#চারুলতা_ভালোবেসেছিল
#পর্ব৫
লতা ফোন টিপছে। আমারও ঘুম আসছে না, সারাদিন ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ভাবছি। অন্য দিন আমরা দু’বোন আলাদা রুমে ঘুমালেও আজ একসাথে শুয়েছি।
“লতা বারান্দায় বসবি? ভালো লাগছে না।”
“তুমি যাও আপু, আমি একটু পরে আসছি”
আজ আমি লতার রুমে শুয়েছি। আমাদের বাড়িটা পুরোনো আমলের। একটাই টানা বড় বারান্দা সব রুমের সাথে লাগানো। শহরের বাড়ি গুলোর মতো আলাদা ছোট ছোট বারান্দা না। ঘোরানো বারান্দার একপাশে কিছু ফুলের গাছ করেছে লতা। হাসনা হেনা ফুটেছে, কী মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে বাতাসে। কয়েকটা চেয়ার আর মোড়া পাতা আছে বারান্দায়। সব রুমের দরজা খুলেই এই বারান্দাটা আসা যায়। লতার রুমটা দোতলার মাঝামাঝি, তারপাশেরটা আমার রুম, এরপর সবচেয়ে কোণের রুমটা ভাইয়ার, যেটায় আজ ওনার শ্যালক আছেন।
ভাইয়া এবার ভাবিকে নিয়ে আব্বা আম্মার রুমে উঠেছেন। সে রুমটা বড় আর এটাচ বাথরুম আছে, কারণ হিসেবে এটা বললেও, মূল উদ্দেশ্য যে নিজেকে এখন গৃহকর্তা রূপে জাহির করা, সেটা আমি আর লতা ঠিক জানি। থাকুক ঐ রুমে ভাইয়া, ভাইয়াকে গৃহকর্তা মানতে তো আমাদেরও আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের এ বাড়ির ভৃত্য মনে করায় আপত্তি আছে। ভাইয়া যদি গৃহকর্তা হোন, আমরাও এই পরিবারের মেয়ে, ভাইয়ারই বোন, হতে পারি আপন নই। কিন্তু তাই বলে ভাইয়া আমাদের ঠকাতে পারে না, দূর দূর করে তাড়াতে পারে না।
বারান্দায় এসে দেখি দখিনের চেয়ারে একজন নারীমূর্তি বসে আছেন। দূর থেকেই বুঝলাম ভাবি।
এত রাতে, ভাবিকে বারান্দায় দেখে অবাকই হলাম।
“ভাবি আপনি এত রাতে?”
“চারু, আমাকে তুমি করেই বলো। বয়সে আমি বড় ঠিক, তবে ননদ ভাবির সম্পর্কে তুমিটা বেশি ভালো লাগে।”
“জ্বি বলবো, অভ্যাস নেই তো, আস্তে আস্তে বলবো।”
ভাবি তুমি আমাদের দু’বোনের উপর রাগ তাই না?
কিন্তু আমি বা লতা এখনো কিছু করি না,
আমার ডিগ্রি পাস সার্টিফিকেট দিয়ে কোন চাকরি পাচ্ছি না, লতার তো পড়াও শেষ হয়নি।
টাকার যে খুব দরকার আমাদের। ”
নীলু ভাবি উঠে এসে আমার হাত ধরলেন।
“লতা, তোমার ভাইয়া যতই তার বাবার উপর রাগ করার ভান করুক, সে তার বাবারই সন্তান।
একই রকম বদরাগী, কারো মতামতের তোয়াক্কা করে না। স্ত্রী কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, অবহেলা করা সে নিজেও স্বাভাবিক মনে করে।”
নীলু ভাবি কেঁদে উঠলেন
“প্রেগন্যান্সির সময় জোর করে আমার চাকরি ছাড়িয়েছে তোমার ভাইয়া। দুই জমজ বাচ্চা নিয়ে আমি যেন আর্থিক ভাবে ওর উপর নির্ভরশীল থাকি তাই চেয়েছে ও। এবং হয়েছেও তাই। ভালোবেসে বিয়ে করেছি, তাই কাউকে নালিশ করব, সাহায্য চাইব সে মুখ নেই। ”
ভাবি একটু চুপ করলেন, কিন্তু ওনার আরো কিছু বলার আছে বুঝতে পারছি।
“আমি তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারব না চারু, তবে তোমাদের উপর কোন রাগ নেই বিশ্বাস করো।হিল্লোলের মন এত ছোট, বিয়ের আগে বুঝিনি, মা হারা ছেলে হিসেবে ওর উপর একটা মমতা কাজ করতো।
সৎ মা, সৎ বোনের গল্প, ও এমন ভাবে করতো,
যে তোমাদের সাক্ষাৎ শয়তান মনে হতো আমার।
তাই শুরুতে বিয়ের পর তোমাদের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলতাম।”
ভাবির কথা অবাক হয়ে শুনছি, শান্ত কিন্তু গম্ভীর ভাব নিয়ে থাকা ভাইয়ার চরিত্রের এই দিকটা আমার অজানাই। হয়তো ভাইয়াকে কাছ থেকে খুব কম দেখেছি তাই বুঝিনি। ভাইয়া সবসময় বাইরে বাইরেই থেকেছেন পড়াশোনা আর চাকরির জন্য।
” চারু আমি আস্তে আস্তে বুঝেছি, হিল্লোল মোটেও নরম মানুষ নয়, বরং বেশ জটিল। কিন্তু ততদিনে আমি প্রেগন্যান্ট, বাচ্চার ক্ষতি হবে চাকরি করলে, এই অজুহাতে হিল্লোল আমার চাকরি করা বন্ধ করলো।
ও এখন আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের এই রূপই ছোটবেলা থেকে ওর মনে আঁকা হয়ে গিয়েছে, অবচেতন ভাবে হোক বা সচেতন ভাবে, হিল্লোলও একরোখা, বদরাগী, ডমিনেটিং হ্যাসবেন্ডে পরিণত হয়েছে। ”
ভাবিকে স্বান্তনার দেওয়ার মতো কোন কথা আসলে খুঁজে পাইনি। আমি আমার ভালোবাসা হারিয়ে কাতর ছিলাম, ভাবিকে দেখলাম তার ভালোবাসা থেকে পাওয়া আঘাতে কাতর হতে। ভাবি রুমে চলে গেলেন।
একা একা বসে আছি, রাত বোধহয় একটার বেশি, মফস্বল শহরের জন্য গভীর রাত। লতা এসে দাঁড়ালো বারান্দায়, “আপু আমি হৃদয় ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম, ভাইয়া কাল নোয়াখালীতে আসবেন। পুলিশ ট্রেইনিং সেন্টারে একটা কাজ নাকি আছে। বাড়িতে এসে আমাদের দেখে যাবেন, ভাইয়ার সাথেও কথা বলবেন বললো। ”
লতার কথায় আমি বেশ চমকালাম। হৃদয় ভাই আসবেন! কতদিন পর এই নাম শুনলাম। লতা কখনো বলেনি ভাইয়ার সাথে ওর যোগাযোগ আছে। ভাইয়া এখন পুলিশের সাব ইনস্পেকটর, শেষ দেখা হয়েছিলো চার বছর আগে। অথচ আজও মনে হয় এই তো সেদিনের ঘটনা। আমরা একসাথে সাপলুডু খেলেছি, আম মাখা খেয়েছি, গাছের তলায় পাকা জাম কুড়িয়েছি। ভাইয়া আমার তিন বছরের বড় হলেও সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো।
হৃদয় ভাই আমাদের ফুপাতো ভাই, আম্মার পরে যদি আমরা দুইবোন কারো কাছে আদর আহ্লাদ পেয়েছি, তবে তা ফুপুর কাছে। কিন্তু ছোট্ট একটা ঘটনায় সেই ফুপু আমাদের থেকে দূরে সরে যান। যদিও সেই ছোট ঘটনার ফলাফল বেশ জটিল ছিল আমার জীবনে।
হৃদয় ভাই ফুপুর একমাত্র ছেলে, চারবোনের এক ভাই। বেশ আদরে বড় হয়েছেন ভাইয়া, দেখতে শুনতে সুপুরুষ, লেখাপড়ায় ভালো।
অষ্টাদশী আমার স্বপ্নের মানুষ ছিলেন হৃদয় ভাই। ফুপুর সাথে ভাইয়া যেদিন বাড়িতে আসতো, আমার বিকেলে প্রাইভেট পড়তে যাওয়া মাথায় উঠতো। স্যার আজ পড়াবে না, স্যার দেশের বাড়িতে গিয়েছেন, এমন কত বাহানা।
সেই বাহানার ক্রাইম পার্টনার হতো দোলা, আমার ক্লাসমেট, জানের বান্ধবী। দোলা রাবেয়া খালার মেয়ে, আমাদের প্রতিবেশী ওনারা। দোলাও তাই সারাদিন এ বাড়িতেই থাকতো। আমি, দোলা, লতা আর হৃদয় ভাই বারান্দায় সাপলুডু খেলতাম সারা বিকেল। ফুপু এসে ফাঁকে ফাঁকে বসতেন আমাদের সাথে।
ধীরে ধীরে ভাইয়ার আসা যাওয়া বেড়ে যায়। একদিন দুপুরে ফুপুর আগমন হয় ঝড়ের মতো। ভাইয়ার বইয়ের ভেতর প্রেমপত্র পেয়েছেন, সেটা নাকি আমার জন্য লিখেছেন ভাইয়া। ফুপুর সে কি রাগ, ভাতিজি কে আর একটুও সহ্য হচ্ছে না। ফুপুর একমাত্র ছেলে হৃদয় ভাই, ভাইয়ার যখন বিয়ে দিবেন, তখন নাকি সে রকম কোন রাজকন্যার সাথেই দেবেন, রূপে গুণে অনন্য হবে সে মেয়ে। আমার মতো মেঘ কালো মেয়ে কী ওনার সুন্দর ছেলের সাথে মানায়! ফুপুর ছেলের মাথা খেয়েছি আমি, না হলে না আছে রূপ না আছে গুণ, কী দেখে আমাকে পছন্দ করলো হৃদয় ভাই।
ফুপুর বিদায়ের পর আব্বার সমস্ত রাগ এসে পড়ে আমার উপর। এত মেরেছিলেন যে এরপর এক সপ্তাহ জ্বরে ভুগেছি। চার বছর আগের কথা, অথচ মনে হয় এইতো সেদিন। কত বয়স ছিলো আমার! মাত্র সতেরো চলছিল। অনার্সে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সব মাথায় উঠলো। দোলা কেমিস্ট্রিতে চান্স পায় ঢাকার তিতুমীর কলেজে, আমাকে একা রেখে চলে যায় দুইমাসের মাথায়। একসময় হৃদয় ভাইকেও ফুপু ঢাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। অনার্সে ভাইয়া নোয়াখালী কলেজে পড়লেও, মাস্টার্স করেন ঢাকায়। আমার আর বাইরে পড়তে যাওয়া হয় না। আব্বা পড়াবে না ঠিক করলেও আমার কান্নাকাটিতে বিরক্ত হয়ে সরকারি মহিলা কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি করান।
কী লঘু পাপে আমি গুরু দন্ড পেলাম নিজেও জানি না।
ভালো একটা সাবজেক্টে অনার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগটাও পাইনি। কলেজে পড়ার একবছরের মধ্যে আব্বা বিয়ে ঠিক করেন, আঠারো উনিশ বছর বয়সী মেয়ের পাত্র তেত্রিশ বছর বয়সী ব্যবসায়ী মুবিন।
আহ্ কালো মেয়ে!! একজন যখন অবশেষে এই কালো মেয়েকে পছন্দ করেছে, তাহলে এবার হাত পা বেঁধে হলেও বিয়ে নামক কুয়োতে ফেলে দিতেই হবে।
কত কান্না করেছি, আমি বিয়ে করতে চাইনি।
আশা ছিলো একদিন হয়তো আবার হৃদয় ভাইয়ের সাথে দেখা হবে, ফুপু হয়তো মেনে নেবেন। কতদিন আর আদরের ভাতিজীর সাথে রাগ করে থাকবেন!
ছেলের পছন্দ অবশ্যই মেনে নেবেন। কিন্তু লাভ হয়নি,
আব্বার মতে মুবিনের আয় রোজগার ভালো, ভালো পরিবারের ছেলে। আমার মতো কালো মেয়ের জন্য এরচেয়ে ভালো পাত্র হয় না।
মুবিন আসলেই ভালো মানুষ ছিলেন নিঃসন্দেহে।
লেখাপড়া বেশিদূর করতে পারেননি ঠিক, তবে আচরণে বহু শিক্ষিত মানুষের চেয়ে সেরা ছিলেন।
এইচএসসি পাশের পর মুবিন ব্যবসায় ঢুকে যায়। বড় ভাসুর প্রবাসী ছিলেন, তবে অবৈধভাবে যাওয়ার কারণে ভালো কাজ পেতেন না, তাই শুরুতে বাড়িতে কোন টাকা পয়সা দিতে পারতেন না। সেই সময় শ্বশুর একা সংসার সামলাতে পারছিলেন না, তাই মুবিন অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরে।
আমার বড় ভাসুর অবৈধ পথে ইটালি গিয়েছিলেন, একসময় চুরির দায়ে ধরা পড়ে জেল খাটেন সাত বছর। সে সময়টা সংসার টেনেছে মুবিন। লেখাপড়া করার আর সুযোগ হয় নি। বড় ভাইয়ের সংসার দেখা, বোনদের বিয়ে দেওয়া এসব করতেই বয়স হয়ে যায় তেত্রিশ। বিয়ের পর মুবিন আমাকে সময় দিয়েছিলেন নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। কালো ছিলাম বলে শাশুড়ি মায়ের আমাকে পছন্দ ছিল না , কিন্তু মুবিনের ইচ্ছেতে আমার সাথে ওর বিয়ে হয়।
আমার মাঝে নাকি অসম্ভব মায়া খুঁজে পেতো মুবিন।
কিন্তু আমার মনে যে হৃদয়ের বাস, মুবিনের ভালোবাসা আমাকে টানতো না।দোকান থেকে ফেরার পথে আমার জন্য হাতে করে কখনো টিপের পাতা, কখনো কাঁচের চুড়ি নিয়ে আসতেন মুবিন। কিন্তু সারা দুনিয়ার উপর একবুক অভিমান, অভিযোগ নিয়ে বসে থাকা আমি মুবিনের ভালোবাসা অবহেলায় ফিরিয়েছি। স্ত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করতাম, কাছে যেতাম, কিন্তু সবই হতো দায়সারা। তিনি বুঝলেও আমাকে কোনদিন জোর করেননি। এক বছর তেইশ দিনের সংসারে আমাকে সে তার মনের রানী করেই রেখেছিলেন। নিজেকে নিয়ে এত হীনমন্যতা আর হতাশায় ভুগতাম যে মুবিনের চোখে আমার জন্য মুগ্ধতা, আমার কাছে অভিনয় মনে হতো। তাছাড়া হৃদয় ভাই যে আমার মন জুড়ে বসেছিলেন, মুবিনার তাই ঠাঁই হয়নি।
বিয়ের আগে আমার একটা আশা ছিল, আমি পড়াশোনা শেষ করে নিজের পায়ে দাঁড়াব, নিজেকে যোগ্য করব, ফুপু তখন আমাকে ফেরাতে পারবেন না। হৃদয় ভাইকে আমি আমার নিজের করে পাব। অথচ সেদিনের পর আর ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগও পাইনি। আমার বা আম্মার, কারো কাছে পার্সোনাল ফোন ছিল না। আর আব্বার ফোন থেকে ফোন করা অসম্ভব ছিল।
বিয়ের পর মুবিন ফোন কিনে দিয়েছিলেন, কিন্তু তখন আমি নিজেই আর যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি, কেননা তখন এই সম্পর্কের নাম হতো ‘ পরকীয়া’। ফুপু তো বাড়িতে আসাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। একমাত্র বোনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ায় আব্বাও আমার উপর খুব রেগে থাকতেন। সবার কাছেই যেন আমি ব্রাত্য। শ্বশুর বাড়িতে মুবিন ছাড়া আর কেউ আমাকে আপন করে নেয়নি। তাইতো বাইক এক্সিডেন্টে মুবিন যখন মারা যায়, আমার আর সেখানে জায়গা হয়নি।
শাশুড়িতো রীতিমতো অপয়া ভাবতেন।
আমি চারু, বোধহয় আমার আম্মার মতো মন্দভাগ্য নিয়ে দুনিয়ায় এসেছি। মুবিনের মৃত্যুর পর আমি বুঝেছি যে আমি কত বড় অভাগা, নিজে যাকে ভালোবেসেছি তাকে পাইনি, আমাকে যে ভালোবেসেছিল, তার ভালোবাসা পেয়েও গ্রহণ করতে পারিনি। হৃদয়কে কে মনে পুষে রেখে, মুবিনকে দূরে ঠেলেছি, তাই হয়তো আল্লাহ ওকে আমার কাছ থেকে নিয়ে গিয়েছেন।
“আপু, কী ভাবিস?”
লতার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসি।
“হৃদয় ভাইয়ের সাথে তোর যোগাযোগ আছে লতা? ”
লতা একটু ইতস্তত করছে বুঝতে পারছি।
হৃদয় ভাইকে নিয়ে যা হয়েছে এরপর এ বাড়িতে আর আমরা কেউ ভয়ে ভাইয়ের নাম নিতাম না। পরিবারের বাইরের কেউ অবশ্য কিছু ভালো ভাবে জানে না। আব্বা আর ফুপু ঘটনাটা চেপে গিয়েছিলেন।
“আপু গত বছর ফুপু যখন মারা যান, তুই শ্বশুর বাড়িতে ছিলি। আম্মা আব্বার সাথে আমি গিয়েছিলাম ফুপুর বাড়িতে। তখন ভাইয়ার সাথে দেখা হয়, ভাইয়া আমাকে ফোন নাম্বার দিয়েছেন, মাঝে মাঝে কথা হয়।
এছাড়া ফেসবুকে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। ”
এ বাড়িতে ফিরে এসেছি আজ এত দিন হয়ে গেলো, অথচ এ কথা লতা একদিনও বলেনি। মাঝেমাঝে ওকে ফোনে কথা বলতে দেখি লুকিয়ে, কিন্তু কার সাথে তা জানার আগ্রহ বোধ করিনি। আসলে বিধবা হওয়ার পর সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু লতাতো আমাকে বলতে পারতো। ও গোপন করলো কেন, আব্বার ভয়ে???
আজ আব্বা নেই দেখে কি ওর সাহস হয়েছে এত সহজে এসব বলার! আচ্ছা ভাইয়া কি কখনো আমার সাথে কথা বলতে চায়নি? আমি যে এখন বিধবা এটা নিশ্চয়ই জানেন। আমার কথা কী লতার কাছে জানতে চান হৃদয় ভাই!!
মনের মধ্যে আমার অসংখ্য প্রশ্ন।
কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারছি না।
হৃদয় ভাই বিয়ে করেনি জানি, আমার ফুপু চাঁদের মতো রাজকন্যা খুঁজে পাওয়ার আগেই মারা যান। ভাইয়া এখন পুলিশে চাকরি করছেন, পোস্টিং দূরে, সহজে নোয়াখালী আসা হয় না তাই।
“লতা তোর ফোন কি আব্বা কিনে দিয়েছিল? ”
” হ্যাঁ আপু”
“কেন??? আমাকে তো দেয়নি,আর তোকে রীতিমতো স্মার্টফোনই কিনে দিলেন, বাহ্।”
“আপু কী হয়েছে তোর, হঠাৎ ফোনের পিছনে লাগলি কেন!! তোকে কেন দেয়নি তা তুই নিজেও জানিস।
আমাকে নিয়ে সে ভয় ছিল না, তাই দিয়েছেন।”
লতা কেমন রেগে গেলো।
আমি লতার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাই, লতা সুন্দরী, ছিপছপে, উচ্ছল তরুণী। কিন্তু আমি লতার মাঝে সেই অষ্টাদশী চারুকে খুঁজি। লতার বয়সও এখন আঠারো। আচ্ছা চারু আর লতা কি একই হৃদয়ে হৃদয় দিয়েছে!!
(চলবে)