#খুনসুটি_প্রেম

writer : সুরমা
part: 2

কথাটা বলেই রাকিব হাসতে লাগলো।মিতু রাকিবের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাতেই রাকিবের মুখ থেকে হাসি উড়ে গেলো।রাকিব বুঝতে পারলো,এখন আর এখানে থাকা যাবে না।তাহলে কাল বৈশাখী ঝড় উঠবে।তাই সে চুপটি করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

রাকিব নিচে এসে নাস্তা করে অফিসে চলে যায়।মিতু নিজের রুমটা গুছিয়ে নিচে এসেও সব কিছু গুছিয়ে নেয়।তারপর শাশুড়ি মায়ের সাথে কিছুক্ষণ বসে গল্প করে।

রাকিব আর মিতু এক সাথে কলেজে পড়া শুনা করতো।কলেজ থেকে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।দুজন দুজনকে পছন্দ করলেও কেউ কাউকে বলতো না। মিতু যখন অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে রাকিব তখন মিতুকে প্রপোজ করে।রাকিব মিতুকে প্রাপোজ করার ৪৫ মিনিট পর একসেপ্ট করেছিলাে।রাকিব দেখতে মাশ্আল্লাহ অনেক স্মার্ট।তার উপর তার চরিত্রও অনেক ভালো।মিতুর প্রতি রাকিবের ভালোবাসা দেখেই মূলত মুগ্ধ হয়েছিলো মিতু।তাছাড়া রাকিবকে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও মিতুর ছিল না।আর কারনও ছিলো না কোনো।

রাকিব মিতুকে অনেক ভালোবাসে।মিতুও রাকিবকে অনেক ভালোবাসে।সব কিছু ছাড়া মিতু থাকতে পারবে।কিন্তু রাকিবকে ছাড়া সম্ভব না।

তাদের ভালোবাসায় কোনো মান অভিমান ছিল না।তারা দুজন দুজনকে বুঝতাে।একজনকে ছাড়া যেন অন্যজন শূন্য।তাদের প্রতিদিন চলতো প্রেমের খুনসুটি,

প্রতিদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখা করা।পার্কে বসে আড্ডা দেওয়া।ফুচকা খাওয়া।রেস্টুরেন্টে যাওয়া।আর রাত জেগে কথা বলা ছিল তাদের নৃত্য প্রয়োজনীয় কাজের মধ্যে একটা।

প্রত্যেকটা ঘন্টায় কথা না হলে অস্থির হয়ে যেতাে তারা দুজন।সুন্দর করে চলছিল আমাদের খুনসুটি প্রেম।

তিন বছর রিলেশন থাকার পর তারা দুজনেই দুজনের পরিবারের কাছে তাদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিলাে।প্রথমে মিতুর পরিবারের কেউ তাদের রিলেশন মেনে নিতে রাজি হল না।কারন,রাকিবের কোনো চাকরী ছিল না।।কিন্তু দুজনের ভালোবাসার কাছে দুই পরিবারই অবশেষে নতি স্বীকার করে।

তারা দুজন দুজনের প্রেমের নেশায় আসক্ত হয়ে গেছিলাে।একে অপরের জন্য মরতেও পারে।

পাচঁ বছর রিলেশনের পর দুই পরিবার মিলিত হয়ে তাদের বিয়ে দেয়।ধুমধাম করেই হয় তাদের বিয়ে।

বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই রাকিব একটা চাকরী জোগার করে ফেলে।মিতু রাকিবকে বলেছিলাম চাকরী করার জন্য।কিন্তু,রাকিবের এক কথা।সে তার সুন্দরী বউকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে কাজ করতে দিতে পারবো না।তাই আর মিতুর পক্ষে চাকরী করা হয়নি।

বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে আজ মিতু রাকিবকে কিছু উপহার দিবে।তাই রাকিব অফিসে যাওয়ার পর মিতু মার্কেটে চলে যায়,,

মিতু মার্কেটে গিয়ে সারা মার্কেট ঘুরলো।দেবার মতো কিছুই পছন্দ হচ্ছে না তার।মিতু রাকিবকে এমন কিছু উপহার দিতে চায় যা দিলে মিতুরও কিছুটা উপকার হবে।অনেক চিন্তা ভাবনার পর মিতু একটা গিফট কিনলো।মার্কেট থেকে আসতে অনেক দেরি হলো মিতুর।মার্কেট থেকে গিফট কিনে বাসায় ফিরে দেখে তার সম্মানিত স্বামী অফিস থেকে বাসায় ফিরে এসেছে। একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়ে ছিলাে মিতু,কিন্তু সেটা আর হলো না।

দরজায় যেতেই রাকিব এসে সামনে দাঁড়ালো মিতুর।মিতুকে দেখে রাকিবের দুটি চোখ অটোমেটিক বড় হয়ে গেলো। হবে নাই বা কেনো? এমন একটা গিফট এনেছে যেটা লুকিয়ে রাখার মত নয়।রাকিব বিস্ময়কর স্বরে বললো-

-টুনির মা,তুমি এসব কি এনেছো?

-কেনো এর আগে এটা হাটে-বাজারে এমনকি মানুষের বাসায় দেখনি??আজিব প্রশ্ন,

-দেখেছি।বাট তুমি এটা কেনো এনেছো?

-তোমার জন্য এনেছি,

-আমার জন্য মানে?

-এটা আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে তোমার গিফট।আমি তোমার জন্য কিনেছি।

-এটা আমার গিফট!!তাও আবার বিবাহ বার্ষিকীর??এমন গিফট আগে কেউ কখনো তার সদ্য নতুন বিবাহিত বরকে দিয়েছে বলে তো আমার মনে হয় না।

– প্রথম ককথা তুমি মোটেও আমার সদ্য বর না।আমাদের তিন বছর হয়েছে বিয়ের।আর দ্বিতীয় কথা হলো, কেউ দেয়নি তো কি হয়েছে। আমি দিবো।তোমার কোনো আপত্তি আছে?

-একটু একটু আছে,।।আর তিন বছর হলেই বা কি?আমি তোমার নতুন বর।

-কেনো?আপত্তি থাকার কি কারন?

-এই গিফট যদি আমি নেই তাহলে তো আমি তোমাকে ভুলে যাবো টুনির মা।আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি কমে যাবে।

-সেটাই তো আমি চাই।এই জন্যই আমি তোমার জন্য এই গিফট আনলাম।

-মানে কি??

-মানে হলো আমি চাই তুমি আমাকে ভালো না বেসে এই গিফট টাকে ভালোবাসো।আমি চাই তুমি আমাকে একটু ভুলে থাকো।

-না এটা হবে না।আমি এটা হতে দিবো না।তুমি যতই বলো আমি এই গিফট নিতে পারবো না।

-হবে না মানে?আমি এটা হইয়েই ছাড়বো।তোমাকে এটা নিতেই হবে।

-আমি এই গিফট তো কখনই নিবো না।তুমি কি আমাকে জোর করে দেবে নাকি?

-অফকোর্স।সাদরে গ্রহণ না করলে জোর করেই দিবো।যেহেতু গিফট এনেছি,সো তোমাকে নিতে হবে।আর কোনো কথা নয়,,

-প্লীজ টুনির মা, এটা করো না!আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি গো টুনির মা।তুমি আমার সাথে এমন করছো কেন গো??আমি কি এমন অন্যায় করেছি গো যার জন্য আমাকে তোমার থেকে আলাদা করে দিতে চাইছো?

-তুমি আমাকে দেওয়া কথা রাখোনি। এটা তারই শাস্তি মনে করো।আর তুমি আমার থেকে একটু দূরে থাকে।তাহলো ভালোবাসা আরো বাড়বে।

-আমি তোমাকে দেওয়া কোন কথা রাখিনি?আমিতো সব সময় তোমার কথা মতো চলি।উঠতে বললে উঠি,বসতে বললে বসি।আর জীবনে যে কথা দেই নি সেই কথাও রেখেছি।তবে এখন কোন কথার কথা বলছো যা আমি রাখি নি।আর তুমি আমাকে তার জন্য এমন শাস্তি দিচ্ছো।

-তুমি কথা দিয়েছিলে বিয়ের পর তোমার বুকটা হবে আমার মাথার বালিশ।আমি প্রতিদিন তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো। কিন্তু সেটা তো হয়েইনি বরং তুমি আমাকে কোলবালিশ বানিয়ে ফেলেছো।

রাতে শুই তোমার বুকে।কিন্তু সকালে জেগে দেখি আমার মাথার নিচেতো কিছুই নেই।বরং তুমি আমাকে নিজের কোলবালিশ বানিয়ে ফেলেছো।তুমি আমাকে উল্টাইয়া পাল্টাইয়া,তোমার হাতির মতো হাত পায়ের নিচে ফেলে আমাকে পিষে ফেলো।

আমার নরম শরীরটাকে ভর্তা বানিয়ে ফেলো।তোমার জন্য আমি শান্তিতে ঘুমাতেও পারি না।

তাই আমি তোমার জন্য কোলবালিশ কিনে এনেছি।বিবাহ বার্ষিকীর সেরা গিফট।এখন থেকে এটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবা।যত খুশি এটাকে পিষে ভর্তা বানাও।আমার কোনো আপত্তি নেই।

– আসলে ঘুমিয়ে গেলে আমার হুশ থাকে না টুনির মা।তাই বলে আমার বেহুশ অবস্থার অপরাধের শাস্তি তুমি হুশ থাকা অবস্থায় দিবা এটা কিন্তু অবিচার।😭😭😭😭তুমি আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও নাগো টুনির মা।আমি এটাকে মেনে নিতে পারবো না।

–হুশ বেহুশ বুঝি না।তোমার জন্য আমি এই তিন বছরের মধ্যে তিনটা রাতও ঘুমাতে পারিনি।তাই শাস্তি তোমাকে দিয়েই ছাড়বো।আজ থেকে এটাই তোমার রাতের সঙ্গী।

–আমি যে তোমাকে এতো দিন এতো ভালোবাসা দিলাম তার বেলায় কি??না হয় তোমাকে একটু কোলবালিশেই বানিয়েছি।তাই বলে কি আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নাই!!!আর আমি যখন ব্যাচেলর ছিলাম তখন তো কোলবালিশ এভাবে নিয়েই ঘুমাতাম।তাই অভ্যাস হয়ে গেছে।রাতে ঘুমানোর পর মনেই থাকে না পাশে বিছানায় কোলবালিশ আছে না বউ আছে।

–এত্তো কিছু বুঝি না।এত্তো বাহানা করেও কোনো লাভ হবে না টুনির বাবা!আমি তোমাকে শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।সে তুমি যাই বলো।

-জানি লাভ হবে না।তাও বলছি এই শাস্তি থেকে কি আমাকে মুক্ত করার কোনো উপায় নাই গো টুনির মা,

-টুনির বাবা,এই শাস্তি তোমার জন্য ফিকস্ট হয়ে গেছে।এখন আর পাল্টানো যাবে না।

মিতুর কথা শুনে রাকিব মিতুর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।তার পর হঠাৎ নজর পড়লো একটা মাথার বালিশের উপর।কোলবাশির সাথে মাথার বালিশ?খুবই আশ্চর্য হয়ে রাকিব মিতুকে জিজ্ঞাসা করলো,,,,

-টুনির মা,এই কোলবালিশটা না হয় আমার জন্য এনেছো। কিন্তু মাথার বালিশটা কার জন্য এনেছো গো?

-ওটা আমার জন্য!!

মিতুর কথা শুনে রাকিব এমন একটা হাসি দিলো যেনো মিতু হাইস্যকর কিছু বলেছে।

-এতো দাঁত বের করে হাসার কি হলো?আমি হাসির মতো কি বলেছি শুনি??আজিব,

তাও সে হেসেই যাচ্ছে।তার হাসি দেখেতো এবার মিতুর রাগে শরীরে আগুন ধরে গেলো। মিতুর হাব ভাব দেখে রাকিবে হাস্যজ্জ্বল মুখটা ধপ করে বন্ধ হয়ে গেলো। তারপর রাকিব মুখটা মিতুর কানের কিছুটা কাছে এনে ভয়ে ভয়ে ফিস ফিস এর চেয়ে সামান্য জোরে বললো-

-জানো টুনির মা, এর আগে কখনো কাউকে দেখিনি নিজের বিবাহ বার্ষিকীর গিফট নিজেই কিনে এনেছে।তুমিই প্রথম বার নিজের গিফট নিজে কিনে নিয়ে আসলে।আমার জন্য এনেছো ভালো কথা নিজের জন্য কেন আনলে???আমাকে বললেতো আমিই এনে দিতাম।

কথাটা বলেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মিতু বুঝতে পারলো রাকিব ভয়ে পালিয়ে গেছে।মিতু বালিশ গুলো খাটে সুন্দর করে রেখে ওয়াশরুমে ডুকে গুলো।ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে দেখে বিছানায় লাল একটা সিল্কের শাড়ি,সাথে ম্যাচিং করা অর্নামেন্টস্।শাড়ির সাথে এক ঝুড়ি কাচের চুড়ি।সাথে আর একটা ছোট চিরকুট।মিতু চিরকুটটা হাতে নিয়ে দেখে রাকিবের হাতের লেখা।চিরকুটে লেখা,,,,

এই শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে ছাদে চলে আসো।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।চিরকুটা দেখে মিতু কিছুটা অবাক হলো।মিতু বুঝার চেষ্টা করলো রাকিব কি করতে চাইছে এই সন্ধ্যায়।কিন্তু কিছুই মাথায় ডুকলো না।মিতু শাড়িটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলো।যাই হোক, শাড়িটা মিতুর খুবই পছন্দ হয়েছে।

এই প্রথম রাকিব মিতুকে না জানিয়ে নিজে পছন্দ করে কিছু কিনে আনলো।এটা মিতুর জন্য একটা মারাত্মক সারপ্রাইজ।রাকিব মিতুকে সব কিছু দিলেও কোনোদিন ঘুছিয়ে সারপ্রাইজ দিতে পারে না।কিছু কিনে দিতে হলেও সাথে মিতুকে নিয়ে যায়।এই প্রথম মিতুকে না জানিয়ে নিজে থেকে কিছু কিনে নিয়ে আসলো।মিতু একটা মুছকি হাসি দিয়ে শাড়িটা পড়ে নিলো।দুহাত ভর্তি কাচের চুড়ি,মুখে হাল্কা মেকাপ,সাথে ম্যাচিং করা কানে দুল,গলায় একটা পেনডেন,চুল গুলো খুলে দিলো। হালকা সাজেও লাল শাড়িতে অপরূপ সুন্দর লাগছে মিতুকে।

মিতু রুম থেকে বের হয়ে সোজা ছাদে চলে এলো।ছাদের চারপাশ অন্ধকার।সন্ধায় নেমে আসা কালো ছায়ায় কিছুই ভালো করে দেখে যাচ্ছে না।মিতুর কিছুটা ভয় লাগলো।

মিতু এদিক ওদিক তাকিয়ে রাকিবকে খুঁজতে লাগলো।দরজা থেকে আর একটু সামনে এগিয়ে যেতেই ছাদে আলো জ্বলে উঠলো।ছোট ছোট কিছু রং বেরং এর লাইটিং হচ্ছে।

ছাদের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নিলো মিতু।ছাদটা বিভিন্ন রকমের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ছাদের ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বড় করে লাভ সেইড আকাঁ।লাভটার পাশে সাদা এবং লাল পাপড়ি দিয়ে লেখা ৩বছরের ভালোবাসা।মিতুর খুব খুশি খুশি লাগছে।এতোটা আনন্দ লাগছে যে ইচ্ছে করছে ধুমধাম নাচ শুরু করে দিতে।(দিলবার দিলবার,লুঙ্গি ডান্স লুঙ্গি ডান্স।)

খুলা আকাশের নিচে সন্ধার হালকা বাতাস এসে এলোমেলো করে দিলো মিতুর চুল গুলো।রাকিব এসে মিতুর পাশে দাঁড়িয়ে একটা গাজড়া গুজে দিলো মিতুর চুলে।

মিতুর কোমড়ে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো রাকিব।মিতুর পিঠটা রাকিবের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।মিতু চুপটি করে রইলো।রাকিব মিতুর চুল গুলো একপাশ থেকে সরিয়ে মিতুর ঘাড়ে একটা কিস করলো।

রাকিবের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়ায় মিতুর শরীরটা একটু নড়ে উঠলো।বুকে ধুকবুক শুরু হয়ে গেলো।রাকিব তার মুখটা মিতুর কানের পাশে নিয়ে বললো,

💔🌹 HAPPY 3RD RESIGNEDLY

ANNIVERSARY🌹💔
টুনির মাম্মাম।
রাকিবের কথায় মিতু একটু লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে।রাকিব মিতুকে আরেকটু শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে।তার পর নিজের মাথাটা মিতুর মাথার সাথে লাগিয়ে মিতুকে উপরের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলো।

মিতু রাকিবের আঙ্গুল ফলো করে উপরে থাকিয়ে আরো আশ্চর্য হলো।কয়েকশো বেলুন আকাশে উড়ে যাচ্ছে।আকাশে মিটমিট জ্বলছে জোনাকি।ছাদের এক পাশে একটা বড় পর্দায় বিভিন্ন কালারে লেখা ভেসে উঠছে।

I LOVE YOU বাবুটা
রাকিবের এই সব সারপ্রাইজ দেখে মিতুর খুশিতে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম।রাকিব মিতুকে ছেড়ে দিয়ে তার সামনে গিয়ে হাটু ভেঙ্গে বসে নিজের হাতটা মিতুর দিকে এগিয়ে দিলো।

মিতু নিজের হাতটা রাকিবের হাতে রাখে।রাকিব পকেট থেকে একটা রিং বের করে মিতুর হাতে পড়িয়ে দেয়।রিংটায় পাথর দিয়ে R লিখা।রাকিবের দেওয়া প্রত্যেকটা সারপ্রাইজে মিতু অবাক হচ্ছে।

মিতু এতোটাই শক্ড যে,রাকিবকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।রাকিব মিতুর হাতে একটা চুমু দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।মিতু এতোক্ষণে খেয়াল করলো,

রাকিবকে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সাদা একটা পাঞ্জাবি,কালো জিন্স।দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি হট।মিতু রাকিবের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকে।রাকিব মিতুকে টেনে একটু অন্য পাশে নিয়ে আসে।

এখানে একটা ছোট টেবিলে একটা লাভ সেইপের কেক।কেকটার উপরে লিখা,ভালোবাসার তিন বছরে রাকিব,মিতু।পাশেই আর একটা টেবিলে মিতুর পছন্দের খাবার।মিতু একবার রাকিবের দিকে একবার কেকটার দিকে তাকাচ্ছে।মিতুর চোখে কেমন উৎসুক একটা ভাব,।সে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো,

রাকিব বুঝতে পেরেছে মিতু এতো সারপ্রাইজ মোটেও তার কাছে আশা করে নি।মিতু সারপ্রাইজ পেতে এবং দিতে খুব ভালোবাসে।কিন্তু দুঃখের বিষয় রাকিব তেমন ভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারে না।তার এতো সারপ্রাইজে মিতু এতোটা শক্ড হয়েছে যে কিছুই বলতে পারছে না।

-কি হলো টুনির মা,,কি এতো চিন্তা করছো?কেকটা কাটবে না??
-আজ তোমার কি হয়েছে বলোতো?শরীর ঠিক আছে?এতো সারপ্রাইজ?এতো ভালোবাসা?আমাদের বিয়ের তিন বছর হয়ে গেলো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আজ নতুন বিয়ে হয়েছে আমাদের

-কেন?এর আগে কি আমি কখনও তোমায় এতো ভালোবাসি নি নাকি?আর তিন বছর হয়েছো তো কি হয়ে?ভালোবাসা কি কমে গেছে নাকি?মাত্র তিন বছর হলো।আমারর মনতো আশা করি,

এই তিন একদিন তিরিশ হবে,
তিনশোর পথে প্রার্থনা রবে।

আর যখন তিনশো বছর পূর্ণ হবে তখনও আমার ভালোবাসা একটুও কমবেনা।ঠিক একি রকম থাকবে।আজীবন তোমায় এমন করেই ভালোবাসবো।দুই বড়োবুড়ি এই দিনটা উৎযাপন করবো,

-বাপরে বাপ,আজকে মনে হয় একটু বেশিই হলো।যাই হোক,চলো কেকটা কেটে ফেলি।

রাকিব আর মিতু দুজনে মিলে কেকটা কাটে।একে অপরকে কেক খাইয়ে দেয়।দুজন একসাথে কিছুক্ষণ খুনসুটি চলে।রাকিব মিতুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মিতু,ভ্রু কুচকে রাকিবকে ইশারা করে,

-কি দেখছো এভাবে,
-আমি দূর হতে তোমাকেই দেখেছি
আর মুগ্ধ এই দুটি চোখে চেয়ে থেকেছি l
জানিনা এই জীবনে দামি কি চেয়েছি
শুধু জানি,সবচেয়ে মূল্যবান তোমায় পেয়েছি।

টুনির মা,আজ আমি খুব খুশি।তোমাকে এতোটা আপন করে পেয়ে।জীবনে আর কোনো চাওয়া নেই।তুমি আমায় একটু ভালোবাসা দিও।সারাজীবন এই হাতে হাত রেখো।

আমাকে এতো কিছু দিতে হবেনা।শুধু তোমার শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দিতে চাই।তোমার ভেজা চুলের পানিটা মুছে দিতে চাই।হাটার সময় তোমার হাতটা ধরে হাটতে চাই।

সব সময় একটা প্লেইটে খাবার খেতে চাই।তোমার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে আমার দিনটা শুরু করতে চাই।ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পর তোমার শাড়ির আঁচলে আমার মুখের ঘামটা মুছতে চাই।

এই টুকু সুযোগ আমাকে দিও।কথা দিলাম,সারা জীবন এই বুকের গহীনে তোমায় আগলে রাখবো।দেবেতো আমায় এই টুকু?

-হু,অনেক ভালোবাসবো তোমায়।সারাজীবন তোমায় এমন করেই ভালোবেসে যাবো।কোনোদিনও দুজন আলাদা হবো না।এই চাঁদনি রাত সাক্ষী রইলো আমাদের ভালোবাসার।এই মিতুর প্রতিটা নিঃশ্বাস চলবে রাকিবের জন্য।মিতু জনম জনমের জন্য রাকিবের।

দুজন কিছু সময় দুজনকে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে দিলো দুজনের মন।এমন চুপটি করে কেটে গেলো কয়েকটা ঘন্টা।রাকিব খেয়াল করলো,মিতু একদম নিস্তেজ হয়ে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।রাকিব মিতুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো,

-টুনির মা চলো এবার খাবারটা খেয়ে নেই।বাতাসে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
-হু,চলো।

রাকিব আর মিতু খাবারের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।টেবিলের উপর ফ্রাইড রাইস,চিলি চিকেন,চাইনিজ ভেজিটেবিল,চিকেন স্টেক,প্রন চিলি, থাই স্যুপ,চিকেন ফ্রাই,চিকেন ললি, মাউন্টেন ডিউ।আর কিছু ঠান্ডা পানিয়। সব গুলো খাবার মিতুর পছন্দের।রাকিব একটা চেয়ার টেনে বসে প্লেইটে খাবার নিতে লাগলো।

মিতু আশেপাশে থাকিয়ে দেখলো আর কোনো চেয়ার নেই।করুন দৃষ্টিতে রাকিবের দিকে তাকিয়ে রইলো।রাকিব তাকিয়ে দেখে মিতু তার দিকে চেয়ে আছে।রাকিব একটা হাসি দিয়ে মিতুকে নিজের কোলে বসিয়ে নিলো।

চলবে😍😍

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here