ে বলে,
-একটা ছোট মেঘ আরেকটা বাচ্চা মেঘ। মাঝখানে একটা অসহায় অবাক। তখন অবাকের বহুত ঠ্যালা আছে কি বলো? মেঘ নাক ফুলিয়ে বলে,
-আমি কি খুব জ্বালাই?
-একদম না। জ্বালাবো তো আমি। অবাক মেঘকে তুলে উচু করে একদম নিজের সমান সমান করে বলে,
-ভালোবাসার জ্বালাতন। মেঘ অবাকের গলা জড়িয়ে ধরে অবাকের দিকে ঝুকে পড়ে। অবাকের মাথার চুল শক্ত করে মুঠো করে ধরে বলে,
-আপনার থেকেও আমার অত্যাদর ভয়ংকর হবে। কথাটা শেষ করেই মেঘ অবাকের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। অবাক মেঘকে আরেকটু শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। যেন মেঘ চাইলেও ছুটতে না পারে। না পারে ভালোবাসার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে। চাঁদের আলো আরো তীব্র হয়ে উঠলো। ঝলমল করতে থাকতো চারপাশ। ভালোবাসায় ডুবে গেলো কয়েকটা হৃদয়।
– আজ ভালোবাসাতে নেই মানা,
এক হৃদয়ের সাথে আরেক হৃদয়ের হলো জানাশোনা।
চাঁদের গায়ে জড়ালো জোছনার শাড়ি,
ভালোবাসার আরেক নাম, “অবাক মেঘের বাড়ি”।
সমাপ্ত –