‘সত্য পিঞ্জর’
পর্ব ৯.
তাবিনা মাহনূর

__________

আতিকের ফোন চুরি করা রক্ষীর নাম সজল। সজলকে পুলিশ অন্য কাজে লাগিয়েছে। সে খুব আকুতি মিনতি করে জেলে না দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে পুলিশের মাথায় অন্য খেল তৈরি হয়। ওসি রাশেদ তখন আরশকে ফোন করে তার পরিকল্পনার কথা বললে আরশের তা পছন্দ হয়।

সেই অনুযায়ী সজল এখন কারাবন্দি না থেকে কবরস্থানের মাঝে ছোট একতলা বাড়িটায় আছে যেখানে রক্ষীরা থাকে। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে রাতের খবরাখবর জানানোর জন্য। যদি সে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য দিতে পারে তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যদি সে পালিয়ে যায় অথবা তথ্য গোপনের চেষ্টা করে তাহলে তাকে দ্বিগুন শাস্তি দেয়া হবে।

সজল বোকা ধরণের মানুষ। পুলিশের কথা মেনে নিয়ে সে এখন সারারাত জেগে থাকে কবরস্থানের ভেঙে পড়া দেয়ালের ফাঁকা দিয়ে কেউ প্রবেশ করছে কি না তা দেখতে। কিন্তু সমস্যা হয় রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে। এসময় তার খুব ঘুম ধরে। সে জোর করে চোখ খুলে রাখলে চোখ দুটো জ্বলে যায়। দুইদিন ধরে এই দায়িত্বে আছে সে। আজ তৃতীয় দিনে তার চোখে ধরা পড়লো অন্যরকম দৃশ্য।

কবরস্থানে লাশের হাড় চুরি করতে অনেক লাশচোর আসে। তাদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা রয়েছে। অনেক শ্রমিক আবার সেই চোরদের সাহায্য করে। সজল এগুলোর মাঝে যায় না। এর আগেও দুই একবার সে এমন চোর দেখেছে, তবু কিছু বলেনি। হাড়গোড় চুরি করলে কি এমন ক্ষতি!

তবে আজ সে একই দৃশ্য খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। কেননা, এক লোক কবর খুঁড়ছে এবং তারই পাশে দাঁড়িয়ে আছে আজিমপুর কবরস্থান শাহী মসজিদের নতুন ইমাম তারিক। সজল একবার ভাবলো, তারিক মনে হয় লাশচোরদের সাথে যুক্ত। তারপর আবার ইমামকে এতটা খারাপ ভেবে নেয়ায় তওবা করলো সে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ভাবলো, জিন-ভুত নয় তো?

এই ভাবনায় সে ভেতরেই থেকে গেল। আবার পুলিশের ভয়ে পা বাড়ালো। এভাবে ভেতর-বাহির করতে করতে শেষমেষ ইমামের কাছে গেল সে। ইমাম তাকে দূর থেকে দেখতে পেয়ে ডাকলেন, ‘ঘুমাননি সজল?’

স্বস্তি নিয়ে বুকে থু থু দিয়ে বোকা হাসি হাসলো সজল, ‘ঘুম আসতাছে না। আপনারে দেইখা ডরায় গেছিলাম। কি করতাছেন?’

কবর খুঁড়ছেন যিনি, তার পরনে পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি। লোকটার মুখ অত্যন্ত ভীত। তার দিকে তাকিয়ে তারিক বললেন, ‘উপকার করছি সজল। কুফরী বন্ধে সাহায্য করছি।’

– কুফরী!
– হ্যাঁ। এই কবরে একজনের নামে তাবিজ গেড়ে রাখা আছে। এই লোকটা সেটাই তুলছে।

সজল ধীরে ধীরে ইমামের পাশে দাঁড়ালো। মৃদু কণ্ঠে বললো, ‘এই লোক ক্যাডা?’

তারিক উত্তর দিলেন, ‘উনার বড় বোনের সংসার ভেঙে যাচ্ছে, বারবার পেটের মধ্যে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আর উনার দুলাভাই পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছে। হুজুর বলেছে উনার বোনকে কঠিন কুফরী করে রাখা আছে। কবরে তাবিজ পুঁতে রাখা যেটা না তুললে সমস্যার সমাধান হবে না।’

সজলের মুখে মায়া ফুটে উঠলো, ‘আহারে! মানুষ কত্ত খারাপ হইতে পারে! কিন্তু উনি কেন আইলো? অন্য জনরে দিয়া উঠান যাইতো না?’

– হুজুর বলেছেন রক্তের সম্পর্কের কাউকে এই তাবিজ উঠাতে হবে। উনার আরো ভাই বোন আছে, কেউই রাজি হয়নি। উনিও ভয় পেয়েছিলেন এমন কাজ করতে। কিন্তু বোনের কথা চিন্তা করে বাধ্য হয়ে এসেছেন। উনি বোনকে খুব ভালোবাসেন।
– নাম কি উনার?
– ইকবাল। ইকবাল ভাই কবরস্থানে ঢোকার জন্য সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে আমার কাছে এসে সাহায্য চাইলেন।

ইকবাল কবরের অনেকটা গভীরে ঢুকে গিয়েছে। এখন একটা সাদা কাপড় দেখা যাচ্ছে। সজল সেটা দেখে ভয় পেলেও প্রকাশ করলো না। ইকবাল হঠাৎ হাত উঁচু করে বললো, ‘পেয়েছি! একটা না, পাঁচটা তাবিজ!’

সজল অবাক হয়ে দেখলো, কিছু তাবিজ আর একটা শাড়ির ছেঁড়া অংশ ইকবালের হাতে। সে সেদিকে তাকিয়ে বললো, ‘কিন্তু এই লোক জানলো ক্যামনে যে এই কবরেই তাবিজ আছে?’

ইমাম অদ্ভুত হাসি হাসলেন। সজলের বুকে যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে। ইমাম অবশ্য বেশিক্ষণ সেই হাসি ধরে রাখলেন না। দ্রুতই গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘জীন ছাড়া আর কে জানাবে?’

সজল সেখানেই অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।

_____

রিশতাকে আজিমপুর কেন্দ্রিক সমস্যার কথা বলে আরশের অনেকটা হালকা লাগছে। এসব বিষয়ে তার শুধু অফিসের কলিগদের সাথে কথা হয়। কখনো অফিসের বাইরের কাউকে সে কিছু বলে না। কিন্তু রিশতাকে বলে মনে হলো তার ভার অনেকখানি কমে গিয়েছে। রিশতা শুধু শোনে না, পরামর্শ দেয়। আরশ মনে মনে আনিকাকে অনেকবার ধন্যবাদ জানিয়েছে।

ফজরের সময় আরশ ঘুম থেকে উঠে দেখে, সে সোফাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার ঘাড় ব্যথা করছে। বিছানায় তাকিয়ে সে দেখল রূপকথার গল্পকথন থেকে জীবন্ত এক রাজকন্যা তার বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত রাজকন্যাকে জাগাতে সোনার কাঠি রুপার কাঠির জায়গা অদল-বদল করতে হবে। এমন ভাবনায় সে কিছুক্ষণ একা একা হাসলো। প্রেমের শুরুতে মানুষ একাই হাসে।

তার নূরজাহানকে জাগাতে ইচ্ছে করছে না। গায়ে কাঁথা নেই, শাড়ির আঁচল দিয়ে শীত কমানোর চেষ্টা করেছে রিশতা। আরশ উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার থেকে কাঁথা বের করে রিশতার গায়ে দিয়ে দিলো। বাথরুমে গিয়ে ওযু করে আসার পর তার মনে হলো, সে প্রকৃত অর্ধাঙ্গের মতো আচরণ করছে না। রিশতাকে জান্নাতে দেখতে চাইলে অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে নিয়মিত হতে হবে। রিশতার পাশে মেঝের উপর হাটু গেড়ে বসে সে ডাকলো, ‘জাহান?’

কোনো সাড়া নেই। আরশ আবার ডাকলো, ‘রিশতা?’

রিশতা একটু চোখের পাতা নাড়লো, কিন্তু চোখ দুটো বন্ধ রাখলো। আরশ এবার গালে হাত দিয়ে ডাকলো, ‘নূরজাহান?’
চোখ খুললো রিশতা। আরশ হাত সরিয়ে নিয়ে বললো, ‘সালাত পড়বেন না?’

দুই হাত দুই পাশে ছড়িয়ে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো রিশতা। তার এমন শিশুসুলভ আচরণে আরশ মুচকি হেসে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘ঘুম কাটছে না?’
রিশতা দুই পাশে মাথা নাড়লো। আরশ তার মাথায় হাত রেখে বললো, ‘কষ্ট করে ওয়াশরুমে যান। মুখে ভালোমতো পানি ছিটিয়ে নিন।’

রিশতা ওযু করতে চলে গেল। আরশ দুটো মুসাল্লা বিছিয়ে রিশতার জন্য অপেক্ষা করলো। দুজন মিলে সালাত পড়ার পর রিশতা যখন বিছানার দিকে এগিয়ে গেল তখন আরশ বলে উঠলো, ‘আপনি সকালের আমল জানেন?’

– না। আমি শুধু ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়ি।
– এটা খুব ভালো আমল। প্রতি ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়লে জান্নাতে যাওয়ার মাঝে শুধু মৃত্যুটাই বাধা হয়ে থাকে। আমাদের রাসূলের একটা হাদিস আছে এমন। আরো কিছু আমল যুক্ত করে নিবেন ইন শা আল্লাহ।
– এখন কি করবো?
– আজ থাক। আমি আজ সময় পেলে আপনাকে এ সম্পর্কে জানাবো। আর আনিকা আপুর কাছ থেকে পর্দার ব্যাপারে জেনে নিবেন।
– ঠিকাছে।

রিশতা খাটের এক কোণে শুয়ে পড়লো। চোখ বন্ধ করে বললো, ‘সোফায় ঘুমানোর প্রয়োজন নেই।’
মুচকি হেসে উত্তর দিলো আরশ, ‘আমি ইচ্ছে করে ঘুমাইনি। কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি।’

রিশতা আর কিছু বললো না। তার মাথায় এখন অন্য চিন্তা। কাল আরশ বলেছিল, বিরোধী দলের ক্ষমতা খুব কম। তারা নির্বাচনে জয়ী হলে সূর্য পশ্চিমে উঠে যাবে! অর্থাৎ তাদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সুতরাং তারা এমন কাজ করবে না। যত ষড়যন্ত্রই করুক না কেন, তারা জিতবে না এটা তারা জানে। শুধু শুধু মামলায় জড়ানোর ঝামেলায় যাবে না। এমনটা হলে রিশতার ধারণা, আফজালই লাবিবকে ফাঁসানোর জন্য নিজেকে ভিকটিম বানাচ্ছেন। এটা সে এখনো আরশকে বলেনি। এসব ভাবতে ভাবতে সে ঘুমিয়ে পড়লো।

আরশ ঘুমায়নি। সে প্রতিদিন ফজরের পর ধানমন্ডি লেকের দিকে হাঁটতে চলে যায়। আজও যাওয়ার সময় মনে হলো, হাঁটার সময় একজন সঙ্গী থাকলে বেশ ভালো লাগতো। এমন ভাবনা কালকেও হয়নি। এক দিনেই তার চিন্তাধারায় কত পরিবর্তন!

_____

সজল চোখ খুলে নিজের ঘরের ফ্যান দেখতে পেলো। দ্রুত উঠে বসে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখলো, দিনের শুরু হয়েছে। খাট থেকে নেমে মুখ না ধুঁয়েই সে দৌড় দিলো ইমামের কাছে। গিয়ে জানলো ইমাম মসজিদে নেই। তরুণ ইমাম পড়াশোনা করছেন এখনো। তাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় ছাড়া আর কোনো সময় তাকে তেমন পাওয়া যায় না। সে হতাশ হয়ে নিজের ঘরে ফিরে গেল। রাতে আবার আসতে হবে তাকে। রক্ষীর চাকরিটা সে ছেড়েই দিবে এবার।

ভুবনের ফোন না পাওয়া গেলেও নাম্বার দিয়ে তার কল রেকর্ড বের করা যেত। কিন্তু সমস্যা হলো, তার নাম্বার কারো জানা নেই। কবরস্থানের কর্মচারী কেউই ঠিকঠাক বলতে পারছে না। তার নাম দিয়ে অনেক নাম্বার রেজিস্ট্রেশন করা আছে বলে নির্দিষ্ট কোনটা জানা গেল না। আবার আতিক ভুবনের সাথে যেই নাম্বার দিয়ে কথা বলেছে তা কবরস্থানের নিজস্ব ল্যান্ডফোন দিয়ে। কার্তিক বেশ ভালো বুঝতে পারলেন, এ ঘটনা এমন একজনের পরিকল্পনায় হয়েছে যে সূক্ষ্ম চাল চেলেছে। সে বড় খেলোয়াড়। সব দিক চিন্তা করে প্রমাণ নষ্ট করে দিয়ে সে এগিয়ে গিয়েছে।

আরশের ধারণা, আতিককে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সে যেন ভুবনকে মেরে ফেলে। আর ভুবনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সে যেন আতিককে মেরে ফেলে। অর্থাৎ উভয়কেই এই আদেশ দেয়ায় দুজনের কাছে ধারালো ছুরি ছিল। এবং দুজনেই ফোনে মাদক ছাড়া আর কোনো আলোচনা করেনি। আবার ভুবন নিজের ফোন নম্বর গোপন রাখার চেষ্টা করেছে, আর আতিক ভুবনের সাথে স্বাভাবিক স্বরে কথা বলেছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ভুবনের বিষয়টা নিশ্চিত না হলেও, আতিককে মূল টার্গেট করে খুন করা হয়েছে।

তবে ভুবন মারা যাওয়ায় বেশ লাভবান হয়েছে আসল চালবাজ। এসব প্যাচের কারণে কেসটা আরো জটিল হয়ে গিয়েছে। খুব সাধারণ কেস অথচ সমাধান করা যাচ্ছে না। মিলন আবার অন্য এক কেস হাতে নিয়েছেন। মিয়ানমারের বর্ডারে মাদক পাচার নিয়ে কক্সবাজার থানার পুলিশ ঢাকার সিআইডির সাহায্য চেয়েছে। এজন্য মিলন সম্পূর্ণ দায়িত্ব কার্তিকের উপর ছেড়ে দিয়ে কক্সবাজার গিয়েছেন। এখন কার্তিক তার চার জনের ছোট টিম নিয়ে ব্যস্ত। এই টিমে আরশ ছাড়া বাকিরা কেমন যেন উদাসিনের মতো কাজ করছে। তাই কাজের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে ধীর গতিতে।

রিশতা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। বাইরে বেরিয়ে কার সাথে কথা বলবে বুঝতে পারলো না সে। আনিকার ঘরে আনিকাকে না পেয়ে নীচে ড্রইং রুমে গেল সে। সেখান থেকে রান্নাঘরে থাকা মানুষের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। নাজিফা আর কাজে সাহায্য করার একজন মহিলা কথা বলছেন। রিশতার মনে হলো, নাজিফা তাকে মেনে নিতে পারছেন না। আনিকা বলেছে তার মায়ের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে। সে নিজেকে প্রস্তুত করে রান্নাঘরে গিয়ে বললো, ‘মা!’

নাজিফা তাকালেন। একটু হাসার চেষ্টা করলেন যেটা দেখে রিশতার মন খারাপ হয়ে এলো। বোঝাই যাচ্ছে নাজিফা সহজ হতে পারছেন না। তিনি কাজে মনোযোগ দিয়ে বললেন, ‘উঠেছো? খেয়ে নাও।’

– সবাই খেয়েছে?
– হ্যাঁ।
– আনিকা আপুকে দেখছি না যে?
– ও আরশের সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছে। রেগুলার চেকআপের জন্য। আরশ নাকি দুদিনের ছুটি পেয়েছে।
– জি মা। অফিসের লোকই ছুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। আমি কি কোনো কাজে সাহায্য করতে পারি?

কথাটা কেমন যেন আবেদনপত্রের মতো গোছানো মনে হলো রিশতার। সে বুঝতে পারছে না কীভাবে নাজিফার সাথে সময় কাটানো যায়। নাজিফার অবস্থাও একই। তিনি চায়ের কাপ নিয়ে বললেন, ‘এটা তোমার আব্বুকে দিয়ে আসো। আর কিছু করতে হবে না।’

এতেই রিশতা খুব খুশি হলো। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে লুকমানের ঘরে গেল সে। বাড়ির সাত ও আট তলা মিলে ডুপ্লেক্স জায়গার উপরের তলায় আমান, আরশ ও আনিকার ঘর। একটা গেস্ট রুমও আছে। নীচে ড্রইং, ডাইনিং, রান্নাঘর ও লাইব্রেরি ঘর। আর একটা ঘর আছে যেখানে নাজিফা আর লুকমান থাকেন।

লুকমানের ঘরের দরজায় নক করে রিশতা ডাকলো, ‘আব্বু, আপনার চা এনেছি।’

লুকমান নরম মনের মানুষ। গম্ভীর স্বভাবের হলেও আন্তরিকতায় গলে যান তিনি। এখনো রিশতার মুখে আব্বু ডাক শুনে তিনি মুচকি হাসলেন। এই হাসিটা রিশতার প্রাণবন্ত মনে হলো। তার ঠোঁটেও হাসি ফুটে উঠেছে। লুকমানের হাতে কাপ দিয়ে সে বললো, ‘আব্বু, আপনার আর কিছু লাগবে?’

– না মা। তুমি খেয়েছো?
– জি না আব্বু।
– যাও আগে খেয়ে নাও। শরীরের খেয়াল রাখবে মা। আর সবাই তোমার আপন। কাউকে ভয় করো না কেমন?
– জি আব্বু।

রিশতা ফিরে আসতে গিয়েও বলে উঠলো, ‘আব্বু, আমি কি আপনার জন্য পাউরুটি টোস্ট করে দিব?’

লুকমান মহা খুশি হলেন। তিনি হাসিমুখে বললেন, ‘কষ্ট হবে যে মা?’
– কোনো কষ্ট নেই। আমিও খাবো।
– তাহলে দুটো দিও।

রিশতা রান্নাঘরে গিয়ে কাজ শুরু করে দিলো। তার খুব ভালো লাগছে। পরক্ষণেই মনে পড়লো আজ স্কুলে যাওয়া হয়নি, এমনকি ছুটিও নেয়া হয়নি। তার এখন ছাত্রীদের সাথে বিরক্তিকর সময় কাটাতে হতো। সে তো এমন জীবনই চেয়েছে যেখানে তাকে সম্মান দেয়া হবে, নিজের আয় মিলবে। তারপরও তার সংসারের কাজ করতে ভালো লাগছে। কেন?

তার ভাবনা ভুল ছিল। উপলব্ধিটা ভুল ছিল।

__________

(চলবে ইন শা আল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here