#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 7

রাকিব ধীরে ধীরে তার ভালোবাসার স্পর্শ মিতুর সারা শরীরে পৌঁছে দিতে থাকে।মিতুর বুকের উপরে থাকা আঁচলটা সরিয়ে মিতুর গলায় ডুবে যায় রাকিব।দুজনেই ভেসে যায় ভালোবাসার সাগরে।এক অন্যরকম সুখের রাজ্যে।যেখানে আছে শুধু সুখ আর সুখ।

বিকালের দিকে রাকিব আর মিতু দুজনে মিলে মার্কেটে যায়।দুজনে পছন্দমতো অনেক কাপড় কিনে।সাথে রাখাইন মার্কেট থেকেও কিছু কাপড় কিনে নেয়।সন্ধার দিকে তারা রিসোর্টে ফিরে আসে।

রাকিব ফ্রেস হয়ে এসে মিতুকে বলে রেডি হয়ে নিতে।মিতু কোনো কথা না বাড়িয়ে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রাকিব একটা সাদা গ্রাউন হাতে দাঁড়িয়ে আছে।রাকিবও সাদা পাঞ্জাবি পড়ে।

-এই নাও,এখন এই ড্রেসটা পড়ে আসো
-এটা আমি পড়বো?এটা আমার?
-হু,এটা আমার বাবুইটার।যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো আমি অপেক্ষা করছি।

মিতু ড্রেসটা হাতে নিয়ে আবার ওয়াশরুমে ডুকে যায়।১০মিনিট পর বাইরে বের হয়ে আসলেতো রাকিবের চোখ কপালে।সে মিতুর দিকে হা হয়ে থাকে।মিতু রাকিবের সামনে এসে দাঁড়ায়।রাকিব তো সেই কখন থেকে হা করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

-আমাকে কেমন লাগছে
-,,,,নিশ্চুপ,,,,
-কি হলো কিছু বলছো না কেন?
-…………
মিতু রাকিবের সামনে এসে রাকিবের হাতে একটা জোরে চিমটি কাটে,,

-আউছ,,,,টুনির মা,কি করছো
-মনে হচ্ছে তুমি মঙ্গল গ্রহে চলে গেছো।তাই চিমটি দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসলাম।
-তাই বলে এতো জোরে,অহ।কিন্তুর জানো টুনির মা,তোমাকে আজ যা লাগছে না।মুখে বলে বুঝাতে পারবো না।রাকিব মিতুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে মিতুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ বুনে দেয়।

আজ রাকিব নিজের হাতে মিতুকে অনেক সুন্দর করে সাজায়।আজ মিতুকে এতো সুন্দর লাগছে যে,আজ কোনো পরী তাকে দেখলেও হিংসে করতো।

তারপর রাকিব আর মিতু দুজনেই রিসোর্ট থেকে বের হয়ে যায়।কিছুদূর যাওয়ার পর রাকিব মিতুর চোখ দুটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়।

-কি হচ্ছে কি?আমার চোখ বাঁধলে কেন?
-হুস,,এখন আর কোনো কথা নয়।একটু অপেক্ষা করো জানতে পারবে।

রাকিব মিতুকে নিয়ে কিছুদূর এসে আবার চোখ দুটি খুলে দেয়।মিতুর তো সামনের দিকে তাকিয়ে মুখটা হা হয়ে যায়।গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে একটা সরু রাস্তা সমুদ্রের তীর পর্যন্ত চলে গেছে।রাস্তার শেষ প্রাপ্তে একটা নৌকা সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।

রাকিব মিতুর দিকে নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলে মিতু নিজের হাতটা রাকিবের হাতের উপর রাখে।রাকিব আর মিতু ফুলের উপর দিয়ে হাটতে থাকে।

নৌকার কাছে গিয়ে রাকিব মিতুকে খুলে তুলে নিয়ে নৌকায় উঠে পড়ে।মিতুর এতো খুশি লাগছে যা বলার ভাষা নেই।মিতু তো অবাকের উপর অবাক।নৌকাটা অনেক সুন্দর করে সাজানো।তার উপর নৌকাতেই লান্সের ব্যবস্থা করেছে রাকিব।

নৌকা চলতে থাকে ধীর গতিতে।রাকিব মিতুকে একটু সামনে নিয়ে বসিয়ে দেয়।কোরাল মাছ,সোনালি মাছ,করাত মাছ,চিংড়ি মাছ,নানা রকম খাবার সাজানো।রাকিব নিজের হাতে মিতুকে খাইয়ে দিতে থাকে।এমন সময় মিতুর আবার সেই পেইনটা শুরু হয়।সাথে সাথেই মিতু রাকিবের বাহু কামছে ধরে।

রাকিব তাকিয়ে দেখে মিতুর মুখে ঘাম জমে গেছে।আর মুখের রিয়েকশনটাও অদ্ভুদ রকম হয়ে গেছে।

-জানপাখি,কি হয়েছে?এমন করছো কেন?
-পে””ই””ন

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মিতু জ্ঞান হারায়।মিতুর এমন অবস্থা দেখে রাকিবের প্রায় মরার মতো অবস্থা।কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।বেচারাতো কেঁদেই ফেলে।

রাকিব মিতুকে কোলে তুলে নিয়ে কাছের একটা হসপিটালে ভর্তি করায়।রাত ৮টায় মিতুর জ্ঞান ফিরলে আর এক মুহুর্তও সেখানে অপেক্ষা না করে মিতুকে নিয়ে বাসায় রওনা দেয়।পেইনটা হওয়ার তেমন কোনো কারণ ডাক্তার বলতে পারে নি।

খুব সকালে তারা ঢাকায় চলে আসে।এতোটা পথ জার্নি করার কারনে দুজনেই ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেষ্ট নেয়।রাকিব দুপুরের দিকে মিতুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।মিতু কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যেতে রাজি না।কিন্তু রাকিবের সাথে পেরে উঠে নি।বাধ্য হয়েই তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।

ডাক্তার কাছে গিয়ে কয়েক রকমের টেষ্ট করায়।সেদিন কোনো রিপোর্ট দেয়নি।ডাক্তার বলে দিয়েছে রিপোর্ট পরদিন এসে যেন নিয়ে যায়।তাই রাকিব আর মিতু বাসায় ফিরে আসে।রাকিবের এই মুহুর্তটা কেন জানি কষ্টের মনে হলো।মনে একটা অস্থিরতা কাজ করছে।কিন্তু সেটা মিতুকে বুঝতে দেয় নি।

পরদিন ১ টায় মিতুর রিপোর্ট আসার কথা।রাকিব ৯টায় অফিসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়।১টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে রিপোর্ট নিয়ে বাসায় আসে।চোখে মুখে ভয়ের চাপ।বাসায় আসতেই মুখোমুখি মিতু আর রাকিব,,,,

-কি হয়েছে তোমাকে এমন উস্কো কুস্কো লাগছে কেন?রিপোর্ট এসেছে?
-হু
-রিপোর্টে কি আসছে?
-তেমন কিছু না।তুমিতো বাহিরে খাবার বেশি খাও।ঐ ভাজা পোড়ার জন্য এমন পেইন হতো।ডাক্তার বলেছে এখন থেকে আর বাহিরের খাবার খাওয়া যাবে না।আর কিছুদিন মেডিসিন নিতে হবে।তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।

-বাহিরের খাবার খাওয়া যাবে না মানে?তাহলে আমি খাবো কি?আমারতো বাহিরের খাবার খেতেই ভালো লাগে,
-এখন থেকে ঘরের তৈরি খাবার খাবে।বাহিরে আর খাবে না।
-এ্যা,বললেই হলো।আমি এই নিয়ম মানতে পারবো না।আমি বাহিরের খাবার খাবই।
-আহ! টুনির মা।সব সময় এমন করো নাতো।ডাক্তার যা বলেছে তা শুনো।
-না আমি কিছুতেই এসব শুনতে পারবো না।আর মেডিসিন আমার একদম ভালো লাগে না।আমি খাবো না।

রাকিব একটু মিতুর কাছে এগিয়ে এসে মিতুকে টেনে নিজের দুই বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।মিতু খেয়াল করেছে,রিপোর্ট নিয়ে আসার পর থেকেই রাকিবের মধ্যে কেমন একটা নিস্তেজ ভাব।

বেশ কিছুক্ষণ দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে থাকে।রাকিব বৃথা চেষ্টা করলো মিতুর সামনে হাসার।কিন্তু বারবার তার মুখ দিয়ে শুষ্ক হাসি আসে।

এভাবে কেটে গেলো কয়েকটা দিন।

রাকিব আগেও মিতুর অনেক কেয়ার করতো।কিন্তু ইদানিং একটু বেশিই করে।ইদানিং তো রাকিব ঠিকঠাক অফিসও করে না।

মিতু এই কয়দিনে খেয়াল করলো রাকিব অনেকটা বদলে গেছে।সারাক্ষণ মিতুর খেয়াল রাখে এমন ভাবে যেনো মিতু একটা বাচ্চা। আর যে মানুষটাকে বলে বলেও নামাজ পড়াতে পারিনি সে কেমন হুজুরের মত নামাজী হয়ে গেলো। অফিসের কাজে রাকিবের মন নেই। বিয়ের প্রথম থেকেই সে মিতুর প্রচুর সময় দেয়ার চেষ্টা করেছে।

কিন্তু মিতুর এই পেট ব্যাথার রোগটা হবার পর থেকে সে আরো বেশি মিতুকে সময় দেয়া শুরু করেছে। মিতুকে সময় মত ওষুধ খাওয়ানো যেনো তার গুরুত্বপূর্ণ ডিউটি। প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে নিয়ে যাওয়া।

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here