#সুরমা_কালো

#পর্ব-৩

আমার শ্বশুড়বাড়িতে আমি খুব সুন্দর মিশে গেছি।
এ পরিবারের মানুষ গুলো চুপচাপ হলেও আমার গল্প ওরা মুগ্ধ হয়ে শুনে। সবাইকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছো।
ড্রইংরুমে একটা বড় বুকসেলফ রাখা তাতে থরে থরে গল্পের বই। ওটার দিকে তাকালেই আমার চোখ চকচক করে ওঠে। স্বর্ণা এইচ এস সি পাশ করে মেডিকেলের জন্য কোচিং করবে। কোচিংএ ভর্তির সব খবরাখবর রাখা রায়হান ভাইয়ের দায়িত্ব। আমার পড়াশোনায় কোনো সাহায্য লাগবে কিনা রবিন জিজ্ঞেস করে।
আমাকে পড়াশোনা নিয়ে যেখানে যুদ্ধ করতে হতো সেখানে এখানের পরিবেশ পুরোই ভিন্ন। সবকিছুই স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয় আমার কাছে।

এখানের মানুষ গুলো যেমন অনেক বেশি সাবলীল তেমনি অনেক বেশি উদার। পরিবার থেকে যদি স্বাধীনতা পাওয়া যায় তবে হয়তো মন থেকেই দায়বদ্ধতা চলে আসে সে স্বাধীনতাকে সম্মান দেয়ার। এ পরিবারে আমাকে কেউ বলে না আমার কি কি করা উচিত, কি করা উচিত না। কিন্তু আমি নিজে থেকেই আগ্রহের সাথে তাদের সাথে মিশে যাচ্ছি। তাদের রংয়ে নিজেকে রাঙিয়ে নিচ্ছি। শ্রদ্ধা জন্মাতে বড় ছোট লাগে না। এপরিবারের সবার উদারতায় মা থেকে ছোট স্বর্ণা সবার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ জন্মাচ্ছে। যা মায়ার গাঢ় বন্ধন তৈরি করছে।

আজ তূর্ণা আপা আর রায়হান ভাই চলে যাবেন। তূর্ণা আপার ছুটি শেষ আর রায়হান ভাই শুধু বিয়ে উপলক্ষে কদিনের জন্য এসেছিলেন।
তূর্ণা আপাকে বিদায়ের বেলা আমি বললাম, আপনারা সবাই অনেক ভালো মানুষ।
তূর্ণা আপা হেসে উত্তর দিলেন, তুমিও অনেক ভালো মেয়ে। না হলে আমাদের ভালো গুণগুলো তোমার চোখে পড়তো না। আর তুমি যে একটা লক্ষী ভাবী হবে তা আমরা আগে থেকেই জানতাম। নইলে রাশেদ ভাই এতো পাগল হয়ে তোমাকে বিয়ে করতে চাইতো না।

আমি লজ্জা পেয়ে যাই। সবাই বলছে রাশেদ আমাকে পাগল হয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু কেন? সুন্দরী বলে তো না। তবে কেন?

রবিন এখনও রয়ে গেছে। কটা দিন পড়ে যাবে। রবিন আমার সমবয়সী হওয়ায় ওর সাথে আমার বেশ ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। এর মধ্যে আমি জেনে গেছি রবিন ছয়মাস ধরে প্রেম করছে। শর্ত হচ্ছে কাউকে বলা যাবে না।
মা, স্বর্ণা আর রবিনের সাথে আমি সারাদিন এত বকবক করি যা আমার পরিবারে কখনো করি নি। আমি যেন সুখের ভেলায় ভাসচ্ছি। শাশুড়ির আদর, দেবর ননদের বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। এখানে আমার চঞ্চলতার জন্য কেউ আমাকে বকে না বরং মজা পায়। আমি দোকান থেকে লুডু আনিয়ে খেলা জমিয়ে ফেলেছি। সারাদিনই আমি স্বর্ণা, রবিন এমনকি মায়ের সাথেও খুনসুটি চলাই। জম্পেশ আড্ডা, লুডু খেলা, হাসাহাসি, টিভি দেখা সবকিছুতেই সবাই আমার সাথে একেবারে মিশে গেছে। আমার মনেই হয় না আমি এ পরিবারে আসা নতুন বউ।

রাশেদ সকাল সকাল বের হয়ে রাতে ফিরে। মাঝে দুপুরে এসে একবার খেয়ে যায়। খাওয়ার সময় আমার বকবক হাসাহাসি চলতে থাকে আর সে সবসময়ের মতো চুপচাপ মিটিমিটি হাসে।
আমি ইদানিং রাশেদকে আঁড়চোখে, সোজা চোখে, ঘুম ঘুম চোখে কতচোখে দেখি! এখন তো মুগ্ধ চোখেও দেখি!
রাশেদের হাসিটা খুব সুন্দর। মাথায় এলোমেলো চুল আর খাড়া নাকে মাথা নত করে যখন মিষ্টি হাসি দেয় তখন যেকেউই তাকে ভালোবেসে ফেলবে। ওর গায়ের রংটা কেমন জানি বেশ সুন্দর। ওর চেহারা সাথে পুরোই মাননসই। নিজেরই মন খারাপ হয় যখন মনে পড়ে রাশেদ কালো বলে আমার কত দুঃখ হচ্ছিল বিয়ের দিন। কি করবো, ভাবীগুলো সারাক্ষণ কানের কাছে কালো জামাই বলে কুনকুন করছিল। অথচ এখন মনে হয় আমার সব ভাই- দুলাভাইদের মাঝে রাশেদের চেহারার তীক্ষ্ণতা যেন সবার আগে নজর কাড়বে। আর আমার ভাইগুলো তেমন লম্বা না সেদিকে রাশেদ বেশ লম্বা, সুঠাম দেহ। সব মিলে ওর সুরমা কালো রঙটাই ওর চেহারার মাঝে এক পুরুষালি তেজস্বিতা এনে দিয়েছে।
আচ্ছা, আমি কি রাশেদকে ভালোবাসি? কি জানি, আমি বুঝিনা ভালোবাসার অনুভূতি কি ! তবে রাশেদের প্রতি একটা টান অনুভব করি। দুপুরে ও কখন আসবে সেটার অপেক্ষায় থাকি। আর রাতটা তো আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্ত। রাতে আমি কত প্রশ্ন করি আর রাশেদ একটা একটা করে গুছিয়ে উত্তর দেয়। আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেহায়ার মতো খালি রাশেদের চোখে আমার প্রতি মুগ্ধতা কেমন তা জানতে চাই।
আর রাশেদ ততই এমন প্রশ্ন এড়িয়ে অন্যান্য গল্প করে। আমি কলেজ বদলে এখানে ভর্তি হবো কিনা, কবে থেকে ক্লাস করা শুরু করবো, দরকার হলে আমাকে ও সাথে করে আমার কলেজে দিয়ে আসবে কিনা, পড়া শেষে কি করার ইচ্ছা — কত কথা। আমার লেখাপড়া চালানোর এতোদিনের যুদ্ধ যেন এখানে একেবারে ডালভাত। বরং এখানে পড়াশোনায় অবহেলা করলে উল্টো জনে জনে সবার বকা খেতে হবে।
কিন্তু রাশেদের সাথে পড়াশোনার গল্প করতে আমার একদম ইচ্ছা করে না। আমার ইচ্ছা করে রাশেদের মুখে শুনতে আমার চোখগুলো কেমন, আমার চুলগুলো, আমার হাসি, আমার সবকিছু শুনতে। কিন্তু না, সে তো আমার দিকে তাকায়ই না!

রাশেদ রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। আমি জেগে থাকি। অন্ধকারে জেগে জেগে আমি ওকে কতভাবে যে দেখি। এই ঘুমন্ত মানুষটার মন পড়তে খুব ইচ্ছা করে।

রাশেদ রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে তাই উঠে খুব ভোরে। নাজিলা তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে। প্রতিদিন রাশেদ ভোরের মিষ্টি আলোতে মন ভরে নাজিলাকে দেখে। ঘুমন্ত নাজিলাকে অনেক বেশি স্নিগ্ধ লাগে। নাজিলা দেখতে অনেক বেশি সুন্দরী। এতোটা সুন্দরী যে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। বেশিক্ষণ তাকালে চোখ জ্বলে, সাথে মনও। রাশেদের খুব ইচ্ছে করে একবার নাজিলার গাল ছুঁয়ে দিতে, চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে দিতে। কিন্তু সে নিজেকে সংযত রাখে। নাজিলা যদি কখনোও টের পায় তবে খুব রাগ করবে। হয়তো রাশেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলবে। যা রাশেদ কোনোভাবেই হতে দিবে না।

****★★*******

আজ বিকাল থেকে কারেন্ট নেই। সন্ধ্যার পরেও আসার নাম নাই। কাজ শেষে আমরা সবাই বাড়ির সামনের সিড়িতে বসে খোলা আকাশের নীচে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আমরা সবাই মানে আমি, মা আর স্বর্ণা। রবিন ছয়দিন আগে চলে গেছে।
পূর্নিমার চাঁদ আকাশে। আমি কখনো গান শিখিনি আমার গানের গলাও মোটামুটি। তাতে কি, এমন পূর্নিমার রাতে লাজ শরম নিয়ে ভাবলে হয়! আমি গান ধরি। আমার সাথে সাথে স্বর্ণাও গায়। আমি একটার পর একটা গান গেয়ে যাই।

স্বর্ণা বলে, ভাবী জানো আম্মা অনেক ভালো গাইতে পারে।

ওমনি আমি মাকে চাপাচাপি করতে থাকি। অবশেষে মা গান ধরেন। লালনের গান। এতো সুন্দর গলা মায়ের! ওনার কন্ঠে এতো দরদ! পুরো পরিবেশটা কেমন যেন হয়ে উঠে।

হঠাৎ রাশেদকে আসতে দেখে মা থেমে যান।
রাশেদ বলে, আম্মা থেমো না কতদিন পর গান করছো। গাও প্লিজ!
মা আবার গাইতে শুরু করেন।
রাশেদ মায়ের কাঁধে মাথা রেখে চুপ হয়ে বসে থাকে।
পূর্ণিমা রাতের নীরবতা ফুড়ে মা গান গাইছেন আর আমি রাশেদকে দেখে কষ্ট পাচ্ছি । ওর চোখের কোণে চকচক করা পানি আমাকে রক্তাক্ত করছে। খুব ইচ্ছে করছে ওর পাশে বসে ওর হাত ধরে বলি আমি আছি তোমার পাশে।
হঠাৎ কারেন্ট চলে আসায় অন্ধকারের আবেগময় পরিবেশের ছন্দপতন হয়। রাশেদের হাতে তিনটে প্যাকেট ছিল আমরা তা কেউ খেয়ালই করি নি। রাশেদ বলল, সবার জন্য কিছু জামাকাপড় কিনেছি দেখতো পছন্দ হয় কিনা।

আমি বললাম, আগে খাওয়া দাওয়া শেষ করি তারপর না হয় আরাম করে দেখবো। আমি টেবিলে খাবার দিতে উঠে যাই। টেবিলে খাওয়া সাজিয়ে এসে দেখি মায়ের মুখ ভার। কি কারন বুঝতে পারি না।
খাওয়া শেষে কাপড় দেখার কথা মা রাশেদ কেউই বলে না। তাই আমিও আর সাহস করি না।

বিছানায় রাশেদ যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমি বললাম, আজ আপনার চোখে পানি দেখলাম। কেন?

রাশেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তারপর ভাবুক মনে বলল, আজ কত বছর পর আম্মা গাইলেন! আব্বা মারা যাবার পর আমাদের পরিবার অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়েছে কিন্তু এ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে আমরা হাসতে ভুলে গেছি। আজ আমরা সবাই স্ব স্ব অবস্থানে আছি কিন্তু কোথায় যেন আমাদের মনের আনন্দ হারিয়ে গেছে।
তুমি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলে না আমি কি কারণে তোমাকে বিয়ে করেছি। আজ বলছি–
আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম একটা হলুদের অনুষ্ঠানে। শিউলির চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে তুমি তোমার চাচীর সাথে এ শহরে এসেছিলে। আমি সাধারণত এসব অনুষ্ঠানে যাই না। শিউলি বাবার বাড়ি বেড়াতে এসেছে শুনে সময় বের করতে করতে শেষে ঐ দিন শিউলির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান শেষে তখন সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গল্প করছিল। আমি শিউলির অপেক্ষায় একা একটা চেয়ারে বসে ছিলাম। হঠাৎ বয়স্ক মহিলাদের আসর থেকে হাসির শব্দ পাই। ওখানে চোখ গেলে সব পৌঢ় নারীদের মাঝে হাস্যজ্জ্বল তোমার মুখ দেখতে পাই। তুমি ওখানে কি জানি বলছিলে আর সবাই হাসতে হাসতে একজন আরেকজনের গায়ে ঢোলে পড়ছিল। ওখান থেকে কিছুক্ষণ পর তুমি সরে বাচ্চাদের সাথে খেলতে শুরু করলে। আমি বসে বসে তোমার কীর্তি দেখতে থাকি। আবার কিছুক্ষণ পর তুমি তোমার সমবয়সীদের সাথে মিশে কলকল করতে থাকলে। পুরোটা সময় আমি শুধু তোমাকে আর তোমার আনন্দটাকে দেখেছি। তুমি কেমন জানি! নিজে আনন্দ করছো আবার সবার মাঝে সে আনন্দ বিলিয়ে দিচ্ছো। তখন থেকে আমার মনে তুমি গেঁথে যাও।
আমার মনে হয় আমি এমনই একজনকে আমার জীবনে চাই যে সবসময় আনন্দে থাকবে আর সবাইকে আনন্দ বিলিয়ে বেড়াবে। আমার এ নিরানন্দ পরিবারকে আবার প্রাণখুলে হাসতে শিখাবে।
বিয়ে নিয়ে আমার তেমন কোন ভাবনা ছিলো না কখনও। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমি যাকে বিয়ে করবো সে যেন আমাকে অনুভব করে আর আমার পরিবারের মানুষগুলোকে মূল্যায়ন করে। সে যেন শুধু আমার স্ত্রী নয় আমার জীবনসঙ্গিনী হয়।
তোমাকে দেখে কেন জানি আমার মনে হয়েছিল আমার জীবনসঙ্গী হবার সব গুণ তোমার আছে।

আমি মুগ্ধ হয়ে রাশেদের কথাগুলো শুনছিলাম।

–জানো নাজিলা, তুমি আমাকে নিরাশ কর নি। বিয়ের পর প্রতিদিন ঘরে ফিরে বাসার পরিবেশ দেখে আমার কি যে তৃপ্তি লাগে! স্বর্ণার হাসিখুশি মুখ, রবিনের সাবলিল ব্যবহার, আর আম্মা!- আম্মার মুখের প্রসন্ন হাসি যে কি আনন্দ দেয় আমাকে! তোমাদের লুডু খেলা, একসাথে হৈচৈ করে টিভি দেখা, রবিনের প্রেম নিয়ে তোমার আড়ালে বসে ফিসফিস আলোচনা সব কিছুই আমার ভালো লাগে। আর আজকে মায়ের গান গাওয়া দেখে—-তোমাকে বুঝাতে পারবো না তুমি এ পরিবারে কি নিয়ে এসেছো! এ পরিবারে তুমি যেন আনন্দের ছন্দ তুলে দিয়েছো। এ কদিনে সবাই তোমাকে অনেক অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।

রাশেদের কথাগুলো শুনতে আমার কি যে ভালো লাগছিল! মনে হচ্ছিল আনন্দে আমি নাচি! রাশেদ আমাকে এতো খেয়াল করে অথচ কিছুই বুঝতে দেয় না। আমি যেখানে সবসময় আমার চঞ্চলতার জন্য আমার পরিবারে এতো বকা খেতাম, চাচী ফুপুরা বলতো সংসার জীবনে আমার কপালে দুঃখ আছে সেখানে আমার এ চঞ্চলতার জন্যই রাশেদ আমাকে পছন্দ করেছে, এ পরিবারের সবাই আমাকে ভালোবাসে। আমার আমিকে যেন আজ নতুন ভাবে আবিষ্কার করি।
আমি আমার বেহায়া মন নিয়ে রাশেদকে প্রশ্ন করি সবাই আমাকে ভালোবাসে! সবাই?

রাশেদ বুদ্ধিমান ছেলে। সে বুঝতে পেরে মুচকী হাসে কিন্তু উত্তর দেয় না।

আমিও নিজের বেহায়াপনায় লজ্জা পেয়ে প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলি আজ কি কাপড় আনলেন যে মায়ের মুখ ভার হয়ে গেলো? আমাকে তো দেখালেন ই না!

রাশেদ বলল, আম্মা তোমার জন্য আনা শাড়িটা দেখে মন খারাপ করেছে।

–কেন?

—আম্মা আর স্বর্ণারটা দামী আর তোমারটা কমদামী বলে তুমি মন খারাপ করবে তাই আম্মা পুরো ব্যাপারটা চেপে যান তোমার কাছে। আমাকে বলেছে, আগামীকাল আরেকটা ভালো দেখে শাড়ি এনে তারপর সব তোমার সামনে খুলবে।

আমার যেন তর সয় না।
–আপনি কি শাড়ি এনেছিলেন আমার জন্য?

–এমনি একটা বেগুনি শাড়ি। কেন যেন শাড়িটা দেখেই মনে হয়েছিল এ রংটা কেবল তোমাকেই মানাবে। তাই সস্তা না দামী এসব না ভেবেই কিনে নিয়েছিলাম।

–আমি দেখতে চাই শাড়িটা।

—কিভাবে? ওটা তো আম্মার রুমে!
—নিয়ে আসেন।
—কি বল! এখন আম্মা ঘুমাচ্ছেন। তাছাড়া আম্মা তো মানা করেছে।
—আমি জানি না। আমার এ শাড়ি চাই। আপনি নিয়ে আসেন। নইলে আমি যাচ্ছি।
—না না! থাক! আমিই যাচ্ছি। কি যন্ত্রণা! মায়ের রুমে এখন আমি চোরের মতো যাবো!

আমি মুচকী হাসি। রাশেদ শখ করে আমার জন্য শাড়ি এনেছে এটা ভেবে আমার তো খুশিতে পাগল পাগল লাগছে। আচ্ছা আমি এমন কেন করছি? রাশেদের সব কিছুই কেন আমাকে এতো আন্দোলিত করে!

রাশেদ শাড়ির ব্যাগ নিয়ে আসে।
আমি ব্যাগ খুলে দেখি, একটা বেগুনী টাঙ্গাইল শাড়ি। বেগুনীর সাথে গাঢ় সবুজ পাড়। কি যে সুন্দর শাড়িটা! আমি হাত বুলাতে বুলাতে কখন যেন অজান্তে গালে চেপে ধরি।
হঠাৎ দেখি রাশেদ আমাকে দেখে মিটমিট করে হাসছে। আমি লজ্জা পেয়ে যাই।

আমি বলি, আমি কালই এ শাড়িটা পারবো। মাকে বলে দিয়েন শাড়িটা আমার খুব খুব পছন্দ হয়েছে।

—কি দরকার? তোমার জন্য একটা দামী শাড়ি কাল নিয়ে আসবো। সেটা তুমি যখন ইচ্ছা পরো। এটা পরার দরকার নাই।
—কেন?
—এমনি। কি দরকার?
—না, আমি এটাই পরবো । এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে বললাম তো!

রাশেদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি এ শাড়িটা খুব শখ করে তোমার জন্য এনেছি, নাজিলা।
আমি চাই তুমি যেদিন শুধু আমার কথা ভাববে, আমার হতে চাইবে শুধুমাত্র সেদিন আমার জন্য এ শাড়িটা পরবে।

আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়। এক রাশ রক্তিম আভা পুরো মুখে ছড়িয়ে পড়ে। রাশেদের প্রতিটা কথা কানে বাজতে থাকে।
অজানা এক ভালোলাগায় ভাসতে থাকি আমি। “যেদিন আমার হতে চাইবে” —উফ! এতো লজ্জাতেও কেন এতো ভালো লাগছে! নিজের লজ্জা রাঙা মুখ আড়াল করতে শাড়িটা বুকে জড়িয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি। কিন্তু আমার হৃদয় স্পন্দনের ড্রিম ড্রিম শব্দ যেন আজ আমাকে ঘুমোতে দিবে না।

চলবে।।

ঝিনুক চৌধুরী।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here