হার্ট ব্লক-৬
নুর মুহাম্মাদ
শেফা ক্লিনিকে এসেছে আজ অনেক দিন হয়ে গেল।আজ তাকে ক্লিনিক থেকে রিলেজ দিবে। তাই শেফার মনটা খুব খারাপ, নিলয়কে আর দেখতে পারবে না। একবার ভাবে, সারাজীবন রুগী হয়ে এখানে থেকে যেতে পারলেও মন্দ হত না। ভাগ্যক্রমে এখানে এসে পড়েছি এবং নিলয়ের চোখে পড়েছি বলে এতদিন ভালোই খোঁজখবর নিয়েছে। নিজ থেকে সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এর মানে তো এ নয় যে, প্রতিদিন সে আমার ঐ বস্তির ঘরে যাবে এবং আমাদের খোঁজখবর নিবে যে, প্রতিদিন এক পলক হলেও তাকে দেখতে পারবো। যাক আমার ছেলেকে পড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে এরচেয়ে বড় পাওয়া তো আর কিছু হতে পারে না।
নিলয় সাহেব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলেন। নাস্তা সেরে শাহবাগ গেলেন। শেফা যে সব ফুল পছন্দ করত তার একটি ফুলের তোড়া কিনলেন। ফুলের তোড়া নিয়ে সোজা শেফার কেবিনে চলে গেলেন। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মচারী কর্মকর্তারা ভীষণ অবাক হলেন। স্যারের হাতে ফুল!! নিলয় সাহেব ফুলের তোড়াটি নিয়ে শেফার হাতে দিলেন। শেফা ফুলের তোড়াটি নিয়ে পড়তে লাগলেন, ” আশ-শেফা ক্লিনিক” এর পক্ষ থেকে নতুন জীবনের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনার আগামী হোক সুন্দর থেকে সুন্দরতম।”
-এই ক্লিনিক তো তোমার তাই না!!?
-হুম।
-তোমার ক্লিনিক আমার নামে করেছো?!!!
-হুম।
-তুমি যে কী কর না! আমি তোমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলাম। এতবছর পরও আমাকে এতটা মনে রেখেছে!!!
শেফার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারে না। দাঁড়ানো থেকে বসে পড়ে। মাথা গুজে ফুফিয়ে কাঁদতে থাকে।
নিলয় সাহেব শেফার মাথাটা উচু করে বললেন, এসব বাদ দাও তো। এখন আমাদের বাসায় চলো।
-ওম্মাহ! বল কী তুমি!!আমি তোমার বাসায় যাবো?!
-হুম!
-সেটা সম্ভব নয়।
-কেন?
-কোন মেয়েই এসব ভালো চোখে দেখে না। এমনকি আমিও না। তবে হ্যাঁ, একদিন গিয়ে সেই সৌভাগ্যবতীকে দেখে আসবো। যে তোমার মত ভালো ছেলে পেয়েছে।
-আচ্ছা আজই চলো। যদি “উনি” ভালো চোখে না দেখে তাইলে এক মুহূর্তও তোমাকে থাকতে বলব না। তুমি চলে যেয়ো।
-আচ্ছা চলো।
ক্লিনিক থেকে সবাই নিচে নামল। গাড়ি দেখে শেফা জিজ্ঞেস করল, গাড়ি কার তোমার?
-হুম।
-যাক আজ বাড়ি গাড়ি সবই হলো তোমার। শুধু মধ্য দিয়ে আমরা কেউ কাউকে পেলাম না। বিয়ের বিষয়ে আমাদের বাঙ্গালী সমাজ খুবই খারাপ। খুবই সংকীর্ণমনা। কেন সেদিন যদি আমাদের পরিবার আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিতো তাতে সমস্যা কি ছিল !?
তারা দুজন কথা বলা শুরু করলে আর শেষ হতে চায় না। কথার পিটে কথা আসে। নিলয় সাহেব একটু প্রশ্ন করবে করবে করেও করে নি। শেফা কি না কি ভাবে তা মনে করে।আজ প্রশ্নটা করেই ফেলল, তোমার না খুব বড়লোক ঘরে বিয়ে হয়েছিল। তা আয়মনের বাবা মারা গেছে বুঝলাম, কিন্তু তার তো অনেক সম্পত্তি ছিল তা কী করেছো?
-অনেক কিছুই রেখে গেছিল ঠিক। কিন্তু আমার দেবর ও ভাসুর তার ছিটেফোঁটাও আমাকে দেয় নি। বরং ভয়ংকর এক অপবাদ দিয়ে আমাকে পথে নামিয়ে দিয়েছে।
–কি অপবাদ?
–কেন বুঝ না? পরকিয়া। এখনো তোমার ন্যাকামি গেল না!
–সমস্যা কি? তুমি মামলা করলেই তো হত।
–আরে পাগল! মামলা করেছিলাম। আমার পরিবার তো ঐ সময়ও কিছুটা ভালো অবস্থায় ছিল —
— কেন এখন ভালো নেই?
–থাকলে কি আজ আমার এই দুরবস্থা হত!
–আচ্ছা তারপর?
চলবে——