#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 11 (অন্তিম পর্ব)

এতে খুব তাড়াতাড়ি রাকিব পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে।রাকিবের এমন অস্থিরতায় ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে রাকিবকে ঘুমের ইঞ্জেকশন করে স্যালাইন দিয়ে রাখে।

১৪ ঘন্টা পরে মিতুর জ্ঞান ফিরলেও রাকিবের জ্ঞান ফিরে না।রাকিবের জ্ঞান ফিরে পরদিন।জ্ঞান আসার সাথে সাথেই রাকিব মিতুর জন্য অস্থির হয়ে উঠে।

জ্ঞান ফিরার পরে রাকিব যখন মিতুর ক্যাবিনে ঢুকলো তখন রাকিবকে দেখে মনে হলো, অনেক দামী একটা হারিয়ে যাওয়া সম্পদ সে ফিরে পেয়েছে।

রাকিব মিতুকে দেখে মিতুর বুকে মাথা রেখে কান্না করতে থাকে।মিতু রাকিবকে বাঁধা দিলো না।কান্না করলে হয়তো রাকিবের ভেতরে চাপা পড়া কষ্টটা বের হয়ে আসবে।এভাবে রাকিব অনেক্ষণ কান্না করার পর নিজেকে কিছুটা হাল্কা মনে হয়।

-কি মশাই,কান্না শেষ?আর একটু কাঁদো না।কাঁদলে তোমাকে একদম কিউট বাচ্চাদের মতো লাগে।

মিতুর কথা শুনে রাকিব মাথা তুলে মিতুকে দেখে।

-আমি কাঁদলে তোমার ভালো লাগে?

-ঠিক তা নয়।তবে তুমি যখন কাঁদছিলে তখন তোমাকে দেখতে ভালো লাগছিল।আর অন্যদিন হলে আমার ভালো লাগতো।কিন্তু আজ আমার মাথায় একটা কথা ঘুরছিল।

-কি কথা।
-আসলে তুমি এখন কাঁদছো কিসের জন্য সেই কথা।

-মানে?(অবাক হয়ে)
-মানে হলো আমি তো সম্পূর্ণ সুস্থ।এখন তোমার খুশিতে হাসা উচিত।কিন্তু তুমি তা না করে কান্না করছো।এর মানে হলো তোমার আর দ্বিতীয় বিয়ে করা হলো না।আর এই কারনে তুমি কাঁদছো।

-তোমার অনুমতি পেলে কিন্তু এখনো আমি দ্বিতীয় বিয়েটা করতে পারি।

-কিহ!হারামি,কুত্তা,বনমানুষ একবার বাসায় চল।আমি তোকে কি করবো দেখিস। আমি থাকতেও আবার দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তা করছিস?

-হু,আমি আমার পাখিটাকে আবার বিয়ে করতে চাই।এতে আমার বউটার স্বপ্নও পূরণ হবে আর আমারো আরেকটা বিয়ে করা হবে।

-বাসায় একবার চল।তোর জন্মের মতো বিয়ের স্বাদ মিটিয়ে দিবো।
-হা হা হা।আচ্ছা চলো।আর একটা বিয়ে করতে পারলে আর কোনোদিন বিয়ের কথা কমু না।

অবশেষে মিতু সুস্থ হয়ে তার সংসার নামক স্বর্গে ফিরলাে। মিতুর অভারী কেটে ফেলার কারণে মিতু আর কখনোই মা হতে পারবে না। এটা একটা নারীর জন্য বিশাল একটা কষ্টের গভীর ক্ষত।

মিতু সব সময় রাকিবকে নিজের ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতো।কিন্তু মা হওয়ার তৃপ্তি না পাওয়ার কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতো।কখনও কারো সামনে প্রকাশ করতো না নিজের কষ্টের কথা।

রাকিব মিতুর সেই অক্ষমতার কষ্টটা গভীর ভাবে অনুভব করে ছিল। যে মানুষটা মিতুর ভেতরটা দেখতে পায় তার কাছে মিতুর লুকায়িত কিছু নেই।

তাদের খুনসুটি ভালোবাসায় কেটে যায় আরো দুটি বছর।এই দুই বছরে মিতুর চোখ অসংখ্যবার জলে ভিজেছে।রাকিব নিজের সব টুকু দিয়ে মিতুকে ভরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।

নিজের কাজের ফাঁকে সবটা সময় মিতুকে দিয়েছে।কখনও মিতুকে নিঃস্ব ফিল করতে দেয় নি।মিতুর অক্ষমতার দিকটা কোনোদিন বুঝতে দিতে চাইতো না।

আজ রাকিব আর মিতুর পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রাকিব অফিসে চলে যায়।মিতু বাসায় একা মন খারাপ করে বসে থাকে।এমন সময় রাকিব বাসায় কলিং বেল বেজে উঠে।

মিতু গিয়ে দরজা খুলে রাকিবকে দেখে অবসক হয়ে যায়।

একটা ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে মিতুর সামনে এসে রাকিব বললো-“টুনির মা তোমার টুনিকে এনেছি”

রাকিব মিতুকে আজ এক বিস্ময়কর গিফট দিয়ে দিল।রাকিব অনাথ আশ্রম থেকে একটা তিন মাসের মেয়ে বেবী এনে মিতুকে গিফট করলো।মিতুর চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।

মিতু মুগ্ধ নয়নে রাকিবের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বললাে,,,,,

তোমার মত স্বামী যদি পৃথিবীর সব নারীর জীবনে থাকে তবে চিরুণী তল্লাসী করে একটাও দুখী নারী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আজ মিতুর নিজেই নিজের স্বামীকে সেরা স্বামী প্রাপ্তির এওয়ার্ড দিতে ইচ্ছে করছে।

মিতু বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে মাতৃসুখ অনুভব করলাে।যে সুখটা ছিল রাকিবের দেয়া সেরা উপহার।

পৃথিবীর সেরা গিফট পেয়ে অবশেষে মিতু মা হলাে। টুনির মা।সেই ছোট্ট টুনিকে নিয়ে শুরু হলো রাকিব মিতুর নতুন খুনসুটি।বেঁচে থাকুক তাদের এই ভালোবাসা আজীবন।চলতে থাকুক তাদের খুনসুটি প্রেম।

ভালো থাকুক ভালোবাসা। ভালো থাকুক ভালবাসার মানুষ গুলো।

-সমাপ্ত-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here