#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ২০
সুরমা

অনু বসে বসে ঝাড়বাতি বানাচ্ছে। বেশ সুন্দর হবে ঝাড়টা। প্রিতি অনুর পাশে বসেই উপন্যাস পড়ছে। আনিসুল হকের ‘এখানে থেমো না’ উপন্যাসের একটা জায়গায় গিয়ে প্রিতি ফিকফিক করে হেসে দেয়। অনুর নিজের কাজ রেখে হা করে প্রিতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিতির হাসি থামছে না। অনু ঠোঁট টান টান করে বলে,,,,,

– পাগল হয়ে গেলি নাকি? অনুর কথা শোনে প্রিতি আরো হেসে উঠে। অনু চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। প্রতি নিজের হাসিটা কিছুটা কমিয়ে বলে,,,,
– আপু লাল পানি খাবি? প্রিতির কথা শোনে অনু অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলে,,,,
– লাল পানি?
– হুম লাল পানি। এটা খেলে নেশা হয়। নেত্রকোনার মহুয়া খেলেও নেশা হয়। অনু চোখ বড় বড় হয়। প্রিতিকে নিশ্চয় ভূতে ধরেছে। কি সব বলছে। প্রিতি আবার হেসে বলে,,,,,

– শোন একটা গল্প বলি।
– না আমি তোর কোনো আজগুবি গল্প শোনবো না।
– শোন মজা পাবি। অনু জানে সে শুনতে না চাইলেও প্রিতি বলবে। তাই সে বলে,,,,
– আচ্ছা বল। প্রিতি অনুর সামনে এসে বসে বলে,,,,,
– একটা ছেলে একবার তার গার্লফ্রেন্ডকে এক বোতল মহুয়া দিয়ে বলে, চল আমরা দুজন এই মহুয়া খেয়ে নেশা করি। দেখি আমাদের কার কেমন নেশা হয়। যার মন যত নিষ্পাপ হবে তার তত নেশা হবে। দুজন এক বোতল মহুয়া খায়। তখন মেয়েটার হব্বি নেশা হয়ে যায়। সে দুনিয়ার সব আজগুবি কথা বলতে শুরু করে। মাতালদের মতো কিছুক্ষণ পাগলামি করে। ছেলেটা কিছুক্ষণ মেয়েটার পাগলামি দেখে বলে, এই চুপ করতো ড্রামাবাজ কুইন। এটা কোনো মহুয়া টহুয়া ছিল না। এটা সেভেন আপ ছিল। আমি দেখতে চাইছিলাম তুই কতো বড় ড্রামাবাজ। তারপর মেয়েটা হা করে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর মনে মনে বলে, হায় আল্লাহ! আজ আমি ধরা কাইছি। প্রত্যেকদিন ড্রামা করে আজ বুঝতেই পারছিলাম না আমি নেশায় এমন করছি নাকি নরমালি এসব করছিলাম। এতদিন ড্রামা করতে করতে আজ ধরা খাইলাম। অনু মৃদু হেসে বলে,,,,

– ভয়ংকর ব্যাপার। প্রিতি আবার হেসে দেয়। কাজল রেখা এসে দুই মেয়ের হাসির শব্দ শুনতে পান। তিনি গিয়ে দুই মেয়ের সামনে বসে বলেন,,,
– কি কথা হচ্ছে দুজনাতে? প্রিতি হেসে বলে,,,,
– লাল পানির কথা বলছিলাম। লাল পানি আবার কি? কাজল রেখা বিষয়টা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন,,,,,,
– লাল পানি কি? অনু প্রিতির দিকে চোখ বড় করে তাকায়। প্রিতি আর কিছু বলে না। অনু মায়ের দিকে কোমল চাহনি দিয়ে বলে,,,,,,

– কিছু না। ছাড়তো ওর কথা। তুমি কিছু বলবে?
– হ্যাঁ। বলতেই এসেছিলাম।
– বলো তুমি কি বলতে এসেছো।
– পাত্র পক্ষ কাল আসবে। অনু আবার পুতি নিয়ে ঝাড় বানাতে বানাতে বলে,,,,,
– অহ আচ্ছা।
– তুই কাল শাড়ি পরবি।
– আচ্ছা পরবো
– সুন্দর করে সাজবি। অনু চোখ তুলে মাকে দেখে বলে,,,,
– আচ্ছা সাজবো
– ওদের সাথে সুন্দর করে কথা বলবি।
– আচ্ছা বলবো।

– ওরা যা জিজ্ঞেস করবে শুধু তার উত্তর দিবি। নিজের থেকে কিছু বলার দরকার নেই। অনু বুঝতে পারছে মা কি বলতে চাইছে। অনু ভেতরে নিঃশ্বাস ফেলে স্নিগ্ধ কণ্ঠে বলে,,,,,
– আচ্ছা বলবো। কাজল রেখা এবার আমতাআমতা করতে লাগলেন। অনু মায়ের চোখে চোখ রেখে বলে,,,,,
– আমতাআমতা করছো কেন? যা বলতে চাচ্ছ সরাসরি বলে ফেলে।
– আসলে বলতে চাইছিলাম যে, তুই ছেলের কাছে বা ওদের পরিবারের কারো কাছে বলবি না তোর একটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল। আসলে জানিসেই তো। এখন মানুষ রিলেশন গুলোকে ভালো চোখে দেখে না। মাইন্ড করে। অনু নিজের চোখ নামিয়ে ফেলে। এটা তো সম্ভব নয়। ছেলের কাছে অন্তত এটা লুকানো উচিত হবে না। বিয়ের পর যখন জানতে পারবে তখন সন্দেহের চোখে দেখবে। এমনকি ভুলও বুঝতে পারে। তখন বিষয়টা আরো খারাপভাবে দেখবে। এটা নিয়ে বিয়ের আগেই কথা বলতে হবে। সব শোনার পর যদি ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয় তখন বিয়েটা হবে। নাহলে হবে না। কাজল রেখা অনুর মাথায় হাত রেখে বলেন,,,,
– আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছিস? অনুর শীতল কণ্ঠের উত্তর।
– হুম পেরেছি।

বাসা থেকে বিদায় নিয়ে অবাক মেঘের যাত্রা শুরু হয়। নিজেদের গাড়ি নিয়ে চলে যাবে এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে ফ্লাইটে করে কক্সবাজার। কক্সবাজার দুদিন থেকে সেন্টমার্টিন। তারপর বাসায় ফিরবে। দুপুরের ঘটনার পর থেকে অবাক একবারের জন্যও মেঘের দিকে তাকায় নি। কিন্তু মেঘের চোখ অবাকের উপর থেকে এক সেকেন্ডের জন্যও সরছে না। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। অবাক আর মেঘ বসেছে পেছনের সিটে। অবাক ব্ল্যাক শার্ট পরেছে। ব্লু জিন্স। চোখে বড় গ্লাসের একটা আকর্ষণীয় সানগ্লাস। চুলগুলো খাড়া হয়ে আছে। ফর্সা মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চোখে কালো সানগ্লাসে অবাককে হলিউডের নায়কদের মতো লাগছে।

শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত হোল্ড করা। যার কারণে হাতের লোমগুলো স্পষ্ট ভেসে আছে। শার্ট ইন করার কারণে বডির সাথে টানটান হয়ে লেগে আছে। যা মেঘের নজর কাড়ে। মেঘ কিছুতেই অবাকের উপর থেকে চোখ সরাতে পারছে না। মানুষ এতো হ্যান্ডসাম স্মার্ট হয় কিভাবে মেঘ ভেবে পাচ্ছে না। তার আবার রাগও লাগছে। ছেলেদের এতো সুন্দর করে সাজার কি আছে? যাচ্ছে তো ঘুরতে। ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাচ্ছে। মেঘ গাড়ির জানালায় দুহাত দিয়ে ধরে তাতে থুতনি রেখে বিড়বিড় করে বলে,,,,

– শাঁকচুন্নি গুলো আজ আমার জামাইর দিকে হা করে তাকায় থাকবে। এগুলো দেখলেতো আমার কলিজা ফাইট্টা যাইবো। মেঘের বিড়বিড় শোনে অবাক মেঘের দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘ জানালা দিয়ে মাথা বের করে রেখেছে। অবাক শক্ত কণ্ঠে বলে,,,,

– এভাবে মাথা বের করেছো কেন? এক্সিডেন্ট হবে। মাথা ভেতরে আনো। মেঘ মুখ অবাকের দিকে ফিরিয়ে বলে,,,,
– আমার কি চোখ নাই? এক্সিডেন্ট হলে কি আমি দেখবো না? অবাক মেঘের হাত ধরে টেনে ভেতরে এনে চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,,
– একদম বেয়াদবি করবে না। আমি যা বলবো তাই শোনবে। এর বাহিরে কোনো কথা না। মেঘ বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ভেঙ্গে বাহিরের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। মনে মনে বলে,,,

– খচ্চর লোক। ইশ! এতো সুন্দর চেহারা নিয়ে কি দেমাক। হুম। আমি বুঝি কম সুন্দর? অনু আপুতো বলেছে আমি খুবই সুন্দর আর মিষ্টি। অবাক পকেট থেকে মোবাইল বের করে চোখ রাখে ফোনের স্কিনে। মেঘও আর কোনো কথা বলে না। গাড়ি চলতে থাকে আপন গতিতে। গাড়ি কিছুদূর যেতেই মেঘ হঠাৎ চিৎকার করে বলে,,,,,

– গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও। মেঘের চিৎকার শোনে অবাক কেঁপে উঠে। তার হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে যায়। ড্রাইভার পেছনে থাকিয়ে বলে,,,,,
– কি হয়েছে ভাবিজান? মেঘ আবার বলে,,,,,
– বলছি তো গাড়ি থামাতে। গাড়ি থামাও। অবাক হা করে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কি হচ্ছে অবাক কিছু বুঝতে পারছে না। তবে মেঘের এমন কাণ্ডে তার এখন প্রচণ্ড পরিমাণ রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে থাপ্পড় মেড়ে গাল ফাটিয়ে দিতে। গাড়ি থেমে যায়। মেঘ হুরমুর করে দরজা খুলে বের হয়। অবাকও বের হয়। অবাক বলে,,,,

– তোমার সমস্যা কি? এখানে গাড়ি থামাতে বললে কেন? মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো বায়না করে বলে,,,,,
– আমি ফুচকা খাবো।
– কিহ!
– ঔ দেখুন ফুচকাওয়ালা। আমি ফুচকা খাবো। অবাক মেঘের হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,
– এখন কি ফুচকা খাওয়ার সময়? চলো। এই মাঝ রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে এসব খাওয়া যাবে না। মেঘ অবাকের হাত থেকে জোর করে নিজের হাত ছাড়িয়ে বলে,,,,,,
– না আমি খাবো। আমি ফুচকা খাবো। মেঘ এক দৌঁড়ে ফুচকাওয়ালার কাছে চলে যায়। বেশ কয়েকজন মেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে। অবাক বিরক্তি নিয়ে এগিয়ে যায় মেঘের কাছে। মেঘের পাশে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলে,,,,,
– মেঘ শোন, আমাদের লেইট হয়ে যাবে। আমি তোমাকে পরে ফুচকা খাওয়াবো। এখন চলো। মেঘ নাছোড়বান্দা কণ্ঠে বলে,,,,,

– না না। পরে না। আমি এক্ষণি খাবো। আপনি খেতে না দিলে কিন্তু আমি আম্মাকে কল করে বলবো। মেঘের কথা শোনে অবাক নিজের কপাল চাপড়ে বলে,,,,
– আল্লাহ তুমি আমাকে এ কার পাল্লায় ফেললে? বজ্জাত মেয়ে। কথায় কথায় হুমকি দেয়। অবাক কটমট করে বলে,,,,
– খা খা। জন্মের খাওন খেয়ে ফেল। মেঘ বত্রিশ দাঁত বের করে হেসে বলে,,,,,,,,
– মামা আমাকে তিন প্লেইট ফুচকা দেন। মেঘের কথা শোনে অবাক চোখ বড় করে বলে,,,,,
– তিন প্লেইট ফুচকা দিয়ে কি করবে?

– আপনার এক প্লেইট আর আমার দুই প্লেইট। অবাক বলে,,,,,
– না না। আমি এসব খাই না। আর তুমি একাই দুই প্লেইট খেতে পারবে নাকি? অবাক ফুচকা ওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
– মামা আপনি বরং এক প্লেইট দেন। আর একটু তাড়াতাড়ি দেন। মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
– এই জন্মে আপনার মতো কিপটা লোক দেখি নি। আপনার এতো এতো টাকা থাকতেও তিন প্লেইট ফুচকা কিনতে পারছেন না? মেঘের কথা শোনে অবাক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। এদিকওদিক দেখে বলে,,,,,
– টাকার কথা আসছে কেন? আমি ফুচকা খাই না। অযথা নষ্ট করবো কেন?
– আমি তো খাই। আমি একাই তিন প্লেইট খাবো। মেঘ আবার বলে,,,,
– মামা আপনি পরপর তিনটা প্লেইটেই দেন। অবাক হা হয়ে যায়। এই মেয়ে বলে কি? একাই তিন প্লেইট ফুচকা খেতে পারবে? অবাক বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। এই মেয়েকে কিছু বলার নেই।

ফুচকাওয়ালা এক প্লেইট ফুচকা দিলে মেঘ গপাগপ ফুচকা খেতে থাকে। তার খাওয়ার স্টাইল দেখে অবাকের মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়। অবাক মনে মনে বলে, মান সম্মান আর কিছু রাখবে না এই মেয়ে। রাস্তার সব মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে। আর সে রাক্ষসীর মতো খেয়েই যাচ্ছে। মেঘ এক প্লেইট শেষ করে আরেক প্লেইট হাতে নিয়ে খেতে খেতে দেখে পাশে থাকা মেয়ে গুলো অবাকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মেয়ে গুলোর তাকানো দেখে মেঘের বড্ড রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে এই প্লেইট দিয়ে মেয়ে গুলোর মাথা ফাটিয়ে দিতে।

কি নির্লজ্জ কি নির্লজ্জ। অন্যের জামাইর দিকে নজর দেয়। বেয়াদব মেয়েগুলো। মেঘ প্লেইটটা রেখে মেয়ে গুলোর সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,
-অন্যের জামাইর দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে লজ্জা করে না? নিজেদের জামাই নাই? মেঘের কথা শোনে তিনটা মেয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। মেঘের এমন কাণ্ডে অবাক ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। তাড়াতাড়ি মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের হাত ধরে টেনে একটু দূরে সরিয়ে বলে,,,,

-মেঘ কি হচ্ছে এসব? কি যাতা বলছো? মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-ওরা আপনার দিকে তাকিয়ে ছিল। কি বেহায়া মেয়ে গুলো। মনে হয় নিজেদের জামাই নাই। তাই অন্যের জামাইর দিকে নজর দেয়। অবাক বেকুব হয়ে যায়। মেয়েগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-কিসব বলছো। এটা রাস্তা। তাকিয়ে ছিল তো কি হয়েছে? এখানে সিনক্রেট করো না। চলো। মেঘ অবাকের হাত ছাড়িয়ে বলে,,,,,,

-চলে যাবো কেন? আগে ওদের বকা দিয়ে নেই। অবাক মেঘের হাত শক্ত করে চেপে ধরে আরো কিছুটা দূরে নিয়ে যায়। মেঘ লাফাতে লাফাতে বলে,,,,
-আমাকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে ছাড়ুন। অবাক ধমকের স্বরে বলে,,,,
-এক থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিবো। মেঘ ভ্যাউ ভ্যাউ করে কেঁদে দিয়ে বলে,,,,
-ওরা আপনাকে নজর দিচ্ছিল। অবাক এবার আবুল হয়ে যায়। নাক কুচে বলে,,,,
-দেখছিল তাতে কি হয়েছে?

-কেন দেখবে? আপনার দিকে কেউ নজর দিলে আমি তাকে মেরেই ফেলবো। এবার অবাক চোখ বড় বড় করে হা করে তাকে। মেঘ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,,,,,,
-আপনি এতো সুন্দর করে সাজলেন কেন? না সাজলে তো কেউ তাকাতোও না। মেঘ টেনে অবাকের ইন করা শার্ট এলোমেলো করে ফেলে। হাতের গোল্ড ছাড়িয়ে দেয়। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল এলোমেলো করে ফেলে। অবাক চোখ বড় করে ফেলে।

-এটা কি করলে? এক জায়গায় যাচ্ছি। আর তুমি আমার সব নষ্ট করে দিলে???
-কোথাও গেলেই সাজতে হবে নাকি। এতো সাজগোজ ভালো না। এভাবেই আপনাকে ভালো লাগছে। অবাক রাগে লাল হয়ে যায়। এই রাস্তায় কিছু করতেও পারছে না। অবাক মেঘের এক হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,,

-আগে গাড়িতে চলো। অবাক মেঘকে টেনে ফুচকাওয়ালার কাছে গিয়ে বলে,,,,,
-মামা আপনার কতো হলো? মেঘ অবাকের মুখের দিকে তাকিয়ে অসহায় হয়ে বলে,,,,,
-আমারতো আরেক প্লেইট ফুচকা রয়ে গেলো। অবাক চোখ গরম করে বলে,,,,
-অনেক খেয়েছো। আর খেতে হবে না।
-না খাবো। মামা আপনি পেকেটে ভরে দিয়ে দিন আমার ফুচকা গুলো। অবাক মানা করা সত্ত্বেও মেঘ পেকেট ভর্তি করে ফুচকা নেয়। অবাকের দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বলে,,,,,
-যেতে যেতে খাবো।

অবাক গাড়িতে বসে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
-তোমাকে নিয়ে যে আমি কোথায় যাচ্ছি আমি নিজেও জানি না। অবাকের কথা শুনে মেঘ অবাকের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
-ওমা! আমরা তো কক্সবাজার যাচ্ছি। এখনি ভুলে গেলেন? আপনার তো দেখি কিছুই মনে থাকে না। অবাক চোখ গরম করে মেঘের দিকে তাকালে মেঘ ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,

-আপনি ভুলে গেছেন তো তাই মনে করিয়ে দিলাম। অবাক হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে,,,,,
-একবার যেতে দাও। তোমাকে ফেলে চলে আসবো। অবাকের কথা শোনে মেঘ আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে। মুখ অসহায় করে বলে,,,,,,

-এমনটা করবেন না প্লীজ। আমি কিছু করবো না। ফুচকাও আর খাবো না। এই নেন। এই ফুচকা গুলো আপনাকে দিয়ে দিলাম। আপনি খেয়ে ফেলুন। আমি খাবো না। তবুও আমাকে একা রেখে আসবেন না। মেঘ ভেউভেউ করে কাঁদতে শুরু করে। অবাক হা করে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কান্না করা অবস্থায়ও মেঘকে দারুণ লাগছে। একদম বাচ্চাদের মতো। অবাক শার্টের হাতা হোল্ড করছিল। কিন্তু মেঘের কান্না দেখে শার্টের হাতা ধরেই অপলকে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘ খেয়াল করে অবাক তাকে দেখছে। কিন্তু কিছু বলছে না। মেঘ অবাকের হাতে নিজের হাত দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,

-আমি কাঁদছি। আপনি হা করে কি দেখছেন? আমাকে শান্তনা দিন। জানেন না কেউ কাঁদলে তাকে শান্তনা দিতে হয়? অবাক ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। এই মেয়েটা কি? অবাক অন্যদিকে ফিরে বলে,,,,
-হয়েছে আর কাঁদতে হবে না। মেঘ কান্না থামিয়ে বলে,,,,,

-আচ্ছা আপনি যখন বলছেন তখন আর কাঁদবো না। এবার আমার চোখ গুলো মুছে দিনতো। অবাক চমকে মেঘের দিকে তাকায়। বিস্মিত কণ্ঠে বলে,,,,,
-কি বললে?
-বলছি আমার চোখ গুলো মুছে দিন।
-কেন তোমার হাত নেই?
-আপনার জন্য কেঁদেছি তাই আপনিই মুছে দিবেন।
-আমি বলেছি কাঁদতে? পারবো না আমি মুছে দিতে। নিজে পারলে মুছো। না হলে থাক। এমনি শোকাবে।

-আমি কি আম্মাকে কল করে বলবো আপনি আমাকে মেরেছেন। অবাক মুখে হাত দেয়। কি মিথ্যুক। মারলো কখন? অবাক, অবাক হতে হতে লাস্ট স্টেজে পৌঁছে গেছে।
-এই মেয়ে, আমি কখন তোমাকে মারলাম?
-আপনি পানিটা মুছে দিবেন নাকি আমি আম্মাকে কল দিবো? মেঘ পার্স থেকে ফোন বের করতে নিলে অবাক অস্থির হয়ে বলে,,,,

-এই ফোন নিয়ে কি করবে???
-আম্মাকে কল করবো।
-না না। আম্মাকে কল দিও না। আমি মুছে দিচ্ছি। আল্লাহ, আম্মাকে কল দিয়ে যদি বলে আম্মা সত্যি বিশ্বাস করে নিবে। আমি যে কি মহা বিপদে পড়লাম সেটা শুধু আমিই জানি। ইচ্ছে তো করে এই মেয়ের গলাটা টিপে দেই। অবাক বিড়বিড় করে পকেট থেকে রুমাল বের করে। মেঘ জিজ্ঞেস করে,,,,,

-আপনি কি আমাকে কিছু বলছেন? অবাক চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,,
-না না। আমি কি তোমার মতো মেয়েকে কিছু বলতে পারি? কখনই না। অবাক না চাওয়া সত্ত্বেও মেঘের চোখ মুছে। রুমালটা রাখতে গেলে মেঘ চিল্লিয়ে বলে,,,,,
-রেখে দিচ্ছেন কেন? ভালো করে মুছুন। নাকের সর্দিটা কে মুছবে? মেঘেরা কথা শোনে অবাকের চোখ এবার আকাশে উঠে যায়। মুখ বোয়ালমাছের মতো হা হয়ে যায়। মেঘ বাচ্চাদের মতো ফেইস বানিয়ে বলে,,,,

-তাড়াতাড়ি মুছুন। অবাক রুমালটা মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
-তোমারটা তুমি মুছো। আমি পারবো না। মেঘ ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,,,,,
-আম্মাকে বলবো? অবাকের অবস্থা এখন করুণ। মেয়ে মানুষ এমন কেন? ছেলেদের দুর্বল জায়গা খুঁজে পেলেই ব্যাকমেইল করবে। অবাক কাঁদো কাঁদো হয়ে কপাল চাপড়ে বলে,,,,,
-আল্লাহ অবশেষে আমাকে দিয়ে এই কাজ করালে? ছিঃ ছিঃ। একটা দড়ি ফালাও। আমি তোমার কাছে চলে আসি। অবাক মুখটা বাংলার পাঁচ করে মেঘের নাক পরিষ্কার করে দেয়। তারপর রুমালটা বাহিরে ফেলে দেয়। মেঘ খুশি হয়ে বলে,,,,,
-থ্যাংকইউ।

কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘ আর অবাক এয়ারপোর্টে পৌঁছায়। আর কিছুক্ষণ পর তাদের ফ্লাইট। অবাক মেঘকে নিয়ে চ্যাকিং করে এগিয়ে যায় বিমানের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে মেঘ বলে,,,,,
-আমাদের ব্যাগ গুলোতো রয়ে গেলো। ব্যাগগুলো নিবো না? অবাক মেঘকে না দেখেই বলে,,,,,

-ব্যাগ নেওয়ার দরকার নেই। ওগুলো এখানেই থাক। অবাকের কথা শোনে মেঘ দাঁড়িয়ে যায়। অবাক বলে,,,,,
-দাঁড়ালে কেন?
-আমি আমার ব্যাগটা নিয়ে আসি। আমি ব্যাগ ছাড়া যাবো না। অবাক ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
-ব্যাগে কি আছে?
-অনেকগুলো চকলেট, আচার, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট। ব্যাগ রেখে গেলে আমি খাবো কি? আর গোসল করে পরবো কি? অবাক বিস্মিত হয়ে বলে,,,,,
-এতো কিছু নিতে কে বললো তোমায়? আর এতকিছু খাবে কখন??
-কেউ বলেনি। আমিই নিয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে খাবো।
-আচ্ছা এখন চলো। লেইট হয়ে যাচ্ছে তো।
-ব্যাগটা?
-ব্যাগটা কক্সবাজার চলে গেছে। মেঘ বলে,,,,
-কখন গেলো? কিভাবে গেলো?

-উড়ে চলে গেছে। এখন এখানে দাঁড়িয়ে প্রশ্নই করবে নাকি আমার সাথে যাবে? যেতে না চাইলো থাকো আমি গেলা। অবাক হাঁটা শুরু করে। মেঘও তাড়াতাড়ি হাঁটে। অবাকের কাছে গিয়ে বলে,,,,,,
-আমি যদি বিমান থেকে পড়ে যাই। তাহলে কি হবে?
-পড়ে গেলে কি আর হবে। তুমি ভর্তা হয়ে যাবে। মেঘ ভয়ে অবাকের হাত চেপে ধরে বলে,,,,

-আপনি আমাকে ধরে রাখুন প্লীজ। আমি এক্ষণি মরতে চাইনা।
-তাহলে এখন থেকে আমি যা বলবো তাই শুনতে হবে।
-আচ্ছা শুনবো। কিছুক্ষণ পর ফ্লাইট ছেড়ে দিবে। ফ্লাইটে যে যার আসনে বসে যায়। বিমানবালারা প্রত্যেকেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে। অবাক মেঘকে বলে,,,,,

-তুমি ঔ পাশে বসো। আমি এপাশে বসি। মেঘের সিটের পাশে সাদা গ্লাসের জানালা। জানালা দিয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। জানালা দেখে মেঘের কলিজা ধক করে উঠে। মনে মনে বলে,,,,,
-হায় আল্লাহ! উনি যদি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে জানালা দিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়! মেঘ তাড়াতাড়ি সিট থেকে উঠে পড়ে। অবাক মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
-উঠলে কেন? বসো। মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,,,,,
-আমি ওই সিটে বসবো না। আমি আপনার সিটে বসবো।
-কেন? ওই সিটে কি প্রবলেম?
-আমি বলতে পারবো না। কিন্তু আমি কিছুতেই ওটায় বসবো না।
-ওটায় বসো। ফ্লাইট যখন ফ্লাই করবে তখন তোমার ভালো লাগবে। কাছ থেকে আকাশ এনজয় করতে পারবে।

-না না। আমার চাইনা। আমি এখানেই বসবো। অবাক মেঘকে বুঝালেও মেঘের বায়না, ওই সিটে বসবেই না। বাধ্য হয়ে অবাক সিট চেঞ্জ করে। মেঘ সিটে বসলে অবাক সিটবেল্ট লাগিয়ে দেয়। মেঘ তন্ময় হয়ে তাকিয়ে থাকে বিমানবালাদের দিকে। কি সুন্দর মেয়ে গুলো। আর পোষাক? পোষাকের কথা মাথায় আসতেই মেঘের মুখ কাঁচুমাচু হয়ে যায়। অবাক ফোন নিয়ে বসে। এক ধ্যানে ফোন টিপতে থাকে। মেঘ অবাকের দিকে অল্প ঝুকে ফিসফিস করে বলে,,,,,,

-এই যে শুনছেন? অবাক মেঘের দিকে না তাকিয়েই বলে,,,,,,,
-আবার কি?
-আপনি কিন্তু ওই মেয়ে গুলোকে দেখবেন না বলে দিচ্ছি। মেঘের কথায় অবাক মাথা তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,,,,,
-কোন মেয়ে গুলোর কথা বলছো?
-ওই যে কিসব বলছে সবার কাছে গিয়ে। ওই মেয়ে গুলোর কথা বলছি। মেঘ আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে একজন বিমানবালাকে দেখিয়ে কথাগুলো বলে। অবাক মেঘের কথার আগামাথা কিছু বুঝলো না। তাই এক চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,,,,,,

-ওদের বিমানবালা বলে। আর ওদের দিকে তাকালে কি হবে? মেঘ মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,,,,,,
-কিসব পরেছে। আপনি কিন্তু দেখবেন না বলে দিলাম। অবাক এবার স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছে মেঘের কথা। অবাকের মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চলে আসে। তাই মৃদু হেসে বলে,,,,,

-তুমি না বললেই শুনতে হবে নাকি? এতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে সামনে ঘুরঘুর করবে আর ফ্রিতে দেখতে পারবো তবুও দেখবো না? এ হয় নাকি। ছেলেরা বিমানেই উঠেই তো ওদের দেখার জন্য। আমার তো ইচ্ছে হচ্ছে ডেকে এনে একটু কথা বলি। আর ওই মেয়েটাকে দেখো। কি জোশ দেখতে। ইচ্ছে করছে ওর মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নেই।

অবাকের কথা শোনে মেঘের চোখ কপালে উঠে যায়। মুখ হা করে অবাকের দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘের এই অবস্থা দেখেতো অবাকের খুব হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসলে সব শেষ। তাই হাসিটা অনেক কষ্টে চাপিয়ে বলে,,,,,

-এভাবে কি দেখছো? মুখ বন্ধ করো। মেঘ মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে বলে,,,,,
-কি লুচু আপনি। না করা সত্ত্বেও বেশি বেশি করে তাকিয়ে আছেন। আবার বলছেন নাম্বার নিবেন? মেঘের কথা শোনে অবাকের এবার হাসিতে পেট পেটে যাচ্ছে। অবাক স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,,,,,,

-সে তুমি যাই বলো মেঘ। আমি মেয়ে গুলোকে দেখবোই। আমি জানি মেয়েদের দিকে একটু তাকালেই কেউ লুচু হয়ে যায় না। এখন যদি না দেখি কখন দেখবো? ফ্লাইট থেকে নেমে গেলে পরে যদি আফসোস হয়। তাই এখন মন প্রাণ ভরে দেখে নেই। মেঘের এবার রাগ লাগছে। ইচ্ছে করছে অবাকের মাথা ফাটিয়ে দিতে। বজ্জাত ছেলে। লুচু ছেলে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমার মজা। নিজের বউ থাকতেও অন্য মেয়েদের দেখবে? নাম্বার নিবে? নেওয়াচ্ছি।

একজন বিমানবালা মেঘের বিপরীত পাশে বসা লোকজনদের সাথে কথা বলতে থাকে। মেঘ তাকে ডাক দিলে বিমানবালা এগিয়ে আসে। অবাক গালে হাত দিয়ে বসে। মেঘ কি করতে চাইছে তা দেখার জন্য। মেঘ বলে,,,,,,
-আপনার কাছে মোবাইল আছে?
-জ্বি ম্যাম আছে। বিমানবালা হেসে মিষ্টি সুরে উত্তর দেয়। মেঘ একবার অবাককে দেখে আবার বিমানবালার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,

-মোবাইল আছে বলেই যদি কেউ নাম্বার চায় তাহলে দিয়ে দিবেন না কিন্তু। মেঘের কথা শোনে বিমানবালার চেহারার রং পাল্টে যায়। তিনি চোখ ছোট করে বলেন,,,,,
-ম্যাম আপনার কথা বুঝলাম না।
-এইযে দেখছেন আমার পাশে বসে আছে? উনি যদি আপনার কাছে নাম্বার চায় তাহলে দিবেন না। উনি মোটেই ভালো মানুষ না। উনি আমার হাসবেন্ড। বিবাহিত। বুঝলেন। বিবাহিত ছেলেরা যতই সুন্দর হ্যান্ডসাম থাকুক না কেন। ওদের সাথে প্রেম করতে নেই। বুঝেছেন? নাম্বার চাইলেও দিতে হয়না।

মেঘের এমন আজব কথা শোনে বিমানবালা মেঘ দুজনেই তাজ্জব হয়ে যায়। দুজনের কিছুক্ষণ চোখাচোখি করে। তারপর দুজনেই এক সাথে হেসে দেয়। ওদের হাসি দেখে মেঘ এবার বেকুব হয়ে চেয়ে থাকে। কি হলো? দুজনে এভাবে হাসছে কেন? মেঘের মুখ কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়। বিমানবালা হেসে বলেন,,,,,

-জ্বি ম্যাম। বুঝতে পেরেছি। আপনি ঠিক বলেছেন। আর স্যার, আপনিও এমন মিষ্টি বাচ্চা বউ রেখে কারো নাম্বার চাইবেন না। এটা ঠিক না। মেঘ আর কিছু বললো না। সে চুপচাপ বসে থাকে। ফ্লাইট ফ্লাই করেছে। অবাক মনে মনে বলে, এই হলো মেঘ। যার এখনও বাচ্চামি স্বভাবটাও মন থেকে যায় নি। অবাক বাহিরের দিকে চেয়ে থাকে।

মেঘের খুব ভালো লাগছে। বিমান তালার মতো বসে আছে। বুঝাই যাচ্ছে না এটা মাটি দিয়ে চলছে নাকি আকাশ পথে। মেঘ জানালার পাশে একটু চোখ রাখে। সত্যি বাহিরের দৃশ্যটা মনোমুগ্ধকর। কিন্তু অবাকের এতো বড় হাতির মতো শরীরের জন্য মেঘ দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। ইশ! কেন যে তখন এমন করলো? মেঘের মনে আফসোস লাগলো। মেঘ শীতল কণ্ঠে মুখটা অসহায় করে বলে,,,,,

-শুনছেন??
-বলো
-আমি আকাশ দেখবো
-কেউ কি মানা করেছে?
-না
-তাহলে?
-আপনার জন্যতো দেখতে পাচ্ছি না। অবাক মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
-আমি কি করলাম?
-আপনার মতো একটা হাতি যদি সামনে বসে থাকে তাহলে আমার মতো মশা কিভাবে দেখবে বলুন তো?
-কি? আমি হাতি?
-তা নয়তো কি? আপনি ওখানে বসার পর শুধু আপনাকেই দেখা যাচ্ছে। বাহিরের কিছুতো দেখা যাচ্ছে না।
-এখন আমি কি করতে পারি?
-আমি ওই সিটে বসবো।
-আমি উঠতে পারবো না।
-প্লীজ দিন না
-হবে না
-আমি ওই সিটে বসলেও আপনি সব দেখতে পারবেন। আমি এতো বড় নাতো।
-তবুও পারবো না
-দিন না প্লীজ। অবাক জানতো মেঘ এমনটা করবে। আর তাকে আবার সিট পরিবর্তন করতে হবে। এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেলো না। অবাক দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,,,,
-আসো। মেঘ জানালার পাশে সিট পেয়ে এবার বহু খুশি। অবাক কিছুক্ষণ মেঘের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে আবার মোবাইল হাতে নেয়।

চলবে——-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here