মরিচিকা
শেষ পর্ব
#তানিশা_লাবন্য
আজকে ভাবলাম ছেলে মেয়েদের সাথে ঘুমাই কেমন যেন অশান্তি লাগছে। তাই যেমন ভাবা তেমন কাজ।ওদের সাথে ঘুমাতে গেলাম। ওরা দুইজন আমাকে পেয়ে কি যে খুশি। দুইজনকে দুই পাশে নিয়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছি। তখন ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা ধর আমি আর তোমাদের পাপা আলাদা থাকা শুরু করলাম তখন তোমাদের কেমন লাগবে!!! ছেলে উঠেই বলল কেন মা?? পাপা আলাদা থাকবে কেন?? আমার পাপাকে ছাড়া ভালো লাগেনা। মেয়েও তার ভাইয়ের সাথে তাল মিলালো। তখন আমি বললাম আচ্ছা আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে??? তখন ওরা দুইজনই জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করল আর বলে না মা আমরা তুমাকে ছাড়া কিভাবে থাকব??? আমি তখন ওদের দুইজনকে থামাতে থামাতে বললাম আরে আমিত মজা করছি। আমি আমার মানিকদের রেখে কোথায় যাব??মনে মনে নিজেকে দুইটা থাপ্পড় মারতে মন চাইল। আমি কি পাগল ওদের সামনে এমন কথা বলছি ছিহ কেমন মা আমি! সন্তানদের কান্না করালাম।
সকাল সকাল উকিলের কাছে গেলাম। তালাকের নোটিশ বাতিল করার জন্য আমি পারব না আসিফকে তালাক দিতে কারন আমি যে মা আমার ভালো খারাপের চেয়ে সন্তানদের ভালো থাকা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে হ্যাঁ আমি আসিফকে আর আগের মত গ্রহণ করতে পারব না তা ঠিক।ওর প্রতি ভালোবাসা কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে যা হাজার চেষ্টা করলেও ঠিক করতে পারব না। আমি চাই আমার ছেলে মেয়ে সুস্থ সুন্দর পরিবেশে বড় হোক। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে বিষ খেতেও আমি পিছপা হব না আর এটাত সামান্য বিষয়। দুইদিন পর আসিফ বাসায় আসে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষন বসে ছিল। আমি অনুভুতিহিনের মত ওর সাথে ছিলাম। আসিফ আমার আগ্রহ না দেখে বলে অনু তুমি কি আমাকে ক্ষমা করনি????আমি উত্তর দিলাম আচ্ছা আসিফ ক্ষমা করা কি এতই সহজ! তুমি ২য় বিয়ে করবে বলেছ তার মানে আমি যে তোমার জীবনে কত মূল্যহীন হয়ে পড়েছিলাম। কতটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিলাম তুমি বুঝতে পারছো! আর আমি তা কিভাবে ভুলি আসিফ? আমার এত বছরের ভালোবাসার এই প্রতিদান দেখে আমি ওইদিনই ভিতর থেকে মরে গিয়েছিলাম। আর তুমি বলছো তোমাকে ক্ষমা করেছি কিনা। বিষয়টা ক্ষমার না আসিফ, আসল কথা আমি নির্জীব হয়ে গিয়েছি। আসিফ আর কোন কথা বলেনি সেইদিন।
এইভাবে কাটতে লাগে আমাদের দিনকাল।আসিফ তার অতিতের কাজের জন্য বারবার অনুতপ্ত হয়েছে যা আমি ওর চোখ এ স্পষ্ট দেখতাম।ওর বিভিন্ন কার্যক্রম এ আমি ওর প্রতি আবার দূর্বল হয়ে পড়লাম।আবার শুরু করলাম আমাদের ভালোবাসার দিনচলা। কিন্তু এখন নিজেকে সময় দেই নিজের দিকে খেয়াল রাখি সবার পাশাপাশি। আল্লাহর কাছে হাজার শুক্রিয়া জানাই আল্লাহ যে আমাকে সুখ দিয়েছে। এরপর কেটে গেল আরও অনেক বছর। ছেলে মেয়ে যার যার জীবন নিয়ে ব্যাস্ত। আমি আর আসিফ একলা বাড়িতে থাকি অবশ্য কাজের লোক দুইজন আছে। ছেলে মেয়েরা নিয়মিত খোজ নেয়। বুড়োবুড়ির ভালোই চলে যায় এর মাঝে আসিফ আমাকে একা করে না ফেরার দেশে চলে যায়। ওর মৃত্যুর পর আমি ছেলের সাথে থাকা শুরু করি। নাতিনের সাথে আনন্দে দিন যায় আমার আলহামদুলিল্লাহ।
এর মাঝে একদিন জমি জমার কাগজ চেক করতে গিয়ে আসিফের একটা ডায়রি পাই। বেশ পুরোনো হবে। কৌতুহল নিয়ে পড়া শুরু করলাম ডায়রির এক জায়গায় আমার হ্রদক্রিয়া বন্ধ হয়ার উপক্রম হল। ওইখানে লেখা আছে
আজকে রায়হানের (আসিফের বন্দুএবং কলিগ)সাথে বাজি ধরেছিলাম যে দুইজন দুইজনের বউকে বলবো আমরা ২য় বিয়ে করব। দেখি কে জিতে? আমরা বাজি ধরেছি বলার পর বউদের রিয়েকশন দেখব এবং ৩ মাসের কাজের কথা বলে বাহিরে যাব আর এসে দেখব বউদের কত অধঃপতন হয়েছে। কার বউ কাকে বেশি ভালোবাসে।
পরের পাতা, রায়হানের বউ নাকি অনেক কান্নাকাটি করেছে ও যেন বিয়ে না করে তবে রায়হান বলেছে সে নাকি করবেই। আর এইদিকে অনু কিছুই করেনি উল্টো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল মা সহ।আর মার উপর খুব জেদ লেগেছে সে কেন আমার অন্যায় কে সমর্থন করল??? সে কেন অনুর পক্ষ নিলনা! রায়হান এইকথা শুনে বলে অনু নাকি আমাকে ভালো বাসে না। ভালোবাসলে ঠিকই কান্না করত। কিন্তু আমি জানি আমার অনু আমাকে খুব ভালোবাসে।
পরের পাতা, অনুর কিছু ছবি আতিফা (আসিফের বোন) আজকে দিল। আমার অনুকে যা লাগছেনা। মাশাল্লাহ। অনু একদম নিজের যত্ন নেয়না। এইবার নিচ্ছে আমার খুব ভালো লাগছে মন চায় আবার বিয়ে করি বউটাকে।
পরের পাতা,আজকে অনু ছবি নিজের প্রফাইলে দিয়েছে। তখন রায়হান আমাকে বলে তোর বউ আরেকজন কে পটাতে চায় তাই এমন সুন্দর ছবি দেয়েছে দেখবি পাখি অন্য ডালে চলে গেছে বন্ধু।আমার খুব খারাপ লাগল।ঠিকি কি অনু অন্যকাউকে নিয়ে খুশি হতে চায়! না আমার অনু এমন না। তার পুরো অংগে জীবনে শুধু আমার ছাপ থাকবে আমার স্পর্শ থাকবে আর কেউর না। বাসায় যেয়ে নেই দেখাচ্ছি মজা।
পরের পাতা,আজকে রায়হানের জন্য খুব খারাপ লাগছে ওর বউকে ওর রুমে অন্য পুরুষ এর সাথে অনৈতিক কাজে নিজে নাকি হাতে না হাতে ধরেছে। পরে জানতে পারে ওই ছেলে নাকি ওর বউর এক্স ছিল। বিয়ের পরও নাকি তাদের মাঝে মেলামেশা হত। রায়হান নাকি ওর বউকে তালাক দিচ্ছে। শুনে খুব খারাপ লাগলো।
পরের পাতা,অনু আমাকে তালাক নামা দিয়ে দিয়েছে আমি মেনে নিতে পারছিনা। আমার অনু কত কষ্ট পেয়েছে আমি আজকে বুঝতে পারলাম। তাইত অনুর চোখ এ কোন পানি ছিলনা। অতি শোকে পাথর হ ম্যে গেছে আমার অনু। আমি কি করে বুঝাই তুমার আসিফ তুমারই আছে। এখন যদি বাজির কথা বলি তবুও অনু বিশ্বাস করবেনা ভাববে বানিয়ে বলছি। তাই অনুকে আমি এইসব কিছুই বলব না শুধু ওকে প্রমান করতে হবে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।
পরের পাতা,আমার অনু আসলেই খুব কষট পেয়েছে। তা আজকে বুঝতে পারলাম ওর কথা শুনে। ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমায় ক্ষমা করেছে কিনা আমায় ও যা বলল তাতে বুঝলাম ও অনেক আঘাত পেয়েছে। আরে পাগলি এতদিন সংসার করেও বুঝলিনা তোর আসিফ কেমন!!? তুই আমাকে এত নিচ ভাবলি। আসলে দোষ আমারই আমিই কেন এমন করতে গেলাম।রায়হান আমাকে বলে ভাবি তোকে অনেক ভালোবাসেরে। তুই অনেক ভাগ্যবান।রায়হানকে দেখে খুব খারাপ লাগে। বেচারা খুব গর্ব করত বউ ওকে খুব ভালোবাসে কিন্তু এমন কিছু দেখে খুব খারাপ লাগে।
আমি পুরো ডায়রি পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লাম।আল্লাহ আমি আমার আসিফকে কেন এত ভুল বুঝলাম। ওকে এত কষ্ঠ দিলাম। ওই ঘটনার পর পুরো ১ বছরের বেশি ওকে কাছে আসতে দেইনি। দৈনিক কড়া কড়া কথা শুনিয়েছি। ও কিচ্ছুটি আমাকে বলেনি। সব চুপ করে সহ্য করেছে। আল্লাহ গো আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আমি এক অভাগি যে আমার স্বামীর মন বুঝতে পারিনি। ও আমাকে এত বিশ্বাস করত অথচ আমি কিছুই দিতে পারলাম না ওকে।
এরপর কেটে গেল কত বসন্ত। ওপারে গিয়ে ওর কাছে ক্ষমা চাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আল্লাহ ও হয়ত আমার উপর নারাজ তাই আমাকে আসিফের কাছে যেতে দিচ্ছেনা।আজকে তালাক নামা উঠিয়ে নিয়েছিলাম বলে নয়ত কত বড় ভুল আমার দ্বারা হয়ে যেত।এই জিনিসটার জন্য মনে একটু আফসোস কম লাগে।আমি এখন শুধু আমার আসিফের কাছে যেতে চাই….
কই তুমি আসিফ? আমার আর এই দুনিয়া ভালো লাগেনা আমি তোমার কাছে যেতে চাই এত্ত এত্ত অভিমান করতে চাই কেন তুমি এমন করলে?……
আসিফ আমার নিখুঁত ভালোবাসার মানুষ…….
সমাপ্ত❤️