#চাঁদ_সুন্দরী
সুরমা
পর্ব : ১০
জুঁই আনিকার সাথে আনিকার রুমে যায়।আনিকা অনেক ক্লান্ত।তাই সে রুমে গিয়েই বিছানায় শুয়ে পড়ে।জুঁই গিয়ে আনিকার পাশে দাঁড়ায়।আনিকা বলে,,,,
-শুবে?
-না,শরীর কেমন লাগছে।আমি ফ্রেশ হবো।
-তাহলে যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
-জামা?
-ওমা,এতো এতো জামা আনলাম আর তুমি বলছো জামা?এগুলো সব তোমার।যাও,এই প্যাকেট গুলো থেকে নিজের পছন্দ মতো একটা জামা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমি ততক্ষণ একটু রেস্ট করি।খুব ক্লান্ত লাগছে।আনিকার কথা মতো জুঁই একটা জামা বের করে নেয়।আনিকা এক হাতে ভর দিয়ে জুঁইয়ের দিকে ফিরে বলে,,,
-তোমার ক্লান্ত লাগছে না??
-না,
-বলো কি?এতো ঘুরেও তোমার ক্লান্ত লাগছে না??আমার তো শরীর শেষ।পা গুলো ব্যথা করছে।এখন উঠে ফ্রেশ হতেও ইচ্ছে করছে না।আনিকার কথা শোনে জুঁই হেসে দিয়ে বলে,,,,
-তোমরা কখনও কষ্টের কাজ করো নি।তাই অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাও।কিন্তু আমার তো কষ্টের মাঝেই বসবাস।এর থেকে বড় বড় কষ্টের কাজ করেছি।এখন আর অল্পতে ক্লান্ত হই না।কথাগুলো বলে জুঁই ওয়াশরুমে চলে যায়।আনিকা অবাক হয়ে জুঁইয়ের যাওয়ার পাণে চেয়ে থাকে।আনিকা ভাবতেই পারছে না,’এই টুকু মেয়ে নাকি বড় বড় কষ্ট সহ্য করেছে।’ভাবা যায় এগ্লা?সেতো এখনো হেসে খেলে জীবন পার করে।কলেজ,বন্ধু বান্ধবীদের সাথে আড্ডা,শপিং,রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল,পার্ক এসব আনন্দে তার দিন কাটে।
পরাগ ফ্রেশ হয়ে আনিকার রুমে আসে।আনিকা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।পরাগ রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে কোথাও জুঁই নেই।পরাগ বেডের কাছাকাছি এসে বলে,,,
-আনিকা?পরাগের কথা শোনে আনিকা মাথা তুলে দেখে পরাগ দাঁড়িয়ে আছে।পরাগকে দেখে আনিকা শোয়া থেকে উঠে বসে বলে,,,,,,
-ভাইয়া,তুমি আমার রুমে?কিছু বলবে?
-আমার কার্ড টা নিতে এসেছি।মার্কেট তো শেষ।এখন কার্ড টা দে।পরে যখন লাগবে বলবি।আনিকা বিছানা থেকে উঠে নিজের পার্স থেকে কার্ডটা বের করে পরাগের হাতে দিয়ে বলে,,,,
-এই নাও তোমার কার্ড।পরাগ আনিকার হাত থেকে কার্ডটা নিয়ে চলে আসতে গিয়েও থেমে যায়।আবার আনিকার দিকে গিয়ে বলে,,,
-জুঁই কোথায়?
-ওয়াশরুমে।
-ওও আচ্ছা। শোন,কাল থেকে জুঁইকে তোর সাথে কলেজে নিয়ে যাবি।আমি ওকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।পরাগের কথা শোনে খুশিতে আনিকার মুখ উজ্জ্বল। সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়।আনিকা বলে,,,,,
-ভাইয়া থ্যাংকিউ।তুমি সত্যি খুব ভালো।পৃথিবীর বেষ্ট ভাই আমার ভাই।কথাগুলো বলে আনিকা পরাগকে জড়িয়ে ধরে।পরাগ হাসতে হাসতে বলে,,,
-আমি জানি আমি বেষ্ট ভাই।এই কথাটা অনেকবার শোনেছি।কিন্তু তুই এখনো ফ্রেশ হোস নি কেন?যা,গিয়ে ফ্রেশ হো।স্কিন নষ্ট হয়ে যাবে এভাবে থাকলে।সব ডাস্ট শরীরে বসে যাবে।
-ঠিক আছে।আনিকা আলমারি খুলে জামা কাপড় বের করতে থাকে।পরাগ কার্ডটা নিয়ে চলে আসতে যাবে এমন সময় জুঁই ওয়াশরুমে থেকে বের হয়ে আসে।দরজা খুলার শব্দে পরাগ পেছনে তাকিয়ে দেখে পরাগ জুঁই মাত্রই শাওয়ার নিয়েছে।ভেজা চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে শরীরে।জামাটা প্রায় ভিজে গেছে।কি যে অপরূপ লাগছে জুঁইকে বলার বাহিরে।এই প্রথম পরাগ দেখেছে, কোনো মেয়েকে শাওয়ার নেওয়ার পর কতো সুন্দর লাগে।শাওয়ার নেওয়ার পর যে মেয়েদের এতো আবেদনময়ী লাগে পরাগের জানা ছিল না।গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটি স্নিগ্ধতায় ভরে গেছে।পানিতে ভেজার কারনে চোখের পাপড়ি গুলো একসাথে জমাট বেঁধে গেছে।তবুও তার মায়াবী চোখ দুটি অসম্ভব সুন্দর লাগছে।চোখে কাজল নেই।তবুও চোখ দুটি যেন সুন্দর্যে ছড়াছড়ি করছে।এই মুখের উপর থেকে পরাগের চোখ সরছিল না।পরাগের খুব ইচ্ছে করছি একটা টাওয়েল নিয়ে জুঁইয়ের চুল গুলো মুছে দিতে।কিন্তু কি যেন একটা জিনিস তাকে ক্রমাগত বাঁধা দিচ্ছে।পরাগ আপন মনে ভাবতে থাকে কি দিয়ে এই মেয়ে গড়া?কেন এই মেয়ের রুপ তাকে এতো আকর্ষণ করে?এই মায়াবতী কোন মায়ার জালে তাকে বেঁধে নিতে চাইছে?পরাগের খুব ইচ্ছে করছে জুঁইয়ের কাছে গিয়ে তার দুটি হাত ধরে বলতে,,,,,
-আমাকে কি তোমার ভেজা চুল গুলো মুছে দেওয়ার দায়িত্বটা দেওয়া যায়?আমি তোমার এই দায়িত্বটা নিতে চাই।তুমি তো ভালো করে চুল মুছতে পারো না??কথা গুলো ভাবতেই পরাগের সারা শরীর শিউরে উঠে।পরাগ আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে সোজা নিজের রুমে চলে আসে।পরাগের অস্বস্তি লাগছে।এসব কি চিন্তা করছে?এসব কি কথা মাথায় আসছে?পরাগের মতে,এতো ছোট একটা মেয়েকে নিয়ে কোনো সুস্থ মানুষ এসব কথা চিন্তা করতে পারতো না।তার মাথায় কেমনে আসলো?তার নিশ্চয় মাথায় সমস্যা হয়েছে।ইমিডিয়েট ডাক্তার দেখানো উচিত। পরাগ নিজের রুমে পাইচারী করতে থাকে।কেন জানি মনটা অস্থির হয়ে গেছে।পরাগ চাইছে নিজেকে শান্ত করতে।কিন্তু তার মনটা কিসব উল্টাপাল্টা ভাবনায় মেতে উঠেছে।পরাগ বুঝতে পারছে,বাসায় থাকলে সে নিজেকে স্থির করতে পারবে না।তাই সে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।অনেকদিন কাজের চাপে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা হয়না।আজ তাদের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটালে এসব উল্টাপাল্টা ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
জুঁই আর আনিকা দুজনেই বাগানে বসে আছে।দুজনের মাঝে খুব ভাব হয়েছে।আনিকা জুঁইকে নিজেদের বাড়ির সব জায়গা দেখায়।বাড়ির দক্ষিণ পাশে একটা সুইমিংপুল আছে।যার পানি হালকা নীল রং।এই সুইমিংপুল জুঁইকে মোহিত করেছে।জুঁই চিন্তা করছে,’ এখন থেকে রুমে চারদেয়ালের ভেতরে আবদ্ধ না হয়ে এখানে গোসল করবে।’এখানে অন্যরকম রকম প্রশান্তি পাওয়া যাবে।জুঁই বলে,,,
-আনিকা,আমরা এখন থেকে এই পুকুরে সাঁতার কেটে গোসল করবো।জুঁইয়ের কথা শোনে আনিকা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,,,
-তুমি পুকুর কোথায় পেলে?
-কেন,এইযে পুকুর।সুইমিংপুল দেখিয়ে বলে।
-এটাকে পুকুর বলে না।সুইমিংপুল বলে।
-আমরা গ্রামে এগুলোকে পুকুর বলি।গরীবদের পুকুর আর বড়লোকদের সুইমিংপুল। যা হোক, সুইমিংপুলেই সাঁতার কেটে গোসল করবো।
-আমি সাঁতার জানি না।তুমি কি সাঁতার জানো নাকি?
-হু,ছোটবেলায় শিখেছি।তোমাদের বাসায় সুইমিংপুল আছে তাও সাঁতার জানো না???
-না,আম্মু,আব্বু,ভাইয়া কেউয়েই আমাকে এখানে নামতে দেয় নি।বলে ডুবে যাবি।এখানে গোসল করার কি দরকার।রুমের ভেতরে এতো সুন্দর ওয়াশরুম তৈরি করে দিয়েছি।আম্মু তোমাকেও এখানে গোসল করতে দিবে না।
-কেন,আমিতো সাঁতার জানি।
-সাঁতার জানলেও দিবে না।আম্মু যা বলে তাই।
-ওহ!!!এতো সুন্দর একটা সুইমিংপুল কেন দিলো যদি এখানে নাই সাঁতার কাটা যাবে।জুঁইয়ের কিছুটা মন খারাপ লাগলো।
পরাগ বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে।আজ কিছুতেই তার মন আড্ডায় থাকছে না।বারবার জুঁইয়ের মুখটা ভেসে উঠছে।চুল থেকে পানি ঝরছে,কালো চোখ গুলো টিপটিপ করে তাকিয়ে আছে।কি সব মাথার ভেতরে ভনভন করছে।পরাগের এবার ভীষণ রাগ লাগছে নিজের প্রতি।কি সব হচ্ছে তার সাথে।এর আগেতো কখনও এমন হয়নি।তাহলে আজ এমন লাগছে কেন?পরাগের বন্ধু আকাশ বলে,
-দোস,খুব বিপদে আছি।বাসায় গেলেই আম্মু বিয়ের জন্য পাগল করে দেয়।কিন্তু যে মেয়েই দেখে পছন্দ হয় না।কি করি বলতো।আকাশের কথা শোনে আবির বলে,,,,,
-সালা লুচুর হাড্ডি।১০০টা প্রেম করে এখন বলছিস পছন্দ হয় না।সব সুন্দর তো তোর এক্সদের মধ্যে।তাই পছন্দ হয় না।তোর এক্স গার্ল ফ্রেন্ডদের থেকে একটা বাছাই করে বিয়ে করে ফেল।তাহলেই তো হয়।
-এক্সদের বিয়ে করতে নাই জানোস না।বিয়ে করতে হলে একদম নতুন মেয়েদের বিয়ে করতে হয়।একটা মেয়ে খুঁজে বের কর না।সবাই এই সেই নিয়ে কথা বলছে।শুধু পরাগ চুপ করে আছে দেখে নিলয় বলে,,,
-পরাগ,তোর আবার কি হলো?আসার পর থেকেই কথা বলছিস না।কোনো প্রবলেম??
-না,প্রবলেম না।কিন্তু কিছুই ভালো লাগে না।
-তুই অন্যমনস্ক। প্রেমে পড়লি নাকি?
-প্রেম?আমি?
-অবশ্যই।তোর চোখ তো তাই বলছে।যা হোক,রিয়া তোর জন্যতো পাগল হয়ে গেছে।বেচারীকে এবার বিয়ে করে ফেল।আর কতো অপেক্ষা করবে তোর জন্য।রিয়ার কথা শোনে পরাগের একটু খারাপ লাগলো।বেয়াদব টাইপের একটা মেয়ে।সব সময় পরাগের পেছনে লেগে থাকে।পরাগকে একটুকুও শান্তি দেয় না।পরাগ যেখানে যাবে রিয়াও সেখানেই হাজির।পরাগকে দেখলেই নেকামি শুরু করবে।পরাগের একটুকুও পছন্দ নয় রিয়াকে।পরাগ বলে,,,,,
-আমি কি রিয়াকে বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করতে??
-বলিস নি।কিন্তু তোকে দেখলেই বুঝা যায় তুইও রিয়াকে পছন্দ করিস।যা হোক,এবার তো তোর বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?।আন্টি আঙ্কেলের সাথে কথা বল।রিয়াতো দেখতেও খারাপ না।স্মার্ট, মডার্ন।তোর সাথে মানাবে ভালো। আর তোর জন্যতো এক কথায় পাগল সে।নিলয়ের কথা শোনে পরাগ কিছু বললো না।তার একটুকুও ভালো লাগছে না এসব কথা শোনতে।পরাগ বলে,,,
-তোরা থাক।আমি গেলাম।
-এখনি চলে যাবি?মাত্রই তো আসলি।আর একটু থাক।
-অফিসের কাজ আছে।আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে।তোরা আড্ডা দে।পরাগ তার বন্ধুদের কাছ থেকে চলে আসে।রিয়া মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে তার কখনই ভালো লাগে নি।কিন্তু এক সময় তারা খুব ভালো বন্ধু ছিল।একসাথে পড়াশোনা করতো।সেই সুবাদে পরাগ রিয়াকে কিছু বলতেও পারে না।বড় লোকের মেয়ে।অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ে।একবার তো সুইসাইড করতে গিয়েছিল।এর পর থেকে পরাগ রিয়ার সাথে তেমন মেলামেশাও করে না কথাও বলে না।কিন্তু বাহিরে থাকতে এমন কোনো দিন বা রাত নেই যে রিয়া পরাগকে কল করে না।সবাইকে রিয়া বলে সে পরাগের উডবি ওয়াইফ। পরাগের ফ্যামিলিও বিষয়টা জানে।যদিও পরাগের মা রিয়াকে তেমন পছন্দ করে না।মিনি মিনি ড্রেস পড়ে।কিন্তু ছেলে যদি পছন্দ করে তাহলে কিছুই করার নেই।ছেলের পছন্দের গুরুত্ব দিতেই হবে।
চলবে——–