হার্ট ব্লক-৫
নুর মুহাম্মাদ
–ঠিকাছে।এবার বলো কি খাবে?
–ক্লিনিক থেকে যা দেয়া হবে তাতেই হবে। অন্যকিছুর দরকার নেই।
–আরে ক্লিনিকের খাবার কী মজা হয়!!সবাই কী হাসপাতালের খাবার খেতে পারে!!
–তুমি বুঝতে পারছনা কেন? আমু এখন আর আগের সেই শেফা নেই।এখন আমার সামনে আল্লাহ তায়ালা যখন যা পৌঁছান তাতেই আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। সবারই তাই করা উচিত।
–আচ্ছা তোমার বলতে হবে না। আমি তো তোমার পছন্দের ম্যানুটা সেই কবে থেকেই জানি। তাই-ই নিয়ে আসবো।
–শোন। আমাকে নিয়ে তোমার এত বেশি বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই। আমি কখন না কখন মরে যাবো তার ঠিক নেই।…
–মরার কথা বলতে বলছে কে তোমাকে?! আমাকে তোমাকে সবাইকেই একদিন মরতে হবে। আজ আর কাল! নিঃশ্বাসের নাই বিশ্বাস।
–আচ্ছা শোন! তুমি যে আয়মনকে বলেছো না, তাকে আবার মাদরাসায় ভর্তি করে দিবে। তার পড়ালেখার বিষয়টা তুমি দেখবে। সেটা কইরো। তাতেই আমি সারাজীবন তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়।
–ইনশাআল্লাহ তাতো করবোই।
— তাতেই আমি খুশি।
— আচ্ছা এখন আমি আসি। বাসায় যাবো। সন্ধ্যার দিকে আবার আসব। তা আয়মনকে কি আমার সাথে
নিয়ে যাবো? আবার বিকালে আমার সাথে আসবে।
-না ও আমার কাছেই থাক।
-ওকে।
নিলয় সাহেব যাওয়ার সময় আয়মনের হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট দিয়ে বলে গেলেন, এটা দিয়ে তুমি কিছু খেয়ো। এবং তোমার আম্মুর কিছু লাগলে তা এনে দিয়ো। এরপর নিলয় সাহেব বেরিয়ে গেলেন। গাড়িতে চড়ে বসতেই তার মনে পড়ে গেল, মুফতি উমর ফারুক সাহেবের গত জুমার বয়ানের কথা। তিনি নবীন আলেমে দ্বীন। খুব সুন্দর আলোচনা করেন। এই নবীন আলেমকে নিলয় সাহেবের খুব ভালো লাগে। একমাত্র তার সাথেই জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে পরামর্শ করেন। আর কাউকে কিছু বলার বা জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না। মুফতি সাহেব গত জুমার বয়ানে বলেছিলেন,
ইয়াতিম প্রতিপালনের চারটি উপকারিকা।
এক. কোন ইয়াতিমকে লালনপালন করলে জান্নাতে রাসুলের সাথে একত্রে থাকার সৌভাগ্য হবে।
সাহল বিন সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এভাবে থাকব। এরপর তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করলেন এবং এ দুটির মাঝে সামান্য ফাঁকা করলেন। (বুখারি)
এ হাদিস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয়, যে ব্যক্তি জান্নাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হতে চান সে যেন এই হাদিসের ওপর আমল করেন এবং এতিম প্রতিপালনে ব্রতী হন।
সার্বিক দিক থেকে তার প্রতি গুরুত্ব দেয়। কারণ, আখেরাতে এর চেয়ে উত্তম আর কোনো স্থান হতে পারে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি ও এতিম প্রতিপালনকারীর অবস্থান জান্নাতে এই দুই অংগুলির ন্যায় পাশাপাশি হবে। চাই সেই এতিম তার নিজের হোক অথবা অন্যের। (বর্ণনাকারী) মালেক বিন আনাস (রা.) তর্জনী ও মধ্যমাঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন। (সহিহ মুসলিম)
দুই. এতিম প্রতিপালনে রিযিক প্রশস্ত হয় এবং রহমত ও বরকত নাজিল হয়।
আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, দুর্বল অসহায়দের আবেদনে আমাকে সাহায্য কর। তোমাদের দুর্বল-অসহায়দের কারণেই তোমরা সাহায্য ও রিযিক প্রাপ্ত হও। (আবু দাউদ)
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেছেন, মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম যে বাড়িতে এতিম রয়েছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি যে বাড়িতে এতিম আছে, অথচ তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়। অতঃপর তিনি তার আঙ্গুলির মাধ্যমে বললেন- আমি এবং এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব। (ইবনে মাজাহ)
তিন. এতিম প্রতিপালনে হৃদয় নম্র হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তার অন্তর কঠিন মর্মে অভিযোগ করল। তিনি তাকে বললেন, যদি তুমি তোমার হৃদয় নরম করতে চাও তাহলে দরিদ্রকে খানা খাওয়াও এবং এতিমের মাথা মুছে দাও। (মুসনাদে আহমাদ: ২/৩৮৭)
চার. এতিম প্রতিপালন ও তাদের প্রতি সদয় আচরণে অত্যাধিক সওয়াব হাসিল হয়।
আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ছেলে অথবা মেয়ে এতিমের মাথায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে হাত বুলিয়ে দেয়, মাথার যত চুল দিয়ে তার হাতটি অতিক্রম করবে তার তত সওয়াব অর্জিত হবে। আর এতিমের প্রতি সে যদি ভাল ব্যবহার করে তাহলে এই দুই আঙ্গুলের ন্যায় সে এবং আমি জান্নাতে অবস্থান করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দুই আঙ্গুলকে মিলিয়ে দেখালেন। (মুসনাদে আহমদ)