#দলছুট ৩

“চেষ্টা করে লাভ নেই কোনো নাবিল এতো সহজে ছুটতে পারবেন বলে মনে হয়না। শুধু শুধু নিজের শক্তি খরচ করছেন।”
চোখ খুলে নিজেকে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় পেয়ে নাবিল অবাক। নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি পাশের রুমে তখন নাবিলের সমস্ত জিনিস উল্টো পাল্টা করে দেখছিলাম। আমার সাথে আছে আমার টীম। নাবিল চিৎকার চেচামেচি শুরু করতেই আমি পাশের রুম থেকে এসে কথাটি বলা মাত্রই নাবিল এমন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো যেন পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য দেখছে।
“এসবের মানে কি নোরা?”
“মানে তো আপনি বলবেন নাবিল। লোরা কোথায় আছে?”
আমি ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম একদৃষ্টিতে।
“লোরা কোথায় তা আমি কিভাবে বলবো? ওর সাথে আমার যোগাযোগ নেই অনেকদিন হলো। আর তাছাড়া তুমি কেন এতোদিন পর এসব জানতে চাইছো?”
আমি হাসলাম-
“আপনি না বললে কে বলবে নাবিল? আপনি সবসময় লোরার সাথে থাকতেন। আপনারা দু’জন হরিহর আত্মা ছিলেন।”
“সেসব পাঁচ ছ বছর আগের কথা নোরা। এতোদিন পর আমি কি করে বলবো লোরা কোথায়?”
নাবিল ভীষণ বিরক্ত গলায় কথাগুলো বললো, একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো-
“দেখ নোরা, ভার্সিতে থাকাকালেই লোরার সাথে আমার সম্পর্কের ইতি ঘটে। ওর সাথে আমার আর যোগাযোগ ছিলোনা। আমার রুচি হয়নি ওর সাথে যোগাযোগ রাখার।”
“রুচি হয়নি! কেন ইতি ঘটে সম্পর্কের?”
আমি বিস্মিত হয়ে নাবিলকে দেখি। নাবিল বিরক্ত হয়ে বলতে শুরু করে-
“কারন লোরার লোভ। আমার সাথে ততদিন সে সম্পর্ক রেখেছে যতদিন আমি তার চাহিদা পূরণ করতে পেরেছি। যখন থেকে আমাদের ব্যবসার অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছে তখন থেকেই লোরার সাথে আমার ঝামেলা শুরু হয়। পরে অমিতকে পেয়ে লোরা আমার সাথে সম্পর্কছেদ করে।”
এই অমিতটা আবার কোত্থেকে এলো? আমি চুপ করে রইলাম, নাবিলের কথা আমার বিশ্বাস হলোনা। লোরার বোন কি তবে মিথ্যে বলবে? লোরা আজ তিনবছর হলো মিসিং। পড়ালেখা শেষ করে একটা জবে নাকি ঢুকেছিলো। বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না। ওর বাবা জোর করে বিয়ে ঠিক করলে নাকি বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। শুরুতে মেয়ের উপর অভিমানে কোনো খোঁজ না করলেও পরে নিজ উদ্যোগে খোঁজ নিতে শুরু করে লোরার বাবা। সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নেওয়ার পরেও লোরার কোনো হদিস করতে পারেনি। আমার সাথে অদ্ভুত ভাবে দেখা হয়ে যায় লোরার বোনের। আমি তখন সবে মাত্র সিআইডিতে পোস্টিং পেয়েছি। একটা নিখোঁজ কেসের তদন্ত করতে গেছিলাম ধানমন্ডিতে এক বাড়িতে। খোঁজ খবর করতে সেই বাড়িতে যেয়ে জানতে পারি সেটা লোরার বোনের বাসা আর লোরার মিসিং কমপ্লেন করেছে সে। লোরার বোনের কথা অনুযায়ী নাবিলই দোষী অথচ নাবিল বলছে তার সাথে লোরার যোগাযোগ নেই। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে। পাশের রুম থেকে আমার জুনিয়র শিবলী এলো-
“ম্যাডাম, কিছু পাওয়া গেলোনা।”
নাবিল অদ্ভুত চোখে একবার আমাকে আর একবার শিবলীকে দেখলো।
“তুমি তবে পুলিশে আছো? লোরার খোঁজ করতে আমার অফিসে জয়েন করেছো? বাহ, এতো বছর পরেও বান্ধবীর জন্য এতো টান?”
আমি চুপ থেকে নাবিলকে দেখছি, আসলে ওকে অবজার্ভ করছি। নাবিল বুঝলো কিনা কে জানে, এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো-
“আমার পেছনে সময় নষ্ট না করে অমিতের খোঁজ করো বরং তাহলে লোরার খবর পাবে। আসলে লোরার মতো মেয়েদের জীবনে এরকম কিছুই ঘটে বুঝলে। টাকার জন্য যারা নিজেকে বিকিয়ে দিতে কার্পন্য করেনা। অবশ্য ওর দোষ দিয়ে লাভ কি? সংসারটা তো লোরাকেই দেখতে হতো।”
আমি অবাক হলাম, এ তথ্যও জানা ছিলোনা আমার। লোরারা যথেষ্ট সচ্ছল বলেই জানতাম। আমি আর ঘাটালাম না নাবিলকে। ক’দিন আগে ওর ফোনের কল রেকর্ড চেক করেছি সেরকম কিছু পাইনি। আমি শিবলীকে বললাম নাবিলের বাঁধন খুলে দিতে। নাবিল চুপচাপ থাকলো বাকীটা সময়, চলে আসার সময় পেছন থেকে ডাকলো-
“আমাকে এতো অসম্মান না করলেও পারতে লোরা। আমার সম্পর্কে এতো উঁচু ধারণা তোমার সেটাও তো আগে টের পাইনি।”
আমি কিছু না বলে নিরবে সরে এলাম। চাইলে আমি লোরার সাসপেক্ট হিসেবে নাবিলকে তুলে নিতে পারতাম কিন্তু নেইনি। কেন নেইনি আমি নিজেও জানিনা।

অমিতকে ধরা অতটা সহজ হলোনা। ওর বাবা বেশ প্রভাবশালী, ফট করে ওকে দোষী বানালে আমার জব নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। এবার আমি বেশ খোঁজ খবর করে নিলাম। অমিত বর্তমানে বিবাহিত, তবে অতীত বেশ রঙচঙে। অনেক খোঁজ খবর করে জানা গেলো লোরার সাথে লিভ টুগেদার করেছে বছর দুয়েক তারপর বাবার পচ্ছন্দে তার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে। একদিন ওর অফিসে চলে গেলাম, নিজের পরিচয় দিয়ে লোরার কথা জানতে চাইলে অস্বীকার করলো। পরে কিছু তথ্য প্রমান দিতেই মুখচুন করে স্বীকার করে নিলো সাথে এও বললো, লোরার সাথে সম্পর্ক চুকে গেছে বছর তিনেক আগেই। কাজেই লোরা এখন কোথায় আছে কেমন আছে সে জানেনা। তবে মিহির জানতে পারে, কারণ মিহিরের সাথে কয়েকবার লোরাকে দেখেছে অমিত। আমার মাথা বনবন করে ঘুরছিলো৷ কি করেছে কি লোরা? একের পর এক সঙ্গী পাল্টেছে। কেন এমনটা করেছে ও? উফফ লোরা, কি করেছিস নিজের জীবনের সাথে? এবার আমার সত্যি সত্যি চিন্তা হচ্ছে লোরার জন্য। মেয়েটা ঠিক আছে তো?

“জারা, তুমি আমার কাছে কিছু লুকচ্ছ নাতো? দেখো সব কথা খুলে না বললে পরে কিন্তু তুমি বিপদে পড়বে?”
আমার কথায় জারা ঘাবড়ে গেলো-
“আমি কি লুকবো আপু? আপু আজ তিন বছর ধরে নিখোঁজ। ও পালিয়ে যাওয়ার কারনে ওর বিয়েটা আমার করতে হয়েছিলো। প্রথম দু’তিন মাস ও মাঝে মাঝে আমায় ফোন দিতো, মাফ চাইতো আমার কাছে। লাস্ট যেবার কথা হলো আমি বলেছিলাম ওকে ফিরে আসতে। এরপর আর ফোনই দেয়নি।”
“এই তো এই কথাগুলো তো আগে বলোনি। কেন যে কথা লুকাও তোমরা?”
আমি বিরক্ত হয়ে জারার বাসা থেকে বেড়িয়ে আসি। মিহিরের কাছ থেকে সেরকম কোনো তথ্য পাইনি। লোরা নাকি মাঝে মাঝে ওর সাথে ডেটে যেতো। তারপর একদিন ফোন করলে বন্ধ পায়, পরে অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে হাওয়া হয়ে গেলো কি করে? সন্দেহটা কেন যেন ঘুরে ফিরে নাবিলের উপর এসে আঁটকে গেছে। মনেহচ্ছে ও জানে লোরা কোথায় আছে।

★★★

“এলি শেষ পর্যন্ত?”
টিউবওয়েল থেকে পানি চেপে নিয়ে কলসিটা রান্নাঘরের দাওয়ায় এনে রাখলো লোরা। আমি চরম মেজাজ খারাপ করে ওকে দেখছি। ও আমার রাগত দৃষ্টিকে পাত্তাই দিচ্ছে না, একটা ঝকঝকে কাঁচের গ্লাসে পানি ঢেলে মিষ্টি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলো। সুতির ডুরো শাড়ী ওর পরনে, গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য আগের চাইতে একটু শুকনো। বয়কাট চুলগুলো এখন কোমড় ছাড়িয়েছে।
“এখানে বয় ঠান্ডা হয়ে তারপর টিউবওয়েলের এই বিশুদ্ধ পানিটা পান কর।”
আমি কেন যেন ওর উপর চিৎকার করতে পারলাম না। উঠনে আসন পাতা চৌকির উপর বসে পানিটা পান করলাম। সারারাত জার্নি করে এসেছি, ক্লান্ত লাগলেও পাত্তা দিলাম না। ওর দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম-
“তুই জানতিস আমি আসবো? কিভাবে?”
“হুমম।”
ওর ছোট্ট উত্তর। আমি অবাক চোখে ওকে দেখি-
“তোকে আমি খুঁজছি এটা জানিস তুই?”
লোরা সলজ্জ হাসলো, হ্যা বোধক মাথা নাড়ে। মুখ টিপে খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললো-
“হুমম। কারণ তুই যাতে আমাকে খুঁজিস সে ব্যবস্থাতো আমিই করেছি। আমার বিশ্বাস ছিলো তুই আমাকে খুঁজে বের করতে পারবি।”
লোরার কথায় আমার অবাক হওয়ার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে। আমি ম্রিয়মান কন্ঠে বলি-
“হিন্টস তো তুই দিয়েছিস তাহলে ক্রেডিট আমি নেই কি করে? আচ্ছা এবার বলতো এই অজপাড়া গাঁয়ে লুকিয়ে আছিস কেন? আর এই নিখোঁজ নাটকের রহস্যই বা কি?”
“সারারাত জার্নি করেছিস একটু ফ্রেশ হয়ে নে। নাস্তা খেয়ে তারপর না হয় শুনিস সব।”
“না এখনই বল এতোক্ষণ তর সইবে না আমার।”
লোরা শ্বাস ফেলে, ভেতরের ঘর থেকে একজন এসে মুড়ি গুড় আর শরবত রাখে। লোরা পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্বামী বলে। লোকটা দু’একটা কথা বলে বিদায় নিলো। আমার সবকিছু কেমন উল্টো পাল্টা লাগে। লোরার মতো স্মার্ট মেয়ের এইরকম জীবনসঙ্গী? ঠিক ভাবা যায় না আর কি। আমার ভাবনার রশি টেনে ধরতেই বুঝি লোরা কথা বলতে শুরু করলো-
“আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুব একটা ভালো না থাকলেও চলছিলো আর কি। বাবা যতদিন সুস্থ ছিলেন ভাবনা ছিলোনা। বাবা অসুস্থ হতেই সমস্যা শুরু হলো। আমাদের পড়ার খরচ, খাওয়া দাওয়া, বাবার ট্রিটমেন্ট সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা। মা টিচারি করে কোনো রকমে দিন চালাচ্ছিলেন। ক্লাস নাইনে থাকতে নাবিলের সাথে পরিচয়, নাবিলই প্রথম দেখায় আমার প্রেমে পড়েছিলো। ও আমাকে এতোটাই পচ্ছন্দ করতো যে ওর কাছে যখন যা চাইতাম তাই দিয়ে দিতো বিনাবাক্যে। কোনো দিন যদি একটু হাত ধরতে দিতাম বা একটু চুমু সেসব দিন আরো বেশি দিতো। আমার সব খরচ ওর টাকায় হয়ে যেতো।এমনকি আমার বোনের পড়ার খরচও ওর টাকায় চলতো। এভাবেই মেট্রিক, ইন্টার পাশ করে ভার্সিটিতে গেলাম। ততদিনে নাবিলের মা বোন আমাদের ব্যাপার জেনে গেছেন। নাবিলের লাগামহীন খরচে ওদের ব্যবসাটা ঝিমিয়ে যাচ্ছিলো। ওর মা একা ব্যবসা সামলাতে পারছিলেন না। নাবিলের বাবা ছিলোনা নাবিলকে ঘিরেই ওর মা বোনের দুনিয়া। ওরা এভাবে ঘুরে বেড়ানোর চাইতো নাবিলকে বিয়ে করতে বললো। নাবিল বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমি রাজি হলাম না। কারন দু’টো সংসার চালানোর মতো নাবিলের অবস্থা ছিলো না। বাবার অসুখে প্রচুর টাকা লাগে। আর ততদিনে আমিও অমিতের খোঁজ পেয়েছি। নাবিলই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো ওর সাথে আমার। খোঁজ নিয়ে জানলাম অমিতের কাছে নাবিল নস্যি, অমিতদের প্রচুর টাকা। নাবিলের আর্তনাদকে পাত্তা না দিয়ে আমি অমিতে নৌকা ভিড়ালাম। আর এখানেই আমার ভুল হলো। অমিত আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও আসলে ওর ইচ্ছে ছিলো আমাকে ভোগ করার। আমি না বুঝতে পেরে ওর ফাঁদে পা দিলাম। ওর চাহিদা মেনে নিতেই কয়েকদিন পরে অমিত নিজের স্বরুপ দেখালো। আমাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখিয়ে আমাকে বাধ্য করলো ওর বন্ধুদের সাথে শুতে। আমি হয়ে গেলাম অমিত, মিহির, তুষারদের মনোরঞ্জক। সেই সময়ে বাবা বিয়ে ঠিক করলেন। অসুস্থ বাবাকে আমি না পারছি কইতে না পারছি সইতে। একদিকে অমিতের লাগাতার ব্লাকমেল আরেকদিকে বাবার আমাকে বিয়ে দেওয়ার জেদ। এমন অবস্থায় আমার সামনে এইটাই পথ খোলা ছিলো, পালিয়ে যাওয়া। আমি তাই করেছিলাম। চাকরি ছেড়ে কাউকে না বলে পঞ্চগড়ের এই অজপাড়াগাঁয়ে পালিয়ে আসি। এখানেই একটা স্কুলে চাকরি নিয়ে আছি। আমার হাজবেন্ড এখানকার স্হানীয়, একই স্কুলের টিচার। সব জেনেই আমাকে বিয়ে করেন। এরমধ্যে আমি কখনোই আর ঢাকায় যাইনি। মাঝে মাঝে জারার সাথে ফোনে কথা হয়।”
“তাহলে এই নিখোঁজ নাটক?”
“এই কারনটা না হয় নাবিলের সামনেই বলি?”
আমি চমকে গেলাম। লোরা কিভাবে জানলো নাবিল এসেছে? লোরার কথা শুনে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা নাবিল বেড়িয়ে এলো। লোরাকে একবার দেখেই অন্য দিকে চোখ ফেরালো। লোরাও ওকে দেখলো কয়েকমুহুর্ত।
“নাবিল সত্যিকার অর্থে যদি কারো প্রেমে পড়ে থাকে সে হলো তুই। ভার্সিটিতে ও আসতে শুরু করেছিলো আমার জন্য তবে শেষের দিকে কারনটা কেবল তুই ছিলি। কি নাবিল, ঠিক বলেছি তো?”
নাবিল চমকে লোরার দিকে তাকিয়ে চকিতে আমায় দেখলো। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে পিপড়ে দেখছি।
“আর তুইও আমার কাছে ওর গল্প শুনে শুনে ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলি। তাইতো কখনো ওর সাথে সামনাসামনি দেখা দিসনি। আমি কি ভুল বলেছি কিছু নোরা?”
লোরার কথায় আমি ভীষণ চমকে উঠলাম। আসলেই মনের কোনো এক কোনে নাবিল ছিলো তা না হলে ওকে দেখে ওমন পালিয়ে বেড়াই কেনো? লোরা উদাস হয়ে আকাশ পানে চেয়ে থাকলো কিছু সময়-
“জারার সাথে সম্ভবত নাবিলের দেখা হয়েছিলো। সেই আমাকে জানালো নাবিলের কথা। কৌতূহলি হয়ে খোঁজ নিয়ে জানলাম এখনো বিয়ে করেনি নাবিল। ওর মাও খুব অসুস্থ। শুনে ভীষণ খারাপ লাগল, নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছিল ওর এই অবস্থার জন্য। আসলে একসময় নাবিলের কাছ থেকে এতো উপকার পেয়েছি যে ওর উদাসীনতা আমায় কষ্ট দিচ্ছিলো। ওকে বিয়ে করলে হয়তো আমার জীবনটা সুন্দর আর ঝামেলাহীন হতো। ভুল করে জীবনটাই এলোমেলো করে ফেলেছি। আমি মাঝে মাঝে জারার কাছ থেকে নাবিলের খবর নিতে শুরু করি নাবিলের। বাবার বিজনেসটা না সামলে নাবিল জব করছে কি এক অভিমানে। অথচ বাবার নামটা বাঁচিয়ে রাখা ওর দায়িত্ব। এসব শুনে নিজেকে কেমন যেন দোষী মনেহয়। ভাবলাম আমি নাবিলকে বিয়ে করিনি তো কি হয়েছে নাবিল ওর যোগ্য মানুষটাকেই পাক জীবনে। আর তুই হলি ওর যোগ্য সহযোগী।”
লোরা একটু থেমে আমাকে কিছুসময় নিরিক্ষা করলো, মিষ্টি হেসে বললো-
“তোকে আমি ভীষণ পচ্ছন্দ করি। ভর্তির সময় তোকে দেখেই ভালো লেগেছিল। শান্ত, চুপচাপ, নিজের মতো থাকা মানুষগুলোর মন পরিস্কার হয় খুব। বন্ধু হিসেবে তারা অসাধারণ, কোনো স্বার্থ নিয়ে তারা বাঁচে না। পারতপক্ষে মানুষের ক্ষতি করে না। সবার মতো না একা দলছুট হয়েও তারা দিব্যি আনন্দে বাঁচে। নাবিলের জীবনে ঠিক তোর মতো কাউকেই দরকার। তোরা দুজনে মিলে খুব সুন্দর একটা জুটি। আমার দুই প্রিয় মানুষ একসাথে সুখে থাকবে এর চাইতে ভালো কিছু দুনিয়ায় হতেই পারে না।”
আমি নাবিল আমরা দু’জনেই মাথা নিচু করে আছি। লোরা আমার কাছে এসে বসলো, আমার হাতটা ওর হাতে তুলে নিলো-
“আমি এই জীবনে খুব ভালো আছি। সব খাঁটি জিনিসের সংস্পর্শে থেকে আমিও খাঁটি হয়ে উঠছি ঠিক তোর মতো। বুঝলাম, দলছুট পাখির মতো রাস্তা হারিয়ে ফেলে একা একা ভেসে বেড়াতে খারাপ লাগে না খুব একটা। জীবন তো একটাই, এক জীবনে মাঝে মাঝে দলছুট হওয়াটা খুব দরকার, জীবনের আসল মানে বোঝার জন্য হলেও দরকার।”

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here