#চাঁদ_সুন্দরী
সুরমা
পর্ব : ১১
জুঁই এই প্রথম কলেজে যাবে।তাই সে খুবই এক্সাইটেড। এটা তার জীবনের একটা স্বপ্ন ছিল।যখন এসএসসি এক্সাম দিচ্ছিল তখন সব সময় ভাবতো,আর কয়দিন পর থেকে সে কলেজে যাবে।তখন হয়তো তাকে বড় বড় মনে হবে।কিন্তু তখন সেই স্বপ্ন পূরণ হয় নি।আজ অনেকটা দেরি হলেও সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।জুঁই ভীষণ খুশি আজ।সাথে এই পরিবারটার প্রতি কৃতজ্ঞ।কোনোদিন প্রয়োজন হলে এই পরিবারের জীবন দিতেও প্রস্তুত সে।এই পরিবারের লোকজন গুলোর জন্য আজ সে এতো কিছু পাচ্ছে।এক সময় লেখাপড়া করার স্বপ্ন জীবন থেকে চলেই গিয়েছিল।আজ আবার নতুন করে নতুন নতুন স্বপ্নের সন্ধান পাচ্ছে সে।জুঁই প্রায় ৫ মিনিটেই রেডি হয়ে যা।নিজেকে সাজানোর থেকেও বেশি ইন্টারেস্টিং হলো কলেজ লাইফে ওা দেওয়া।আনিকা এসে দেখে জুঁই শুধু একটা জামাই পরেছে।আনিকা বলে,,,
-কি ব্যাপার?তুমি রেডি নাকি?
-হু,কেন?
– সাজুগুজু করো নি কেন?
-আমার সাজতে ভালো লাগে না।
-তা কি করে হয়।প্রথমবার কলেজে পা দিবে,একটু না সাজলে কি হয়।চলো আমি তোমাকে সাজিয়ে দেই।
-আরে না। আমি এভাবেই ঠিক আছি।সাজতে হবে না।সাজতে আমার ভালো লাগে না।জুঁই সাজাতে মানা করলেও আনিকা জোর করে জুঁইকে সাজিয়ে দেয়।লাল থ্রিপিছের সাথে হালকা সাজ।তবুও জুঁইকে অসম্ভব গর্জিয়াছ লাগছিল।যে কারো নজর সহজে কেড়ে নেওয়ার জন্য এই সাজটুকুই যথেষ্ট।জুঁই আগে কখনও এতো সাজে নি।আজ এভাবে সেজে খুবই আনইজি লাগছিল।জুঁই বলে,,,,,,
-আনিকা,আমার কেমন জানি লাগছে।আমি এভাবে বাহিরে যেতে পারবো না।আমাকে নিশ্চয়ই অদ্ভুত দেখাচ্ছে ।প্লীজ,আমি মুখ ধোয়ে আসি।
-একদম না।তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে।চলো।এখন না বের হলে ঠিক সময় ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবো না।আর তোমাকে খুবই মিষ্টি লাগছে।তুমি হলে চাঁদ সুন্দরী।কিন্তু সেই সুন্দর্য পরিপূর্ণ করার জন্য এই সাজটা দরকার।এই সাজে তুমি ঠিক অন্নপূর্ণা।
-কিন্তু আমার কেমন লাগছে।
-কিচ্ছু হবে না।চলোতো।লেইট হয়ে গেলো।আনিকা জুঁইকে জোর করে টেনে নিয়ে যায়।
পরাগ ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছিল।এমন সময় জুঁই আর আনিকা গিয়ে হাজির হয়।জুঁইকে দেখে পরাগ টাস্কি খেয়ে যায়।পরাগের মনে হচ্ছে তার সামনে একটা লাল পরী দাঁড়িয়ে আছে।ডানা কাটা পরী।আনিকা পরাগের কাছে গিয়ে বলে,,,
-ভাইয়া,আমাদের একটু কলেজে পৌঁছে দিবে?
———পরাগ আনিকার কথায় কোনো রকম রেসপন্স না করে জুঁইকে দেখতে থাকে।আনিকার কথা তার কানেয় যায় নি।পরাগ কোনো কথা বলছে না বলে আনিকা পরাগের বাহু ধরে একটু ঝাকুনি দিয়ে বলে,,,
-ভাইয়াাাায়য়য়য়য়,,,,আনিকার চিৎকার শোনে পরাগ চমকে উঠে। পরাগ অনেকটা বিচলিত হয়ে বলে,,,,
-কি হয়েছে?এতো জোরে চিৎকার করলি কেন??
-আস্তে বলেছিলাম।কিন্তু তুমি যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে।মনে হয় অন্য জগৎ এ চলে গেছো।তাই তোমাকে এই জগৎ এ ফিরিয়ে আনতে এতো জোরে চিৎকার করলাম।
-বাজে কথা বলবি নাতো।আমি খাচ্ছিলাম।কি জন্য ডাকছিলি বল?
-আমাদের একটু কলেজে পৌঁছে দিবে?
-কেন?বাসার গাড়ি কি হয়েছে?
-গ্যারাজে আছে।নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
-ওহহ,ঠিক আছে।দিয়ে যাবো।
-থ্যাংকইউ ভাইয়া।
-হু,জুঁই আর আনিকাও পরাগের সঙ্গে বসে সকালের নাস্তা করে নেয়। পরাগ একটু পর পর চোখ তুলে জুঁইকে দেখতে থাকে।আর মনে মনে বলতে থাকে,,,
-কলেজেই তো যাচ্ছে।এতো সাজুগুজুর কি দরকার ছিল।দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।জুঁইয়ের সাজাটা পরাগের একটুকুও ভালো লাগে নি।ইচ্ছে করছে জুঁইকে ডেকে বলতে,,,’কলেজে এতো সেজেগুজে যাওয়ার কোনো মানে হয় না।কিন্তু পরাগ এটা বলতে পারলো না।পরাগ জুঁই আর আনিকাকে নিয়ে তাদের কলেজে পৌঁছে যায়।কলেজ গেইটের সামনে জুঁই গাড়ি থেকে নামতেই পরাগ খেয়াল করে কিছু ছেলে জুঁইয়ের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।এটা দেখে পরাগের একদম সহ্য হচ্ছিল না।ইচ্ছে করছিল ছেলেগুলোকে মেরে চোখ গুলো তুলে ফেলতে।জুঁই আনিকার কাছে যেতে নিলে পরাগ জুঁইকে ডাক দেয়।পরাগের ডাক শোনে জুঁই পরাগের কাছে এসে বলে,,,,
-আপনি আমাকে ডাকছেন??
-হু,
-কেন?কিছু বলবেন??
-আজকের পর বাসার বাহিরে গেলে তোমাকে যেন এতো সাজতে না দেখি।সাজার ইচ্ছে হলে সেজেগুজে বাসায় থাকবে।বাহিরে যাবে না।পরাগের কথা শোনে জুঁই হতভম্ব।জুঁই কিছুটা নার্ভাস হয়ে বলে,,,
-কেন?বাহিরে যাবো না কেন?
-আমি বলছি তাই যাবে না।পরাগের কথা শোনে জুঁইয়ের জানতে ইচ্ছে করছিল,’আমি বাহিরে সেজেগুজে গেলে আপনার কি সমস্যা’কিন্তু সে এটা বলতে পারলো না।তবে মনে মনে জুঁইয়ের খুব ভালোই লাগলো।কেউ একজন তাকে শাসন করলো এটা ভেবে।জুঁই মাথাটা নিচু করে বলে,,,,,,
-সরি।আমি সাজতে চাইনি।আনিকা,,,
-আজ প্রথম দিন বলে কিছু বললাম না।কলেজে আসবে পড়াশোনা করতে।সেজেগুজে এসে লোকজনকে দেখাতে হবে না।তাছাড়া না সাজলেও তোমাকে অপরূপ লাগে।অযথা সেজে নিজের ন্যাচারাল সুন্দর্যটা নষ্ট করার কোনো মানে হয়না।কথাগুলো বলেই পরাগ গাড়িতে উঠে।জুঁই অবাক হয়ে পরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে।পরাগের বলা কথাগুলো তার মাথার উপর দিয়ে যায়।পরাগ গাড়ি নিয়ে চলে যায়।কিন্তু জুঁই আগের মতোই দাঁড়িয়ে থাকে।আনিকা জুঁইয়ের কাছে গিয়ে বলে,,,
-এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেন?চলো,
-কলেজের ভেতরে কি ওয়াশরুম আছে?
-আছে কেন?যাবে?
-হু,আমি মুখ ধোব। আমার এই সাজ একদম ভালো লাগছে না।প্লীজ।তুমি আর মানা করো না।
-ঠিক আছে।চলো।আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।জুঁই আনিকার সাথে সাথে কলেজে প্রবেশ করে।কলেজটা যথেষ্ট পরিমাণ বড়।চারদিকে বসার জায়গা আছে।ছেলেমেয়েরা সেখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে।কেউ কেউ বই নিয়ে বসে আছে।জুঁই ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসে।আনিকা বলে,,,,
-তোমার কি হয়েছে বলোতো?বাসা থেকে আসলে।এখানে এসে একদম ধুয়েই ফেললে।
-আমি আনইজি ফিল করছি।আগে কখনও এভাবে সাজিনি।
-ওওও আচ্ছা।সমস্যা নাই।না সাজলেও তোমাকে অপ্সরীর মতো লাগে।আর সাজলে তার তুলনা হয় না।জুঁই আর আনিকা কথা বলে বলে আসছিল।হঠাৎ তিন চারজন ছেলে এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়।আনিকা আর জুঁই দুজনেই চমকে উঠে।ছেলেগুলো থেকে একজন বলে,,,
-হাই লাল পরী।নতুন নাকি?ছেলেটার কথা শোনে জুঁই ভয়ে আনিকার হাত চেপে ধরে।আনিকা জুঁইয়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে,,,
-আপনাদের কেন বলবো?
-আমরা জিজ্ঞেস করছি তাই বলবে।
-পথ ছাড়ুন। আমাদের ক্লাসের সময় চলে যাচ্ছে।
-ছেড়েই তো দিবো।আটকে রাখবো নাকি।তার আগে বলোতো লাল পরীর নাম কি?কি লাল পরী,নামটা বলো তাহলেই রাস্তা ছেড়ে দিবো।জুঁই অনেকটা ঘাবড়ে যায় ছেলেগুলোর ভাব ভঙ্গি দেখে।সে আস্তে করে বলে,,,,,
-আ,মা,র না,ম জুঁ,ই
-ওয়াও,অনেক সুন্দর নাম।আমার নাম হৃদয়।আমি এই কলেজের বস।আমার কথাই এখানে শেষ।আমার উপরে কথা বলার সাহস কারো নেই।তোমাকে আমার খুবই ভালো লেগেছে।একটু আগে দেখলাম তুমি সেজে ছিলে।এখন দেখি কোনো সাজ নেই।তবে,সাজ ছাড়াও তোমাকে পরীর বাচ্চার মতো লাগছে।ছেলেগুলোকে দেখে আনিকার রাগ লাগছিল।ইচ্ছে করছিল এক ঘুসি মেরে নাক ফাটিয়ে দিতে।কিন্তু বড়দের সাথে বেয়াদবি করা যায় না।তাহলে র্যগ খেতে হবে।আর এই বকাটে গুলোর সাথে তো আরো করা যাবে না।তাহলে,,,,,,,।আনিকা জুঁইকে নিয়ে ছেলে গুলোকে এড়িয়ে চলে আসতে গেলে হৃদয় বলে,,,,,
-এই লাল পরী,তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও না।আনিকা রেগে বলে,,,
-আপনাকে নাম্বার দিতে যাবো কেন??
-আমি তোমার নাম্বার চাই নি।ওকে,,,
-জুঁইও আপনাকে নাম্বার দিবে না।কেন দিবে আপনাকে নাম্বার??
-কথা বলতে যদি ইচ্ছে করে তাহলে কল দিয়ে কথা বলবো।সব গুলো ছেলে আনিকা আর জুঁইকে নিয়ে মজা করতে থাকে।ছেলেগুলোর কথা শোনে জুঁইয়ের প্রায় কান্না করার মতো অবস্থা।
চলবে——-