#স্বপ্নের_চেয়ে_মধুর❤️
লেখাঃ সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব-এগারো
.
বেলা বেশ বিরক্তির সাথে বললো,
-“বউ থাকতে আপনি আমার সাহায্য চাইতে এসেছেন? বিষয়টা বুঝতে পারছি না শুদ্ধ সাহেব!”
শুদ্ধ অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
-“আমি কখন বললাম আমার বউ আছে?”
বেলা হা হয়ে গেলো। এই মাত্র বলে কথাটা ভুলে গেলো?
-“আপনি এইমাত্র না বললেন আছে!”
শুদ্ধ এবার স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল,
-“হ্যাঁ আছে। ভবিষ্যতে বিয়ে শাদী করলে বউ তো হবেই। মানুষটা তো আছে কিন্তু কোথায় আছে কে জানে? হয়তো দূরে বা খুব কাছে!”
কথাটা বলতে বলতে শুদ্ধ একটু ঝুকে এলো বেলার দিকে। বেলা অপ্রস্তুত হয়ে একটু পিছিয়ে গেলো।
-“আপনি তো বেশ প্যাচালো লোক! সোজা কথা বলতে পারেন না?”
শুদ্ধ বেলার কথা ছিনিয়ে নিয়েই বললো,
-“তা আপনি সোজা প্রশ্ন করতে পারেন না?
বেলা এবার গলা খাকাড়ি দিয়ে হাটা ধরলো। শুদ্ধর কথাটাকে যেন পাত্তা দিলো না। শুদ্ধ বেলাকে নিয়ে ডায়মন্ডের শো রুমে যেতে চাইলে বেলা বলে,
-“ডায়মন্ডের চেয়ে ভালো হয় যদি অনেক কিছুর মিশেল গিফট দেন তো। আপুকে যতটা চিনি তাতে আপুর শাড়ির প্রতি বেশ আকর্ষণ! প্রথম বেতন পেয়ে আপুকে একটা শাড়ি গিফট করেছিলাম সাধ্যমতো, আপু খুবই খুশি হয়েছিল। বলছিলো, অন্যকিছুর চেয়ে শাড়ি দেওয়ায় সে বেশি খুশি হয়েছে। শাড়ির প্রতি তার আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করে!”
কথাটা বলতে বলতেই বেলা মিষ্টি করে হাসলো। শুদ্ধ মুগ্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আনমনেই বললো,
-“তোমার মতো!”
বেলা কথাটা বুঝতে না পেরে বললো,
-“জি?”
শুদ্ধ “কিছু না” বলে আবার বলল,
-“এরজন্যই আপনাকে এনেছি। এবার বুঝলেন কেন এনেছি? স্পর্শ কিন্তু এই আইডিয়া দিতে পারতো না।”
বেলা অল্প হাসলো। দুজনে মিলে বেশ কয়েকটা শাড়ি কিনলো। বেলা শাড়ির সাথে মিলিয়ে চুড়িও নিতে পরামর্শ দিলো। শুদ্ধও বেলার কথামতো কেনাকাটা করলো। বেশ অনেকটা সময় তারা একসাথে কাটালো। শুদ্ধ বেলাকে কফির জন্য অফার দিয়েছিল কিন্তু বেলা কাজের তাড়া দেখিয়ে বিদায় জানালো। তবে শুদ্ধ তাকে একদিন দুপুরের ভোজনের দাওয়াত দিলো। বেলাও আর মানা করতে পারে নি।
.
চাইলেই ফ্লাইটে চট্টগ্রাম যেতে পারতো রাফাত। কিন্তু যেহেতু হাতে সময় আছে সে ট্রেনেই চড়লো তাই। নিজেকে একটু সময় দেওয়া যাবে। এবং পাশের রমনীকেও একটু সময় দেওয়া যাবে। আসার আগে এক ভয়ংকর কাজ করেছে সে। সাথে করে হুমায়রাকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটাকে কম কষ্ট তো দেয় নি সে। কম তো হলো না! আর কত? এবার সেও চায় মুভ অন করতে। মায়ের কথা শোনার পর হঠাৎই মনে হলো কম চেষ্টা তাও সে করে নি বেলাকে পাওয়ার জন্য! যে নিজেই লুকায় তাকে খোঁজার সাধ্য কার? অথচ শত অবহেলাতেও এই হুমায়রা তার পাশে থেকেছে। কত বার মেয়েটাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাবার বিশাল সাম্রাজ্য ছেড়ে সে মধ্যবিত্ত রাফাতের হাত ধরেছে। তার সংসারের চাহিদা পূরণ করেছে। সে জানে,বোঝে। কিন্তু মন আর মস্তিষ্কের খেলায় প্রতিবার মনকে জিতিয়েই সে মস্তিষ্ককে হারিয়ে দিতো। তাই তো বেহায়ার মতো পড়ে থাকতো বেলার পিছনে। ভেবেছিল এক না এক দিন ঠিকই সে বেলাকে পাবে তার করে। কিন্তু বেলা তার হবার নয়। সেই নারী যে তার ভাগ্যেই নেই। মা তো ঠিক কথাই বলেছে। হুমায়রা পাশে এখনো চুপ করে বসে আছে। তার মাথায় ঢুকছে না রাফাতের এমন ব্যবহারের কারণ। সে মনে মনে বেশ ভয় পেয়ে আছে। আচ্ছা রাফাত কিছু বুঝে যায় নি তো? কিন্তু সে তো কাউকে কিচ্ছু বলে নি। রাফাত কি কিছু টের পেয়েই তাকে ফেলে যেতে এসেছে? যেন বেলা তার জীবনে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে তাই? মনে ভয় নিয়েই আড়ষ্ট হয়ে বসলো সে। রাফাতেএ দিকে ভয়ে তাকাচ্ছে না সে। রাফাত কি সত্যি নিজেই নিজেকে মুক্তি দিতে চায়? ও কি হুমায়রাকে চিরদিনের মতো মুক্তি দিতে চায়? ট্রেনে উঠেই হুমায়রার চোখ ছলছল করে উঠলো কোন এক অজানা ব্যথায়। আসলেই কি অজানা? রাফাত তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কিছু খাবে? নিয়ে আসবো?”
হুমায়রা ভীত কন্ঠে বলল,
-“না! না আমি কিচ্ছু খাবো না। কিচ্ছু না। আমি একদম বিরক্ত করবো না কাউকে। একদম না। সত্যি!”
রাফাত চমকালো। কি বলছে এই মেয়ে। সে তো সহজ একটা প্রশ্ন করেছে। তাতে এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কেন? রাফাত এগিয়ে আসতেই হুমায়রা তার থেকে একটু পিছিয়ে গেলো। রাফাত আরেকদফা চমকালো। কি হয়েছে হুমায়রার? যে মেয়ে সে বলতে পাগল আজ সে নিজ থেকে রাফাতের থেকে দূরে সরছে?
.
টেবিলে বসে বেশ মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে স্পর্শ। কিছু নিয়ে বেশ চিন্তিত সে। মনে মনে বেশ অস্থির মনে হচ্ছে। এদিকে স্পর্শকে খুব মনোযোগ দিয়ে অবলোকন করছে পূণ্য। এটা নতুন নয়। সে স্পর্শ এর অগোচরে তাকে দেখে। মাঝে মাঝে মুগ্ধতা আটকাতে না পেরে সৃষ্টিকর্তার নিকট স্পর্শের জন্য দোয়া করে যেন নজর না লাগে। এই যে এই পুরুষটির জন্য তার হৃদয় বড্ড ব্যাকুল তা কি স্পর্শ জানে না? জানে! অবশ্যই জানে। তবুও তাকে এড়িয়ে চলে। পূণ্যও তাকে বিরক্ত করে না এই বিষয়ে। সবারই জীবনের একটা নিজস্ব জায়গা থাকে সেখানে পূণ্য কখনো হস্তক্ষেপ করে না। তবুও বেহায়া চোখ আর মনকে সে বশে আনতে পারছে না। পাশাপাশি বিল্ডিং, বিশাল থাই এর বাইরে দেখা গেলেও ভিতরে দেখার সুযোগ নেই। এদিকে স্পর্শর জানালা সর্বক্ষণ থাকে খোলা। তাই তো পূণ্য দেখতে পারে তাকে। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে স্পর্শকে আলিঙ্গন করলো যা দেখে পূণ্যর চোখ বড় হয়ে এলো। তার সাথে ভ্রু কুঁচকে জানান দিচ্ছে সে কতটা বিরক্ত। এই পুরুষটির সাথে এই মেয়ে কি করে? দূর থেকে কথা শোনা না গেলেও মোটামুটি স্পর্শর হাসি দেখে সে বুঝতে পারছে মেয়েটা স্পর্শর কাছে স্পেশাল। কিন্তু এই তন্নি এখানে কেন? কি উদ্দেশ্য তার? পূণ্যর চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে এলো। মনে মনে এক পোক্ত কথা বলল,
-“উড়ে নাও বাবু! আমার খাঁচায় বন্দী হয়ে তো এইসব কিছুই হবে না। তখন তোমার জগতে শুধু আমি থাকবো। জাস্ট ওয়েট!”
টেবিলে হাত দিয়ে ধপ করে বারি দিয়েই উঠে গেলো সে। সে পারছে না সহ্য করতে এইসব।
(চলবে)..