# হায়েনা
ধারাবাহিক গল্প (৪র্থ পর্ব)
নাহিদ ফারজানা সোমা

জোহরা বেগম মনস্থির করতে পারছেন না কাকে সাথে নেবেন। কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হবে?কে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে? কাউকে না জানিয়ে তিনি একাই সেগুনবাগিচায় যেতে চেয়েছিলেন, কেলেংকারী পাঁচকান করতে চান নি, কিন্তু সাহসে কুলায়নি। যদি ছেলেটা বড় ধরনের সন্ত্রাসী হয়, গুন্ডা -পাণ্ডা হয়,তাহলেতো মা-মেয়েকে গুমও করে ফেলতে পারে। স্বামীকে নিতে চান না, ঘুষ খাওয়া আর বড় ছেলের ভাগের জমি-গয়না মেরে দিতে জোহরাকে সাহায্য করা ছাড়া আর কোন সাহসী কাজ তিনি সামাদ সাহেবকে করতে দেখেন নি। এমন ভেড়াকে নেওয়ার মানেই হয়না। এক আছে আনিলা, কিন্তু পরে যদি দুই মেয়েই চরম বিপদের মধ্যে পড়ে?তাঁর বিপদ নিয়ে তিনি ভয় পাচ্ছেন না। বড় জামাইকে
নেওয়া যাবেনা। ব্যাটা বদ এমনিতেই আনিলাকে খোঁটার উপরে রাখে, আর এই ঘটনা জানলে বদটার ফাজলামির সীমা থাকবেনা। বাপ-মা – চৌদ্দ গুষ্ঠিকে জানাবে আর সবাই মিলে মজা লুটবে। সুমন ছোট,সেই সাথে স্বার্থপরও প্রচন্ড, বোন বাঁচবে না মরবে এটা নিয়ে তার খুব একটা মাথাব্যথা হবেনা,এই সত্যটা জোহরা ভালোই জানেন। স্বার্থপর আর কুচুটে তাঁর সবকটা ভাই -বোন,এমনকি মা ও, সুতরাং তাঁরাও বাদ। তাহলে কাকে সাথে নিবেন?

একটা নামই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত মস্তিষ্কে ঘুরাঘুরি করছে,একটা শান্ত,নরম কিন্তু দৃঢ় মুখের ছবিই
থেকে থেকে মনের মধ্যে ভেসে উঠছে, কিন্তু কোন মুখে তার কাছে যাবেন? তিনি জানেন,অশ্রু তাঁর কথা শুনবে,
আরিশাকে উদ্ধারের সব চেষ্টা চালাবে, এই লজ্জা জনক ঘটনা সে কাউকে জানাবেনা,এমনকি বৌকেও না,তবু বাধো বাধো লাগছে। অশ্রু ও তার বৌ-বাচ্চার সাথে তিনি চরম অন্যায় করেছেন,তাতে এতোটুকু অনুশোচনা নেই জোহরা বেগমের, কিন্তু তাঁর অন্য রকম লজ্জা লাগছে। হেরে যাওয়ার লজ্জা। সতীনপুত্র বিদ্বান-রূপবান-গুণবান-হৃদয়বান, আর এতো আদর,ভালোবাসা দিয়ে বড় করার পরেও তাঁর পেটেরগুলো একেকটা অপদার্থ,লোভী,নির্লজ্জ। আনিলা অন্য রকম, কিন্তু না রূপবতী,না লেখাপড়ায় মাথা আছে। জীবনে অনেক খেলা খেলেছেন,নিজেকে পাকা খেলোয়াড় ই প্রমাণ করেছেন, কিন্তু আজ জোহরার মনে হচ্ছে তিনি পরাজিত, বিশ্রী ভাবে পরাজিত অশ্রু আর তার মৃত মায়ের কাছে।

“হ্যালো,আমি।”

“আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন? ”

“আর থাকা! তুমি আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে পারবে?এই এক্ষুনি? ”
“পারবো। কোথায়?”

“আমি আসছি তোমার বাসার দিকে। তুমি হীরাঝিল হোটেলের কাছে অপেক্ষা কোর। ”

“সেকি! বাসায় আসুন। খাওয়া-দাওয়া করে তারপরে বের হোন। আমিতো সাথে থাকবোই।”

কেন যে বুকে একটা মোচড় দিয়ে উঠলো জোহরার,কে জানে!

“না অশ্রু, আমি চরম বিপদে আছি। আজ তোমার বাসায় না। আমি রওনা হচ্ছি।”

“একটু অপেক্ষা করুন।আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি। রাস্তা ফাঁকা। খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবে।”

“না,না,গাড়ি কোনভাবেই না।ড্রাইভার বা বাড়ির লোককে কিছু জানতে দেয়া যাবেনা। আমি রিক্সা নিয়ে রওনা হচ্ছি, তোমাকে তুলে নিব। পথে সব বলবো।”

“এতো রাতে আপনার একা বের হওয়ার দরকার নেই। আমি রিকশা নিয়ে এখুনি আসছি। দারোয়ানকে না জানাতে চাইলে আমি মোড়ের মাথায় থাকবো,আপনি চলে আসবেন।”

জোহরা বেগমের চোখে পানি চলে এলো। যার জীবনটাকে তিনি এলোমেলো করে দিয়েছেন প্রতিটা পদে, বন্চনা,অবহেলা, কষ্ট আর অপমানকে যার গলায় মালার মতো ঝুলিয়ে দিয়েছেন, তার কাছ থেকে এই সহযোগিতা, এই মর্যাদা, এই উৎকণ্ঠা কি তাঁর মতো মানুষের প্রাপ্য? আজ নিজেকে অশ্রুর মা ভাবতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে জোহরার। অশ্রু যেমন ব্যবহার করলো,তা তো নতুন নয়। সে বরাবরই এমন,শত অত্যাচারের পরেও। তবু আজ জোহরার এমন লাগছে কেন?আরিশার ঘটনায় মন দুর্বল হয়ে আছে বলে?

জোহরা ভেজা গলায় বললেন, ” রেণু আর বাবু ভালো আছে তো?সাবধানে এসো,অশ্রু। ”

একজন কিশোর দরজা খুলে দিলো বহুক্ষণ কলবেল দেওয়ার পরে। বোঝা যাচ্ছে,গৃহকর্মী।

“বাসায় কারা আছে?”

“আইছেন আফনেরা,উল্টা জিগান আমারে? কারে চান?”

অশ্রু ছেলেটার মাথায় হাত রেখে বলে,”বাবু, বাসায় কে কে আছেন? ”

নরম কথায় কাজ হয়।

“ছোট সাহেব আর এক মাইয়া।”

” মাইয়া মানে কি?উনার স্ত্রী? তোমার ভাবী?”

” অনেক মাইয়াই তো আসে উনার দারে, বড় স্যার আর ম্যাডাম না থাকলে।”

জোহরা বলে বসেন,”সেই মেয়েরা কি তোমার ছোট সাহেবের সাথে থাকে? মানে, বলছিলাম,বাসা ফাঁকা থাকলে তোমার ছোট সাহেব আর ওই মেয়েরা কি সারারাত এক ঘরেই থাকে?”

” জ্বে।”

জোহরা বেগম ধপ করে সোফায় বসে পড়েন।

অশ্রু বললো,”খোকা,তোমার ছোট সাহেব আর নতুন ম্যাডামকে ডেকে আনো তো। নতুন ম্যাডামকে বলবে,উনার মা আর ভাই এসেছেন। ”

খোকা দৌড়ালো। প্রায় সাথে সাথে দুইজন হাজির।

জোহরা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলেন ছেলেটার দিকে, অশ্রু নাক কুচকালো।

মদের তীব্র, কটু গন্ধ। ঘাড় পর্যন্ত কোঁকড়া চুল। মাথা ধোয়নি কতদিন কে জানে? হাতা কাটা কালো গেন্জি। তাতে লেখা, ” PLAY BOY”. পরনে হাফপ্যান্ট।

আরিশার মুখে লজ্জার কোন চিহ্ন নেই। এতোক্ষণ বেশ টেনশনে ছিল, সত্যি যদি টাকা-গয়না কেড়ে নিয়ে তাকে মেরে ফেলে,এখন মা-ভাইকে দেখে পরিতৃপ্ত, নিশ্চিন্ত মুখ।

বিশাল তিনতলা বাড়ি, খাকি পোশাক পরা কেতাদুরস্ত গেটম্যান, সামনে পরিপাটি ফুলের বাগান, পোর্চে থেমে থাকা চকচকে মার্সিডিজ আর রেন্জ রোভার, চেইনে বেঁধে রাখা জার্মান শেফার্ড, আশেপাশের ঝাঁ চকচকে অ্যাপার্টমেন্টগুলো দেখে জোহরা বেগম বিহ্বল হয়ে যেয়ে একবার ভেবেছিলেন, আরিশা কাজটা মন্দ করেনি। আনিলার শ্বশুর কুলেরও জমজমাট অবস্থা, তবে এতোটা নয়। এখন ছেলের সার্বিক অবস্থা দেখে,শুনে ও বুঝে তাঁর মাথা ঘুরছে।

“আরিশা,চল্ আমার সাথে।অনেক রাত হয়ে গেছে।”

“ওয়েল ম্যাম, আরিশা আপনার সাথে যাবে মানে?সি ইজ মাই ওয়াইফ। আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করেই বলে বসলেন,আরিশা চল্ আমার সাথে? ”

অশ্রু শান্ত গলায় বললো,”আপনারা বিয়ে করেছেন কবে?”

“আজ।আজ বিকেলে।”

“পেপারস দেখালে খুব ভালো হোত।”

“হু আর ইউ ব্রাদার?”

আরিশা উত্তর দিলো,”দাদাভাই। ”

“ওঃ দাদাভাই! ইওর স্টেপ ব্রাদার?তোমার প্যারেন্টস যার সহায় সম্পত্তি মেরে কেটে খেয়েছেন? দাদা,আপনাকেতো আরিশার বাবা-মা ফ্যামিলি মেম্বার হিসাবে কাউন্ট করেনা,সো আমিও করবো না। আপনি আপনার নাকটা সব জায়গায় না গলিয়ে সামলে রাখলে হয়না? ”

হায় আল্লাহ! আরিশা এসব কথাও এই স্কাউন্ড্রেলের সাথে শেয়ার করেছে! কতোদিনের পরিচয়?

জোহরা কঠিন গলায় আরিশাকে বললেন,”দাদাভাই বিয়ের কাগজপত্র দেখাতে বলেছে,দেখা।”

“আমার কাছে তো নেই, ওর কাছে।”

“অ্যাই ছেলে,দেখাও।”

“মা,ওর একটা নাম আছে, অভি।”

অশ্রু ঠান্ডা গলায় বললো,”অভি,কাগজপত্র দেখাও।সাক্ষী কারা ছিল? তাদের কল করো। তুমি আমার ভগ্নীপতি। তোমাকে আমি রিকুয়েস্ট করছি পেপারস দেখানোর জন্য। তোমরা পরস্পরকে পছন্দ করেছ, এভাবে বিয়ে না করে যার যার ফ্যামিলিকে বললেই পারতে। আমরা ধুমধাম করে বিয়ে দিতাম। পেপারস দেখাও, আমরা আরিশাকে বাসায় নিয়ে যাই,তারপর দুই পক্ষ মিলেই বড় করে প্রোগ্রাম করবো।”

“না অশ্রু, এই বিয়ে আমি মানিনা।”

“আপনি একটু শান্ত হোন। সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাই অভি,কাইন্ডলি কাগজ দেখাও। ”

“অ্যাকচুয়ালি,আজ বিয়ে হয়নি। আপনার বোন আসতে দেরি করে ফেললো। আরও কিছু ফ্যাকড়া ছিল। সো, বিয়েটা হলোনা আজকে।”

“বিয়ে হোলনা যখন,আরিশা,তুই বাসায় চলে গেলিনা কেন? আর অভির কথা আমাদের আগে কেন জানাসনি? যা হওয়ার হয়ে গেছে।বিয়ে যখন হয়নি,আমরা আরিশাকে নিয়ে যাই। অভি,তুমি তোমার বাবা-মা’কে জানাও। প্রস্তাব পাঠাও। স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে করো।”

“শোনেন দাদা,আমার প্যারেন্টস জীবনেও আরিশাকে মেনে নিবেনা।”

“কেন?”

“ভেরী সিম্পল। ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের আকাশ পাতাল পার্থক্য। ”

“আমিতো আকাশ-পাতাল পার্থক্য তেমন দেখতে পাচ্ছি না। কি করো তুমি? ”

“বাবা বিজনেস ম্যাগনেট। আমি কোম্পানির একজন এম.ডি।”

” তুমি আরিশাকে ভালোবাসো?”

“নইলে বিয়ে করতে চাচ্ছি কেন?”

“বিয়ে করে কোথায় উঠবে?এখানেতো আরিশা অ্যালাউড হবেনা।”

“ব্রাদার,আমাদের কয়টা বাড়ি,হিসাব নেই। ”

“তুমি কয়টা বানিয়েছো?”

“ওহ্ মাই গড! আপনি এরমধ্যে আমাদের সম্পত্তির হিসাব করতে বসেছেন। বিয়ের আগেই এই অবস্থা! ”

“ভুল বুঝোনা। আরিশাকে বিয়ে করলে তোমার বাবা যদি তোমাকে ত্যাগ করেন,বিজনেসে না রাখেন,তখন বৌকে নিয়ে কোথায় উঠবে?কি খাওয়াবে?”

“আপনাকেওতো আপনার ফ্যামিলি ত্যাগ করেছিল। আপনি আপনার বৌ-বাচ্চাকে ফুটপাতে রেখেছেন?কোনো বাসায় উঠান নি?খাওয়াচ্ছেন না?”

জোহরা বেগম চেঁচিয়ে উঠলেন,”আমার ছেলের সাথে তোমার তুলনা কোরো না। সে জীবনে সেকেন্ড হয়নি। সে অনেক বড় ইন্জিনিয়ার। অনেক টাকা বেতন পায়। সে কারোর সাহায্য নেয়না,অন্যকে সাহায্য করে।আমার বৌমাও বড় ইন্জিনিয়ার, কর্মঠ,ভদ্র,লক্ষী মেয়ে। আরিশার মতো অপদার্থ না। তুমি কতদূর পড়েছো,কোথায় পড়েছো, কি কি যোগ্যতা আছে শুনি?”

“আপনার ছেলে?আপনার বৌমা?হা,হা,হা। হবু শাশুড়ি আম্মা দেখি দারুণ রসিকতা জানেন।”

জোহরা বেগম কাঁপছিলেন থরথর করে।

অশ্রু বললো,”আম্মা,আপনি শান্ত হোন। যে যাই বলুক, আপনার আর আমার সম্পর্কটা পাল্টে যাবে না। অভি,আমার দুই মা। একজন মা জন্ম দিয়েছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর কাছে চলে গেছেন, আর এই মা আমাকে মানুষ করেছেন। তুমি মা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে হাসাহাসি কোর না। কোন সন্তান তার মায়ের অপমান সহ্য করতে পারে না। আমিও পারছি না।”

জোহরা বেগমের চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে
থাকলো। তিনি অশ্রুর মা! তাঁর জীবন ধন্য।

“ঠিক আছে অভি,ভাই, ঐ কথায় থাকলো। আমরা আরিশাকে নিয়ে যাচ্ছি। তুমি বাবা-মা’কে জানাও,তাঁদের দোয়া নাও, তাঁরা সম্মতি দিলে খুবই ভালো,না দিলে তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আরিশাকে নিয়ে জীবন শুরু করো। ধর্মীয় ও সামাজিক নিয়ম মেনে।আমি তোমাদের পাশে আছি।”

“বাহ্,আমার বাবা-মা সম্মতি না দিলেও বিয়ে করবো?এই আপনাদের শিক্ষা? ”

“তুমিতো বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলে,তার উপরে তোমরা একসাথে থেকেছোও, তাহলে এই কথা উঠছে কেন?”

“অশ্রু, ওর সাথে আরিশার বিয়ে দেওয়ার আমারও কোনো ইচ্ছে নেই। ”

মুখ খুললো আরিশা,”নো ওয়ে,মা। আমি প্রেগন্যান্ট। থ্রী মানথস। অভি বাচ্চার বাবা।” ঘরে পিনপতন নীরবতা। জোহরা মূর্তির মতো বসে আছেন। অশ্রু চুপচাপ। আরিশার এই স্পষ্ট, লজ্জাহীন উক্তির পরে সে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।

প্রথম মুখ খুললো অভি। গলায় শ্লেষ মাখিয়ে বললো,”আমার বাচ্চা?কেন,আর কারো বাচ্চা হতে পারে না?”

অশ্রু এই প্রথম চড়া গলায় বললো,”কি বাজে কথা বলছো অভি?”

“ওয়েট,ওয়েট ব্রাদার। চার মাস আগে তো আপনার বোনের সাথে আমার ভালো করে সম্পর্কই হয়নি।তো তিন মাসের বাচ্চা আমার হয় কি করে?”

“তোমার ছাড়া আর কার হবে?”

“আরও অন্তত দশজনের হতে পারে।”

“অভি! খুব বাড়াবাড়ি করছো তখন থেকে। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলছো।”

“ভাই জান,আপনার বোনকেই জিজ্ঞেস করেন,আমার কথা সত্য কিনা।আমিতো নিউ কামার।’

ছি,ছি! এতো নোংরা কথা। এতো নোংরা কাজকর্ম। অশ্রু অসুস্থ বোধ করতে থাকলো।

জোহরা আচমকা স্যান্ডেল খুলে আরিশাকে মারতে লাগলেন। তাঁর মুখ টকটকে লাল, সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে,বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছেন।

অশ্রু জোর করে তাঁকে সোফায় বসিয়ে দিল।

” চল্ অশ্রু, আমরা চলে যাই। এই মেয়ে এখানে পচুক,গলুক,আমার খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। চল্।”

“চলবেন মানে? সেকেন্ড হ্যান্ড মাল আমাকে গছিয়ে দিয়ে চলবেন কথাটার মানেটা কি?”

অশ্রু চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,”সেকেন্ড হ্যান্ড মাল যদি বলো,তোমাকে গছিয়ে দেওয়া হয়নি,তুমিই বেছে নিয়েছো।”

“নো,নো ব্রাদার। আসল কথা বলি আপনাকে। এই মেয়েকে আমি বিয়ে করতাম না। তার টাকাপয়সাও কেড়েকুড়ে নিতাম না। জাষ্ট একটু এনজয় টেনজয় করে দুদিন পরে ছেড়ে দিতাম। আর এখনতো বিয়ের প্রশ্ন ই ওঠেনা। পেটে ডিম ওয়ালা মাছ। বাবা মাছটা আমি না। মনে মনে হিসাব করে দেখলাম, কোনভাবেই ডিম আমার না।”

এরপর খিস্তি শুরু হলো আরিশা আর অভির মধ্যে। আর এই অতি কুৎসিত গালি গালাজের মধ্যেই রক্ত জল করা অনেক কথা বের হয়ে আসলো। দুজনেরই বহুজনের সাথে শয্যার সম্পর্ক। পার্থক্য এই, অভিকে এজন্য বিস্তর পয়সা খরচ করতে হয়, আর আরিশার প্রায় প্রতিদিনই প্রচুর কেনাকাটা করতে হয়-শাড়ি,সালোয়ার কামিজ, স্কার্ট, সোনার হার,হীরের দুল,আংটি,পারফিউম, ব্র্যান্ডের ঘড়ি,মেকআপ কিটস ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আরিশার নিত্যনতুন জামা, ব্যাগ,জুতার রহস্য পরিস্কার হলো জোহরার কাছে। জিজ্ঞেস করলে আরিশা বিরক্ত হতো।কখনো বলতো,দাদাভাই দিয়েছে, কখনো ভাবীর নাম,কখনো আনিলার কথা, কখনো কোন বন্ধুর নাম। বছর খানেক ধরেতো টিউশনের দোহাই দিচ্ছিল। সিদ্ধেশ্বরীতে দুইটা টিউশন করে নাকি বিশ হাজার পাচ্ছে। কেমন মা তিনি,কিছুই টের পান নি।

আরিশা চেঁচাচ্ছে, “হারামজাদা, তুই দশজনের নাগর হতে পারিস, আমি শুধু তোরই সাথে থেকেছি। মিথ্যাবাদী।”

জোহরা বললেন,”এই ছেলে, আর একটা কথা বলবিনা আমার মেয়ের নামে। তুই এরপর নাকে খত দিয়ে বিয়ে করতে চাইলেও তোর কাছে মেয়েকে দিবো না। প্রতারণার জন্য জেলে ভাত খাওয়ার জন্য রেডি হ।”

“হা,হা,হা। আমাকে মহিলা,দুই পয়সার মানুষ, তুমি পাঠাবে জেলে? তোমার চোদ্দ গুষ্টিকে জেলে পাঠাতে পারি আমি। কুকুরের চেইন খুলে দেওয়ার আগেই ভাগো। ও, ভালো কথা, বাচ্চাটা তোমার আদরের জামাই আসিফের হতে পারে। পসিবিলিটি ভেরী হাই। আমার পূর্বসুরী ছিলেন ভদ্রলোক। তোমার ছোট মেয়ে
আর বড় জামাইকে একটু চেপে ধরলে সব তোমার কাছে দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যাবে। অস্বীকার করার উপায় নেই। আমার কাছে অন্তরঙ্গ ভিডিও আছে। আমারই হোটেলে কিংবা আমার বোজম ফ্রেন্ডের বাসায় ঘন্টা দুইএর জন্য ওরা উঠতো কিনা।”

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here