হার্ট ব্লক পর্ব-৪
নুর মুহাম্মাদ

শেফা নিলয় সাহেবকে দেখে বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে পড়ল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এ স্বপ্ন না তো?! মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। চোখেন কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। নিলয় সাহেব তার অবস্থাটা বুঝতে পারলেন। তিনি এগিয়ে গিয়ে শেফার কাছাকাছি বসলেন। শেফাকে অভয় দিলেন। বললেন, ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবা। শেফা ভেবে পাচ্ছে না, এ কী করে সম্ভব! নিলয় সাহেবকে আপনি না তুমি বলবে তাও মাথায় আসছে না। একসময় এই নিলয় সাহেবই তো তার জীবনে একমাত্র “তুমি ” ছিল। যে কিনা আজ তার পাশে বসা। শেফা এমন সাদামাটা দুচারটা কথা বলল যাতে আপনি বা তুমি কোনটাই নেই। বলা চলে, আপনি বা তুমির প্রসঙ্গটা সযত্নে এড়িয়ে গেল। নিলয় সাহেব তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি অপারেশনের রুগী। তাই এখন কথা একটু কম বলো। আমাদের ডাক্তারি নিষেধ আছে। শেফা শুধু ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে। ভাবে সে হয়ত অন্য কোন জগতে আছে। নিলয় সাহেব বললেন, সব নার্সদের বলে দিয়েছি। ওরা তোমার প্রতি খুব খেয়াল রাখবে। কিছু প্রয়োজন হলে বা কোন সমস্যা মনে করলে আয়মনকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবে। আমি এখন চেম্বারে যাই আবার দুপুরের দিকে এসে দেখে যাবো। আর হ্যাঁ, আপাতত তোমার যা প্রয়োজন সব ঐ ব্যাগের ভেতর আছে। বাসা থেকে নিয়ে এসেছি। এ বলে নিলয় সাহেব বেরিয়ে গেলেন। শেফা তার গমনপথে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। আয়মনের ডাকে সম্মতি ফিরে পেল। আয়মন বলল, আম্মু ডাক্তারটা না অনেক ভালো। আমারে খুব আদর করেছে। বলেছে,তোমার আম্মুর চিকিৎসা আমি করব তবে তোমাকে আবার মাদরাসায় ভর্তি হতে হবে।হাফেজ মাওলানা হতে হবে।
– -হুম। খুব ভালো।
-আম্মু তুমি কাঁদো কেন?

শেফা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। সান্তনা দিয়ে বলেন, এখন আর চিন্তা করো না। আল্লাহ আমাদের একটি পথ বের করে দিবে। তা রাতে ছিলা কই?
–ঐ ডাক্তার সাহেব তার বাসায় নিয়ে গেছিলেন। জানো উনি আমাকে গোসল করিয়ে দিয়েছেন। নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছেন।
-ভালো।

দুপুরে নিলয় সাহেব আবার কেবিনে আসলেন। শেফাও অনেকটা স্বাভাবিক হলো। নিলয় সাহেব কেবিনে ঢুকেই বলল, কী কেমন লাগছে এখন?
–অনেকটা ভালো। তা আপনি……
–আপনি না। আজও আমি তোমার মুখে পুরনো সেই তুমি ডাকটাই শুনতে চাই।
শেফা আমতা আমতা করে বলে, ওভাবে বইলেন না।
–আবার “আপনি” বলবা তো আমি তোমার সাথে আর একটা কথাও বলব না।
–আমি চাইলেও তুমি বলতে পারব না। আড়ষ্টতা এসে আমার কণ্ঠ জড়িয়ে ধরে। প্রথমদিন একবার ” তুমি” করে বলতেও চাইছিলাম কিন্তু মুখ থেকে বেরোয় না। গলায় আটকে পড়ে।
–তোমাকে তো আমি আর কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, আগের মতই কথা বলতে। নইলে আমি কথা বলতে লজ্জা পাই এটা তুমি বুঝছো না কেন!?
–তোমাকে তো আমি আর কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, আগের মতই কথা বলতে। নইলে আমি কথা বলতে লজ্জা পাই এটা তুমি বুঝছো না কেন?!
–আচ্ছা শোন। পৃথিবীর আর কেউ না জানুক তুমি তো জানো আমি একটু কেমন কেমন যেন! ভেতরের সবকথা অকপটে বলতে পারি না। জানি, আমাদের পরিবার থেকে তুমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছো। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদের ক্ষমা করে দাও।
–ওসব বাদ দাও তো।
–বুঝতেই তো পারছো, আমরা কোন পর্যায়ে এসে ঠেকেছি!! তাই ওসব আমি বাদ দিতে পারি না। ওসব আমাকে মাঝেমধ্যেই খুব ভাবিয়ে তুলো। যদিও আমার পক্ষ থেকে সাধ্যমত চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু….কিন্তু আমি এত বড় কপাল নিয়ে জন্মাই নি। তাই এত ভালো থেকেও, এত এত চেষ্টা করেও তোমাকে জীবনসঙ্গীরুপে পাই নি।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here