# প্রজাপতি মন (পর্ব-৩)

♡আরশিয়া জান্নাত

নাফিজ সাহেব পত্রিকা হাতে নিয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। সপ্তাহে একদিনও ঠিকঠাক ছেলেমেয়েদের সাথে তিনি সময় কাটাতে পারেন না। তবে যেইটুকু সময় পান চেষ্টা করেন ভালোভাবে কাজে লাগাতে। নিশিথা তার বাবার সামনে এসে বললো,আব্বু তুমি এখন খবরের কাগজ নিয়ে বসে আছ? তোমাকে না বললাম আজ আমরা বেড়াতে যাবো?
নাফিজ সাহেব হেসে বললেন,আম্মাজান ওই কথা আমার মনে আছে। তোরা কেউ এখনো উঠিসনি বলে আমি চুপচাপ আছি। তা কি ঠিক করলি কই যাবি?
–কোথায় যাওয়া যায় বলোতো?
–সে নাহয় পরে ভাবা যাবে আগে বল তোর পড়াশোনার কি খবর? মনে আছে তো কিছুদিন পর তোকে পুলিশ অফিসার হতে হবে?
— ইয়েস স্যার! অবশ্যই মনে আছে।
–কিছুদিন পর সার্কুলার দিবে। তুই ঐটায় এপ্লাই করবি। কাগজপত্র সে অনুযায়ী রেডি করা শুরু কর আর আমি কিছু বই এনেছি ঐগুলো প্র্যাকটিস কর। আমি চাই আমার মেয়ে নিজ যোগ্যতায় পুলিশ হোক। কেউ যেন তোকে আমার মেয়ে বলে না চেনে বরং আমি যেন তোর বাবা হিসেবে পরিচিতি লাভ করি!
–ইনশাআল্লাহ!
–আমার ছোট মা কই?
–অনেক রাত অবধি পড়ে এখন ঘুমাচ্ছে!
–ওকে এতো চাপ নিতে মানা কর। পড়াশোনা করছে ভালো তাই বলে শরীরের রেগুলার সার্কেল নষ্ট করা চলবেনা।
— বলে লাভ নেই আব্বু। ও ঠিক করেছে যেভাবেই হোক মেডিক্যাল এ চান্স পাবেই। তুমি জানো ওর বন্ধুরা সবাই ওকে আঁতেল বলে!
–হাহাহা আমার এক ফ্রেন্ড ছিল এমন। সারাক্ষণ পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস। এতোই পড়তো যে শেষে মাথাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন পাগল হয়ে ঘুরে। এই গল্পটা অবশ্যই আনহাকে বলবি।

নিশিথা যাওয়ার পর আনিসা বেগম তার স্বামীর পাশে বসে বললেন, আপা নিশির জন্য একটা সমন্ধ এনেছে। ছেলে ব্যবসা করে। পরিবার নাকি অনেক ভালো। একবার খোঁজখবর নিবে?

–তোমাকে কতবার বলেছি এখুনি বিয়ের কথা ভেবোনা। আমার মেয়েরা আগে নিজের পায়ে দাঁড়াক তারপর অন্য চিন্তা।

— তুমিও কেমন জানি! কোথায় ভালো কোনো ছেলে দেখে বিয়ের চিন্তা করবা তা না! নিজে যেমন চোর ডাকাতের পিছে ঘুরে এখন মেয়েকেও সেই পেশায় নিতে চাইছে! নিশিথা সংসারী মেয়ে ওকে বিয়ে দিলেই ভালোভাবে সংসার করতে পারবে। তুমি ওর রান্না খেয়ে দেখেছ কেমন পাকা হাত? তাছাড়া এই বয়সে যেমন ভালো ঘর আসবে সবসময় কি সেটা থাকবে?

নাফিজ সাহেব সেসব কানে তুললেন বলে মনে হলো না।

আনহা আর হাসিব এখন ভিন্ন কলেজের স্টুডেন্ট। কলেজ আলাদা হলেও দূরত্ব বেশি না হওয়ায় রোজ আগের মতোই দেখা হয়। কলেজের পাশের ক্যাফেটেরিয়াতে আড্ডা জমে। একদিন কথায় কথায় হাসিব বললো সে একটা নতুন সুখের ঠিকানা পেয়েছে। গত সপ্তাহে বন্ধুরা মিলে তিতাসে গেছিল। সারাদিনের জন্য নৌকা ভাড়া করে।নদীর মাঝখানে বসে পিনিক তোলার মজাই নাকি আলাদা!!
কথাটা শুনে আনহা ভীষণ রেগে বললো, পিনিক মানে? তুই নেশা করিস হাসিব?
–আরেহ ধুরর নেশা কই। এসব হচ্ছে এক্সপেরিমেন্ট। জীবনে সবকিছুর টেস্ট নিতে হয় বুঝলি।
আনহা আর কোনো কথা বলে সোজা বাসায় ফিরলো। নিশিথার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, আপু জানিস হাসিব এখন নেশাও করে! তুই কি এখনো কোনো উপায় বের করবিনা?

নিশিথা ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো, হাসিব এখন ফাঁকা? আই মিন ওর তো গফ নেই না?

–হু নাই তো।

–তুই না বলছিলি কলেজের কোন মেয়ের সাথে রিলেশনে আছে? ঐটা বাদ?
–ওর এখন রিলেশনের দাম আছে? দুইদিন পরপর নতুন নতুন জুটায়।
–আমার মাথায় একটা দারুণ বুদ্ধি আসছে। তুই হাসিবের ফোন নাম্বার দে।
— কি করবি ফোন নাম্বার দিয়ে?
— যা আমি অন্যদের সাথে করি! হাসিবের সাথে কলে কথা বলবো রং নাম্বারে আননোন সেজে।
–বলিস কি আপু! ও তোর ছোট!
–ছোট আর বড় কি? আমি কি ওর সাথে প্রেম করতে যাচ্ছি? আমি জাস্ট ওরে সোজা পথে আনবো। তুই জাস্ট দেখ কি কি হয়। তুই তো জানিস না তোর বোনের কথা বলার কি পাওয়ার!!
–যদি ও বুঝে ফেলে?
–কেমনে বুঝবে? আমার গলার টোন চেনা সহজ না মনু! এখন যা বলছি তাই কর। নাম্বার দে আমি মিসকল দেই। যদি ব্যাক করে তাহলে এই নাম্বার থেকে কথা বলমু আর যদি না করে অন্য নাম্বারে দিমু।
–আপু তুই সিওর তো?
–ধুরর ভীতুর ডিম ফুট এহান থে।
আনহা অসহায়ের মতো মুখ করে তাকিয়ে রইলো।
–তুই কেন ভয় পাচ্ছিস বলতো? তোর কি এমন কোনো কেলেঙ্কারি আছে যা আমি কথা বললে জেনে যাবো?

–017********

নাম্বারটা দিয়েই আনহা চলে গেল বাইরে। ওর বোন কিভাবে পারলো এমন কথা বলতে? রাগে অভিমানে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল।



হাসিব সচরাচর আননোন নাম্বার থেকে কল এলে রিসিভ করেনা। কয়েকবার মিসড কল আসায় মনে করলো পরিচিত কেউ হয়তো। সেই ভেবেই মূলত কল ব্যাক করলো সে। ফোন রিসিভ করতেই একটা মেয়ে বললো, ভাইয়া তাড়াতাড়ি বাসায় আসো আম্মুর অবস্থা ভালো না। শীলা চাচীকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

হাসিব মেয়েটার গলা শুনে বিমোহিত হয়ে গেল। একটা মেয়ের কন্ঠ এতো সুন্দর হতে পারে? মেয়েটা কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দিলো। একদিকে এই ভেবে টেনশন হচ্ছিল মেয়েটার ভাই আদৌ খবরটা জানতে পারলো কিনা, মেয়েটার মায়ের কি অবস্থা কে জানে। অপরদিকে এমন সুন্দর কন্ঠের মেয়েটার জন্য মন কেমন করছে। সে কি আরেকবার কল করে বলবে রং নাম্বার ছিল?
বহুক্ষণ চিন্তা ভাবনা করে কল দিতে ফোনটা হাতে তুলতেই ঐ মেয়েটা আবার কল দিলো। এবার আর মিসকল দিলো না। হাসিব রিসিভ করল।
মেয়েটা বললো, স্যরি ভাইয়া রং নাম্বার ছিল। ভাইয়াকে কল করতে গিয়ে ভুল নাম্বার টাইপ করেছি। আসলে আমি নতুন ফোন কিনেছি তো নাম্বার ছিল না এখানে।

নাহ নাহ সমস্যা নাই ইটস ওকে। আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলেছেন? আর আন্টিকে হাসপাতালে নিয়েছেন? অবস্থা কি বেশি খারাপ?

জ্বি ভাইয়াকে কল করেছি। আসলে আম্মু শ্বাসকষ্টের রুগী তো তাই মাঝেমধ্যে সিরিয়াস অবস্থা হয়ে যায়। এখন অক্সিজেন দেওয়ার পর ঠিক আছে আল্লাহর রহমতে

আচ্ছা।

আচ্ছা ভাইয়া রাখি ভালো থাকবেন।

শুনুন আপনার নামটা?

আমার নাম তিতলি।

মেয়েটা আর জিজ্ঞাসা করলো না তার নাম কি!
হাসিব কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হলেও মুচকি হেসে বললো, তিতলি! নাইস নেইম।

কাইয়্যুম কিছুদিন যাবত নিখোঁজ রইলো। এই নিখোঁজ হবার পেছনে উদ্দেশ্য দুইটা। এক তার অনুপস্থিতি নিশিথার চোখে পড়ে কি না। দুই নিশিথার প্রতি আকর্ষণটা কেবল আকর্ষণ নাকি অন্য কিছু তা বের করা।
কাইয়্যুম জানে এসব বাচ্চামী। কিন্তু সে জানতে চায় অন্তত নিজের মনে ক্লিয়ার হতে চায়।
এক সপ্তাহে নিশিথা একদিনও তাকে কল করে নি। অথচ সে কতবার যে ফোনে তাকিয়েছে ছোট করে হলেও একটা মিসকল এর জন্য,কিন্তু এলো না। নিশিথা যেন টেরই পেলো না কাইয়্যুম তার আশেপাশে নেই! এতো ঠুনকো তার অস্তিত্ব ভাবতেই চোখ ভিজে আসে যন্ত্রণায়। অলৌকিকভাবে এর খানিকবাদেই নিশিথা তার বাসায় হাজির!
–কি ব্যাপার বলোতো তুমি দেখি মিস্টার ইন্ডিয়া বনে গেছ একদম ভ্যানিশড! ক্যাম্পাসে নাই লাইব্রেরিতে নাই এমনকি পাড়ার চায়ের দোকানেও নাই। ব্যাপার কি বলতো? ছ্যাঁকা দিছে নাকি কেউ?এমন দেবদাসের রূপধারণ করলি ক্যান?

কাইয়্যুম নিশিথাকে দেখে এতোটাই আপ্লুত হয়ে গেল খুশিতে সে নিশিথার হাত ধরে বললো, তুমি আমার অনুপস্থিতি টের পেয়েছিলে নিশু? আমায় খুঁজেছিলে তুমি! তার মানে আমি মোটেও ফেলনা নই তোমার জীবনে?

নিশিথা অবাক চোখে কাইয়্যুমকে দেখতে লাগলো। এই ছেলে এভাবে কেঁদেকেটে এমনভাবে কথা বলছে কেন?

কি হইছে তোর ঠিক আছোস?

ঠিক ছিলাম না এখন ঠিক আছি। I Love You Nishu I Love you so much. Be my Lifeline Nishu I promise I’ll take your best care…

নিশিথা চটজলদি রুম থেকে বের হয়ে গেল। কাইয়্যুম তখনো পাগলের মতো কেঁদে যাচ্ছে,,,

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here