#অবাক_মেঘের_বাড়ি

পর্ব : ৮
সুরমা

অবাকের আজ কেন জানি অস্বস্তি লাগছে। কাজে মন বসছে না। এতো কাজ হাতের কাছে তবুও কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। অবাক অনুকে কল করে। রিং হয়ে কেটে যায়। অনু ফোন রিসিভ করছে না। এবার তার আরও বেশি অস্বস্তি লাগছে। অনুর কিছু হলনাতো? মনে হাজার রকম প্রশ্ন উথালপাতাল করছে। অবাক একের পর এক অনুকে কল করতে থাকে।

অনু মোবাইলটা সামনে নিয়ে বসে আছে। অবাক কল করছে। এতে খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু সে কিছুতেই খুশি হতে পারছে না। বরং কষ্ট গুলো কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

চোখ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে। এভাবে অবাককে ইগনোর করা তার পক্ষ সম্ভব নয়। ইচ্ছে করছে ফোনটা রিসিভ করতে। অবাকের কণ্ঠটা একবার শোনতে।

কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ হাত দুটো বেঁধে রেখেছে। অনু আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। অবাকের কলটা রিসিভ না করার কষ্টে কাতর হয়ে গেছে সে। অনু মনে মনে ভাবছে, অবাকও নিশ্চয় তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।

একবার কল রিসিভ না করলেই অবাক কেমন অস্থির হয়ে যেতো। ঘণ্টায় ঘণ্টায় কথা না বললে তার নাকি কাজে মন বসে না। এখন তো কতোগুলো কল দিয়ে ফেলেছে। এখন অবাক কি করছে? অনু বিছানা থেকে উঠে দৌঁড়ে ব্যালকনিতে গিয়ে কাঁদতে শুরু করে। অবাকের কল গুলো দুচোখে দেখতে পারছে না অনু।

অবাক টেনশনে শেষ। অনুকে কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। অনু একটা কলও রিসিভ করছে না। অবাক এবার কল করে প্রিতির নাম্বারে। একবার কল হয়ে কেটে যায়। দ্বিতীয় বার যখন আবার কল করে তখন থেকে প্রিতির মোবাইল অফ।

অবাক কি করবে বুঝতে পারছে না। এখন কি অনুদের বাসায় যাবে?? গেলে ফুফি কি বলবে? অবাক সব কাজ ফেলে রেখে অফিসে পায়চারী করতে শুরু করে। মনটার সাথে সাথে হাত পা ও কাঁপছে তার। কেন আজ এমন হচ্ছে? এতো টেনশনে অবাকের দুপুরবেলা খাওয়াও হয়নি। খাবারের কথা সে ভুলেই গেছে।

আজ সময় কিছুতেই কাঁটছে না অনুর। তার মনে হচ্ছে আজকে ২৪ ঘণ্টা না হয়তো ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টা হয়েছে দিনরাত। সময় যেন যেতেই চাইছে না। এই একটা দিনেই যদি এতো কষ্টকর হয় তাহলে বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটবে আল্লাহ জানে।

কয়দিন বেঁচে থাকবে তারও কোনো শিওর নাই। এতো কষ্টকর যদি প্রতিটা মুহূর্ত হয় তাহলে মরতে বেশিদিন লাগবে না। মনে ঝং ধরে যাবে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে সেখানে রোগের সৃষ্টি হবে। অনুর চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে শুরু করে।

কাঁদতে কাঁদতে মাথা চোখ ভারী হয়ে গেছে। বিছানা থেকে মাথা তুলতেই চোখ অন্ধকার হয়ে পৃথিবী ঘুরতে শুরু করে। প্রিতি এসে অনুর চোখ মুছে দিয়ে বলে,,,,

– আপু, তোকে কতবার বলেছি একবার কাঁদার পর আর কখনও কাঁদবি না। তুই কেন এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস???
– আমার চোখের সামনে কেন জানি সেই কষ্টের মুহূর্তটা ভেসে উঠছে। এতো কষ্ট পাওার আগে আল্লাহ কেন আমাকে মরণ দেয়নি। আমি এখনও কেন বেঁচে আছি বলতে পারিস??? প্রিতি অনুর হাত চেপে ধরে বলে,,,,,

– আপু আমরা তোর কেউ না? আমাদের ভালোবাসা তোর কাছে কিছুই মনে হয়না?? অবাক ভাইয়াই তোর সব ছিল? আম্মু ভাইয়ার কথা সব ভুলে গেছিস??? অনু কাঁদতে কাঁদতে প্রিতেকে জড়িয়ে ধরে। প্রিতির গলায় মুখ গুজে বলে,,,,,,,

– প্রিতি, আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেন বলতে পারিস? কেন এতো কষ্ট হচ্ছে? আমার জীবনটা কেন এভাবে এলোমেলো হয়ে গেলো? আমি এতো কষ্ট সহ্য করতে পারছি না। আমি কিভাবে অবাককে ভুলে যাবো।

কিভাবে ওর স্মৃতি গুলো ভুলবো। ওকে নিয়ে যে স্বপ্ন বুনেছিলাম। ওকে নিয়ে একটা সুখের রাজ্য তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি হয়তো মরে যাবো। অনু কাঁদছে। তার চোখের পানি দিয়ে প্রিতির কাঁধ ভিজে যায়।

প্রিতি অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। প্রিতি যতই বলে কাঁদবি না। বিষয়টা তত সহজ না। এতোদিনে গড়ে ওঠা ভালোবাসা এত সহজে ভুলে যাওয়া যায় না। একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠতে যেমন কষ্টকর ভুলে যেতেও ততটা কষ্টকর।

অনু তো এখনও অনেকটা স্টং আছে। সে হয়তো এই অবস্থায় আরো ভেঙ্গে পড়তো। প্রিতি অনুকে সোজা করে চোখ মুছে দিয়ে বলে,,,,,,

– আপু শোন, এতো সহজে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কান্না হলো দুর্বল জায়গা। তুই যতই কাঁদবি ততই আরো ভেঙ্গে পড়বি। কষ্ট ততই বাড়বে। তখন মনে হবে জীবনে যা আছে সব কষ্ট। ভালোবাসা বলে কিছু নাই। প্লীজ ধৈর্য ধারণ কর। আল্লাহ কোনো না কোনো পথ দেখাবে।

এবার চল আমার সাথে। খাবার খাবি। দুপুরবেলায়ও কিছু খাস নি। এভাবে না খেয়ে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবি। এখন আম্মু ভাইয়া তোর অপেক্ষায় বসে আছে। তুই গেলে খাবে। অনু কান্নার গতি কমিয়ে এনে বলে,,,,,,

– আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। তুই গিয়ে বল আমি খাবো না।
– আপু প্লীজ, আম্মুও কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। এখন না গেলে আরো কষ্ট পাবে। অনু অসহায় ভঙ্গিতে বলে,,,,,
– প্লীজ, আমার এখন নিচে যেতে ইচ্ছে করছে না। মাথা ঘুরছে। আর তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি না গেলে আম্মু যতটা কষ্ট পাবে। গেলে আমাকে এরকম অবস্থায় দেখে আরো বেশি কষ্ট পাবে।

অনুর কথা শুনে প্রিতি চুপ হয়ে যায়। সারাদিন এতো কান্না করার পর এখন আর অনুর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। অনুকে করুণ দেখাচ্ছে। এই অবস্থায় দেখলে মা আরো ভেঙ্গে পড়বে। ভাইয়ারও মনটা খারাপ হবে। এমনি খবরটা শোনার পর ভাইয়া ভীষণ চিন্তিত মনে হচ্ছে। প্রিতি কিছু একটা ভেবে বলে,,,,

– আচ্ছা আজ যেতে হবে। তবে কাল থেকে অবশ্যই যেতে হবে। না করলেও আমি শোনবো না। তুই বস আমি গিয়ে বলে আসি। প্রিতি চলে যায়। অনু আবার আধ শোয়া হয়ে হেলে বসে।

অবাক বাসায় এসে ফ্রেশ হয়। অনুর জন্য আজ তার মুড অফ। মেয়েটা আজ সারাদিন একবারও কল করেনি। সে কল করছে সেটাও রিসিভ করছে না। কি হয়েছে জানতেও পারছে না। সকালে অফিস যাওয়ার সময় তো হেসে হেসে কথা বলছিল। এখন কি হয়েছে? অভিমান করেছে কি?

অভিমান করে তো এতো সময় থাকার কথা না। অভিমান করলেও ফোনটা অন্তত রিসিভ করতো । অবাকের খারাপ লাগছে। দিন থেকে মাথা প্রচণ্ড পরিমাণ ধরেছে। খালি পেটে অনেকবার চা খেয়েছে। কাজ হয়নি। এখনও খেতে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু এখন না খেলে আম্মার অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

অবাক গিয়ে বসে খাবার টেবিলে। বিলকিস বেগম আগেই বসেছিলেন টেবিলে। তিনি খেয়াল করলেন, অবাকের মুখে আজ সেই হাসিটা নেই। যে হাসিটা সব সময় লেগে থাকতো । হয়তো অনুর ব্যাপারটা জেনেই মন খারাপ করে আছে। তিনি মনে মনে বললেন, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। হয়তো এখন মনে করছিস আমি তোর খারাপ করছি। কিন্তু একদিন ঠিক বুঝতে পারবি। আমি তোর জন্য খারাপ কিছুই করি নি। বিলকিস বেগম ধীর কণ্ঠে বললেন,,,,,,,

-আমি তোর বিয়ে ঠিক করেছি। সামনে শুক্রবার তোর বিয়ে। অবাক মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

– সামনে শুক্রবার বিয়ে মানে? বিয়েটাকি উড়ে যাচ্ছে? অনুর তো সামনে মাসে পরীক্ষা। ওর পরীক্ষা শেষ হলে বিয়েটা হলে ভালো হতো না??? বিলকিস বেগম বেকুব হয়ে গেলেন। ছেলে তাহলে অনুর বিষয়ে এখনও কিছু জানে না। অনুরা কেউ কিছু বললো না। তিনি বললেন,,,,,,,

– আমি তোর বিয়ে হায়দার ভাইয়ের মেয়ের সাথে ঠিক করেছি। মায়ের কথা শুনো অবাক চমকে তাকায়। মনে হলো রীতিমত সে শকট হয়েছে। অবাক আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,,,,,,,

– কার সাথে বললে?
– হায়দার ভাইয়ের মেয়ের সাথে। একতো সারাদিন অনুর সাথে কথা হয়নি। এমনি মাথা প্রচুর গরম হয়ে আছে। মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না। এখন আবার এমন একটা খবর শোনে অবাকের মাথা আউলে যায়। অবাক ভাতের প্লেইটটা ঠেলে দূরে দিয়ে হাইপার হয়ে বলে,,,,,,

– আম্মা, আমি অনুকে ভালোবাসি । বিয়ে করতে হলে অনুকেই করবো। বিলকিস বেগম শান্ত হয়েই বললেন,,,,,

– আমি হায়দার ভাইকে কথা দিয়ে ফেলেছি।
– আম্মা, আমিও অনুকে কথা দিয়েছি।
– আমি অনুকে সব বুঝিয়ে বলে এসেছি। সে তোকে ভুল বুঝবে না। এবার অবাক চোখ ছোট করে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে,,,,,,

– বুঝিয়ে বলেছো মানে? তুমি আজ অনুদের বাসায় গিয়েছিলে???
– হ্যাঁ গিয়েছিলাম। তোর হয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছি। অবাকের কাছে এবার স্পষ্ট কেন অনু কল রিসিভ করছে না। কেন তাকে আজ একবারও কল করেনি। অনু নিশ্চয় অনেক কষ্ট পেয়েছে। অবাক রেগে বলে,,,,
– আম্মা কাজটা তুমি মোটেও ভালো করো নি। আমি অনুকে ভালোবাসি। বিয়ে যদি করতেই হয় অনুকেই করবো। দ্বিতীয় কারো কথা আমি ভাবতে পারবো না।

আর তুমি যদি আমার এই আবদার টুকু রাখতে না পারো তাহলে আমি চিরদিনের জন্য এ বাসা ছেড়ে চলে যাবো। তবুও অনু ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবো না। অবাক কথা গুলো বলে হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়। একবারের জন্যও পিছন ফিরে তাকায় নি।

অবাক রুমে ঢুকে আবার অনুকে কল করে। কল হচ্ছে বাট রিসিভ করছে না। অবাক অস্থির হয়ে উঠে। তার এবার সত্যি সত্যি কান্না আসছে। অবাক রুমের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত পায়চারী করতে শুরু করে। আর অনুকে কল করতে থাকে। কিন্তু অনু কিছুতেই কল রিসিভ করছে না।

অবাক অনুর মোবাইলে এসএমএস করে। ‘ অনু প্লীজ, ফোনটা রিসিভ করো। তোমার সাথে খুব দরকার।’ এসএমএস দেওয়ার পর আবার কল করে। কিন্তু না। এবারও ফোন রিসিভ করছে না। অবাক আবার এসএমএস করে।

‘অনু, আম্মার হয়ে আমি খুব সরি। প্লীজ, আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। প্লীজ আমার সাথে একটু কথা বলো। আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অনু একবার ফোনটা রিসিভ করো। অনু, প্লীজ। আমি তোমার কণ্ঠটা একবার শোনতে চাই। কলটা রিসিভ করো।’

অবাকের এসএমএস দেখে অনু আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। মোবাইলটা বুকে ধরে কাঁদতে শুরু করে। সে বুঝতে পারছে অবাকও তার মতোই কষ্ট পাচ্ছে। এবার অনুর কষ্ট আরো বেড়ে গেলো। ইচ্ছে করছে এক দৌঁড়ে অবাকের কাছে ছুটে যেতে। কিন্তু পারছে না। কিছুতেই পারছে না।

প্রিতি ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে সবাই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে। প্রিতিকে একা দেখে রিমি বলে,,,,,
-অনু আসে নি?
-না। আপুকে অনেক বললাম। আসবে না। কাজল রেখা মন খারাপ করে বলেন,,,,,

-এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ওও আসবে না। মেয়েটা আমার এভাবেই কষ্ট পাবে এখন। রিয়াদ বসে আছে মাথা নিচু করে। রিয়াদ বলে,,,,

-আমি কাল একবার অবাকদের বাসায় যাবো। মামীর সাথে লাস্ট একবার কথা বলে দেখবো। দেখি কি বলে। সব কিছুর লিমিট থাকা উচিত। দুজন মানুষ দুজনকে এতদিন ধরে ভালোবাসে। তার কি কোনো মূল্য নাই? অবাক কি বলে প্রিতি? সেও কি তার মায়ের সাথে একমত? প্রিতি মাথা নিচু করে বলে,,,,

-অবাক ভাইয়ার সাথে আপুর কথা হয়নি। আমাকে একবার কল করেছিল। আমি রিসিভ করিনি। তারপর আমি ফোন অফ করে দিয়েছি।

-আচ্ছা আমি কালকে দেখছি কি করা যায়। অবাকের সাথেও কথা বলবো মামীর সাথেও কথা বলবো। প্রিতি বলে,,,,

-তোমরা খেয়ে নাও। আমি আপুর খাবারটা রুমে নিয়ে যাই। প্রিতি একটা প্লেইটে খাবার ভেড়ে নিয়ে যায়। কাজল রেখা বললেন,,,,,,

-এট লাস্ট মেয়েটাকে কাঁদতে দেখতে হচ্ছে। একটু আগে আমার রুম থেকে ওর কান্নার আওয়াজ আসছিল। আমি ওকে শান্তা দিতে পওর রুমে গিয়েছিলাম। ওর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দরজা থেকে ফিরে এসেছি।

অবাক যদি অনুকে বিয়ে না করে তাহলে অনুর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। অনুকে এতো সহজে বিয়েও দিতে পারবো না। অনুর জীবনটা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে। আর অনুও এতো সহজে অবাককে ভুলতে পারবে না।

প্রিতি রুমে গিয়ে দেখে অনু আবার কাঁদছে। অনুকে এভাবে কাঁদতে দেখে প্রিতি বিচলিত হয়ে যায়। প্রিতি খাবারটা টেবিলের উপর রেখে বলে,,,,,

-আপু কি হয়েছে? এভাবে কাঁদছিস কেন? প্রিতিকে দেখে অনু চোখ মুছে ফেলে। ধীরে ধীরে মোবাইলটা এক পাশে রেখে দেয়। প্রিতি বলে,,,,,

-আপু, তুই যদি সব সময় এভাবে কাঁদিস আমাদেরও তো কষ্ট হয় বল। আম্মু কষ্ট পাচ্ছে। ভাইয়া কষ্ট পাচ্ছে। তোকে তো সবার দিকটা বিবেচনা করতে হবে। তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখলে আমরা কেউ কি ভালো থাকবো?

জানি তোর কষ্ট হচ্ছে। কষ্ট হওয়ারি কথা। কিন্তু যত কাঁদবি কষ্ট তত বাড়বে। নিজেকে শক্ত করতে হবে। মনকে স্থির করতে হবে। কষ্টটাকে জয় করতে হবে। ভালোবাসলেই কিন্তু সবাই তার প্রিয় মানুষটার সাথে থাকতে পারে না।

আজ তুই যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছিস এই জায়গায় তোর মতো আরো অনেক মেয়েরাই দাঁড়ায়। তারাও কষ্ট পায়। নিজেকে সামলেও নেয়। তোকেও শক্ত হতে হবে। প্রিতির কথা শোনে অনু নিজের চোখের পানিটা মুছে নেয়।

মনে মনে বলে, সত্যি তো। নিজের জন্য অন্যরা কেন কষ্ট পাবে? তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানে হয়না। তার মতো তো আরো অনেক মেয়ে আছে। যারা তার জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেক মেয়ে আছে যারা রিলেশন করে কিন্তু তাদের ফ্যামিলি জানে না।

তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলেও কাউকে বলতে পারে না। তাদের কষ্ট তো শুধু গভীর রাত জানে। অনু সোজা হয়ে বসে বলে,,,,,,

-সরি।
-আপু আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিস? সরি রে আপু। তোকে এভাবে কাঁদতে দেখে আমরা অভ্যস্ত না। তোর হাসি মুখ দেখে অভ্যস্ত। তোর চোখের পানি আমাদের কষ্ট দেয়। প্লীজ আপু। তুই শক্ত হো। অনু চুপ করে থাকে। প্রিতি আবার বলে,,,,,,,,

-আচ্ছা এসব কথা বাদ। এখন এদিকে আয় খাবি। আমি তোর খাবার নিয়ে এসেছি। অনু কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রিতি বলে,,,,,,

-একদম না করবি না। আমি শোনবো না। আজ আমি তোকে নিজের হাতে খাইয়ে দিবো। মনে আছে আগে যখন আমি কোনো কারণে রাগ করে না খেয়ে থাকতাম তখন তুই আমাকে খাইয়ে দিতি।

তখন আমার খুব ভাল্লাগতো। আজ আমি তোকে খাইয়ে দেই। দেখবি খুব মজা লাগবে। কারো হাতে খাওয়ার মজাই আলাদা। প্রিতি প্লেইট হাতে নিয়ে খাবার মেখে বলে,,,,,,

-আপু, আমি তোর হাতে কামড় দিতাম বলে তুইও কিন্তু আমার হাতে কিন্তু কামড় দিবি না। প্রিতির কথা শোনে অনুর অশ্রু ভেজা চোখেও হেসে উঠে। অনুর এক চিলতে হাসি দেখে প্রিতি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

রাত যত বাড়ছে অবাকের টেনশন তত বাড়ছে। সে একটুকু শান্তি পাচ্ছে না। কখনও বসছে। কখনও পায়চারী করছে। মাথার চুল টানতে টানতে অর্ধেক ছিড়ে ফেলেছে। বেচারা কেঁদেছেও কয়েকবার।

ইচ্ছে করছে পাখির মতো উড়ে যেতে অনুর কাছে। রাতটাও শেষ হচ্ছে না। এভাবে থাকা যাবে না। অনুর কাছে যেতে হবে। অনু নিশ্চয় অনেক কষ্ট পেয়েছে। অবাক গাড়ির চাবি খুঁজতে থাকে। চাবিটা কোথায় রেখেছে মনে পড়ছে না।

অবাক রাগে রুমে সব জিনিস ফেলে দেয়। কিন্তু চাবিটা কোথায়? চাবিটাতো পাচ্ছে না। অবাক নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। এভাবে উত্তেজিত হয়ে থাকলে চাবি কখনই পাওয়া যাবে না। অবাক বিছানায় বসে হাত দিয়ে মাথার চুল টানতে শুরু করে।

হঠাৎ তার মনে পড়ে। চাবিটা প্যান্টের পকেট থেকে বের করা হয়নি। অবাক আলমারি খুলে প্যান্টের পকেট চেক করে চাবিটা পায়। অবাক রুম থেকে বের হতে যাবে এমন সময় বিন্তি দৌঁড়ে আসে। সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,,,,,

-ভাইজান, আম্মার জানি কি হইছে। আম্মা কেমন কইরা শুইয়া আছে। কথাও কয়না। মনে হয় প্রেশারে এমন হইছে। দিন থেকেই আম্মার শরীর খারাপ। অবাক থমকে দাঁড়ায়। তার মাথা মৌমাছির মতো ভনভন করে। সারা পৃথিবী সহ ঘুরতে শুরু করে। অবাক এগিয়ে এসে বলে,,,,,

-আম্মা কোথায় এখন?
-নিজের রুমে। ফ্লোরে কেমন কইরা শুয়া আছে। আপনে তাড়াতাড়ি চলেন। অবাক দৌঁড় লাগায় মায়ের রুমে। গিয়ে দেখে বিলকিস বেগম ফ্লোরে পড়ে আছে। অবাক দৌঁড়ে গিয়ে বসে মায়ের পাশে। মাথাটা তুলে ধরে বলে,,,,,,

-আম্মা, তোমার কি হয়েছে? আম্মা কথা বলো? আম্মা তুমি কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো? আমিতো তোমাকে আঘাত করতে চাইনি আম্মা। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি। অবাক মাকে ধরে কাঁদতে শুরু করে। বিন্তি বলে,,,,,

-ভাইজান, আগে আম্মারে লইয়া হাসপাতালে চলেন। নাইলে আম্মারে বাঁচানো যাইবো না। আম্মার মনে হয় স্টোক করেছে। অবাক তাকিয়ে দেখে বিলকিস বেগম একটুকুও নড়ছে না। অবাক মাকে কোলে তুলে নেয়।

বিলকিস বেগমের বডিটা নিয়ে অবাক হাঁটতে পারছে না। কোনো রকম সে মাকে গাড়িতে তুলে। মাকে পিছনের সিট গুলোতে শোয়ে দিয়ে বিন্তিকে বলে,,,,,,

-আম্মাকে ধরে বসে থাকো। আমি খুব তাড়াতাড়ি হাসপাতলে পৌঁছাচ্ছি। অবাক গাড়ির ফুল স্পিডে ছাড়ে। রাস্তা ফাঁকা থাকায় আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যায় ফ্রেন্ডশিপ হসপিটালে।

যেমন বড় হসপিটাল তেমনি বেশি নিয়মকানুন। কিন্তু মায়ের এখন শারীরিক অবস্থা এতো খারাপ যে ভালো চিকিৎসার প্রয়োজন। টাকা যত খুশি যাক। কিন্তু মাকে সুস্থ হতেই হবে। মা ছাড়া অবাকের আপন আর কেউ নেই।

এই মা দশমাস গর্ভে রেখেছেন। লালন পালন করেছেন। বাবা মারা যাওয়ার পরও মা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাকে বড় করেছেন। এই মাকে কষ্ট দিলে আল্লাহর কখনই তাকে সুখে রাখবে না।

অবাকের সুবিধে হলো। এই হসপিটালের ডাক্তার ছোট মামা। উনার কল্যাণে খুব তাড়াতাড়ি অফিসিয়াল সব ফর্মালিটি শেষ করে। ডাক্তাররাও নিজেদের সাধ্যমতো চিকিৎসা শুরু করে দেয়।

চলবে——

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here