ভাপসা গরমে বাসের ভেতরের স্ট্যান্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছি।অবশ্য দাঁড়িয়ে আছি না বাদরের মতো ঝুলে আছি বুঝতে পারছি না।একটা সিটও খালি নেই।তার উপর যারা দাঁড়িয়ে আছে।পারলে একজনের ভেতর একজন ঢুকে যাচ্ছে।এই ফাঁকে যদি কেউ প্যাকেটমারে কারো সাধ্য নেই খোঁজে বের করার।নিয়মমাফিক এই হট্টগোল চলে।এই বাসের আধঘন্টা পর আরেকটা বাস আছে।ওই বাসে যাত্রী সংখ্যা কম হবে।কারণ তখন না স্কুল টাইম আর না অফিস টাইম।সাদা চেক শার্টের উপর কালো রঙের টাই।কালো প্যান্ট,কালো জুতো।এটাই হলো অফিস ড্রেস। কাঁধে অফিসের ব্যাগ।গলায় ঝোলানো অফিসের আইডি কার্ড।যেখানে ইংরেজি অক্ষরে লিখা কোম্পানির নাম, এ,এস,পি ইন্ড্রাস্টিজ।তারপর নাম লিখা দিগন্ত রহমান। বার্থ ডেইটটাও দেওয়া।অফিসে পদবীটা কি সেটাও দেওয়া।এই আইডিকার্ড ছাড়া অফিসে প্রবেশ করা যায় না।
এই যে ভাইজান ভাড়াটা দেন।
ভাড়া নিতে এসেছে।আমি বাসে আছি না জাহান্নামে আছি সেটাই বুঝতে পারছি না।ইচ্ছে করছে কষে একটা থাপ্পড় লাগাই।কিন্তু এতই ভিড় যে থাপ্পড়ও ঠিকঠাক গালে পড়বে না।তাই নিজের ইচ্ছেকে দমন করে।অনেক কষ্টে হাতটা বের করলাম।কোনোরকম বুক প্যাকেট থেকে ভাড়াটা বের করে এগিয়ে দিলাম।আগেভাগেই টাকাটা বের করে বুক প্যাকেটে রেখেছিলাম কারণ এই ভিড়ের ব্যাপারে আমি সর্বদাই নিশ্চিত।অবশেষে আমার গন্তব্য আসলো।মানুষের শ্রাব্য অশ্রাব্য গালিগালাজ শুনে অনেক কষ্টে বাস থেকে বের হলাম।
বাস থেকে বের হয়ে মনে হলো যেন আমি মুক্ত আকাশে উড়ছি।এতক্ষণ মানুষের শরীরের ঘামের গন্ধে অষ্টাগত হয়েছে প্রাণ।প্রশান্তির নিশ্বাস নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলাম।নিজের কেবিনে গিয়ে বসে ফাইলপত্রগুলো বের করলাম।এমডি সাহেবের সাক্ষর প্রয়োজন।যার দরুণ ফাইলগুলো হাতে নিয়ে এমডি সাহেবের কেবিনের দরজায় দাঁড়ালাম।দরজায় কয়েকবার নক করতে ভেতর থেকে পজেটিভ সাইন এলো।আমি প্রবেশ করে সালাম জানালাম এমডি সাহেব চেয়ারটা ঘুরিয়ে বসে আছেন।উনার পেছন দেখতে পাচ্ছি।উনি ঘুরতে আমি অবাক হয়ে গেলাম।কারণ এমডি স্যার হঠাৎ এত রূপবতী মেয়ে কি করে হয়ে গেলেন?এমডি স্যারতো পুরুষ মানুষ। তাহলে?আশ্চর্যতো।আমাকে অবাক করে দিয়ে এমডি ম্যাডাম একটু ভাব নিয়ে বললেন
হ্যালো মিস্টার কল্পনার রাজ্য থেকে বের হন।আমি জানি আমি সুন্দরী তাই বলে এভাবে আপনি তাকিয়ে থাকবেন?
আমি চমকে উঠে বললাম
আ আপনি স্যার ছিলেন না?ম্যাডামে রূপান্তরিত কি করে হলেন?
বোকার মতো প্রশ্ন করছেন কেন?কাছে আসুন।আমিই কোম্পানির নতুন এমডি।
আমিতো এবার পুরো স্তম্ভিত।উনি যে এমডি স্যার নয়।এটা বুঝতে পারছি।কিন্তু উনি আমাকে কাছে ডাকছেন কেন?আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাঁপছে।উনার কথাবার্তায় কিরকম জানি একটা বেয়াল্লাপনা ভাব পাচ্ছি।
এই হ্যান্ডসাম বয়।কি হলো কাছে আসো।
মা মা মানে? আপনি কি বলছেন?
আমি এই কোম্পানির নতুন এমডি ডিয়ার।তাই আমার নির্দেশ মানতে তুমি বাধ্য।
আজবতো এই মেয়ে আমাকে ডিয়ার ফিয়ার কেন বলছে?এমনিতেই গরমে আমার শরীর ফায়ার হয়ে গেছে।বড় বেয়াদবতো এই মেয়ে।আমাকে চুপ থাকতে দেখে এমডি ম্যাডাম বসা থেকে দাঁড়িয়ে ধীর পায়ে আমার কাছে আসতে লাগলেন।আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।এই মেয়ের ব্যবহার মোটেও সুবিধাজনক নয়।ম্যাডাম যখন আমার আরো কাছে চলে এলেন।ওমনি নিজের মধ্যে দূরত্ব রাখতে আমি মধ্যখানে ফাইলগুলো ধরলাম।ম্যাডাম বিরক্ত হয়ে বললেন
ওয়াট ইজ দিস?
ম্যাডাম।ফা.. ফাইল।আপনার সা..সাক্ষর লাগবে।
সাক্ষর লাগবে ওকে।তুমি এত কাঁপছো কেন?জল খাবে?
না ম্যাডাম।সাক্ষর খাবো।সরি সাক্ষর লাগবে।
ম্যাডাম মৃদু হেসে বললেন
তাতো বুঝলাম।কিন্তু এসি রুমে এত ঘামছো কেন ডিয়ার?
আমি এক হাত নিজের কপালে ছুঁইয়ে দেখলাম সত্যিইতো আমি ঘামছি।তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে মুছে নিলাম। ম্যাডাম মৃদু হেসে আমার হাত থেকে ফাইলগুলো নিয়ে সাক্ষর করে আবার ফেরত দিলেন।উনি দিতে সময় লাগলেও আমার উনার কেবিন থেকে বের হতে সময় লাগে নি।ঝড়ের বেগে আমি বের হয়ে গেলাম।
ম্যাডামের ব্যবহার এরকম কেন বুঝলাম না।আমি তারপর থেকে কেবিন থেকে লক্ষ্য করি যারাই ম্যাডামের কক্ষ থেকে বের হয় সকলের মুখ বোঁচা থাকে।এই বিষয়টা বুঝলাম না।তাই একদিন পাশের কেবিনের একটা লোককে কথায় কথায় বলেছিলাম ম্যাডাম কেমন?লোকটা যা বলল তাতে আমি অবাক।ম্যাডাম নাকি বদমেজাজি প্রাণি।ফাইলে একটু ভুল থাকলে খুব বকে।আমিতো বেকুব বনে গেলাম।অথচ আমি গেলেই ঢলাঢলি করে।এই বদ মহিলা চায় টা কি?এর আন্ডারে চাকরি করে আমাকে না বিপদে পড়তে হয়।
———-
-ম্যাডাম-
পর্ব(০১)
#Writer_Nandita_priti
(😍)